ছন্দ সম্পর্কে সাধারণ ধারণা

ছন্দ সম্পর্কে সাধারণ ধারণা

ছন্দ সম্পর্কে সাধারণ ধারণা : ছন্দ (Prosody) ভাষার অন্যতম প্রাণশক্তি। মানুষ যখন কথা বলে তখন স্বাভাবিকভাবে, একধরনের ছন্দ সে ব্যবহার করে। ছন্দবোধ সব মানুষের থাকে না, তবে মানুষ কথা বলার সময় প্রকৃতি থেকে প্রাপ্ত ছন্দ ব্যবহার করে। প্রকৃতিতে ছন্দের অজস্র উদাহরণ আছে। বাতাসের দোলা, নদীর স্রোত, পাতার দুলুনি সব কিছুর মধ্যে ছন্দ লক্ষ করা যায়।

গতিমান সব কিছুর মধ্যে ছন্দ থাকে। ছন্দ মূলত গতির সৌন্দর্য। অন্য কথায় চলমান যে কোনো কিছুর মধ্যে যে ঐকতান লক্ষ করা যায় তাই ছন্দ। গদ্যভাষায়ও ছন্দ থাকে। তবে কবিতার ছন্দ বেশি দৃষ্টিগোচর। কবিতার ছন্দ নিয়ে একটি কাঠামো রীতি মানুষ তৈরি করে ফেলেছে। কবিতার ছন্দ রূপগত দৃষ্টিগ্রাহ্য নয়, প্রকৃতির ছন্দের মতো। বরং তা শ্রুতিগ্রাহ্য ধ্বনিসৌন্দর্য। কবিতা আবৃত্তি করলে এর ছন্দ উপলদ্ধি করা যায়। আবৃত্তির সময় ধ্বনি প্রবাহের গতি বিরাম চিহ্নের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় বলে ধ্বনির ঐকতান গড়ে ওঠে। ধ্বনির ঐকতান মূলত ধ্বনি প্রবাহের সৌন্দর্য।

ছন্দের সংজ্ঞা : ছন্দ অর্থ ছাঁচ, গড়ন বা ভঙ্গি। কবিতার এই গড়ন তৈরি হয় শব্দ বিন্যাসের নানা কৌশল অবলম্বন করে। ছন্দ মূলত বাণী বিন্যাস কৌশল। বাক্যের অন্তর্গত পদগুলোকে ধ্বনিগত সামঞ্জস্য রক্ষা করে শ্রুতিমধুরভাবে সাজাবার কৌশলকে ছন্দ বলে। বিখ্যাত ছন্দ বিশেষজ্ঞ প্রবোধচন্দ্র সেনের মতে, সুনিয়ন্ত্রিত ও সুপরিমিত বাক্নিব্যাসেনের নাম ছন্দ। আমাদের নিত্য কথিত বা পঠিত গদ্যভাষার স্বচ্ছন্দ গতিকে নিয়ন্ত্রিত ও পরিমিতরূপে বিন্যস্ত করলেই পদ্যের ছন্দ উৎপন্ন হয়। প্রকৃত অর্থে ছন্দ হলো, শব্দকে সাজাবার কৌশল। বাক্যে বা পংক্তিতে শব্দগুলোকে একটি পদ্ধতির দ্বারা সাজালে শব্দগুলো অপূর্ব ধ্বনি-মাধুর্যের সৃষ্টি করে। সেই ধ্বনি-মাধুর্যই ছন্দ। Encyclopaedia of Britanica হতে Rhythm বা ছন্দ সম্পর্কে বলা হয়েছে- Rhythm is an expression of the instinct for order in some which naturally governs the human ear.

ছন্দ সম্পর্কে সাধারণ ধারণা

কবিতা ও ছন্দের সম্পর্ক : কবিতার অনেকগুলো উপাদান রয়েছে। এর মধ্যে ভাব, ভাষা ও ছন্দ অন্যতম। উপযুক্ত ছন্দ কবিতাকে অর্থের ব্যাপ্তিতেও সাহায্য করে। বিষয়ভেদে কবিতাতে নানা রকম ছন্দ প্রযুক্ত হয়। ভাবকে কথার অপূর্ব লীলা দিয়ে মূর্ত করে তোলা হয় কবিতায়, সেক্ষেত্রে ছন্দ কাজ করে অন্তঃসলিলা স্রোতের মতো। ছন্দ কবিতার প্রাণ প্রতিষ্ঠা করে।

অর্থদ্যোতকতাই কবিতার একমাত্র সম্পদ নয়। অর্থদ্যোতনাকে বাঙময় ও গতিমান ও অপূর্ব হারমনিতে রূপান্তরিত করতে ছন্দের ভূমিকা। ইদানিং অনেকেই বলেন, আধুনিক গদ্য কবিতায় ছন্দ নেই, কিংবা আধুনিক কবিরা ছন্দ জানেন না। কথাটি মোটেও সত্যি নয়। সাধারণ পাঠকের ধারণা ছন্দ হলো অন্তমিল। কিন্তু, অন্তমিল কখনো ছন্দ নয়।
ছন্দ থাকে শব্দের গাঁথুনিতে, কোন অক্ষরের পরে কোন অক্ষর বসালে শব্দের নূপুর বেজে উঠবে তা কবিরা জানেন। শব্দের গতি উচ্চারণ, ধ্বনি গঠন, মাত্রা ইত্যাদি বিষয়ের দিকে লক্ষ রেখে কবিতার চরণে শব্দ যোজনা করা হয়। এই কাজ অবশ্যই নিপুণভাবে ধনুকে তীর যোজনা করার মতো ব্যাপার। সঠিকভাবে শব্দ সাজালেই শব্দের ধ্বনি মাধুর্য বেরিয়ে আসবে। সুতরাং কবিরা, খুব সচেতনভাবে চয়ণে ছন্দের ব্যবহার করেন।

