বিলাসী গল্পের সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর (এইচএসসি বাংলা ১মপত্র)

বিলাসী গল্পের সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর (এইচএসসি বাংলা ১মপত্র)

বিলাসী গল্পের সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর (এইচএসসি বাংলা ১মপত্র): শিক্ষার্থীরা তোমাদের বাংলা গদ্য অংশ বিলাসী এর সর্বশেষ বোর্ড প্রশ্ন উত্তরসহ এখানে দিয়েছি। আশাকরি তোমরা এখান থেকে প্রস্তুতি ও পরীক্ষার ধারণা নিতে পারবে।

বিলাসী গল্পের সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর (এইচএসসি বাংলা ১মপত্র)

সাজেশন

আরো পড়ুনঃ

সর্বশেষ বোর্ডে আসা প্রশ্ন সাজেশন

প্রশ্ন ৫। উদ্দীপকের বিষয় : উদার মানবিকতার অনিন্দ্য প্রকাশ-এর আলোকে প্রণীত।মানুষ মানুষের জন্য
জীবন জীবনের জন্য
একটু সহানুভূতি কি মানুষ পেতে পারে না
ও বন্ধু——–

ক. শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় কত খ্রিষ্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন?
খ. ‘বুক যদি কিছুতে ফাটে তো সে এই মৃত স্বামীর কাছে একলা থাকিলে ।’- বিষয়টি বুঝিয়ে বল।
গ. উদ্দীপকের ভাবের সঙ্গে ‘বিলাসী’ গল্পের কোন দিকটির সাদৃশ্য রয়েছে? নির্ণয় কর।
ঘ. “উদ্দীপকটি ‘বিলাসী’ গল্পের আংশিক ভাবের প্রতিনিধিত্বকারী।”- মন্তব্যটি বিশ্লেষণ কর ।

ক জ্ঞান

শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ১৮৭৬ খ্রিষ্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন।

খ অনুধাবন

·

স্বামীর প্রতি অপরিসীম ভক্তি থাকলেও মৃত স্বামীর সঙ্গে একা রাত কাটানো যে দুঃসাধ্য তার বাস্তবিক প্রমাণ দিতে গিয়ে শরৎচন্দ্র ‘বিলাসী’ গল্পে তা তুলে ধরেছেন।

‘বিলাসী’ গল্পের কথক ন্যাড়া এক আত্মীয়ের মৃত্যুকালে সেখানে উপস্থিত ছিল। সতীসাধ্বী স্ত্রীটি তার স্বামীর শোকে বিহ্বল হয়ে পাগলের মতো কান্নাকাটি করে। এমনকি স্বামীর সঙ্গে সহমরণে যেতে ন্যাড়াকে কাকুতি-মিনতি জানায়। অথচ ন্যাড়া যখন মৃতদেহের সৎকারের জন্য লোক জোগাড় করতে বাইরে যেতে চায় তখন মহিলা তাতে বাদ সাধে। ভয়ার্ত ও শঙ্কিত কণ্ঠে বলে,

‘ভাই, যা হবার সে তো হয়েছে, আর বাইরে গিয়ে কী হবে? রাতটা কাটুক না।’ ন্যাড়া বাইরে পা বাড়ানো মাত্রই সেই নারী চিৎকার করে বলে ওঠে— ‘ওরে বাপরে! আমি একলা থাকতে পারব না।’ একলা থাকতে ভয় পাওয়ার বিষয়টি বোঝাতেই শরৎচন্দ্র আলোচ্য উক্তিটি করেছেন।

সারকথা : প্রশ্নোক্ত উক্তিটিতে মৃত স্বামীর কাছে একলা থাকতে না পারার বিষয়টি প্রকাশ পেয়েছে।

