আমি কিংবদন্তির কথা বলছি সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর (এইচএসসি বাংলা ১মপত্র)

আমি কিংবদন্তির কথা বলছি সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর (এইচএসসি বাংলা ১মপত্র)

আমি কিংবদন্তির কথা বলছি সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর (এইচএসসি বাংলা ১মপত্র): শিক্ষার্থীরা তোমাদের বাংলা পদ্য তাহারেই মনে পড়ে এর সর্বশেষ বোর্ড প্রশ্ন উত্তরসহ এখানে দিয়েছি। আশাকরি তোমরা এখান থেকে প্রস্তুতি ও পরীক্ষার ধারণা নিতে পারবে।

আমি কিংবদন্তির কথা বলছি সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর (এইচএসসি বাংলা ১মপত্র)
আমি কিংবদন্তির কথা বলছি সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর (এইচএসসি বাংলা ১মপত্র)

প্রশ্ন ০১ এবং উত্তর

  1. মোরা একটি ফুলকে বাঁচাবো বলে যুদ্ধ করি
  2. মোরা একটি মুখের হাসির জন্য অস্ত্র ধরি
  3. মোরা নতুন একটি কবিতা লিখতে যুদ্ধ করি
  4. .মোরা নতুন একটি গানের জন্য যুদ্ধ করি
  5. মোরা একখানা ভালো ছবির জন্য যুদ্ধ করি
  6. .মোরা সারা বিশ্বের শান্তি বাঁচাতে আজকে লড়ি


ক. প্রবহমান নদী কাকে ভাসিয়ে রাখে?
খ. ‘ভালোবাসা দিলে মা মরে যায়’ বলতে কবি কী বোঝাতে চেয়েছেন?
গ. ‘উনোনের আগুনে আলোকিত একটি উজ্জ্বল জানালার কথার’ সাথে উদ্দীপকের চেতনার ঐক্য নির্দেশ কর।
ঘ. উক্ত ঐক্যের প্রেক্ষাপট ‘আমি কিংবদন্তির কথা বলছি’ কবিতায় কতটুকু সার্থক— মন্তব্যটির মূল্যায়ন কর।

উত্তর

ক) প্রবহমান নদী যে সাঁতার জানে না তাকেও ভাসিয়ে রাখে.

Read More:

ক) ‘ভালোবাসা দিলে মা মরে যায়’ বলতে কবি পরিবারকে ভালোবেসে পারিবারিক গণ্ডিতে আবদ্ধ থাকলে কবির মাতৃসম স্বদেশের ওপর যে নির্মমতা নেমে আসে সেই বিষয়টি বুঝিয়েছেন ।

সারকথা : মুক্ত জীবনের চেতনায় আগুনে আলোকিত একটি উজ্জ্বল জানালার কথার সঙ্গে উদ্দীপকের ঐক্য রয়েছে।

গ প্রয়োগ

‘উনোনের আগুনে আলোকিত একটি উজ্জ্বল জানালার কথার’ সঙ্গে উদ্দীপকের ঐক্য হলো মুক্ত জীবনের প্রত্যাশার চেতনা। প্রত্যেক মানুষই স্বাধীনভাবে বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখে। পরাধীনতা কারওই ভ্রান্তি; দুঃখ-বেদনা মুছে ফেলতে চায়, ভেঙে গুঁড়িয়ে দিতে চায় সব অপশক্তি।

‘আমি কিংবদন্তির কথা বলছি’ কবিতায় ‘উনোনের আগুনে আলোকিত একটি উজ্জ্বল জানালার কথা’র চরণের মধ্য দিয়ে মুক্ত জীবনের আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত হয়েছে। আগুন সবকিছু শুচি-শুদ্ধ করে তোলে। আগুনের উত্তাপেই মুছে যাবে মানুষের জীবনের সব গ্লানি। মানুষ এক মুক্ত জীবনের সন্ধান পাবে । উদ্দীপকেও একটি নতুন দিনের সূচনা, মুক্ত জীবনের প্রত্যাশার কথা বলা হয়েছে।

