কোষ ও এর গঠন সাজেশনঃ প্রিয় এইচএসসি শিক্ষার্থীরা তোমাদের জন্য এখানে ২৪টি সৃজনশীল প্রশ্নের সাজেশন উত্তরসহ অনুশীলনের জন্য দিলাম যার বেশির ভাগই বোর্ড প্রশ্নের আলোকে। তাই গুরুত্বপূর্ণ এই আর্টিকেলটি অনুসরণ করো।
সর্বশেষ প্রশ্ন সাজেশন
আপডেট প্রশ্ন ও উত্তরঃ ০১
প্রশ্নঃ১ কোষের বাইরের দিকে দুই ধরনের আবরণ দেখা যায়। একটি জড় এবং অন্যটি সজীব। DJ23
ক. সাইটোসোল কী?
খ. লাইসোসোমকে আত্মঘাতী থলিকা বলা হয় কেন?
গ. উদ্দীপকের ২য় ঝিল্লির সবচেয়ে গ্রহণীয় মডেলটি বর্ণনা করো।
ঘ. উদ্দীপকের ঝিল্লি দুটির মধ্যে তুলনামূলক বিশ্লেষণ করো।
ক প্লাজমামেমব্রেন বেষ্টিত এবং নিউক্লিয়ার মেমব্রেনের বাইরে কোষীয় অঙ্গাণু ছাড়া বাকি অস্বচ্ছ, সমসত্ত্ব ও কলয়েড জাতীয় অর্ধতরল সজীব প্রোটোপ্লাজমীয় পদার্থই হলো সাইটোসোল।
খ লাইসোসোমকে আত্মঘাতী থলিকা বলা হয়। কারণ, কোষের কোনো ক্ষতি হলে বা খাদ্যাভাব দেখা দিলে লাইসোসোম অটোফ্যাগি প্রক্রিয়ায় কোষ উপাদান ও কোষ অঙ্গাণুগুলোকে বিগলিত করে ধ্বংস করে দেয়। পরবর্তীতে ধ্বংসপ্রাপ্ত কোষগুলোকে পর্দাবেষ্টিত গহ্বরে আবৃত করে পরিপাক করে ফেলে।
গ। উদ্দীপকে নির্দেশিত ২য় ঝিল্লিটি হলো কোষঝিল্লি। কোষঝিল্লির সবচেয়ে গ্রহণীয় মডেল হলো ফ্লুইড মোজাইক মডেল। নিচে মডেলটি বর্ণনা করা হলো:
১৯৭২ সালে বিজ্ঞানী এস.জে. সিঙ্গার এবং জি. এল. নিকলসন কোষঝিল্লির গঠন ব্যাখ্যা করেন, যাকে ফ্লুইড মোজাইক মডেল নামে আখ্যায়িত করা হয়। এ মডেল অনুযায়ী কোষঝিল্লি দ্বিস্তর বিশিষ্ট এবং প্রতিটি স্তর ফসফোলিপিড দিয়ে তৈরি। ফসফোলিপিড অণুগুলো দ্বিপ্রান্তবিশিষ্ট। এর এক প্রান্তকে পানিগ্রাহী মস্তক ও অন্য প্রান্তকে পানিবিদ্বেষী লেজ বলে। ফসফোলিপিডের উভয়স্তরে হাইড্রোকার্বন লেজটি মুখোমুখি থাকে এবং পানিগ্রাহী মস্তক অংশ বিপরীত দিকে থাকে। ফসফোলিপিড অণুর ফাঁকে ফাঁকে কোলেস্টেরল অণু থাকে। অনেক সময় ফসফোলিপিড এবং কোলেস্টেরল অণুর মাঝে মাঝে অনিয়মিতভাবে প্রোটিন অণু অবস্থান করে। অনেক ফসফোলিপিড অণু এবং অধিকাংশ প্রোটিন অণুর সঙ্গে ক্ষুদ্র কার্বোহাইড্রেট চেইন সংযুক্ত থাকে। এদেরকে যথাক্রমে গ্লাইকোলিপিড এবং গ্লাইকোপ্রোটিন বলে। কোষঝিল্লি অনেকটা তরল পদার্থের ন্যায় আচরণ করে এবং লিপিড অণুগুলো তরল পদার্থের ন্যায় একই স্তরে স্থান পরিবর্তন করে। একে flip-flop movement বলে।
