আঠারো বছর বয়স কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর (এইচএসসি বাংলা ১মপত্র)

আঠারো বছর বয়স কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর (এইচএসসি বাংলা ১মপত্র)

আঠারো বছর বয়স কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর (এইচএসসি বাংলা ১মপত্র): শিক্ষার্থীরা তোমাদের বাংলা পদ্য তাহারেই মনে পড়ে এর সর্বশেষ বোর্ড প্রশ্ন উত্তরসহ এখানে দিয়েছি। আশাকরি তোমরা এখান থেকে প্রস্তুতি ও পরীক্ষার ধারণা নিতে পারবে।

আঠারো বছর বয়স কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর (এইচএসসি বাংলা ১মপত্র)

যশোর বোর্ড ২০১৯

মাদক গ্রহণের অপরাধ মাথায় নিয়ে পুলিশভ্যানে উঠে বসল সাজিদ। মা-বাবা, পাড়া-প্রতিবেশী কেউ কল্পনা করতে পারেনি এমন দৃশ্য তাদের দেখতে হবে। শুধু ভালো ছাত্র হিসেবে নয়, তার মতো সাহসী, প্রাতবাদী, পরোপকারী সর্বগুণের অধিকারী একটি ছেলেও খুঁজে পাবে না কেউ। বয়স্করা বলতেন, “আহা! এমন সোনার টুকরা যদি সবার ঘরে জন্মাত!” কান্নাজড়িত কণ্ঠে সাজিদের মা বলেন, “কিছুদিন ধরে অচেনা একটা ছেলে ওর সাথে দেখা করতে আসত। ভাবতে পারিনি এত বড় সর্বনাশ হবে আমার ছেলের।”

ক. ‘আকাল’ সুকান্ত ভট্টাচার্যের কী ধরনের রচনা?
খ. ‘তবু আঠারোর শুনেছি জয়ধ্বনি’— সপ্রসঙ্গ পঙ্ক্তিটি ব্যাখ্যা কর।
গ. ‘এ বয়সে কানে আসে কত মন্ত্রণা’- উক্তিটি সাজিদের ক্ষেত্রে কীভাবে প্রযোজ্য? বুঝিয়ে দাও।
ঘ. “আহা! এমন সোনার টুকরা যদি সবার ঘরে জন্মাত!” – ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতার শেষ পক্তির আলোকে উক্তিটি মূল্যায়ন কর।

জ্ঞান

‘আকাল’ সুকান্ত ভট্টাচার্য সম্পাদিত কাব্যগ্রন্থ।

আঠারো বছর বয়স কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর (এইচএসসি বাংলা ১মপত্র)

আরো পড়ুনঃ

খ অনুধাবন

“তবু আঠারোর শুনেছি জয়ধ্বনি’— পঙ্ক্তিটি দ্বারা তারুণ্যদীপ্ত চেতনার অনিবার্য জয়কে বোঝানো হয়েছে। ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতায় কবি তারুণ্যের নানা বৈশিষ্ট্য তুলে ধরে তারুণ্যের জয়গান গেয়েছেন। আঠারো বছর বয়সের তরুণরা চারপাশের অন্যায়-অত্যাচার, শোষণ-পীড়ন, সামাজিক বৈষম্য ও ভেদাভেদ দেখে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে।

তারা এসবের অবসানকল্পে কাজ করে এবং মানুষের কল্যাণে আত্মনিয়োগ করে। আঠারো বছর বয়স উত্তেজনায় প্রবল, আবেগে ঝুঁকিপূর্ণ, সাধনায় অটল, অবিরাম গতিতে জীবনসংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ে। তারা অদম্য দুঃসাহসে অন্যায়ের বিরুদ্ধে মাথা উঁচু করে দাঁড়ায় । প্রশ্নোক্ত পক্তির মাধ্যমে কবি তরুণদের এই জয়গাথা উপস্থাপন করেছেন ।

সারকথা : আঠারো বছর বয়সের তরুণরা প্রবল আবেগে জীবনসংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং জয়লাভ করে ।

গ প্রয়োগ

“এ বয়সে কানে আসে কত মন্ত্রণা”- উক্তিটি সাজিদের ক্ষেত্রে গভীরভাবে প্রযোজ্য। আঠারো বছর বয়সে মানুষ কৈশোর থেকে যৌবনে পদার্পণ করে। যৌবনের যেমন ইতিবাচক দিক রয়েছে তেমনই নেতিবাচক দিকও রয়েছে। কারণ সব রকম বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করে তারুণ্যশক্তিই দেশের জন্য নতুন কিছু করে।