প্রয়োগ

উদ্দীপকের ভাবের সঙ্গে ‘বিলাসী’ গল্পের মৃত্যুঞ্জয়ের অসুখে বিলাসীর সেবা-যত্ন করার দিকটির সাদৃশ্য রয়েছে। মানুষের প্রতি মানুষের আন্তরিকতা ভালোবাসা মানুষকে মানবিক করে তোলে। মানুষ হিসেবে একজনের বিপদে অন্যজনের এগিয়ে আসা এবং সাহায্য করার মাঝেই মনুষ্যত্ব বেঁচে থাকে।

উদ্দীপকে মনুষ্যত্ববোধ ও মানবতার কথা বলা হয়েছে। মানুষের প্রয়োজনে এবং বেঁচে থাকার জন্য মানুষ হিসেবে একে অন্যের প্রতি কিছু দায়দায়িত্ব রয়েছে। একজনের বিপদে-আপদে অন্যজন পাশে দাঁড়াবে এটাই মানুষের ধর্ম, সমাজের নিয়ম হওয়া উচিত।

বিলাসী’ গল্পে মৃত্যুঞ্জয়ের কেউ কোনো খোঁজখবরই রাখে না, তখন বিলাসী ও তার বাবা মানুষের সমালোচনা ও সমাজের ভয়কে উপেক্ষা করে মৃত্যুঞ্জয়ের পাশে এসে দাঁড়ায়। বিলাসী রাত-দিন অক্লান্ত পরিশ্রম করে মৃত্যুঞ্জয়কে মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরিয়ে আনে। এই উদার মানবিকতার দিক দিয়ে উদ্দীপকের ভাবের সঙ্গে ‘বিলাসী’ গল্পের সাদৃশ্য রয়েছে।

সারকথা : উদ্দীপকের ভাবের সঙ্গে ‘বিলাসী’ গল্পের মৃত্যুঞ্জয়ের অসুখে বিলাসীর সেবা-যত্ন করার দিকটির সাদৃশ্য রয়েছে।

বিলাসী গল্পের সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর (এইচএসসি বাংলা ১মপত্র)

উচ্চতর দক্ষতা

“উদ্দীপকটি ‘বিলাসী’ গল্পের আংশিক ভাবের প্রতিনিধিত্বকারী।”— মন্তব্যটি যথার্থ।

পৃথিবীতে বিচিত্র রকমের মানুষ রয়েছে। তাদের মধ্যে কিছু মানুষ নিজেদের স্বার্থে বিচিত্র সব নিয়ম তৈরি করে। মানুষ হিসেবে মানুষের পাশে দাঁড়াতে মাঝে মাঝে সেসব নিয়ম উপেক্ষা করে যেতে হয়। তা না হলে মানবিকতা ও মনুষ্যত্ব পৃথিবী থেকে হারিয়ে যাবে।

উদ্দীপকে মানুষের প্রতি মানুষের মানবিক আচরণ ও দায়িত্ববোধের কথা বলা হয়েছে। মানুষ হিসেবে একজনের প্রতি অন্যজনের সামাজিক দায়বদ্ধতা আছে। ‘বিলাসী’ গল্পে মৃত্যুঞ্জয়ের পাশে থেকে বিলাসীর সেবাদানের দিকটির মধ্য দিয়ে মানবতার উৎকৃষ্ট দৃষ্টান্ত উপস্থাপিত হলেও গল্পটিতে বর্ণবৈষম্যের কথাও রয়েছে। সেখানে শুধু নিম্নবর্ণের বলে বিলাসীকে হতে হয়েছে নির্যাতিত।

এ ছাড়াও গল্পে মানবপ্রেমের চিরন্তন সত্য ফুটে উঠেছে। সেই সঙ্গে প্রকাশ পেয়েছে বিলাসী ও মৃত্যুঞ্জয়ের পরিণতির কথাও। অন্যদিকে উদ্দীপকে কেবল মানবিকতার কথাই প্রকাশ পেয়েছে।