ছন্দের উপাদান : ছন্দের উপাদান অনেক। এর মধ্যে অন্যতম হলো- ধ্বনি, বর্ণ বা অক্ষর, মাত্রা, যতি, পর্ব, স্তবক ইত্যাদি। এদের ছন্দের পারিভাষিক শব্দও বলা হয়। নিচে ছন্দের উপাদানগুলোর পরিচয় তুলে ধরা হলো:

ক. ধ্বনি : কম্পনের ফলে ধ্বনি (Sound) সৃষ্টি হয়। কম্পমান বস্তু হলে। ধ্বনির উৎস (Sources of Sound)। মানুষ তার বাগযন্ত্রের সাহায্যে যে ধ্বনি উচ্চারণ করে তা অন্যান্য প্রাণীদের চেয়ে আলাদা মনুষ্য সৃষ্ট ধ্বনিকে বাগধ্বনি (Speech Sound) বলা। মানুষ যে ধ্বনি তৈরি করে তা অর্থবোধক। তবে অর্থহীন ধ্বনিও হতে পারে। মোট কথা, ফুসফুস তাড়িত বাতাস স্বরযন্ত্রের ভেতর দিয়ে মুখগহ্বর হয়ে ধ্বনি সৃষ্টি হয়। ধ্বনি বা শব্দ সৃষ্টির জন্য বাগযন্ত্রের দরকার হয়। বাগযন্ত্রের মধ্যে রয়েছে ফুসফুস, মুখগহ্বার, দন্ত, ওষ্ঠ ও নাসিকা।

মানুষ ধ্বনির সাহায্যে যে অর্থবোধক শব্দ তৈরি করে তার দ্বারা মনের ভাব প্রকাশ পেলে তাকে ভাষা (Language) বলে। ধ্বনি গতিশীল ও কর্ণগ্রাহ্য। কান ধ্বনি শোনে, তবে তা ধরে রাখতে পারে না। ধ্বনি ধরে রাখার জন্য নানা কৌশল মানুষ আবিষ্কার করেছে। অক্ষর বা বর্ণের মাধ্যমে ধ্বনিকে লিখিত রূপ দেয়া হয়েছে।

ছন্দ সম্পর্কে সাধারণ ধারণা

খ. বর্ণ বা হরফ (Letter) : বাগধ্বনির লিখিত বা সাংকেতিক রূপকে বর্ণ বা হরফ বলে। অন্য কথায় বর্ণ হলো ধ্বনির প্রতীক বা লিপিচিহ্ন। বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত বর্ণকে স্বরবর্ণ ও ব্যঞ্জনবর্ণ হিসেবে শ্রেণীকরণ করা হয়। স্বরবর্ণ (Vowel) স্বরযন্ত্রের কোথাও বাধা না পেয়ে নিজে নিজেই উচ্চারিত হয়। অন্যদিকে ব্যঞ্জনবর্ণ স্বরযন্ত্রের কোনো স্থানে বাঁধা পায় এবং স্বরবর্ণের সাহায্য নেয়। বাংলা বর্ণমালায় ১১টি স্বরবর্ণ (Vowel) ও ব্যঞ্জনবর্ণ (Consonant) ৩৯টি।
গ. অক্ষর : সাধারণত অক্ষরকে বর্ণ বলা হলেও অক্ষর ও বর্ণ এক জিনিস নয়। অক্ষর শব্দটি নানা অর্থে বাংলা ছন্দে ব্যবহৃত হওয়ার কারণে বিভ্রান্তির জন্ম হয়েছে। অক্ষর অর্থে কখনো ধ্বনি, কখনো বর্ণ (Letter) আবার কখনো ইংরেজি সিলেবল বোঝানো হয়। তবে, ছন্দের ক্ষেত্রে অক্ষর বলতে Syllable বোঝানো হয়। বাগযন্ত্রের স্বল্পতম প্রয়াসে একটি শব্দের যতটুকু অংশ উচ্চারণ করা যায় অথবা বাগযন্ত্রের স্বল্পতম প্রয়াসে উৎপন্ন ধ্বনিকে অক্ষর (Syllable) বলে। বাংলা ভাষার অভিধানেও অক্ষরের একটি অর্থ বর্ণ। অন্য অর্থ সিলেবল। অনেক সময় অক্ষর বলতে শব্দাংশ বোঝায়। প্রবোধচন্দ্র সেন প্রমুখ ছান্দসিকেরা অক্ষরের প্রতিশব্দ হিসেবে সিলেবলকে মেনে নিতে আপত্তি করেছেন। প্রকৃত অর্থে ইংরেজি Syllable শব্দের পরিবর্তে অক্ষর ছাড়া অন্য কোনো উপযুক্ত শব্দ নেই বলেই অক্ষরকে Syllable হিসেবে ধরা হয়।

ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ মতে, কোনও শব্দে যে ধ্বনি সমষ্টি এক সময় একত্রে উচ্চারিত হয়, তাকে অক্ষর (Syllable) বলে।

মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান মতে, এক প্রয়াসে উচ্চারিত ধ্বনি সমষ্টির নাম অক্ষর বা Syllable। ধ্বনি বিজ্ঞানের ধারণা থেকে বলা যায়, বাক্যের ক্ষুদ্রতম অংশ বা অনু হচ্ছে অক্ষর বা Syllable তবে ব্যুৎপত্তি বিচারে অক্ষরের অর্থ Syllable এবং সংস্কৃতেও অক্ষারের অর্থ তাই। সে কারণে, বাংলাতেও অক্ষরের অর্থ Syllable বিবেচনা করা শ্রেয়।

অক্ষর চেনার উপায় : বর্ণ (Letter) ও অক্ষরকে (Syllable) নিয়ে বিভ্রান্তি হলেও স্পষ্টত বর্ণ ও অক্ষর আলাদা। কখনো কখনো বর্ণকে অক্ষর বলা হয়। কখনো একাধিক বর্ণ মিলে একটি অক্ষর তৈরি হয়।

উদাহরণ : এখানে শব্দে তিনটি অক্ষর
এ + খা + নে [এ বর্ণটি একটি অক্ষর হিসেবে বিবেচিত]
আবার, ইতিহাস > ই + তি + হাস্
এখানে ই বর্ণটি একটি অক্ষর, তবে হাস্ একটি অক্ষর।
কোন বর্ণটি অক্ষর হবে, কোনটি হবে না তা নির্ভর করে উচ্চারণের পরিমাপের ওপর। অন্য কথায় শ্বাস যন্ত্রের বিরতির ওপর।

ছন্দ সম্পর্কে সাধারণ ধারণা

অক্ষরের শ্রেণিবিভাগ : বাংলা ছন্দ্রের ক্ষেত্রে অক্ষর দু ধরনের। যথা- স্বরান্ত অক্ষর বা মুক্তাক্ষর (Open Syllable) এবং বাঞ্জনান্ত বা চলন্ত অক্ষর বা বদ্ধাক্ষর (Closed Syllable)

স্বরান্ত অক্ষর বা মুক্তাক্ষর : যে অক্ষর স্বরধ্বনি দিয়ে গঠিত বা যে অক্ষরের শেষে স্বরধ্বনি বা স্বরবর্ণ থাকে তাকে স্বরান্ত বা মুক্তা ক্ষর বলে। অন্যকথয়, যে অক্ষর উচ্চারণের সময় আটকে যায় না বা প্রয়োজন মতো টেনে উচ্চারণ করা যায় তাকে মুক্তাক্ষর বলে। মুক্তাক্ষর মাত্রাবৃত্ত, স্বরবৃত্ত, অক্ষরবৃত্ত সকল, ছন্দেই একমাত্রার মর্যাদা লাভ করে।

মুক্তাক্ষরকে অযুগ্মধ্বনি, বিবৃত অক্ষর, মুক্তস্বর ও মুক্তদলও নামে বলা হয়।
যেমন- অ, ই, ক, গা, পা, যা, না ইত্যাদি।
স্বরান্ত অক্ষরকে মৌলিক ও যৌগিক স্বরান্ত এই দুইভাগে ভাগ করা হয়। একটি মাত্র অযুক্ত স্বরধ্বনির শেষে থেকে অক্ষর গঠিত হলে তাকে মৌলিক স্বরান্ত অক্ষর বলে। যেমন, অ, আ, ই, উ, ক, প, কু ইত্যাদি।
মৌলিক অক্ষরের শেষে যদি আরো উচ্চারিত স্বরধ্বনি থাকে এবং একটি মাত্র প্রয়াসে উচ্চারিত হয। তবে তাকে যৌগিক স্বরান্ত অক্ষর বলে। যেমন-
ঐ, ঔ কে একটি কস্বরধ্বনি মনে করলেও উচ্চারণগত দিক থেকে দেখা যায় প্রকৃত অর্থে ঐ ও ঔ দুটি স্বরধ্বনি মিলে গঠিত। ঐ = ও + ই এবং ঔ অ + উ।
যেমন- আগাচৌ শব্দ আ+গা + চৌ এই তিনটি অক্ষর নিয়ে গঠিত। এর প্রথম দুটো মৌলিক স্বরান্ত, শেষ অক্ষরটি যৌগিক স্বরান্ত।

উল্লেখ যে, মুক্তাক্ষরকে ‘’ চিহ্ন দ্বারা দেখানো হয় ব্যঞ্জনান্ত, হসন্ত অক্ষর বদ্ধাক্ষর ব্যঞ্জনান্ত বা হসন্ত অক্ষর যে সমস্ত অক্ষরের শেষে ব্যঞ্জনবর্ণ থাকে তাকে ব্যঞ্জনান্ত বা হসন্ত বা হলন্ত অক্ষর বলে। যেমন- কাল, রাত, বল, মূল্, নীল, পান্ ইত্যাদি। এই হসন্ত বা ব্যঞ্জনান্ত অক্ষরকে সংবৃত অক্ষর বা বদ্ধাক্ষর (Closed Syllable) ও বলা হয়।