উদ্দীপকে অন্য ছেলের প্ররোচনায় সাজিদের মাদকাসক্ত হয়ে পড়ার কথা বলা হয়েছে। তাই পুলিশ তাকে গ্রেফতার করেছে। অথচ সে ছিল সাহসী, প্রতিবাদী ও পরোপকারী। এখানে তারুণ্যের নেতিবাচক বৈশিষ্ট্য প্রকাশ পেয়ছে। এই বিষয়টি ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতায় প্রতিফলিত তারুণ্যের নেতিবাচক মনোভাবের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ। যৌবনের নেতিবাচক দিকগুলোর প্রতি আকৃষ্ট হয়ে অনেকেই সুন্দর জীবন ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়।

উদ্দীপকের সাজিদও তাই করেছে। তার কানে যে কুমন্ত্রণা এসেছে তা সে হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে গ্রহণ করেছে এবং মাদকাসক্ত হয়ে পড়েছে।

সারকথা : ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতায় নানা কুমন্ত্রণায় তরুণদের ইতিবাচক দিক থেকে নেতিবাচক দিকে ধাবিত হওয়ার কথা বলা হয়েছে। উদ্দীপকের সাজিদের বেলায় এর প্রতিফলন ঘটেছে।

আঠারো বছর বয়স কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর (এইচএসসি বাংলা ১মপত্র)

উচ্চতর দক্ষতা

“আহা! এমন সোনার টুকরা যদি সবার ঘরে জন্মাত!”— এ কথাটি ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতার শেষ পক্তি “এদেশের বুকে আঠারো আসুক নেমে”-এর মূলভাবের সঙ্গে একসূত্রে গাঁথা। আঠারো বছর বয়স জীবন গঠনের শ্রেষ্ঠ সময়। আবার এই বয়সেই তরুণরা নেতিবাচক প্রভাবে বিপথে পা বাড়ায়। সঠিক দিকনির্দেশনা ও সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যের অভাবেই এ বয়সের তরুণদের চারিত্রিক স্খলন ঘটে।

‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতায় কবি তারুণ্যের বৈশিষ্ট্য তুলে ধরে এর জয়গান গেয়েছেন। কবির মতে এই বয়সের ধর্ম হচ্ছে আত্মত্যাগের মহান মন্ত্রে উজ্জীবিত হওয়া, রক্তশপথ নিয়ে দেশের দুর্যোগে ঝাঁপিয়ে পড়া। পথ চলতে গিয়ে তরুণরা তারুণ্যের দৃপ্ত পদচারণায় সামনে এগিয়ে যায়। এই কারণে কবি এদেশের বুকে আঠারো নেমে আসার প্রত্যাশা করেছেন। কবির এই প্রত্যাশা উদ্দীপকে সাজিদ সম্পর্কে তার পাড়া-প্রতিবেশী বয়স্কদের বলা— ‘আহা! এমন সোনার টুকরা যদি সবার ঘরে জন্মাত!’ কথাটির মধ্যে প্রতিফলিত হয়েছে। সাজিদের পড়াশুনা, পরোপকারী মনোভাব, অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী চেতনা ও সাহসের জন্য তারা এই কথা বলেছেন। এখানে তারুণ্যের ইতিবাচক বৈশিষ্ট্যের প্রতিফলন ঘটেছে।

‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতায় কবি আঠারো বছর বয়সকে অন্যায়ের বিরুদ্ধে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর বয়স হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। উদ্দীপকের সাজিদের ইতিবাচক দিকটি কবির এই প্রত্যাশার সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ। তরুণদের অফুরন্ত প্রাণচঞ্চলতা, দুঃসাহসিকতার কাছে অন্যায়কারীরা মাথা নত করে। কারণ তরুণরা আপসহীন এবং রক্তমূল্য দিতেও তারা প্রস্তুত থাকে। এভাবে উদ্দীপক ও ‘আঠারো বছর বয়স কবিতায় তারুণ্যের ইতিবাচক দিকটির প্রতিফলন প্রত্যাশা করা হয়েছে।

সারকথা : ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতায় কবি তারুণ্যের যে বৈশিষ্ট্যের কথা বলেছেন তা উদ্দীপকের ‘সোনার টুকরা’ ছেলেদের বৈশিষ্ট্যের অনুরূপ।

আঠারো বছর বয়স কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর (এইচএসসি বাংলা ১মপত্র)

ঢাকা; যশোর; সিলেট; দিনাজপুর বোর্ড ২০১৮

আমরা চলি সম্মুখপানে
কে আমাদের বাঁধবে?
রইল যারা পিছুর টানে
কাঁদবে তারা কাঁদবে।
ছিঁড়ব বাধা রক্ত পায়ে,
চলব ছুটে রৌদ্রে ছায়ে
জড়িয়ে ওরা আপন গায়ে
কেবলই ফাঁদ ফাঁদবে।

ক. আঠারো বছর বয়স পদাঘাতে কী ভাঙতে চায়?
খ, “এ বয়স জানে রক্তদানের পুণ্য।”— এ কথার তাৎপর্য কী?
গ. উদ্দীপকের ভাবার্থের সাথে ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতার কোন দিকের সাদৃশ্য লক্ষণীয়? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকের বক্তব্য ও ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতার যে ভাবগত মিল রয়েছে, তা কোন অর্থে ইতিবাচক? মূল্যায়ন কর।