আর এই কারণেই মানুষ অস্ত্র ধারণ করে যুদ্ধ করে ।

মা ও মাতৃভূমি একসূত্রে গাঁথা। মাকে ভালোবেসে পরিবারের গণ্ডিতে আবদ্ধ থাকলে দেশরক্ষা হয় না। দেশকে শত্রুর আক্রমণ থেকে রক্ষা করতে হলে প্রিয়জনের প্রতি স্নেহ-মায়া, ভালোবাসার বন্ধন ছিন্ন করে শত্রুর বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে হয়। তা না হলে দেশমাতাকে পরাধীনতা থেকে মুক্ত করা যায় না। সে মৃত্যুপথের যাত্রী হয়ে যায়।

সারকথা : পরিবারের আপনজনদের ভালোবাসায় আবদ্ধ থাকলে দেশমাতার ভাগ্যাকাশে নেমে আসে মৃত্যুর বিভীষিকা ।

ঘ উচ্চতর দক্ষতা

উক্ত ঐক্যের প্রেক্ষাপট ‘আমি কিংবদন্তির কথা বলছি’ কবিতায় অনেকাংশে সার্থক। তবে সম্পূর্ণ সার্থক নয়। কারণ কবিতায় প্রতিফলিত এই ঐক্যের বাইরেও আরও বিষয় অনুষঙ্গ বিদ্যমান।

মানবসভ্যতার ইতিহাসে বাঙালিকে বহু ঘাত-প্রতিঘাত পার হয়ে তার অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে হয়েছে। মানুষ প্রতিনিয়তই ঐক্যবদ্ধ হয়ে কঠিন বাধা অতিক্রম করেছে। বাঙালিও তাদের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র শক্তির ঐক্য সাধন করে মুক্তির পথে এগিয়ে গিয়ে একসময় চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করেছে।

উদ্দীপকে ইতিবাচক দিকে মানুষের ঐক্যবদ্ধ শক্তির প্রয়োগ ও কাঙ্ক্ষিত অর্জনের কথা বলা হয়েছে। এখানে জাতীয় মুক্তি অর্জনের যে চেতনা প্রতিফলিত হয়েছে তা ‘আমি কিংবদন্তির কথা বলছি’ কবিতায় প্রতিফলিত ঐক্যবদ্ধ চেতনার সঙ্গে একসূত্রে গাঁথা। কিন্তু কবিতায় সেই

ঐক্যবদ্ধ শক্তি অর্জনের প্রেক্ষাপট এবং পূর্বপুরুষের দাসত্বের পরিণামের যে দিক তুলে ধরা হয়েছে তা উদ্দীপকে সম্পূর্ণরূপে উপস্থাপিত হয়নি। এই দিক বিচারে উক্ত ঐক্যের প্রেক্ষাপটকে কবিতায় প্রতিফলিত প্রেক্ষাপটের সম্পূর্ণ অভিন্ন রূপ হিসেবে ধরা যায় না।

‘আমি কিংবদন্তির কথা বলছি’ কবিতায় কবি তাঁর পূর্বপুরুষের অবস্থা এবং তা থেকে উত্তরণের উপায় সম্পর্কে তাঁর চেতনাদীপ্ত বক্তব্য উপস্থাপন করেছেন। কবির এই বক্তব্যে যে ঐক্যের কথা বলা হয়েছে, তা উদ্দীপকের ঐক্যের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ। কিন্তু কবির সেই ঐক্যের প্রেক্ষাপটের নেপথ্য কাহিনি যেভাবে উপস্থাপিত হয়েছে উদ্দীপকে সেভাবে তা স্পষ্ট হয়ে ওঠেনি। এই কারণেই তা পুরোপুরি সার্থক নয়।

সারকথা : উদ্দীপক ও কবিতায় প্রতিফলিত ঐক্যের প্রেক্ষাপট একসূত্রে গাঁথা হলেও দুটোই সমানভাবে স্পষ্টতা পায়নি। এ কারণেই এ দুইয়ের মধ্যে সার্থকতার দিকটিও কিছুটা ভিন্ন।

ঢাকা; যশোর; সিলেট; দিনাজপুর বোর্ড ২০১৮

পরিচয়ে আমি বাঙালি, আমার আছে ইতিহাস গর্বের
কখনই ভয় করিনিকো আমি উদ্যত কোনো খড়গের।
শত্রুর সাথে লড়াই করেছি, স্বপ্নের সাথে বাস;
অস্ত্রেও শান দিয়েছি যেমন শস্য করেছি চাষ;
একই হাসি মুখে বাজিয়েছি বাঁশি, গলায় পড়েছি ফাঁস
আপস করিনি কখনই আমি— এই হলো ইতিহাস।

