অনিয়ন্ত্রিত মাইটোসিস

অনিয়ন্ত্রিত মাইটোসিস 

অনিয়ন্ত্রিত মাইটোসিস: কোষের অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক বিভিন্ন ফ্যাক্টর দ্বারা মাইটোসিস নিয়ন্ত্রিত হয়। কোনো কারণে এই নিয়ন্ত্রণ অকার্যকর হলে অনিয়ন্ত্রিত মাইটোসিস ঘটে থাকে, ফলে টিউমার ও ক্যান্সার সৃষ্টি হয়। ক্যান্সার অর্থ হলো ‘crab’ অর্থাৎ কাঁকড়া। ক্যান্সার কোষ আশপাশে ছড়িয়ে গেলে কাঁকড়ার সাঁড়াসি পায়ের মতোই দেখায়।

Read more:

ক্যান্সার কোষে সাইক্লিন-Cdk এর নিয়ন্ত্রণ বিনষ্ট হয়ে যায়। p53” নামক প্রোটিন সাধারণত কোষকে বিভাজন হতে বিরত রাখায় ভূমিকা রাখে। এটি defective হলে (মানুষের প্রায় অর্ধেক সংখ্যক কোষেই defective p53 আছে) কোষ চক্র নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। এর ফলে ক্যান্সার সৃষ্টি হয়। মানুষের অধিক হারে ক্যান্সার সৃষ্টি হওয়ার সম্ভবত এটি একটি কারণ।
অনিয়ন্ত্রিত মাইটোসিস

কোষ বিভাজনের জন্য কিছু গ্রোথ ফ্যাক্টর কাজ করে। ক্যান্সার কোষ তাদের গ্রোথ ফ্যাক্টর নিজেরাই তৈরি করে নেয়, অথবা বিভাজনের জন্য এদের কোনো গ্রোথ ফ্যাক্টর লাগে না। কোষ চক্র নিয়ন্ত্রণকারী দুধরনের প্রোটিন হচ্ছে—প্রোটিন কাইনেজ ও সাইক্লিন। টিউমার সৃষ্টি হওয়াকে বলা হয় Oncogenesis | কোষ চক্র বিনষ্টকারী জিন হলো Oncogene. যেসব রাসায়নিক পদার্থ ক্যান্সার সৃষ্টিতে উৎসাহিত করে তা হলো Mutagens। মিউটাজিনিক পদার্থই Carcinogenic (ক্যান্সার সৃষ্টিকারক) হয়। দেহের বিভিন্ন অংশে টিউমার ছড়িয়ে পড়া হলো Metastasis। বিভিন্ন প্রকার প্যাপিলোমা ভাইরাস ক্যানসার তৈরি করে। এ ভাইরাসের B ও B, জিন দুটি ক্যানসার তৈরি করে। 

কোষের মৃত্যু : বহুকোষী জীবদেহে প্রতিদিন অনেক কোষের মৃত্যু ঘটে। কোষ বিভাজনের মাধ্যমে তা পূরণ করতে হয়। মানবদেহে প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ কোষের মৃত্যু ঘটে। দুটি উপায়ে কোষে মৃত্যু ঘটে।

i. Necrosis : পুষ্টির অভাব হলে অথবা বিষাক্ত দ্রব্যের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হলে কোষ মরে যায়। 

ii. Apoptosis : এটি হলো কোষের জেনেটিক্যালি নিয়ন্ত্রিত মৃত্যু। কোনো কোষ জীবদেহ বা অঙ্গের জন্য এখন প্রয়োজন নেই তাই এদের ধ্বংস হতে হয়। যেমন মানুষের ভ্রূণাবস্থায় পাতলা টিস্যু দিয়ে হাতের সকল আঙ্গুল লাগানো থাকে। পরে মাঝখানের টিস্যু ধ্বংসের মাধ্যমে বিলুপ্ত হয়ে পাঁচটি আঙ্গুল পৃথক হয়। একটি কোষ যত বেশি দিন বাঁচবে ততই তা ক্ষতিগ্রস্ত (damage) হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেয় যা থেকে সহজেই ক্যান্সার হতে পারে।