জ্ঞান

আঠারো বছর বয়স পদাঘাতে পাথর সমান বাধা ভাঙতে চায় ।

খ অনুধাবন

দেশ, জাতি মানবতার শুভ, সুন্দর ও কল্যাণে তরুণরাই রক্তমূল্য দিতে জানে। ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতায় কবি মানবজীবনের আঠারো বছর বয়সের বৈশিষ্ট্য তুলে ধরেছেন। অদম্য দুঃসাহসে সব বাধা-বিপদ পেরিয়ে যাওয়া এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর তারুণ্য শক্তিই প্রগতি ও পরিবর্তনের ধারক। তারুণ্যশক্তিই জরাগ্রস্ত সমাজ ভেঙে নতুন সমাজ গড়ে তুলতে পারে। দেশ, জাতি ও মানবতার জন্য তরুণরাই যুগে যুগে এগিয়ে গেছে সবচেয়ে বেশি।

জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দাঁড়িয়েছে সমস্ত বিপদ মোকাবিলায়। প্রাণ দিয়েছে অজানাকে জানার জন্য, দেশ ও জনগণের মুক্তি ও কল্যাণের সংগ্রামে। তরুণরাই সুন্দর, শুভ ও কল্যাণের জন্য রক্তমূল্য দিতে জানে।

সারকথা : যুগে যুগে দেশ, জাতি ও মানবতার মুক্তি ও কল্যাণে তরুণরাই রক্তমূল্য দিতে এগিয়ে গেছে।

গ প্রয়োগ

উদ্দীপকের ভাবার্থের সঙ্গে ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতার সব বাধা অতিক্রম করে দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাওয়ার সাদৃশ্য রয়েছে। তরুণরাই শক্তি ও সাহসের প্রতীক। তারা অফুরন্ত প্রাণশক্তির অধিকারী। তাই তারা সমস্ত বাধা-বিপত্তি পায়ে দলে আপন গতিতে এগিয়ে যায় । আত্মশক্তিবলে তারা স্বাধীনভাবে বাঁচতে চায়, অন্যকেও বাঁচাতে চায়। উদ্দীপকের কবিতাংশে তারুণ্যশক্তির প্রকাশ ঘটেছে। এখানে তরুণদের সমস্ত পিছুটান উপেক্ষা করে সামনে এগিয়ে যাওয়ার কথা

বলা হয়েছে। বলা হয়েছে তারা পিছুটান বোঝে না। সামনের দিকে চলার পথে তরুণদের দৃঢ়তা, সাহস ও প্রাণশক্তি নিয়ে এগিয়ে যায় বলে কেউ তাদের বাধা দিতে পারে না। এই বিষয়টি ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতায় প্রতিফলিত তারুণ্যের শক্তি ও স্বভাববৈশিষ্ট্যের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ। কবির মতে তরুণরা সমস্ত অন্যায়-অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে এবং ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য জীবন বাজি রাখে। তারা কাপুরুষতা বোঝে না, ভয় পেতেও জানে না।

অদম্য দুঃসাহসে সব বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে যাওয়াই তারুণ্যের বৈশিষ্ট্য। তারা যৌবনে পদার্পণ করেই আত্মপ্রত্যয়ী হয়ে ওঠে। তাদের অফুরন্ত প্রাণচঞ্চলতা, দুঃসাহসিকতার কাছে অন্যায়কারীরা মাথা নত করে। কারণ তারা আপসহীন এবং রক্তমূল্যদানে তাদের কোনো ভয় বা আক্ষেপ নেই। তাই বলা যায় যে, উদ্দীপকের ভাবার্থের সঙ্গে ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতার সব বাধা অতিক্রম করে দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাওয়ার সাদৃশ্য রয়েছে।

সারকথা : ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতায় কবি তারুণ্যের বৈশিষ্ট্যের কথা বলেছেন। এই বয়স কোনো অন্যায়কে প্রশ্রয় দেয় না এবং সমস্ত অনিয়ম, অন্যায়, অবিচারের প্রতিবাদ করে। তারা জীবন দিয়ে হলেও মানবকল্যাণে এগিয়ে আসে। উদ্দীপকেও এই বিষয়টি প্রকাশ পেয়েছে।

ঘ উচ্চতর দক্ষতা

তরুণরাই নতুন জীবন স্বপ্ন রচনা করে; এই বয়স জাতীয় জীবনের চালিকাশক্তি। এই বয়সের সেই শক্তি ও কর্মের ইতিবাচক দিকের ভাবগত মিল রয়েছে উদ্দীপকের বক্তব্য ও ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতার।