ক. ‘কিংবদন্তি’ শব্দের অর্থ কী?
খ. “তাঁর পিঠে রক্তজবার মতো ক্ষত ছিল।”— বুঝিয়ে লেখ।
গ. উদ্দীপকের ইতিহাস প্রসঙ্গ এবং ‘আমি কিংবদন্তির কথা বলছি’ কবিতায় ঐতিহ্যচেতনার সাদৃশ্য নির্দেশ কর।
ঘ. “উদ্দীপকে প্রতিফলিত সংগ্রামী চেতনা যেন ‘আমি কিংবদন্তির কথা বলছি’ কবিতার ভাবসত্যের সংহত রূপ।”- এ অভিমত মূল্যায়ন কর।

২নং প্রশ্নের উত্তর

ক) ‘কিংবদন্তি’ শব্দের অর্থ জনশ্রুতি।

খ) “তাঁর পিঠে রক্তজবার মতো ক্ষত ছিল” কথাটি দ্বারা বিদেশি শাসক দ্বারা কবির পূর্বপুরুষদের নির্যাতিত হওয়াকে বোঝানো হয়েছে।

‘আমি কিংবদন্তির কথা বলছি’ কবিতায় কবি বিদেশি শত্রু-শাসকদের অধীনে তাঁর পূর্বপুরুষের দাসত্বের যন্ত্রণা, শরীরে আঘাতের ক্ষতচিহ্ন এবং তা থেকে উত্তরণের চেতনা তুলে ধরেছেন। কবির পূর্বপুরুষের ওপর শত্রুরা পেছন থেকে যে আঘাত করেছিল, তা এখনও উজ্জ্বল। কবি সেই আঘাতের চিহ্নকে রক্তজবার মতো ক্ষতের সঙ্গে তুলনা করেছেন।

সারকথা : কবির পূর্বপুরুষরা বিদেশি শত্রুদের নির্মম আঘাতে রক্তাক্ত হয়েছেন। তাঁদের পিঠে রক্তজবার মতো ক্ষতচিহ্ন ছিল।

গ প্রয়োগ

উদ্দীপকের ইতিহাস প্রসঙ্গে এবং ‘আমি কিংবদন্তির কথা বলছি’ কবিতায় ঐতিহ্যচেতনার মধ্যে সাদৃশ্য বিদ্যমান।

ইতিহাসের ঘটনাপ্রবাহের মধ্য দিয়ে কোনো জাতি তার অতীত সম্পর্কে জানতে পারে। অতীত ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়ে জাতি ভবিষ্যতের ব্যাপারে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।

উদ্দীপকে বাঙালির আত্মপরিচয়ের দিকটি তুলে ধরা হয়েছে। এতে বাঙালির সংগ্রামী ইতিহাস যেমন আছে তেমনি বাঙালির ফসল ফলানোর

নিষ্ঠা, বাঁশি বাজানোর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এবং হাসিমুখে স্বদেশের জন্য প্রাণদানের বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে। এই বিষয়টি ‘আমি কিংবদন্তির

কথা বলছি’ কবিতায় প্রতিফলিত ইতিহাস-ঐতিহ্যের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ। সেখানে নির্যাতিত হয়েও বাঙালি স্বাধীনতার স্বপ্ন হারায়নি।

অধিকারসচেতন হয়ে শত্রুর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে। উদ্দীপকের ইতিহাস প্রসঙ্গ এবং আলোচ্য কবিতার ঐতিহ্যচেতনার সাদৃশ্য রয়েছে।

সারকথা : উদ্দীপকে বাঙালির ইতিহাস-ঐতিহ্যের যে বিষয় তা আলোচ্য কবিতায় প্রতিফলিত হয়েছে।

ঘ উচ্চতর দক্ষতা

“উদ্দীপকে প্রতিফলিত সংগ্রামী চেতনা যেন ‘আমি কিংবদন্তির কথা বলছি’ কবিতার ভাবসত্যের সংহত রূপ।”- মন্তব্যটি যথার্থ।

বাঙালি বহু ঘাত-প্রতিঘাত পার হয়ে তার লক্ষ্যে পৌঁছেছে। তাঁরা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র শক্তির ঐক্যসাধন করে মুক্তির পথে এগিয়েছে এবং শত্রুকে পরাজিত করে বিজয় অর্জন করেছে।