বদ্ধাক্ষর : বদ্ধাক্ষরকে যুগ্মধ্বনি বা সংবৃত অক্ষর বা রুদ্ধম্বর বা রুদ্ধদল ও বলা হয়ে থাকে। অন্যদিকে যে অক্ষর উচ্চারণের সময় আটকে, যাকে টেনে দীর্ঘ করা যায় না তাকে বদ্ধাক্ষর (Closed Syllable) বলে। মুক্তাক্ষর সকল ছন্দ্রে একমাত্র কিন্তু বদ্ধাক্ষরকে কোথাও একমাত্রা আবার কোথাও দুই মাত্রা ধরা হয়। মেযন- কন্, যান্, বান্, ভুল, কূল্, থাক্ ইত্যাদি। উল্লেখ্য- বদ্ধাক্ষর ‘⊥’ চিহ্ন দ্বারা দেখানো হয়।

মাত্রা (Mora) : যার দ্বরা কোনো কিছুর পরিমাপ করা যায় তাকে মাত্রা বা পরিমাপক বলে। ছন্দের ক্ষেত্রে অবশ্য এই ধারণা চলে না। ছন্দের বেলায় মাত্রা হল অক্ষর উচ্চারণের সময় বা কাল পরিমাণ। অর্থাৎ একটি অক্ষর উচ্চারণ করতে যে সর্বনিম্ন সময় লাগে তাকে মাত্রা বলে। একটি মুক্তাক্ষর উচ্চারণ করতে যে পরিমাণ সময় লাগে তাকে একমাত্রা বলে। বদ্ধাক্ষর কখনো একমাত্রা, কখনো দুই মাত্রা হয়। ছন্দ হিসেবে মাত্রা পরিবর্তন হয়। অর্থাৎ অক্ষরবৃত্তের একটি অক্ষরের যে মাত্রা স্বরবৃত্ত তা নাও হতে পারে। যেমন-
জানতো শব্দে অক্ষরবৃত্তে তিন মাত্রা-তিনটি মুক্তাক্ষর।
আবার স্বরবৃত্তে জানতো হবে দুই মাত্রা।

যতি ও ছেদ (Meterical Pause and Sense Pause) : কবিতা আবৃত্তির সময় শ্বাসগ্রহণ বা শ্বাসত্যাগের জন্য এবং সুচারুরূপে ভাবপ্রকাশের জন্য থাার প্রয়োজন হয়। এই থামাকে বিরাম বা ছেদ বা যতি বলে। যতি ও ছেদ উভয়ের অর্থ এক হলেও গদ্য ও কবিতার ক্ষেত্রে দুটি কাজ আলাদা। কবিতার চরণে ছেদ পড়ে অর্থানুসারে। তবে যতি পড়ে একবারের ঝোঁকে (Impulse) চরণের যতটুকু অংশ উচ্চারিত হয় সে অনুযায়ী। এক ঝোকে কতকগুলো ধ্বনি বা স্বর উচ্চারণের পর জিহ্বা স্বল্পকালে জন্য যে বিশ্রাম গ্রহণ করে সেই বিশ্রাম বা বিরামকে যতি বলে। অন্যদিকে, অর্থ প্রকাশের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে যে উচ্চারণ বিরতি ঘটে তাকে ছেদ (Sense Pause) বলে। সে কারনে ছেদকে অর্থ যদি বা ভাব-যতি বলা হয়। যতির চিহ্ন দেখা হয দাঁড়ি। (। ) দিয়ে।

পর্ব (Measure বা Bar) : যদি দিয়েই পর্ব নির্ধারণ করা হয়। এক ঝোঁকে বা এক নিঃশ্বাসে কবিতার চরণের যতটুকু উচ্চারিত হয় তাকে পর্ব (Measure বা Bar) বলে। চরণের শুরু থেকে প্রথম যতি চিহ্ন এবং এক যতি চিহ্ন থেকে অন্য যতি পর্যন্ত অংশকে পর্ব বলে। যেমন-
যাবি তুই ভাই/ যাবি মোর সাথে/ আমাদের ছোট/ গায়
গাছের ছায়ায়/ লতায় পাতায়/ উদাসী বনের/ বায়।
দুটো দাঁড়ি চিহ্নের মাঝখানের অংশ পর্ব।
চরণ (Verse), পংক্তি (Line) ও স্তবক (Stanza)
কবিতার একটি পূণৃ বাক্যকে চরণ বলে। এক সারিতে সাজানো শব্দকে পংক্তি বা লাইন বলে। একটি চরণে একাধিক পর্ব থাকে।
অনেক সময় একটি লাইনে চরণ শেষ হয়, তখন চরণ ও পংক্তি এক হিসেবে বিবেচনা করাক যায়। তবে, চরণ ও পংক্তি এক নয়। একটি চরণকে ভেঙ্গে অনেক সময় একাধিক পংক্তি করা হয়।
স্তবক : কতগুলো চরণ মিলে সংহত অর্থ প্রকাশ করে, স্তবক গঠন করে। অন্য কথায়, ভাবপূর্ণ চরণসমষ্টিকে তবক বলে। যেমন-
স্বরাঘাত বা শ্বাসাঘাত (Acent বা Stress) : কবিতা আবৃত্তির সময় কখনো কখনো কোন অক্ষরের ওপর যে ঝোঁক বা চাপ পড়ে তাকে স্বরাঘাত বা শ্বাসাঘাত বা প্রস্তর বলে।
সাধারণত শব্দের প্রথম অক্ষরে স্বরাঘাত পড়ে। আবার অনেক পর্ব বিশিষ্ট পংক্তিকে প্রতি পর্বের প্রথম অক্ষরে স্বরাঘাত পড়ে। যে অক্ষরে স্বরাঘাত হয় তার ওপর। (। ) চিহ্ন ব্যবহার করা হয়।
আয় ছেলেরা / আয় মেয়েরা/ ফুল তুলিতে/ যাই
লয় বা গতি কবিতা আবৃত্তি করার সময় কখনো দ্রুত কখনো বিলম্বিত করে পড়া হয়। কবিতার এই গতিবেগ বা দোলাকে ছন্দের লয় বলে। অক্ষরবৃত্ত ছন্দের লয় ধীর, মাত্রাবৃত্ত ছন্দের লয় বিলম্বিত এবং স্বরবৃত্তের লয় দ্রুত।