উদ্দীপকে মানবতার দিকটি প্রকাশিত হয়েছে। অপরদিকে ‘বিলাসী’ গল্পে এ বিষয়টি ছাড়াও তৎকালীন সমাজের বর্ণবৈষম্য, স্বার্থপরতা, সামাজিক নানা অসংগতি ইত্যাদি উঠে এসেছে। এসব বিষয় উদ্দীপকে অনুপস্থিত। তাই বলা যায়, উদ্দীপকটি ‘বিলাসী’ গল্পের আংশিক ভাবের প্রতিনিধিত্বকারী।

সারকথা : উদ্দীপকে মানবতার দিকটি প্রকাশিত হলেও ‘বিলাসী’ গল্পে এ বিষয়টি ছাড়াও অন্যান্য বিষয় রয়েছে। তাই মন্তব্যটি যথার্থ।

প্রশ্ন ও উত্তর অনুশীলন

উদ্দীপকের বিষয় : জাত-ধর্ম ভেদের অসারতা-এর আলোকে প্রণীত।
কেউ মালা, কেউ তবি গলায়
তাইতে কী জাত ভিন্ন বলায়,
যাওয়া কিংবা আসার বেলায়
জেতের চিহ্ন রয় কার রে ॥

ক. কামাখ্যা কিসের জন্য বিখ্যাত?
খ. “স্বদেশের মঙ্গলের জন্য সমস্ত অকাতরে সহ্য করিয়া তাহাকে হিড়হিড় করিয়া টানিয়া লইয়া চলিলাম।”- ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকটি ‘বিলাসী’ গল্পের কোন দিকটিকে নির্দেশ করে? ব্যাখ্যা কর ।
ঘ. “উদ্দীপকটি ‘বিলাসী’ গল্পের আংশিক ভাবের প্রতিনিধিত্ব করে।”— মন্তব্যটি বিশ্লেষণ কর।

ক জ্ঞান
কামাখ্যা তান্ত্রিক সাধক ও উপাসকদের তন্ত্রমন্ত্র সাধনার জন্য বিখ্যাত।
খ অনুধাবন

● উদ্ধৃত উক্তিটিতে স্বার্থান্ধ-কুসংস্কারাচ্ছন্ন গ্রামবাসীর সাপুড়েকন্যা বিলাসীর ওপর আক্রমণের কারণ সম্পর্কে ইঙ্গিত করা হয়েছে।

তৎকালীন সমাজ মৃত্যুঞ্জয়-বিলাসীর প্রেম ও সেবা করার বিষয়টি কোনোভাবেই মেনে নিতে পারেনি। কায়স্থের ছেলে মৃত্যুঞ্জয়ের সাপুড়েকন্যা বিলাসীর হাতে রান্না করা ভাত খাওয়াকে অন্নপাপ এবং জাত যাওয়ার মতো ঘটনা হিসেবে সাব্যস্ত করে।

এক সন্ধ্যায় দশ-বারোজনের একটি দল অতর্কিতে বিলাসীর ওপর হামলা চালায়। অসুস্থ মৃত্যুঞ্জয়ের কোনো কথাই তারাশোনে না। তারা বীরদর্পে হুঙ্কার দিয়ে বিলাসীকে হিড়হিড় করে টেনে বাইরে নিয়ে যেতে থাকল। এ সবই তারা করেছিল ধর্ম ও গ্রামের মুখ রক্ষার অজুহাতে। নিচু জাতের বলে তারা বিলাসীর প্রতি এমন ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটিয়েছিল।

সারকথা : কুসংস্কারাচ্ছন্ন গ্রামবাসীর বিলাসীর ওপর করা অত্যাচার প্রসঙ্গে উক্তিটি করা হয়েছে।

বিলাসী গল্পের সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর (এইচএসসি বাংলা ১মপত্র)