‘আমি কিংবদন্তির কথা বলছি’ কবিতায় ঐতিহ্যসচেতন শিকড়সন্ধানী মানুষের সর্বাঙ্গীণ মুক্তির কথা বলা হয়েছে। এতে বাঙালি ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংগ্রামী চেতনা নির্দেশ কবি তাঁর পূর্বপুরুষদের ওপর শোষকদের অত্যাচার-নির্যাতনের কথা বলেছেন। তিনি তাঁদের সংগ্রামী চেতনার ধারাবাহিকতায় অধিকার আদায় ও বিজয় অর্জনের ইঙ্গিত করেছেন। এই বিষয়টির সঙ্গে উদ্দীপকে প্রতিফলিত সংগ্রামী চেতনাটি সাদৃশ্যপূর্ণ। কারণ এতে বাঙালির আত্মপরিচয় নির্দেশ করতে গিয়ে বাঙালির সংগ্রামী চেতনাকে তুলে ধরা হয়েছে।

বাঙালি বুকের রক্ত দিয়ে যে ইতিহাস লিখেছে তা কখনো ম্লান হওয়ার নয়। আমি কিংবদন্তির কথা বলছি’ কবিতার কবি তাঁর পূর্বপুরুষের যে সংগ্রামী চেতনা তুলে ধরেছেন তা উদ্দীপকের কবিতাংশের মূলভাবের সঙ্গে একসূত্রে গাঁথা।

সিলেট বোর্ড ২০১৭

খ্যাতিমান সমাজবিজ্ঞানী ড. সামাদ তরুণ শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, “ছাপান্ন হাজার বর্গমাইলের এ বাংলাদেশের ইতিহাস শোষণ আর বঞ্চনার। কৃষিই ছিল আমাদের পূর্বপুরুষের প্রধান অবলম্বন আর ছিল মৃৎশিল্প, তাঁতশিল্প, মৎস্যজীবিতা। আমাদের পূর্বপুরুষদের বা তাদের পেশার প্রতি অশ্রদ্ধা দেখিয়ে জাতি হিসেবে আমরা উন্নতি করতে পারব না। বিদেশি শোষকের নির্মম অত্যাচার সহ্য করে আমাদের পূর্বপ্রজন্ম আমাদের জন্য বর্তমানের যে ভিত তৈরি করেছিলেন, তাই-ই আমাদের শিল্প-সাহিত্যের মৌলিক প্রেরণা।”

ক. জিহ্বায় উচ্চারিত প্রতিটি সত্য শব্দ কী?
খ. “তাঁর পিঠে রক্তজবার মতো ক্ষত ছিল”- ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকের বিদেশি শোষকের অত্যাচার ‘আমি কিংবদন্তির কথা বলছি’ কবিতার কোন প্রসঙ্গকে মনে করিয়ে দেয়? কেন?
ঘ. “উদ্দীপকের ড. সামাদ এবং ‘আমি কিংবদন্তির কথা বলছি’ কবিতার কবি চৈতন্যগত দিক থেকে অভিন্ন।”—মন্তব্যটির যথার্থতা নিরূপণ কর।

ক) জিহ্বায় উচ্চারিত প্রতিটি সত্য শব্দ কবিতা ।

খ ) যুগে যুগে বিদেশি শাসক-শোষকদের অত্যাচার-নির্যাতনে বাঙালি জাতি ক্ষতবিক্ষত হয়েছে। ‘আমি কিংবদন্তির কথা বলছি’ কবিতায় কবি তাঁর পূর্বপুরুষের কথা বলেছেন। তিনি তাঁর পূর্বপুরুষের বিদেশি শত্রু-শাসকদের অধীনে দাসত্বের যন্ত্রণা, তাদের আঘাতের ক্ষতচিহ্ন এবং তা থেকে উত্তরণের চেতনা তুলে ধরেছেন। বাঙালির ওপর নির্যাতনের প্রেক্ষাপট স্মরণ করতে গিয়ে কবির মনে হয়েছে তাঁর পূর্বপুরুষের ওপর শত্রুরা পেছন থেকে যে আঘাত করেছিল, তাঁর পিঠের সেই ক্ষতচিহ্ন এখনও রক্তজবার মতো হয়ে আছে।