ছন্দ সম্পর্কে সাধারণ ধারণা

ছন্দের ব্যবহৃত চিহ্ন সময় : বাংলা ছন্দে নিুলিখিত চিহ্নগুলো বিশ্লেষণের সময় ব্যবহার করা হয়।
মুক্তাক্ষর: 
বদ্ধাক্ষর: –
একমাত্রা: ।
একমাত্রার মুক্তাক্ষর: 
এক মাত্রার বদ্ধাক্ষর: ⊥
যতি বা পর্ব চিহ্ন: ।

ছন্দের শ্রেণিবিভাগ : বাংলা কবিতার ছন্দকে সাধারণত তিনটি বিভাগে ভাগ করা হয়।

ক. অক্ষরবৃত্ত ছন্দ (Mixed বা Composite Metre): অক্ষরবৃত্ত ছন্দকে যৌগিক, মিশ্রকলামাত্রিক, মিশ্রকলাবৃত্ত, পয়ার জাতীয়। সংকোচন প্রধান ও তানপ্রধান ছন্দ নামে ও অভিহিত করা হয়।

খ. মাত্রাবৃত্ত ছন্দ (Moric Metre): মাত্রাবৃত্ত ছন্দকে কলামাত্রিক, কলাবৃত্ত, ধ্বনিপ্রধান ও ধ্বনিমাত্রিক ছন্দ ও বলা হয়।

গ. স্বরবৃত্ত ছন্দ (Sressed Metre বা Syllable Metre): এই ছন্দকে দলমাত্রিক, দলবৃত্ত, শ্বাসাঘাত প্রধান, স্বরাঘাত প্রধান, স্বরপ্রধান ছন্দ নামেও অভিহিত করা হয়। এছাড়াও স্বরবৃত্ত ছন্দকে ছড়ার ছন্দ বা লৌকিক ছন্দ ও বলা হয়।

অক্ষরবৃত্তের উদাহরণ : পয়ার : পয়ার বলতে সাধারণ আট-ছয় পর্বের চৌদ্দ অক্ষরের পংক্তি বিশিষ্ট কবিতার ছন্দকে নির্দেশ করে। পয়ার বাংলা ভাষার প্রাচীন ছন্দ।
কাশীরাম দাশ ভণে শুনে পুন্যবান
অক্ষরবৃত্তের নানা শাখা রয়েছে। এগুলো হলো, তরুল পয়ার, মালঝাঁপ পয়ার, মালতি, বিশাখ পয়ার, কুসুম মালিকা, মহাপয়ার, সমিল মহাপয়ার, অমিল মহাপয়ার, পর্যায়সম, মহাপয়ার, মধ্যাসম মহাপয়ার, একাবলী, দীর্ঘ একাবলী, মিশ্রছন্দ, ত্রিপদী ছন্দ, লঘু ত্রিপদী, দীর্গ ত্রিপদী, অসমপর্বিক, ত্রিপদী, চতুষ্পদী, লঘু চৌপদী, দীর্ঘ চৌপদী ও অমিত্রাক্ষর।

অমিত্রাক্ষর ছন্দ (Blank Verse) : যে কবিতায় দুই চরণের শেষ ধ্বনির পরস্পর মিল থাকে তাকে মিত্রাক্ষর বলে। পয়ারের কাঠামোতে চৌদ্দমাত্রার পংক্তি নিয়ে মিত্রাক্ষর বর্জন করে অমিত্রাক্ষর ছন্দ তৈরি হয়েছিল। পয়ারের ন্যায় অমিত্রাক্ষরে চৌদ্দমাত্রার শেষে ছেদ টানার কোন বাধ্যবাধকতা নেই। মাইকেল মধুসূদন দত্ত বাংলায় অমিত্রাক্ষর ছন্দের প্রবর্তন করেন। তবে মধুসূদন অমিত্রক্ষরে মৌলিকত্ব দেখিয়েছেন। উদাহরণ :
একাকিনী শোকাকুলা, অশোক-কাননে,
কাঁদেন রাঘব-বানছা আঁধার কুটীরে
নীরবে। দুরন্ত চেড়ী, সতীরে ছাড়িয়ে।
কেরে দূরে মত্ত সবে উৎসব-কৌতুকে
হীন-প্রাণা হরিণীর রাখিয়া বাঘিনী
নির্ভর-হৃদয়ে যথা ফেরে দূর বনে।”