তরুণরা প্রাণের উদ্দামতায় পৃথিবীর সব বাধা-বিপত্তি দূর করে এগিয়ে চলে। নিজেদের নিয়ে ভাবার অবকাশ তাদের থাকে না। তারা দেশ ও জাতির মুক্তি ও উন্নতিকল্পে জীবন বাজি রাখে। তারা আত্মসচেতনভাবে স্বেচ্ছায় মানবকল্যাণে নিজেদের নিয়োজিত করে।

‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতায় কবি তারুণ্যের বৈশিষ্ট্য তুলে ধরে তারুণ্যশক্তির জয়গান গেয়েছেন। কবির মতে এই বয়সের ধর্মই হলো আত্মত্যাগের মহান মন্ত্রে উজ্জীবিত হওয়া, রক্তশপথ নিয়ে দেশের দুর্যোগে ঝাঁপিয়ে পড়া। পথ চলতে গিয়ে এই বয়স ভয়ে থেমে যায় না। উদ্দীপকের তরুণদের মধ্যে অনুরূপ বৈশিষ্ট্য লক্ষ করা যায়। তারা সম্মুখপানে এগিয়ে যায়, কেউ তাদের বেঁধে রাখতে পারে না। তারা প্রগতির পথে ধাবমান, তাই তাদের মনে আনন্দ। আর যারা পিছুর টানে পড়ে থাকে, চলতে পারে না, জড়তা তাদেরকে আচ্ছন্ন করে রেখেছে। তারাই পড়ে থাকবে, তাদের জন্য আছে কান্না।

উদ্দীপকে যারা পিছুর টানে সাড়া না দিয়ে সব বাধা অতিক্রম করে সামনে এগিয়ে যায়, তারা ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতার তারুণ্যশক্তির প্রতিনিধি । তারা তরুণ, তাদের কেউ রুখতে পারে না। উভয় ক্ষেত্রেই ভীরুতা পরিহার করে আপন শক্তিতে সামনে এগিয়ে চলার দল হলো তরুণরা। তারা মানবকল্যাণ সাধনে সচেতন। উদ্দীপকের তরুণরা রক্ত পায়ে বাধা-বিঘ্ন যাওয়ার যে শপথ নিয়েছে তা ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতার মানবকল্যাণে তরুণদের রক্তমূল্যদানের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ। তাই বলা যায় যে, এসব দিক দিয়ে ভাবগত মিল রয়েছে উদ্দীপকের বক্তব্য ও আলোচ্য কবিতার ।

সারকথা : উদ্দীপক ও ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতায় তারুণ্যের জয়গান করা হয়েছে। তরুণরাই পারে সমস্ত বাধা অতিক্রম করতে। এ বয়সেই মানুষ আত্মনির্ভরশীল হতে শেখে এবং মানবকল্যাণে আত্মনিয়োগ করে।

আঠারো বছর বয়স কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর (এইচএসসি বাংলা ১মপত্র)

রাজশাহী; কুমিল্লা, চট্টগ্রাম; বরিশাল বোর্ড ২০১৮

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে পাক-হানাদার বাহিনী নির্বিচারে অগণিত বাঙালিকে হত্যা করে। দেশে এমন অরাজকতা দেখে তরুণ যুবক রফিক আর চুপ থাকতে পারে না। অপরিসীম সাহস নিয়ে সে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। জীবনের মায়া ত্যাগ করে দেশ ও দশের কল্যাণে সে নিজেকে উৎসর্গ করে।

ক. ‘ছাড়পত্র’ কাব্যগ্রন্থটি কত সালে প্রকাশিত হয়?
খ. কবি কেন যৌবনশক্তির জয়গান করেছেন?
গ. উদ্দীপকের রফিক ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতার কোন বৈশিষ্ট্যের প্রতিনিধিত্ব করে ব্যাখ্যা কর।
ঘ. “আত্মত্যাগ ও মানবকল্যাণ আঠারো বছর বয়সের একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য”- উদ্দীপক ও ‘আঠারো বছর বয়স

কবিতার আলোকে উক্তিটির তাৎপর্য মূল্যায়ন কর।

ক জ্ঞান

‘ছাড়পত্র’ কাব্যগ্রন্থটি ১৯৪৮ সালে প্রকাশিত হয়।

খ অনুধাবন

কবি তারুণ্যের কল্যাণধর্মী কর্মকাণ্ডের দিকে আকৃষ্ট হওয়ার কারণে যৌবনশক্তির জয়গান করেছেন।

‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতায় কবি তারুণ্যের ধর্ম ও বৈশিষ্ট্য তুলে ধরেছেন। এই বয়সী তরুণরা সবচেয়ে বেশি দুঃসাহসী হয়।

তারা সবচেয়ে বেশি আঘাত সহ্য করতে পারে এবং তা প্রতিহত করতেও জানে। তরুণদের যৌবনে হৃদয়ে আবেগ আসে। সেই আবেগে ভর করে তারা মানবকল্যাণে অগ্রসর হয়। তাই তারা শত্রুর মুখোমুখি দাঁড়াতেও ভয় পায় না। যৌবনকাল মানুষের জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়। কবি তাই যৌবনশক্তির জয়গান করেছেন।