সারকথা : ক্রীতদাসের ওপর মনিবের অত্যাচারের রক্তাক্ত ক্ষতচিহ্ন বহন করে এসেছে কবির পূর্বপুরুষ।

গ প্রয়োগ

উদ্দীপকের বিদেশি শোষকের অত্যাচার ‘আমি কিংবদন্তির কথা বলছি’ কবিতার শোষণ-নির্যাতনের প্রসঙ্গকে মনে করিয়ে দেয়।

যুগ যুগ ধরে ব্রিটিশ শাসক-শোষকরা বাংলার গণমানুষের জীবন অতিষ্ঠ করে তুলেছিল। কৃষকরা নীলকরদের হাতে নানাভাবে নির্যাতিত হয়েছিল । যুগে যুগে ভিনদেশি শোষকরা এসে আধিপত্য বিস্তার করেছে।

‘আমি কিংবদন্তির কথা বলছি’ কবিতায় কবি প্রাচীন ঐতিহ্য স্মরণ করে সমকালীন আন্দোলন-সংগ্রাম তুলে ধরেছেন। কবি এখানে তাঁর পূর্বপুরুষের কথা বলে অতীতের জীবনসংগ্রামের প্রতি ইঙ্গিত করেছেন। তিনি এই কবিতায় ‘সত্য’ শব্দকে স্বাধীনতার প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করেছেন। বাংলার মানুষ এদেশের পলিমাটিতে কীভাবে সোনার ফসল ফলাতেন এবং সেই ফসল রক্ষার জন্য ঐক্যবদ্ধ হয়ে কীভাবে শোষকের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতেন, তা তুলে ধরেছেন। এদেশের মানুষের নির্যাতন ভোগ ও সংগ্রামী চেতনার এই বিষয়টি উদ্দীপকে প্রতিফলিত হয়েছে। সেখানে শোষকের নির্মম অত্যাচার সহ্য করে পূর্ব প্রজন্মের জাগরণের কথা বলা হয়েছে।

সারকথা : উদ্দীপকের বিদেশি শোষকের অত্যাচার আলোচ্য কবিতার শোষণ-নির্যাতনের প্রসঙ্গ মনে করিয়ে দেয়।

ঘ) উচ্চতর দক্ষতা

“উদ্দীপকের ড. সামাদ এবং ‘আমি কিংবদন্তির কথা বলছি’ কবিতার কবি চৈতন্যগত দিক থেকে অভিন্ন।”- মন্তব্যটি যথার্থ।

সভ্যতার সূচনা থেকেই সবলরা দুর্বলের ওপর নানাভাবে অত্যাচার-নির্যাতন চালিয়ে আসছে। এদেশের মানুষ বহুকাল ধরে তাদের নানা অত্যাচার-নির্যাতন সহ্য করেছে। তারপর ধীরে ধীরে বাঙালি ঐক্যবদ্ধ হয়ে মুক্তির পথে এগিয়েছে এবং শেষ পর্যন্ত শোষকগোষ্ঠীকে মোকাবিলা করে চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করেছে।

‘আমি কিংবদন্তির কথা বলছি’ কবিতায় বাঙালি সংস্কৃতির হাজার বছরের ইতিহাস-ঐতিহ্য, সংগ্রাম, বিজয় এবং মানবিক উদ্ভাসন প্রতিফলিত হয়েছে। কবি এই কবিতায় যে কথা বলেছেন তা মাটির কাছাকাছি থাকা কৃষিজীবী মানুষের জীবনযাপনের কথা। এখানে তিনি যে ইতিহাসের কথা স্মরণ করেছেন তা বাংলার ভূমিজীবী অনার্য ক্রীতদাসের লড়াই করে টিকে থাকার ইতিহাস। উদ্দীপকের সমাজবিজ্ঞানী ড. সামাদের আলোচনার সঙ্গে ‘আমি কিংবদন্তির কথা বলছি’ কবিতার এই বিষয়টি সাদৃশ্যপূর্ণ। ড. সামাদও কবির মতো বাংলাদেশের ইতিহাস সম্পর্কে আলোচনা প্রসঙ্গে এদেশের নিম্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের জীবন ও তাদের সংগ্রামী ইতিহাসের কথা বলেছেন ।