মুক্তক ছন্দ : অসমদীর্ঘ চরণের ছন্দকে মুক্তক ছন্দ বলে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মুক্তক এই ছন্দের ব্যাপক প্রয়োগ করেছেন তাঁর কবিতায়। এই ছন্দে প্রতি পঙক্তির অক্ষরের সংখ্যা অসমান। যে মুক্তক ছন্দে অন্ত্যানুপ্রাস থাকলে তাকে সমিল মুক্তক ছন্দ বলে।
যেমন-
হে বিরাট নদী
অদৃশ্য নিশব্দ তব জল
অবিচ্ছিন্ন অবিরল
*চলে নিরবধি।

গদ্যছন্দ (Prose Verse) : আধুনিক কালে কবিতায় গদ্যছন্দ ব্যবহার করা হয়। গদ্যছন্দ অক্ষরবৃত্তের একটি ধারা। অনেকের ধারণা আধুনিক কবিতায় কোনো ছন্দ নেই। তাদের ধারণা, ছন্দ মানে অন্তঃমিল। গদ্যছন্দের ক্ষেত্রে গদ্যভাষার ছন্দ, সুষমা কে ব্যবহার করা হয়। এই ছন্দ অস্ফুট। গদ্য ছন্দে পদ্য ছন্দের মতো যতির দ্বারা চরণ বা পংক্তি পর্বে বিভক্তি হয় না। উদাহরণ-
নাম তার কমলা।
দেখেছি তার খাতার উপরে লেখা-
সে চলেছিল ট্রামে, তার ভাইকে নিয়ে কলেজের রাস্তায়।
আমি ছিলেম পিছনের বেঞ্চিতে।
সনেট (Sonnet) : ইতালীয় সনেটো (Sonetto) শব্দ থেকে সনেট শব্দটি এসেছে। এর অর্থ হচ্ছে মৃদুধ্বনি বা কলধ্বনি। একটি মাত্র অনুভূমিত বা ভাবকল্পনা নিয়ে বিশেষ ছন্দ রীতিতে রচিত চৌদ্দ বা আঠার মাত্রার চৌদ্দ পঙক্তির কবিতাকে সনেট বা চতুর্দশপদী বকিতা বলে। সনেটে বিশেষ অন্তমিল মিল থাকে। সনেটের প্রথম আট লাইনকে অষ্টক ও দ্বিতীয় স্তবকের ছয় লাইনকে ষষ্টক বলে। মাইকেল মধুসূদন দত্ত বাংলা ভাষায় প্রথম সনেট রচনা করেন। যেমন-
হে বঙ্গ, ভান্ডারে তব বিবধ রতন :-
তা সবে (অবোধ আমি!) অবহেলা করি,
পর-ধন লোভে মত্ত, করিনু ভ্রমণ
পরদেশে, ভিক্ষাবৃত্তি কুষ্ণণে আচরি।

মাত্রাবৃত্ত ছন্দ : যে ছন্দে বদ্ধাক্ষর সর্বত্রই দুইমাত্রা ধরা হয়, তাকে মাত্রাবৃত্ত ছন্দ বলে। মাত্রাবৃত্তে বদ্ধাক্ষর সর্বদাই বিশিষ্ট ভঙ্গিতে অর্থাৎ টেনে টেনে উচ্চারিত হয়। মাত্রাবৃত্ত ছন্দে অক্ষর ধ্বনি বিশেষ প্রাধান্য লাভ করে বলে তাকে ধ্বনি-প্রধান ছন্দ ও বলা হয়। মাত্রাবৃত্ত ছন্দে প্রতি পংক্তির পর্বসংখ্যা নির্দিষ্ট নয়। পংক্তিগুলি গুলো দুই, তিন, চার পর্বে বিভক্তি হয়। প্রতি পর্বের মাত্রাসংখ্যা সাধারণত চার, পাঁচ, ছয় হয়ে থাকে। শেষের পর্বীট বেশির ভাগ সময় অপূর্ণ থাকে। সে কারণে ছন্দের সৌকর্য বৃদ্ধি পায়। যেমন- গগণে গরজে মেঘ ঘন বরষা
৮ ৫
১. কুলে একা বসে থাকি। নাহি ভরসা
৮ ৫
রাশি ভারা ভারা ভারা। ধনে কাটা হল সারা
৮ ৫
ভরা নদী ক্ষুর ধারা। খর পরসা ৮+৫
৮ ৫
কাটিতে কাটিতে ধান। এল বরষা।
৫ ৫ ৫ ২+০০০
২. নতুন – জাগা। কুঞ্জবনে। কুহরি উঠে। পিক ০০০
বসন্তের। চুম্বনেতে। বিবশ দশ। দিক ০০০

স্বরবৃত্ত ছন্দ : যে ছন্দে বদ্ধাক্ষর সর্বদা এক মাত্রা ধরা হয় তাকে স্বরবৃত্ত ছন্দ বলে। এই ছন্দে পর্বের প্রথম একটি শ্বাসাঘাত বা প্রস্বর বা স্বরাঘাত পড়ে বলে একে শ্বাসাঘাত প্রধান, স্বরাঘাত প্রধান ছন্দ ও বলা হয়। স্বরবৃত্ত ছড়ার ছন্দ। একে লৌকিক ছন্দ বলা হয়। স্বরবৃত্ত ছন্দে সাধারণত প্রতি পংক্তিতে চারটি পর্ব থাকে। তবে, দুই বা তিন মাত্রার পর্ব ও থাকতে পারে। যেমন-
৪ ৪ ৫ ৩
সোডার বোতল। খুললে কোনো। ফঁসফসিয়ে। রাগ করে?
কেমন করে। রাখবে টিকি। মাথায় যাদের। ঢাক পড়ে?