সারকথা : কবি তারুণ্যশক্তি দ্বারা জগতের বড় বড় কাজ সম্পাদন হতে দেখেছেন। ফলে তাদের সেই যৌবনশক্তির প্রতি আকৃষ্ট হয়ে তিনি এর জয়গান করেছেন ।

প্রয়োগ

উদ্দীপকের রফিক ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতার তারুণ্যশক্তি ও আত্মত্যাগী বৈশিষ্ট্যের প্রতিনিধিত্ব করে।

তরুণরা আত্মশক্তি দিয়ে সব বাধা-বিপত্তি দূর করে এগিয়ে চলে। যেকোনো ঝুঁকি নিতে তারা সবসময় প্রস্তুত থাকে। তারুণ্যশক্তি কোনোকিছুকেই ভয় পায় না। তারা নিজেদের সবসময় মানবকল্যাণে নিয়োজিত রাখে।

ঘ) উচ্চতর দক্ষতা

“আত্মত্যাগ ও মানবকল্যাণ আঠারো বছর বয়সের একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য”— উদ্দীপক ও ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতার আলোকে উক্তিটি তাৎপর্যপূর্ণ।

তরুণ বয়সে মানুষ পরনির্ভরতা ত্যাগ করে আত্মনির্ভরশীল হয়ে ওঠে। এ বয়সে নিশ্চল জড়জীবন পেছনে ফেলে তরুণরা দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলে। তারা অফুরান জীবনীশক্তি ও উচ্ছ্বাসে পূর্ণ; অগ্রগামী, মানবকল্যাণে ব্রত।

‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতায় কবি আঠারো বছর বয়সের বৈশিষ্ট্যগুলো তুলে ধরেছেন। এই বয়সের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে আত্মত্যাগের মহান মন্ত্রে উজ্জীবিত হওয়া। দেশ, জাতি ও মানবতার জন্য যুগে যুগে এই বয়সের মানুষই এগিয়ে গেছে। এই বয়সের তরুণরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সমস্ত বিপদ মোকাবিলা করতে এগিয়ে আসে। দেশ ও জনগণের মুক্তি ও কল্যাণের জন্য

তারা জীবন উৎসর্গ করে। উদ্দীপকে তরুণ রফিকের মধ্যেও এই বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এদেশে হত্যাযজ্ঞ শুরু করলে সেও চুপ থাকতে পারে না। সে আত্মত্যাগের মহান মন্ত্রে উজ্জীবিত হয়ে দেশ ও জনগণের কল্যাণে নিজের জীবন বাজি রেখে মহান মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে।

‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতায় কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য তারুণ্যের বৈশিষ্ট্য তুলে ধরেছেন। কবির মতে এই বয়স অদম্য দুঃসাহসে সব বাধা-বিপদ পেরিয়ে যাওয়ার এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর বয়স। এই বয়সের ধর্ম হলো আত্মত্যাগের মহান মন্ত্রে উজ্জীবিত হওয়া রক্তশপথ নিয়ে আঘাত-সংঘাতের মধ্যে ঝাঁপিয়ে পড়া। উদ্দীপকের রফিক দেশে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে চুপ করে থাকতে পারে না। সে দেশকে স্বাধীন করতে মুক্তির মন্ত্রে উজ্জীবিত হয় এবং অদম্য সাহসে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে।

এভাবে উদ্দীপকের রফিক ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতার তারুণ্যশক্তি ও আত্মত্যাগী বৈশিষ্ট্যের প্রতিনিধিত্ব করে।

সারকথা : উদ্দীপকে স্বদেশের স্বাধীনতার জন্য তারুণ্যশক্তিতে বলীয়ান হয়ে এক তরুণের আত্মত্যাগের মানসিকতা প্রকাশ পেয়েছে। উদ্দীপকের ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতায় কবি আঠারো বছর বয়সের অনেক বৈশিষ্ট্য তুলে ধরেছেন। আত্মত্যাগ মানবকল্যাণ এসব বৈশিষ্ট্যের মধ্য অন্যতম। উদ্দীপকের রফিকের মধ্যেও এই বৈশিষ্ট্যের প্রকাশ ঘটেছে। কারণ রফিকও আত্মত্যাগ ও মানবকল্যাণ মন্ত্রে উজ্জীবিত হয়ে স্বদেশকে মুক্ত করার লক্ষ্যে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে। তাই বলা যায় যে, প্রশ্নোক্ত উক্তিটি উদ্দীপক ও আলোচ্য কবিতার আলোকে তাৎপর্যপূর্ণ।

সারকথা : মানবকল্যাণে আত্মনিবেদন স্বদেশের জন্য আত্মত্যাগের মানসিকতা আঠারো বছর বয়সের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। এই কারণে কবি স্বদেশের বুকে আঠারোর নেমে আসার প্রত্যাশা করেছেন। উদ্দীপকের রফিকের মধ্যেও এই বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান। এই দিক থেকে প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি তাৎপর্যপূর্ণ।