প্রয়োগ

উদ্দীপকটি ‘বিলাসী’ গল্পের জাতিগত বিভেদের দিকটিকে নির্দেশ করে। পৃথিবীতে সব মানুষের জন্মপরিচয় এক, তা হলো মানুষ। কিন্তু আত্মস্বার্থে তারা পরস্পরকে হিংসা করে। জন্মের পরে মানুষ স্বার্থের কারণে বিভিন্ন জাতিতে বিভক্ত হয়ে পড়ে। অথচ এটাই সত্যি যে, পৃথিবীতে কেউ কারও শত্রু নয়, সবাই বন্ধু । এই বোধে মানুষ হিসেবে সবাইকে মানবিক ও দায়িত্বশীল হতে হবে।

উদ্দীপকে মানবধর্মের কথা বলা হয়েছে। একেক ব্যক্তি একেক ধর্মের অনুসারী হতেই পারে তাতে ক্ষতি নেই। কিন্তু সবার একটাই পরিচয়, আর তা হলো তারা সবাই মানুষ। কারণ সবার জন্ম-মৃত্যু রহস্য এক ও অভিন্ন। জন্ম-মৃত্যুর মতো সত্যের কাছে কোনো জাতিভেদের অস্তিত্ব থাকে না। ‘বিলাসী’ গল্পে বিলাসী অসুস্থ মৃত্যুঞ্জয়ের সেবা করে তাকে সুস্থ করে তোলে। মৃত্যুঞ্জয় এর প্রতিদানে বিলাসীকে বিয়ে করে । কিন্তু সমাজ এ বিষয়টিকে স্বীকৃতি দেয় না। কারণ বিলাসী নিচু জাতের, আর মৃত্যুঞ্জয় উঁচু জাতের। এ কারণেই বিলাসীর ওপর নির্মম অত্যাচার চালানো হয়। শুধু জাতিগত বৈষম্যের কারণেই বিলাসীকে মৃত্যুঞ্জয়ের কাছ থেকে আলাদা করার চেষ্টা

করা হয় । তাদেরকে সমাজ ছাড়তে বাধ্য করা হয়। এভাবে উদ্দীপকটি ‘বিলাসী’ গল্পের জাতিগত বিভেদের দিকটিকে নির্দেশ করে।

সারকথা : উদ্দীপকে জাতিভেদের অসারতার কথা বলা হয়েছে। অন্যদিকে ‘বিলাসী’ গল্পেও লেখক জাতিভেদের দিকটি তুলে ধরে এর অসারতা বা ভিত্তিহীনতার প্রতি ইঙ্গিত করেছেন।

ঘ উচ্চতর দক্ষতা

“উদ্দীপকটি ‘বিলাসী’ গল্পের আংশিক ভাবের প্রতিনিধিত্ব করে।”- মন্তব্যটি যথার্থ।পৃথিবীতে সব মানুষ সমান। সবারই নির্বিশেষে মানুষে মানুষে সৌহার্দ্য-সম্প্রীতি গড়ে তুলতে হবে।উদ্দীপকে জাতিভেদের অসারতা তুলে ধরা হয়েছে। ধর্ম আলাদা হলেও সবার পরিচয় একটাই, আর তা হলো— সবাই মানুষ।

কারণ জাতিভেদ সৃষ্টি করা হলেও জন্ম ও মৃত্যুর ক্ষেত্রে এই ভেদাভেদের কোনো স্থান নেই। “বিলাসী’ গল্পে জাতিভেদের এ রূপটিই স্পষ্ট হয়ে ফুটে উঠেছে। মৃত্যুঞ্জয় মুমূর্ষু অবস্থায় পড়ে থাকলে বিলাসী সেবা-যত্ন করে তাকে সুস্থ করে তোলে। এক পর্যায়ে তারা ভালোবেসে বিয়ে করে। সমাজ এই বিয়ে মেনে নিতে পারে না। কারণ বিলাসী নিচু জাতের সামান্য সাপুড়ের