‘আমি কিংবদন্তির কথা বলছি’ কবিতায় কবি উনোনের আগুনে আলোকিত যে উজ্জ্বল জানালার কথা বলেছেন তা উদ্দীপকের বিদেশি শোষকের নির্মম অত্যাচার সহ্য করে আমাদের পূর্ব প্রজন্ম আমাদের জন্য বর্তমানের ভিত রচনার বিষয়টির সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ হয়ে উঠেছে। ড. সামাদ আমাদের পূর্বপুরুষের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের কথা বলেছেন, তা আলোচ্য কবিতায় পূর্বপুরুষদের প্রতি কবির শ্রদ্ধাবোধের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ। এসব দিক বিচারে তাই বলা যায়, প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথার্থ।

সারকথা : বাংলার কৃষিজীবী মানুষের প্রতি শোষকের অমানবিক আচরণ এবং বাঙালির ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামী চেতনার দিকটি উদ্দীপক ও কবিতায় অভিন্নভাবে প্রতিফলিত হয়েছে। তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ড. সামাদ এবং কবির মতামতও অভিন্ন।

দিনাজপুর বোর্ড ২০১৬

হে দেশ আমার, বন্যার মতো
সমস্ত পলিমাটির অভিজ্ঞতাকে গড়িয়ে এনে একটি চেতনাকে
উর্বর করেছি;
এখানে আমাদের মৃত্যু ও জীবনের সন্ধি,
সমুদ্র সৈকতে দুঃসাহসী নাবিকের করোটির ভেতর যেমন
দূরদিগন্তের হাওয়া হাহাকার করে
তেমনি এখানে রয়েছে একটি কোমল নারীর আশাহত সখিনা হৃদয়
এখানে রয়েছে মা আর পিতা,
ভাই আর বোন, স্বজন বিধুর পরিজন
আর তুমি আমি, দেশ আমার।

ক. ‘আমি কিংবদন্তির কথা বলছি’ কবিতাটি কোন ছন্দে রচিত?
খ. ‘তাঁর পিঠে রক্তজবার মতো ক্ষত ছিল।’— কেন?
গ. উদ্দীপকে উদ্ধৃত ‘পলিমাটি’ এবং কবিতায় উদ্ধৃত ‘পলিমাটির সৌরভ’ একই অর্থ বহন করে কিনা আলোচনা কর।
ঘ. “উদ্দীপকটিতে ‘আমি কিংবদন্তির কথা বলছি’ কবিতার মতোই বাঙালি সংস্কৃতির হাজার বছরের ইতিহাস বিধৃত হয়েছে।”— তোমার মতামত দাও।

ক) ‘আমি কিংবদন্তির কথা বলছি’ কবিতাটি গদ্যছন্দে রচিত।

খ অনুধাবন

‘তাঁর পিঠে রক্তজবার মতো ক্ষত ছিল’ কারণ কবির পূর্বপুরুষ বিদেশি শাসক-শোষকের নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।

বাঙালি জীবন দীর্ঘদিনের ঐতিহ্যে লালিত। বিদেশি শাসক দ্বারা দীর্ঘদিন বাঙালি শোষিত, অত্যাচারিত, নির্যাতিত হয়েছে। শত্রুরা বাঙালির সঙ্গে ক্রীতদাসের মতো আচরণ করেছে। তারা কাপুরুষের মতো পেছন থেকে চাবুকের আঘাত করেছে, যা রক্তজবার মতো রক্তাক্ত ক্ষত সৃষ্টি করেছে। দীর্ঘদিনের সেই অত্যাচার, শাসন-শোষণ, নির্যাতনের কারণে কবির পূর্বপুরুষের পিঠে রক্তজবার মতো ক্ষতচিহ্ন ছিল।

সারকথা : বিদেশি শাসকদের দীর্ঘদিনের শাসন-শোষণ ও নির্যাতনের ফলে কবির পূর্বপুরুষের পিঠে রক্তজবার মতো ক্ষত হয়েছিল।

গ প্রয়োগ

উদ্দীপকে উদ্ধৃত ‘পলিমাটি’ এবং কবিতায় উদ্ধৃত ‘পলিমাটির সৌরভ’ একই অর্থ বহন করে।

বাংলার ভূমি পৃথিবীর অন্য যেকোনো দেশের তুলনায় অধিক উর্বর। তার কারণ পলিমাটি। পলিমাটির কারণেই বাংলার মাটিতে সোনাতুল্য ফসল ফলে।