ঘ উদ্দীপকে উল্লিখিত জড় আবরণটি হলো কোষ প্রাচীর এবং সজীব আবরণীটি হলো কোষঝিল্লি বা প্লাজমামেমব্রেন। নিচে কোষ প্রাচীর ও কোষঝিল্লির মধ্যে তুলনামূলক বিশ্লেষণ করা হলো:
১।কোষ প্রাচীর উদ্ভিদকোষ ও ব্যাকটেরিয়ার কোষঝিল্লির বাইরে অবস্থান করে, প্রাণিকোষে থাকে না। সকল জীবকোষের প্রোটোপ্লাজমের বাইরে কোষঝিল্লি থাকে।
২। কোষ প্রাচীর তিনটি স্তরে বিন্যস্ত; যথা- মধ্যপর্দা, প্রাথমিক প্রাচীর ও সেকেন্ডারি প্রাচীর। কোষঝিল্লি প্রোটিন (বাইরে ও ভিতরে দু’স্তর) ও লিপিড (মধ্যাংশে দু’স্তর) এর দুটি স্তর নিয়ে গঠিত। কোষ প্রাচীর কখনও ভেদ্য কখনও অভেদ্য। কোষঝিল্লি সর্বদাই বৈষম্যভেদ্য।
৩।কোষ প্রাচীরে মাইক্রোভিলাই না থাকলেও কোষঝিল্লিতে মাইক্রোভিলাই থাকে।
কোষ প্রাচীর পুরু এবং দৃঢ়; প্রধানত সেলুলোজ নির্মিত; তবে পেকটিন, কাইটিন, লিগনিন ইত্যাদিও থাকতে পারে। অপরদিকে কোষঝিল্লি খুব সূক্ষ্ম, স্থিতিস্থাপক; প্রধানত লিপোপ্রোটিন দিয়ে। গঠিত, তবে গ্লাইকোপ্রোটিন, ফসফোলিপিড, গ্লাইকোলিপিড, স্টেরল ইত্যাদি সমন্বয়ে গঠিত হতে পারে।
কোনো কোনো কোষের কোষ প্রাচীরে নানারকম অলঙ্করণ দেখা যায়। কোষঝিল্লিতে কোনোরূপ অলঙ্করণ দেখা যায় না।
আপডেট প্রশ্ন ও উত্তরঃ ০২
প্রশ্ন নং ২ জীববিজ্ঞানের শিক্ষক একটি আদর্শ উদ্ভিদকোষের চিহ্নিত চিত্র আঁকলেন, যার বাইরের ‘M’ আবরণীটি নির্জীব কিন্তু ভিতরের ‘N’ আবরণীটি সজীব। CU23
ক. অটোলাইসিস কী?
খ, রাইবোজোমকে প্রোটিন ফ্যাক্টরি বলা হয় কেন?
গ. উদ্দীপকের ‘M’ আবরণটির ভৌত গঠন বর্ণনা করো।
ঘ. উদ্দীপকের ‘N’ আবরণটির গুরুত্ব বিশ্লেষণ করো।
ক প্রতিকূল পরিবেশে লাইসোজোমের প্রাচীর ফেটে এনজাইমগুলো বের হয়ে আসে এবং সমস্ত কোষটিকে পরিপাক করে ফেলাই হলো অটোলাইসিস।
খ কোষীয় অঙ্গাণু রাইবোজোমকে প্রোটিন তৈরির কারখানা বা ফ্যাক্টরি বলা হয়। কারণ, রাইবোজোমের প্রধান কাজই হলো প্রোটিন সংশ্লেষণ করা। রাইবোজোম mRNA আবদ্ধ করে tRNA-এর মাধ্যমে প্রেরিত সংকেত অনুযায়ী অ্যামিনো অ্যাসিড সংযুক্ত করে পলিপেপটাইড চেইন গঠন করে। প্রোটিন সংশ্লেষণের স্থানও রাইবোজোমের মাধ্যমে নির্ধারিত হয়ে থাকে।
গ উদ্দীপকে উল্লিখিত ‘M’ আবরণটি হলো উদ্ভিদের কোষপ্রাচীর। কোষপ্রাচীরের ভৌত গঠনে তিনটি স্তর দেখা যায়। যথা:
• মধ্যপর্দা : কোষপ্রাচীরের যে স্তরটি দুটি পাশাপাশি কোষের মধ্যবর্তী সাধারণ পর্দা হিসেবে অবস্থান করে তাকে বলা হয় মধ্যপর্দা। ফ্রাগমোপ্লাস্ট এবং পেকটিন জাতীয় ভেসিকল মিলিতভাবে মধ্যপর্দী গঠন করে।
প্রাথমিক প্রাচীর : মধ্য পর্দার ওপর সেলুলোজ, হেমিসেলুলোজ এবং গ্লাইকোপ্রোটিন ইত্যাদি জমা হয়ে যে পাতলা স্তর তৈরি হয়, সেটি হলো প্রাথমিক প্রাচীর। এটি মধ্য পর্দার অন্তঃতলে তৈরি হয়। সেকেন্ডারি প্রাচীর : প্রাথমিক প্রাচীরের ওপর স্তরে স্তরে সেলুলোজ জমা হয়ে যে স্তর সৃষ্টি হয় তাকে সেকেণ্ডারি প্রাচীর বলে। এ স্তরটি বেশ পুরু এবং তিনস্তর বিশিষ্ট।
ঘ) উদ্দীপকের ‘N’ আবরণটি হলো প্লাজমামেমব্রেন বা কোষঝিল্লি যা সজীব প্রকৃতির। প্রতিটি সজীব কোষের প্রোটোপ্লাজম যে সূক্ষ্ম, স্থিতিস্থাপক, বৈষম্যভেদ্য, লিপো-প্রোটিন দ্বারা গঠিত সজীব দ্বিস্তরী ঝিল্লি দিয়ে আবৃত থাকে তাকে প্লাজমামেমব্রেন বা কোষঝিল্লি বলে। কোষঝিল্লির গুরুত্ব অপরিসীম। নিচে তা বিশ্লেষণ করা হলোঃ
কোষঝিল্লি বা প্লাজমামেমব্রেন কোষীয় সকল বস্তুকে ঘিরে রাখে। বাইরের প্রতিকূল অবস্থা হতে অভ্যন্তরীণ বস্তুকে রক্ষা করে। কোষঝিল্লির মধ্য দিয়ে বস্তুর স্থানান্তর, ব্যাপন নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয় হয়। ঝিল্লিটি একটি কাঠামো হিসেবে কাজ করে যাতে বিশেষ এনজাইম এতে বিন্যস্ত থাকতে পারে। ভেতর থেকে বাইরে এবং বাইরে থেকে ভেতরে বস্তু স্থানান্তর করে। বিভিন্ন বৃহদাণু সংশ্লেষ এবং বিভিন্ন তথ্যের ভিত্তি হিসেবে কাজ করে। পারস্পরিক বন্ধন, বৃদ্ধি, চলন ইত্যাদি কাজেও প্লাজমামেমব্রেন ভূমিকা রাখে। ফ্যাগোসাইটোসিস প্রক্রিয়ায় কঠিন ও পিনোসাইটোসিস প্রক্রিয়ায় তরল বস্তু গ্রহণ করে এবং এনজাইম ও অ্যান্টিজেন ক্ষরণ করে।
কোষঝিল্লি কোষের বাইরে থেকে নিউরোট্রান্সমিটার, হরমোন ইত্যাদি রূপে তথ্য সংগ্রহ করে এবং স্নায়ু উদ্দীপনা সংবহন করে। ব্যাকটেরিয়ার কোষঝিল্লি ভাজ হয়ে মেসোসোম সৃষ্টি করে যা শক্তি উৎপাদন করে। উপরিউক্ত আলোচনা থেকে দেখা যায় যে, জীবের জীবনে প্লাজমামেমব্রেন বা কোষঝিল্লির গুরুত্ব অনেক।
আপডেট প্রশ্ন ও উত্তরঃ ০৩
প্রশ্ন নং ৩ M= কোষীয় অঙ্গাণু যা প্রোটিন সংশ্লেষণের কারখানা নামে পরিচিত।
N=আত্মঘাতী অথচ প্রয়োজনীয় অঙ্গাণু।
ক. প্লাজমোডেসমাটা কী?
খ. DNA-এর.অর্ধ সংরক্ষণশীল অনুলিপন বলতে কী বোঝায়?