মেয়ে। ফলে তাদের ওপর নির্যাতন চালানো হয় এবং তাদের গ্রাম ছাড়তে বাধ্য করা হয়। কিন্তু তারা এসব জাত-পাতের ঊর্ধ্বে উঠে সংসার পাতে। এ বিষয়টি উদ্দীপকের মূলভাবের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ। কিন্তু এ ছাড়াও আলোচ্য গল্পে মৃত্যুঞ্জয়ের খুড়ার ষড়যন্ত্র, গ্রামবাসীর অমানবিকতার বিষয়গুলোও উঠে এসেছে, যেগুলো উদ্দীপকে নেই।

উদ্দীপকে ধর্মের দোহাই দিয়ে জাতিভেদ সৃষ্টি না করার কথা বলা হয়েছে। এখানে জন্ম-মৃত্যুর কাছে সবাই সমান এ কথা বলা হয়েছে। ‘বিলাসী’ গল্পে জাতিভেদের রূপটি স্পষ্ট হয়ে উঠলেও এ গল্পের বড় শিক্ষা হলো অসাম্প্রদায়িক মনোভাব ও মানবিক হওয়া। তবে গল্পের অন্যান্য বিষয় যেমন— তৎকালীন সমাজব্যবস্থা, শিক্ষাব্যবস্থা, সমাজের নানা অসংগতি ইত্যাদি উদ্দীপকে অনুপস্থিত। তাই বলা যায়, প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথার্থ।

সারকথা : উদ্দীপকে সাম্যচেতনা ও মানবতাবাদের প্রতি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। ‘বিলাসী’ গল্পেও লেখক সমাজের জাতিভেদের অসারতাকে তুলে ধরেছেন।

গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ও উত্তর অনুশীলন

উদ্দীপকের বিষয় : জাতবৈষম্য-এর আলোকে প্রণীত। এই কান্নাকাটিতে অধর অত্যন্ত বিরক্ত হইলেন। ছোঁড়াটা দিয়া বলিলেন, মা মরেচে ত যা নীচে নেবে দাঁড়া। ওরে কাঙালী সভয়ে প্রাঙ্গণে নামিয়া দাঁড়াইয়া কহিল, আমরা দুলে । অধর কহিলেন, দুলে! দুলের মড়ার কাঠ কি হবে শুনি?

ক. বড় বড় আমগাছে সমস্ত বাগানটা কিরূপ বোধ হচ্ছিল?
খ. “আমার মাথার দিব্যি রইল, এসব তুমি আর কখনো করো না।”— এ উক্তিটির কারণ ব্যাখ্যা কর ।
গ. উদ্দীপকের অধর রায় ‘বিলাসী’ গল্পের কোন চরিত্রের প্রতিনিধি?
ঘ. “উদ্দীপকটি ‘বিলাসী’ গল্পের আংশিক ভাব ধারণ করে”– তোমার উত্তরের পক্ষে যুক্তি দেখাও ।

জ্ঞান

বড় বড় আমগাছে সমস্ত বাগানটা একটা জমাট অন্ধকারের মতো বোধ হচ্ছিল।

অনুধাবন

সাপের ছোবলে মৃত্যুঞ্জয়ের মৃত্যু হলে বিলাসী ন্যাড়াকে সাপ-ধরা বা সাপের খেলা দেখাতে নিষেধ করে প্রশ্নোক্ত উক্তিটি করে। মৃত্যুঞ্জয় ন্যাড়ার সাপ ধরা নিয়ে অসাবধানতার ভয় সবসময়েই বিলাসীর মনে ছিল। সে জানত সাপ ভয়ংকর জানোয়ার। তাই সাপ ধরা আর সাপ খেলানোয় তাদের সতর্ক হতে বিলাসী সবসময়ই উপদেশ দিত। অবশেষে একদিন বিলাসীর কথাই মর্মান্তিকভাবে ফলে গেল। সাপের কামড়ে মৃত্যু হলো মৃত্যুঞ্জয়ের। মিথ্যা প্রতিপন্ন হলো সব মন্ত্রতন্ত্র, মাদুলি, কবচ, মনসার দোহাই ইত্যাদি। মৃত্যুঞ্জয়ের মৃত্যুর পর সাপ আর বিষ সম্পর্কে বিলাসীর ধারণা আরও বন্ধমূল হলো যে তা কতটা ভয়ংকর। তাই বিলাসী ন্যাড়াকে মাথার দিব্যি দিয়ে সাপ ধরতে বা সাপের খেলা দেখাতে নিষেধ করে বলেছিল, ‘আমার মাথার দিব্যি রইল, এসব তুমি আর কখনো করো না।’