উদ্দীপকে পলিমাটির কথা দ্বারা একটা চেতনাকে বোঝানো হয়েছে, যে চেতনা উর্বর। মূলত পলিমাটি শব্দটি এখানে উপমা হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। কারণ পলিমাটি এদেশকে ফুলে-ফসলে পূর্ণ করেছে। বাংলার মানুষ যেমন পলিমাটিতে সোনার ফসল ফলাতেন তেমনই সব সংগ্রাম আমাদের চেতনায় উর্বর ফসলের মতো, যা আমরা ধারণ করি। কবিতায়ও বলা হয়েছে

পলিমাটির সৌরভের কথা, যা বাঙালি জাতির পূর্বপুরুষদের শ্রম ও সংগ্রামে ফলানো শস্যের কথা মনে করিয়ে দেয়। বাঙালি জাতির গৌরবের কথা মনে করিয়ে দেয়। তাই এই পলিমাটি আমাদের চেতনায় বারবার ফিরে আসে। তাই বলা যায় যে, উদ্দীপকে উদ্ধৃত ‘পলিমাটি’ এবং কবিতায় উদ্ধৃত ‘পলিমাটির সৌরভ’ একই অর্থ বহন করে।

সারকথা : বাঙালি জাতি কঠোর পরিশ্রম করে ফসল ফলায়। সেই ফসলের জমি উর্বর হয় পলিমাটির কারণে। তাই বাঙালি জাতির চেতনার সঙ্গে পলিমাটি একাত্মভাবে জড়িয়ে আছে।

(ঘ) উচ্চতর দক্ষতা

“উদ্দীপকটিতে ‘আমি কিংবদন্তির কথা বলছি’ কবিতার মতোই বাঙালি সংস্কৃতির হাজার বছরের ইতিহাস বিধৃত হয়েছে।”— মন্তব্যটি যথার্থ।

হাজার বছরের নানা সংগ্রাম ও ঐতিহ্য বাঙালি জাতির ইতিহাসকে সমৃদ্ধ করেছে। যুগে যুগে তাই আন্দোলন ও সংগ্রাম বাঙালির দৃঢ়তা ও প্রতিবাদী চেতনারই পরিচয় বহন করে।

‘আমি কিংবদন্তির কথা বলছি’ কবিতায় কবি তাঁর পূর্বপুরুষের সাহসী ও গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস বলার মধ্য দিয়ে বাঙালির হাজার বছরের সংগ্রামী চেতনার পরিচয় দিয়েছেন। কবির বর্ণিত এই ইতিহাস বাংলার ভূমিজীবী অনার্য ক্রীতদাসের লড়াই করে টিকে থাকার ইতিহাস;

ভাইয়ের, বোনের, মায়ের দুঃখ-কষ্ট-যন্ত্রণার ইতিহাস। দেশের ও দেশের মানুষের মুক্তির জন্য আত্মত্যাগের ইতিহাস। উদ্দীপকেও কবি সেই ইতিহাসই বর্ণনা করেছেন। কবি পলিমাটির উর্বরতার কথা বলার মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতির সাফল্য, সমৃদ্ধি ও চেতনাকে নির্দেশ করেছেন। কবি লড়াই করে টিকে থাকার কথা বলেছেন। মা, বাবা, ভাই, বোন স্বজনের কথা বলেছেন।

উদ্দীপক ও ‘আমি কিংবদন্তির কথা বলছি’ কবিতা উভয় ক্ষেত্রেই স্বদেশ ও স্বজাতির ইতিহাস ও ঐতিহ্যের কথা বর্ণিত হয়েছে। উভয় ক্ষেত্রেই প্রিয়জনের প্রতি গভীর মমতা ও স্বদেশের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ পেয়েছে। তাই বলা যায় যে, প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথার্থ।

সারকথা : আলোচ্য কবিতায় কবি পূর্বপুরুষের কথা বলতে গিয়ে সমগ্র বাংলা ও বাঙালি জাতির ইতিহাস-ঐতিহ্যের কথা বলেছেন, যা উদ্দীপকের কবিতার মধ্যেও প্রতিফলিত হয়েছে।

এই আমি কিংবদন্তির কথা বলছি সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর (এইচএসসি বাংলা ১মপত্র) ছাড়াও আরো জানুন

You cannot copy content of this page

Scroll to Top