গ. উদ্দীপকে ‘M’ দ্বারা নির্দেশিত অঙ্গাণুর গঠন বর্ণনা করো।
ঘ. উদ্দীপক ‘N’ এর মন্তব্যটি বিশ্লেষণ করো।
উত্তর
ক পাশাপাশি অবস্থিত কোষগুলো কোষপ্রাচীরের সূক্ষ্ম ছিদ্রের ভেতর দিয়ে প্রোটোপ্লাজমের যে সুতার মতো অংশ দ্বারা পরস্পর যুক্ত থাকে, তাই হলো গ্লাসমোডেসমাটা।
খ যে প্রক্রিয়ায় একটি মাতৃ DNA অণু থেকে দুটো নতুন DNA অণু সৃষ্টি হয় তাকে অর্ধ সংরক্ষণশীল অনুলিপন বলে। এ ধরনের অনুলিপন পদ্ধতিতে মাতৃ DNA-র হাইড্রোজেন বন্ধনী বিলুপ্তির মাধ্যমে সূত্র দুটি পৃথক হয়ে যায় এবং প্রত্যেক সূত্রক ছাঁচ (টেমপ্লেট) হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে পরিপূরক দুটি সূত্রের সংশ্লেষণ ঘটে।
গ উদ্দীপকের ‘M’ দ্বারা নির্দেশিত অঙ্গাণুটি হলো রাইবোসোম যা কোষের প্রোটিন সংশ্লেষণের কারখানা নামে পরিচিত। নিচে এর গঠন বর্ণনা করা হলো- রাইবোসোম কণাগুলো প্রধানত গোলাকার থেকে ডিম্বাকার, পর্দাবিহীন এবং অতি ক্ষুদ্র। এদের ব্যাস ১৫০ থেকে ২০০ অ্যাংস্ট্রম (A)। কোষভেদে রাইবোসোম দুধরনের। যথা- 70S ও 805/ প্রত্যেক রাইবোসোম দুটি উপ-একক (sub-unit)- এ বিভক্ত থাকে। 708 রাইবোসোম 50S ও 30S এ দুই উপ-এককে বিভক্ত থাকে এবং এরা প্রোক্যারিওটিক কোষে বিদ্যমান। অন্যদিকে, 80S রাইবোসোম 60S ও 40S এ দুই উপ-এককে বিভক্ত থাকে এবং ইউক্যারিওটিক কোষে বিদ্যমান। সাইটোপ্লাজমে একাধিক রাইবোসোম মুক্তার মালার মতো অবস্থান করলে তাকে পলিরাইবোসোম বা পলিসোম বলে। রাইবোসোমের প্রধান উপাদান হচ্ছে RNA ও প্রোটিন। এরা প্রায় ১৪১ অনুপাতে অবস্থান করে। এছাড়া থাকে অল্প পরিমাণে বিভিন্ন ধাতব আয়ন, যেমন- Mg++, Ca++ ও Mn++
ঘ উদ্দীপক ‘N’ এর মন্তব্য দ্বারা লাইসোসোমকে নির্দেশ করা হয়েছে। লাইসোসোমকে আত্মঘাতী থলিকা বলা হলেও এটি একটি প্রয়োজনীয় অঙ্গাণু। নিচে তা বিশ্লেষণ করা হলো
লাইসোসোমের এনজাইমসমূহ অম্লীয় পরিবেশে কর্মক্ষম, সাইটোপ্লাজমের নিউট্রাল pH-এ কর্মক্ষম থাকে না। তাই এরা কোষের তেমন কোনো ক্ষতি করতে পারে না। প্রয়োজনের সময় সাইটোপ্লাজম থেকে প্রোটন (H+) এনে অম্লীয় পরিবেশ তৈরি করে। লাইসোসোম ফ্যাগোসাইটোসিস ও পিনোসাইটোসিস প্রক্রিয়ায় কোষ আক্রমণকারী জীবাণু ভক্ষণ করে। এটি বিগলনকারী এনজাইমসমূহকে আবদ্ধ করে রেখে কোষের বিভিন্ন অঙ্গাণুকে রক্ষা করে।
অঙ্গাণুটি কোষ বিভাজনে উদ্দীপনা জোগায়, রীজের অঙ্কুরোদগমে সাহায্য করে। শুক্রাণুর লাইসোসোম স্পার্মালাইসিন এনজাইম নিঃসৃত করে ডিম্বাণুর প্রাচীরের বিগলন ঘটায় এবং শুক্রাণুর প্রবেশপথ সৃষ্টি করে। লাইসোসোম পরিপাকে সাহায্য করে। প্রতিকূল পরিবেশে অর্থাৎ তীব্র খাদ্যাভাবের সময় বা ক্ষতিগ্রস্থ অবস্থায় লাইসোসোমের এনজাইম মুক্ত হয়ে কোষের অন্যান্য অঙ্গাণুকে বিনষ্ট করে দেয়। অঙ্গাণুটি কেরাটিন সৃষ্টিতে সাহায্য করে এবং বিভিন্ন হরমোন নিঃসৃত করে। শ্বেতকণিকার লাইসোসোম দেহের প্রতিরক্ষায় সাহায্য করে। তরুণাস্থি থেকে অস্থি গঠনের সময় লাইসোসোম নিঃসৃত এনজাইম বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
সুতরাং, উপরোক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায় যে, লাইসোসোম আত্মঘাতী হলেও এটি একটি প্রয়োজনীয় অঙ্গাণু।
আপডেট প্রশ্ন ও উত্তরঃ ০৪
প্রশ্ন নং ৪ কোষীয় অঙ্গাণুগুলোর মধ্যে ‘ট্রাফিক পুলিশ’ ও কোষের ‘রান্নাঘর’ হিসেবে পরিচিত দুটি অঙ্গাণু রয়েছে। দ্বিতীয় অঙ্গাণুটি শুধু সবুজ উদ্ভিদ কোষে বিদ্যমান থাকলেও প্রাণীকূলের জীবনধারণের জন্য অপরিহার্য। [বি.দ্র.: উদ্দীপকটি ত্রুটিপূর্ণ ছিল। ২য় লাইনে প্রথম অঙ্গাণুর স্থলে দ্বিতীয় অঙ্গাণু হবে, যা প্রশ্নে ঠিক করে দেওয়া হয়েছে।
ক. গ্রানাম কী?