সারকথা : ন্যাড়াকে স্নেহ করে বলে বিলাসী তাকে আলোচ্য উক্তিটি করে।

বিলাসী গল্পের সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর (এইচএসসি বাংলা ১মপত্র)

গ প্রয়োগ

উদ্দীপকের অধর রায় ‘বিলাসী’ গল্পের মৃত্যুঞ্জয়ের জ্ঞাতি খুড়া চরিত্রের প্রতিনিধি। বর্ণপ্রথা খুবই মারাত্মক একটি বিষয়। সমাজে একসময় এটি প্রকটভাবে প্রচলিত ছিল। যার ফলে উঁচু বংশীয় মানুষ নিচু বংশের মানুষদের ঘৃণা করত এবং বিভিন্নভাবে বৈষম্য বজায় রাখত। নিচু বংশের মানুষরাও নিজেদের অসহায় ভেবে মুখ বুজে সবকিছু সহ্য করত।

উদ্দীপকে অধর রায়কে দেখা যায় মা-মরা কাঙালীর প্রতি বিরক্তি প্রদর্শন করতে। কাঙালী মড়া ছুঁয়ে অধর রায়ের সামনে গেলে তাকে কোনো সমবেদনা না জানিয়ে বরং তাকে বলেছেন অপবিত্র অবস্থায় কোনো কিছু স্পর্শ না করতে। কারণ সে নিচু জাতের এবং মায়ের মৃতদেহ স্পর্শ করে এসেছে। শুধু তাই নয়, গোবরজল দিয়ে সবকিছু পুনরায় পবিত্র করে নেওয়া এবং কাঙালীকে নিচে নেমে দাঁড়ানোর জন্যও বলেন। অধর রায়ের এমন আচরণের মধ্য দিয়ে বর্ণবাদী ও বৈষম্যের বিষয়টি প্রকাশ পেয়েছে। বিলাসী’ গল্পে মৃত্যুঞ্জয়ের খুড়ার আচরণের মধ্য দিয়েও জাতি বৈষম্যের দিকটি প্রকাশ পেয়েছে। বিলাসী অসুস্থ মৃত্যুঞ্জয়ের সেবা করলে তিনি তার বিরোধিতা করেন।

গ্রামবাসীকে তিনি সোচ্চার করে তোলেন বিলাসী নিচু জাতের সাপুড়েকন্যা সেই বিষয়ে। মৃত্যুঞ্জয়কে সেবা করা এবং রান্না করে খাওয়ানোর বিষয়টি কোনোভাবেই সহ্য করেন না খুড়া। তাই এর প্রতিকারস্বরূপ বিলাসীকে অত্যাচার করে গ্রাম থেকে বিতাড়িত করার ব্যবস্থা করেন তিনি। উদ্দীপকের অধর রায় ও গল্পের খুড়র মধ্যে বর্ণ-বিদ্বেষ ও জাতি বৈষম্যের এ দিকটি প্রকটভাবে দেখা গেছে। তাই বলা যায়, উদ্দীপকের অধর রায় ‘বিলাসী’ গল্পের মৃত্যুঞ্জয়ের জ্ঞাতি খুড়া চরিত্রের প্রতিনিধি।