আঠারো বছর বয়স কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর (এইচএসসি বাংলা ১মপত্র)

কুমিল্লা বোর্ড ২০১৭

ওরে নবীন ওরে আমার কাঁচা
ওরে সবুজ, ওরে অবুঝ
আধ-মরাদের ঘা মেরে তুই বাঁচা
রক্ত আলোর মদে মাতাল ভোরে
আজকে যে যা বলে বলুক তোরে,
সকল তর্ক হেলায় তুচ্ছ করে
পুচ্ছটি তোর উচ্চে তুলে নাচা।
আয় দুরন্ত, আয়রে আমার কাঁচা।

ক. সুকান্ত ভট্টাচার্য মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত কোন পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন?
খ. “এদেশের বুকে আঠারো আসুক নেমে”- পঙ্ক্তিটির তাৎপর্য ব্যাখ্যা কর।
গ. “উদ্দীপকে ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতায় বর্ণিত বিষয়ের আংশিক প্রতিফলন ঘটেছে”- উক্তিটি বিচার কর ।
ঘ. ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতায় এবং উদ্দীপকে মূলত তারুণ্যেরই জয়গান গাওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে তোমার মতামত দাও।

ক) সুকান্ত ভট্টাচার্য মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত ‘দৈনিক স্বাধীনতা’ পত্রিকার ‘কিশোরসভা’ অংশের সম্পাদক ছিলেন।

খ অনুধাবন

তরুণরাই আগামী দিনের চালিকাশক্তি। কবি এ দেশে সেই তারুণ্যশক্তিকে কামনা করেছেন।বিপ্লবী তরুণ কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য বাংলাদেশে আঠারো বছর বয়সের তরুণদের আবির্ভাব কামনা করেছেন। কারণ কবি আশা করেন, এ বয়সের তরুণ প্রাণ এ দেশটাকে সত্য, সুন্দর ও কল্যাণময় করে গড়ে তুলবে; অত্যাচার, উৎপীড়ন প্রতিহত করবে; মহৎ সৃষ্টির আনন্দে উদ্বেলিত হবে। কবির প্রার্থনা, এসব বৈশিষ্ট্য নিয়ে যেন দেশের কল্যাণে, মানবতার সেবায়, জাতীয় জীবনের চালিকাশক্তিরূপে এ দেশের বুকে আঠারো বছরের অর্থাৎ তারুণ্যের আবির্ভাব ঘটে।

সারকথা : খ্যাতি ও অগ্রগতির পথে ধাবমান তরুণরা কোনো বাধা মানে না- কবি এ দেশে সেই তরুণদের আবির্ভাব কামনা করেছেন।

ক) “উদ্দীপকে ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতায় বর্ণিত বিষয়ের আংশিক প্রতিফলন ঘটেছে”— উক্তিটি যথার্থ।

মানুষের জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান সময় আঠারো বছর বয়স। এই বয়সে মানুষ আত্মশক্তি অর্জন করে, স্বাধীনভাবে বাঁচতে শেখে । পৃথিবীকে সুন্দর ও উন্নত করতে পৃথিবীর ইতিবাচক পরিবর্তনের যথার্থ কর্মতৎপরতা এই বয়সেই শুরু হয় । উদ্দীপকের কবিতাংশে কবি নবীনের কাছে তাঁর প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন। কবি নবীন ও সবুজদের কল্যাণকর কাজে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন।

তাই তিনি তাদেরকে আধ-মরাদের ঘা মেরে বাঁচানোর কথা বলেছেন। উদ্দীপকের কবির প্রত্যাশা ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতার ‘এদেশের বুকে আঠারো আসুক নেমে’ চরণটির সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। তবে এই বিষয়টি ছাড়াও আলো কবিতায় আরও বলা হয়েছে আঠারো বছর বয়সেই মানুষ আত্মপ্রত্যয়ী হয়ে আত্মনির্ভরতা অর্জন করে এবং সমস্ত অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে সত্য ও সুন্দর সমাজ গঠনে এগিয়ে আসে। এই সময় মানুষ স্বাধীনভাবে চলার ঝুঁকি নেয়, দেশ ও জনগণের মুক্তির সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ে। এই বিষয়গুলো উদ্দীপকে প্রতিফলিত হয়নি। তাই বলা যায়, প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি সঠিক ।

সারকথা : উদ্দীপকে কবি নবীনদের কাজের অন্তরায় এবং তাদের নেতিবাচক প্রভাবের কথা কিছুই বলেননি। কিন্তু ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতায় কবি নেতিবাচক প্রভাবের দিকে ইঙ্গিত করে এই বয়সকে ‘দুর্যোগে হাল ঠিকমতো রাখা ভার’ বলে উল্লেখ করেছেন।