ছন্দ সম্পর্কে সাধারণ ধারণা

স্বরমাত্রকি ছন্দ : যে কবিতা স্বরবৃত্ত এবং মাত্রাবৃত্ত উভয় ভঙ্গিতে পড়া যায় তাকে স্বরমাত্রিক উভয় ভঙ্গিতে পড়া যায় তাকে স্বরমাত্রিক ছন্দ বলে অভিহিত করা হয়। যেমন-
৫ ৫ ২
কেশে আমার। পাক ধরেছে। বটে
৫ ৫ ২
তাহার পানে। নজর এত। কেন
৫ ৫ ২
পাড়ার যত। চেলে এবং। বুড়ো
৫ ৫ ২
সবার আমি। এক বয়সি। যেনো।

মাত্রাবৃত্ত ছন্দের ক্ষেত্রে রবীন্দ্রনাথের এই কবিতায় অংশটুকু স্বরবৃত্ত ছন্দেও আবৃত্তি করাক যায়। তখন এর মাত্রাবিন্যাস হবে- ৪+৪+২।

ছন্দ বিশ্লেষণের উদাহরণ :
বিশেষণে সবিশেষ কহিবারে পারি
জান তো স্বামীর নাম না হি লয় নারী
অক্ষরবৃত্ত = ৮+৬

আবার হারায়ে যায় হেরি চারি ধার
বৃষ্টি পড়ে অবিশ্রম ঘনায়ে আধার
অক্ষরবৃত্ত = ৮+৬

ছন্দ সম্পর্কে সাধারণ ধারণা

সেবকের মতো
সিক্ত তনু মুছি নিল আতপ্ত অঞ্চলে
সযতনে; ছায়াখানি রক্ত পদতলে
চ্যুত বসনের মত রহিল পড়িয়া
অরণ্য রহিল সত্বধ্ব বিষ্ময়ে মরিয়া।

অক্ষরবৃত্তের সমিল প্রবহমান পয়ার। একটি স্তবক; পাঁচটি পংক্তি।

প্রথম পংক্তিতে একটি পর্ব-ছয় মাত্রাল। দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম পংক্তির প্র্েযতকটিতে দুটি করে পর্ব-প্রথম পর্বসমূহ আট মাত্রার ও শেষ পর্বসমূহ ছয় মাত্রার।

কৃষ্ণকলি আমি তারেই বলি
কাল্যে তারে বলে গাঁয়ের লোক
।। ।। । । । । ।।
মেঘলা দিনে দেখেছিলেম মাঠে
।। ।। ।। ।। ।
কালো মেয়ের কালো হরিণ চোখ
।। ।। ।। । । ।।
ঘোমটা মাথায় ছিল না তার মোটে,
।।।। ।। ।। ।।
মুক্তবেণী পিঠের পরে লোটে।
।। । । ।। ।। ।
কালো? তা সে যতই কালো হোক
।।। । ।। ।। ।
দেখেছি তার কালো হরিণ চোখ।।

স্বরবৃত্ত ছন্দ। একটি স্তবক, আটটি পংক্তি। প্রত্যেকটি পংক্তিতে তিনটি করে পর্ব-শেষ পর্বসমূ ব্যতিরেকে সকল পর্বই চারি মাত্রার। প্রথম, তৃথীয়, পঞ্চম ও ষষ্ট পঙক্তির শেষ পর্বসমূহ দুই মাত্রার ও অপূর্ণ এবং দ্বিতীয, চতুর্থ, সপ্তম ও অষ্টম পঙক্তির শেষ পর্বসমূহ এক মাত্রারও অপূর্ণ। লয় দ্রুত।

।।।।।। ।। ।।। ।।।
মরিতে চাহিনা আমি সুন্দর ভবনে

।।।।।।।। ।।।।।।
মানবের মাঝে আমি বাঁচিবারে চাই।

।।।।।।।। ।।।।।।
এই সূর্য করে এই পুষ্পিত কাননে

।।।।।।।। ।।।।।।
জীবন্ত হৃদয় মাঝে যদি স্থান পাই।

অক্ষরবৃত্তের পয়ার ছন্দ। একটি স্তবক, চারিটি পঙক্তি। প্রত্যেক পঙক্তিতে দুটি করে পর্ব-প্রথম পর্বসমূহ আট বারোর ও শেষ পর্বসমূহ ছয় মাত্রার। লয় ধীর।

।। ।। ।। ।।। ।।। ।। ।। ।। ।
ওই দূর বনে সন্ধ্যা নামিছে ঘন আবীরের রাগে

।।। ।।। ।।। ।।। ।। ।। ।। ।
অমনি করিয়া লুটায়ে পড়িতে বড় সাধ আজ আগে

।।।।।।। ।।। ।।। ।।।।।। ।।
মসজিদ হইতে আজান হাঁকিছে বড় সকরুণ সুর

।।।।।। ।। ।।।। ।।।।।। ।।
মোর জীবনের রোজ কেয়ামত ভাবিতেছি কত দূর

মাত্রাবৃত্ত ছন্দ : একটি স্তবক, চারিটি পংক্তি। প্রত্যেক পঙক্তিতে চারিটি করিয়া পর্ব-প্রথম তিনটি করিয়া পর্ব ছয় মাত্রার এবং শেষ পর্বসমূহ দুই মাত্রার ও অপূর্ণ। লয় বিলম্বিত।