সারকথা : উদ্দীপকের অধর রায় এবং বিলাসী’ গল্পের মৃত্যুঞ্জয়ের খুড়ার মধ্যে বর্ণ-বিদ্বেষ ও জাতি বৈষম্যের দিকটি স্পষ্টভাবে দেখা গেছে।

ঘ উচ্চতর দক্ষতা

‘উদ্দীপকটি ‘বিলাসী’ গল্পের আংশিক ভাবকে ধারণ করে”- মন্তব্যটি যথার্থ।কোনো মানুষের প্রতি শ্রদ্ধা, সম্মান, ভালোবাসা জন্মে তার মার্জিত আচার-আচরণ ও হিতকর কাজের জন্য। মানুষের ধনসম্পত্তি, জাতি-বর্ণ দেখে কখনো মানুষকে ভালোবাসা যায় না। কারণ সবাই প্রথমে মানুষ, তারপরে তার আলাদা আলাদা পরিচয় থাকতে পারে।

উদ্দীপকে কাঙালীর সঙ্গে অধর রায় অত্যন্ত অমানবিক আচরণ করেন। তার মা মারা যাওয়ার পরে তাকে কোনো রকমের সমবেদনা না জানিয়ে বরং তার সঙ্গে বর্ণবাদী ও বৈষম্যমূলক করেন। “বিলাসী’ গল্পে অসুস্থ ও শয্যাশায়ী মৃত্যুঞ্জয়ের সেবা করে তাকে সুস্থ করে তোলে বিলাসী। মৃত্যুঞ্জয়ের খুঁড়া ও গ্রামের অন্যরা পরবর্তীতে তাদের বিয়ে ও সম্পর্কের বিষয়টি মেনে নেয় না। কিন্তু তারা দুজন জাতি-ধর্মের ঊর্ধ্বে উঠে নিজেদের মানুষ পরিচয় দিয়েছে।

বিলাসীর কাছে যেকোনো কিছুর চেয়ে মূল্যবান ছিল মৃতুঞ্জয়ের জীবন। মৃত্যুঞ্জয়ের কাছে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ ছিল বিলাসী। এজন্যই পরবর্তী সময়ে নিজের জাত ছেড়ে মৃত্যুঞ্জয় বিলাসীকে জীবনসঙ্গী করে সাপুড়ে পেশা গ্রহণ করে। গল্পে জাতি-বর্ণ সবকিছুকে ছাপিয়ে গেছে দুই মানব-মানবীর প্রেম ও ভালোবাসা। যেন তারা একে অন্যের পরিপূরক হয়েই বাঁচতে চেয়েছিল।

উদ্দীপকে শুধু জাতি বৈষম্যের দিকটি ফুটে উঠেছে। কিন্তু ‘বিলাসী’ গল্পে জাতি বৈষম্যের পাশাপাশি দুটি মহৎপ্রাণ হৃদয়ের ভালোবাসার দিকটি দেখা গেছে। গল্পে একসঙ্গে সেবাপরায়ণ নারী, আত্মত্যাগী মানবহৃদয়, জাতি বৈষম্য সবকিছুর পাশাপাশি একের প্রতি অন্যের স্নেহ-ভালোবাসা ও সম্মানের দিকটিও প্রকাশ পেয়েছে। এসব দিক উদ্দীপকে সম্পূর্ণরূপে অনুপস্থিত। তাই বলা যায়, উদ্দীপকটি ‘বিলাসী’ গল্পের আংশিক ভাব ধারণ করে।

সারকথা : উদ্দীপকে শুধু জাতি বৈষম্যের দিকটি ব্যক্ত হলেও ‘বিলাসী’ গল্পের প্রেক্ষাপট আরও বিস্তৃত। তাই উদ্দীপকটি গল্পের একটি অংশের ধারণা দেয়।

এই বিলাসী গল্পের সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর (এইচএসসি বাংলা ১মপত্র) ছাড়াও আরো পড়ুন

You cannot copy content of this page

Scroll to Top