ঘ) উচ্চতর দক্ষতা

‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতায় এবং উদ্দীপকে মূলত তারুণ্যেরই জয়গান গাওয়া হয়েছে।- মন্তব্যটি যৌক্তিক।

তারুণ্যের শক্তি কোনো বাধা মানে না। তরুণরা দেহ ও মনের স্থবিরতা, জরাজীর্ণতা অতিক্রম করে দুর্বার গতিতে এগিয়ে যায়।

তারা দুর্লঙ্ঘ পর্বত, সীমাহীন বিপদসংকুল সাগরপথ পার হয়ে অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছতে চায়।

‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতায় তারুণ্যশক্তির দুর্বার এগিয়ে চলার বিষয় বর্ণিত হয়েছে। যৌবনের উদ্দীপনা, সাহসিকতা, ঝুঁকি নেওয়ার মানসিকতা এবং কল্যাণব্রত রয়েছে এই বয়সের মধ্যে। এই বয়সেই তরুণরা ভালো-মন্দ, ইতিবাচক-নেতিবাচক নানা তত্ত্ব, মতবাদ, ভাবধারার সঙ্গে পরিচিত হতে শুরু করে। উদ্দীপকের কবিতাংশেও কবি যে নবীনদের জয়গান গেয়েছেন তারাও আধ-মরাদের ঘা দিয়ে সজাগ করার জন্য উপযুক্ত। তারা ভেঙে আবার গড়তে জানে।

‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতায় কবি সমস্ত দুর্যোগ-দুর্বিপাক মোকাবিলা করার অদম্য প্রাণশক্তিসম্পন্ন আঠারো বছর বয়সী তরুণদের বৈশিষ্ট্য তুলে ধরেছেন। উদ্দীপকের কবিতাংশে নবীনদের কাছে কবির যে প্রত্যাশা তা আলোচ্য কবিতায়ও প্রতিফলিত। এদিক বিবেচনায় তাই বলা যায়, প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথার্থ।

সারকথা : তরুণদের স্বভাববৈশিষ্ট্য তাদেরকে এগিয়ে নিয়ে যায় দেশ, জাতি ও মানবতার কল্যাণের পথে। তারুণ্যশক্তি সব অন্যায়, ভেদাভেদ ঘুচিয়ে জগতে সত্যের আলো, শান্তির আলো ছড়িয়ে দেয়। উদ্দীপকের কবিতাংশ এবং আলোচ্য কবিতায় এই তরুণদের জয়গান গাওয়া হয়েছে।

সৃজনশীল প্রশ্ন

সুজন ও সাধন সহপাঠী এবং লেখাপড়ায় বেশ ভালো। স্কুল জীবন পার হতে না হতেই সুজন মিশে যায় কিছু অসৎ বন্ধুর সাথে । লেখা-পড়ার পাঠ চুকে যায় ওখানেই। তার নাম শুনলে মানুষ আঁতকে উঠে। অপর দিকে সাধন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছে। ভাষা আন্দোলন শুরু হলে সে তাতে ঝাঁপিয়ে পড়ে- মিছিলে সে নেতৃত্ব দেয় । সংগঠিত করে সহপাঠীদের, আর প্রতিজ্ঞা করে – জীবন দিয়ে হলেও মাতৃভাষার মান রক্ষা করবেই।

ক. কোন বয়সে দুঃসাহসেরা উঁকি দেয়?
খ. “বাষ্পের বেগে স্টিমারের মতো চলে।”— একথা দিয়ে সুকান্ত ভট্টাচার্য কী বোঝাতে চেয়েছেন?
গ. উদ্দীপকের সুজনের মাঝে ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতার কোন দিকটি ফুটে উঠেছে?
ঘ. উক্ত দিকটি কি ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতার মূলভাব— তোমার মতের পক্ষে যুক্তি দিয়ে বিচার কর।

ক জ্ঞান

আঠারো বছর বয়সে দুঃসাহসেরা উঁকি দেয়।

খ অনুধাবন

“বাষ্পের বেগে স্টিমারের মতো চলে।”— একথা দিয়ে কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য আঠারো বছর বয়সী তরুণ প্রাণের গতিবেগকে বুঝিয়েছেন।

জাতি ও মানবতার জন্য যুগে যুগে তরুণরাই এগিয়ে যায়। তাদের রয়েছে উত্তেজনা, আবেগ আর উচ্ছ্বাসের প্রবল বেগ। এই বেগে তারা সব বাধা-বিপদ উপেক্ষা করে সামনের দিকে এগিয়ে চলে। সমস্ত দুর্যোগ আর দুর্বিপাক তারা মোকাবিলা করে তাদের অদম্য প্রাণশক্তিতে। প্রশ্নোক্ত চরণে এই তারুণ্যের দুর্দান্ত গতিবেগকেই কবি বোঝাতে চেয়েছেন।

সারকথা : তরুণদের প্রাণের আবেগ আর অদম্য প্রাণশক্তি সম্পর্কে কবি আলোচ্য কথাটি বলেছেন।