তাই এদের ধ্বংস বা মৃত্যু হওয়া দরকার। এটি সাধারণত আমাদের রক্ত এবং অন্ত্রের এপিথেলিয়াল কোষের ব্যাপারে প্রযোজ্য, কারণ এরা প্রতিনিয়ত উচ্চমাত্রার বিষাক্ত পদার্থে উন্মুক্ত হয়। আমাদের দেহে প্রতিদিন যে লক্ষ লক্ষ কোষের মৃত্যু হয়, তার অধিকাংশই রক্ত কোষ ও অন্ত্রের এপিথেলিয়াম লাইনিং-এর কোষ। 

মাইটোটিক ইনডেক্স (Mitotic index) : কোনো টিস্যুর মোট কোষ সংখ্যা এবং মাইটোসিসরত কোষ সংখ্যার অনুপাত হলো মাইটোটিক ইনডেক্স (MI)। 

(MI) = মাইটোসিসরত কোষ সংখ্যা/ মোট কোষ সংখ্যা

চিকিৎসকের জন্য MI প্রয়োজন পড়ে। MI থেকে চিকিৎসক অনুমান করতে পারেন টিউমার কত তাড়াতাড়ি বৃদ্ধি পাবে। এবং এর জন্য কি ধরনের ট্রিটমেন্ট প্রয়োজন। উচ্চ MI বলে দেয় এটি দ্রুত বর্ধনশীল টিউমার। 

অ্যামাইটোসিস ও মাইটোসিসের মধ্যে পার্থক্য
পার্থক্যের বিষয়অ্যামাইটোসিস মাইটোসিস
১। দশা বা পর্যায় এটি সরল প্রকৃতির। কোষ বিভাজনে-এর কোনো দশা বা পর্যায় নেই। এটি তুলনামূলকভাবে জটিল ও ধারাবাহিক গতিশীল প্রক্রিয়া। এর বিভিন্ন দশা রয়েছে।
২। নিউক্লিয়াসের বিভাজন এ বিভাজনে নিউক্লিয়াস সরাসরি বিভাজিত হয়। এ বিভাজনে নিউক্লিয়াস বিভিন্ন দশার মাধ্যমে বিভাজিত হয়। 
৩ । বিভাজন প্রক্রিয়া এক্ষেত্রে নিউক্লিয়াস ও সাইটোপ্লাজম প্রায় একত্রে বিভাজিত হয়। এক্ষেত্রে প্রথমে নিউক্লিয়াসের (ক্যারিওকাইনেসিস) এবং পরে সাইটোপ্লাজমের (সাইটোকাইনেসিস) বিভাজন ঘটে।
৪। ফলাফল এর মাধ্যমে এককোষী জীবেরা বংশবিস্তার ঘটায়, দৈহিক বৃদ্ধিতে এর কোনো ভূমিকা নেই।  এর মাধ্যমে এককোষী জীবদের বংশবিস্তার এবং বহুকোষী জীবদেহে বৃদ্ধি, ক্ষয়পূরণ প্রভৃতি ঘটে। 
৫। বিভাজনের প্রকৃতিএ বিভাজনকে প্রত্যক্ষ বিভাজন বলে ।এ বিভাজনকে পরোক্ষ বিভাজন বলে।
৬। উদাহরণ ঈস্ট, ব্যাকটেরিয়া, প্রোটোজোয়া প্রভৃতি এককোষী জীবদেহে অ্যামাইটোসিস দেখা যায়। উন্নত উদ্ভিদ ও প্রাণিকোষে মাইটোসিস দেখা যায়।

এই অনিয়ন্ত্রিত মাইটোসিস ছাড়াও আরো জানুন

Leave a Comment

You cannot copy content of this page

Scroll to Top