।। ।।। ।।।। ।।।। ।।
মরব না ভাই নিপুনিকা চতুরিকার শোকে,

।।।। ।।।। ।। ।। ।
তারা সবাই অন্য নামে আছেন মর্তা লোক

।।।। ।।।। ।।।। ।
আপাতত এই আনন্দে গর্বে বেড়াই নেচে,

।।।।। ।।।। ।।।। ।।
কালিদাসতো নামেই আছেন আমি আছি বেঁচে

মাত্রাবৃত্ত ছন্দ। একটি স্তবক, চারটি পংক্তি। প্রত্যেক পংক্তিতে চারটি করে পর্ব-প্রথম তিনটি করে পর্ব ছয় মাত্রার এবং শেষ পর্বসমূহ দুই মাত্রার ও অপূর্ণ।

।।।।।। ।।।।।। ।।।।।। ।
এইখানে তোর দাদীর কবর ডালিম গাছের তলে

।।।।।। ।।। ।।। ।।।।।। ।।
তিরিশ বছর ভিজায়ে রেখেছি দুই নয়নের জলে

।।।। ।। ।। । ।।। ।।।।।। ।।
এতটুকু তারে ঘরে এনেছিনু সোনার মতন মুখ,

।।।।।। ।।।।।। ।।।।।। ।।
পুতুলের বিয়ে ভেঙ্গে গেল বলে কেঁদে ভাসাইত বুক।

স্বরবৃত্ত ছন্দ। একটি স্তবক, চারটি পংক্তি। প্রত্যেক পঙক্তিতে চারটি করে পর্ব-প্রথম তিনটি পর্ব চার মাত্রার এবং শেষ পর্বসমূহ দুই মাত্রার ও অপূর্ণ। দ্বিতীয় পংক্তির শেষ শব্দটিতে মধ্যখন্ডন হয়েছে।

।।-।। ।।।। ।।।।। ।
কাজল-আঁকা সিঁদুর-মাখা চুলের গন্ধে ভরা

।।।। ।।।। ।।।। ।
শয্যা প্রান্তে ছিন্নবেশে চাস্ কি যেতে ত্বরা?

।। ।। ।।।। ।।। ।
বুকের পরে নিশ্বসিয়া সত্বন্ধ রহে গান¬-

।। ।। ।
লোভে কম্প মান।।

স্বরবৃত্ত ছন্দ। একটি স্তবক, চারটি পঙক্তি। প্রথম দ্বিতীয় ও তৃতীয় পঙক্তিতে চারটি করে পর্ব-প্রথম তিনটি করে পর্ব চার মাত্রার। চতুর্থ পঙক্তিতে দুটি পর্ব-প্রথম পর্বটি চার মাত্রার। প্রথম ও দ্বিতীয় পঙক্তির শেষ পর্বদ্বয় দুই মাত্রার এবং তৃতীয় ও চতুর্থ পঙক্তির শেষ পর্বদ্বয় এক মাত্রার। চতুর্থ পঙক্তির শেষ শব্দটিতে মধ্যখন্ডন ঘটেছে। লয় দ্রুত।
। ।। । ।।। । । । ।। ।।
মা কেঁদে কয়, “মঞ্জুলী মোর ওই তো কচি মেয়ে,

।।।। ।। ।। ।।। ।। ।।
ওরই সঙ্গে বিয়ে দেবে বয়সে ওর চেয়ে

।।। । ।।
পাঁচগুণো সে বড়

।। ।। ।। ।। ।।।। ।
তাকে দেখে বাছা আমার ভয়েই জড়ো সড়ো।

।।।। ।।।। ।।
এমন বিয়ে ঘটতে দেব নাকো।”

ছন্দ সম্পর্কে সাধারণ ধারণা

স্বরবৃত্ত ছন্দ। একটি স্তবক, পাঁচটি পংক্তি। প্রথম, দ্বিতীয় ও চতুর্থ পংক্তিতে চারটি করে পর্ব। তৃতীয় ও পঞ্চম পংক্তি যথাক্রমে দুই ও তিন পর্বের। প্রতিটি পর্ব চার মাত্রার। শেষ পর্বগুলো অসম্পূর্ণ এবং দুই মাত্রার।

আলতো রোদে । আদ্র মাটি
হাঁটি হাঁটি । পা;
জানিয়ে যায় । স্বনন বাবু
যা এগিয়ে । যা।

স্বরমাত্রিক ছন্দ। এ ছন্দকে স্বরবৃত্ত ও মাত্রাবৃত্ত উভয় রীতিতে বিশ্লেষণ করা যায়। আলোচ্য কবিতাংশে একটি স্তবক, চারটি পংক্তি। প্রতি পংক্তিতে দুটি করে পর্ব। দ্বিতীয় ও চতুর্থ পংক্তির শেষ পর্ব একমাত্রার এবং অসম্পূর্ণ। স্বরবৃত্ত ছন্দে প্রতি পর্ব চারমাত্রার এবং মাত্রাবৃত্ত ছন্দে পাঁচ মাত্রার। উভয় ছন্দে অসম্পূর্ণ পর্ব একমাত্রার।

Leave a Comment

You cannot copy content of this page

Scroll to Top