গ প্রয়োগ

উদ্দীপকের সুজনের মাঝে ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতায় উল্লেখকৃত আঠারো বছর বয়সের ভয়ংকর রূপটি ফুটে উঠেছে। কৈশোর থেকে যৌবনে পদার্পণের বয়সটিই যৌবন বা তারুণ্য। এই বয়সই জীবন গঠনের শ্রেষ্ঠ সময়। সঠিক দিকনির্দেশনায়, কাঙ্ক্ষিত আদর্শে এই বয়স পরিচালিত হলে তা সমাজ ও দেশের জন্য কল্যাণ বয়ে আনে। আর সঠিক দিকনির্দেশনা ও সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যের অভাবেই এই বয়সের তরুণদের চারিত্রিক স্খলন ঘটে। তখন তারা সমাজ ও দেশের জন্য বিভীষিকারূপে আবির্ভূত হয়।

‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতায় কবি বলেছেন যে, আঠারো বছর বয়স বহু ইতিবাচক বৈশিষ্ট্যে চিহ্নিত। এই বয়সই আবার নেতিবাচক হয়ে উঠতে পারে। সচেতন ও সচেষ্ট হয়ে জীবন পরিচালনা করতে না পারার ব্যর্থতায় জীবন হয়ে উঠতে পারে দুর্বিষহ। এই দুর্বিষহ জীবন

সমাজের জন্য বয়ে আনে অমঙ্গল আর অভিশাপ । উদ্দীপকের সুজনের মধ্যে আঠারো বছর বয়সের এই নেতিবাচকতা লক্ষণীয়। স্কুলজীবন শেষ না হতেই অসৎ বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে সে নষ্ট হয়ে যায়। সবাই তাকে ভয় করে, তার কথা শুনলে আঁতকে ওঠে।

সারকথা : উদ্দীপকের সুজনের মাঝে ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতায় উল্লেখকৃত আঠারো বছর বয়সের নেতিবাচক দিক ফুটে উঠেছে।

ঘ) উচ্চতর দক্ষতা

না, উক্ত দিকটি ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতার মূলভাব নয়। কারণ উক্ত ভাব ছাড়াও ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতায় আরও কিছু বিষয় ও ভাব প্রতিফলিত হয়েছে।

তরুণরা উজ্জীবনের প্রতীক। তারা জগতের শুভ, সুন্দর ও কল্যাণের জন্য সাহস ও শক্তি নিয়ে এগিয়ে যায়। পথের কোনো বাধাই তাদের কল্যাণ পথের অন্তরায় হতে পারে না। তরুণরা নব-মূল্যবোধ এবং পৃথিবীর মঙ্গলের জন্য মিথ্যা ও ক্ষতিকর সংস্কারকে অস্বীকার করে।

‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতায় আঠারো বছর বয়সের বৈশিষ্ট্য ও ইতিবাচক দিক তুলে ধরা হয়েছে। উদ্দীপকে ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতার তারুণ্যের প্রদীপ্ত চেতনা ও ইতিবাচক দিক প্রতিফলিত হয়েছে। তরুণরা কীভাবে বুকের রক্ত ঢেলে দিয়ে মাতৃভাষাকে সম্মানের আসনে প্রতিষ্ঠিত করেছে তা তুলে ধরা হয়েছে। এই চেতনাটি ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতায় প্রতিফলিত তারুণ্যের চেতনার সঙ্গে অভিন্ন। কিন্তু কবিতায় আঠারো বছর বয়সের যে নেতিবাচক দিকের ইঙ্গিত করা হয়েছে তা উদ্দীপকে প্রতিফলিত হয়নি। এই বয়সে যথার্থ পথ থেকে বিচ্যুত হওয়ার যে ভয় থাকে তা এখানে প্রকাশ পায়নি।

‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতায় প্রতিফলিত তারুণ্যের জয়গানের দিকটি উদ্দীপকে অভিন্নভাবে প্রকাশ পেয়েছে। কিন্তু আঠারো বছর বয়সে যে দুর্যোগের কথা বলা হয়েছে সেই বিষয়ে উদ্দীপকে ইঙ্গিত করা হয়নি। এই বয়সে পদস্খলনের যে বিষয়টি কবিতায় আছে, তা উদ্দীপকে নেই। আমার মতে— উক্ত দিকটি, ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতার মূলভাব নয়।

সারকথা : চেতনার দিক থেকে উদ্দীপকের চেতনা ও ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতার চেতনা অভিন্ন। কিন্তু এই বয়স সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে যে তরুণদের জীবনে নানা সংকট ও জটিলতা নেমে আসতে পারে সেই ক্ষেত্রে অভিন্ন।

এই আঠারো বছর বয়স কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর (এইচএসসি বাংলা ১মপত্র) ছাড়াও আরো পড়ুন

You cannot copy content of this page

Scroll to Top