খ. লাইসোজোমকে ‘আত্মঘাতী থলিকা’ বলা হয়— ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকে প্রথমে যে অঙ্গাণুটিকে নির্দেশ করা হয়েছে তার গঠন বর্ণনা করো।
ঘ. উদ্দীপকের শেষের বাক্যটির যথার্থতা বিশ্লেষণ করো।
ক) ক্লোরোপ্লাস্টের স্ট্রোমার মধ্যে নিহিত অসংখ্য থলে সদৃশ চাকতির সমন্বয়ে গঠিত এক একটি স্তম্ভই হলো গ্রানাম।
খ) লাইসোসোমকে আত্মঘাতী থলিকা বলা হয় কারণ, কোষের কোনো ক্ষতি হলে বা খাদ্যাভাব দেখা দিলে লাইসোসোম অটোফ্যাগী প্রক্রিয়ায় কোষ উপাদান ও কোষ অঙ্গাণুগুলোকে বিগলিত করে ধ্বংস করে দেয়। পরবর্তীতে ধ্বংসপ্রাপ্ত কোষগুলোকে পর্দাবেষ্টিত গহ্বরে আবৃত করে পরিপাক করে ফেলে।
গ উদ্দীপকের প্রথম কোষীয় অঙ্গাণুটি হলো গলগি বস্তু যাকে কোষের ট্রাফিক পুলিশ বলা হয় । নিচে গলগি বস্তুর গঠন বর্ণনা করা হলোগলগি বস্তু তিন ধরনের গঠনগত উপাদান নিয়ে গঠিত। যথা
i. সিস্টারনি: এরা গলগি বস্তুর সবচেয়ে স্থিতিশীল উপাদান। অসমান দৈর্ঘ্যের এবং সমান্তরালভাবে অবস্থিত লম্বা ও চ্যাপ্টা নালিকা সদৃশ উপাদানগুলোই হলো সিস্টারনি।
ii. ভ্যাকুওল: ভ্যাকুওল হচ্ছে সিস্টারনির কাছে অবস্থিত গোলাকার থলির মতো অংশ।
iii. ভেসিকল: সিস্টারনির নিচের দিকে অপেক্ষাকৃত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র থলির মতো বস্তুগুলোই হলো ভেসিকল। এগুলো পৃথক বা দলবদ্ধভাবে থাকতে পারে।
ঘ উদ্দীপকে উল্লিখিত দ্বিতীয় অঙ্গাণুটি হলো ক্লোরোপ্লাস্ট। ক্লোরোপ্লাস্ট সবুজ উদ্ভিদ কোষে বিদ্যমান থাকলেও, প্রাণীকূলের জীবনধারণের জন্য অপরিহার্য। নিচে তা বিশ্লেষণ করা হলোঃ
সমস্ত শক্তির উৎস সূর্য। সূর্য থেকে এই শক্তি পৃথিবীর জীবজগতে প্রবেশ করে উদ্ভিদের মধ্য দিয়ে। উদ্ভিদ সূর্যালোকের শক্তিকে রাসায়নিক শক্তিতে পরিণত করে খাদ্য হিসেবে তার দেহে সংরক্ষণ করে। উদ্ভিদে ক্লোরোপ্লাস্ট থাকে বলে উদ্ভিদ খাদ্য তৈরি করতে পারে। উদ্ভিদের পাতায় অবস্থিত কোষসমূহে ক্লোরোপ্লাস্ট অধিক সংখ্যক থাকে। এই ক্লোরোপ্লাস্টে সালোকসংশ্লেষণকারী বর্ণকণিকা থাকে। এই অঙ্গাণুটি পরিবেশ থেকে CO2 এবং পানি গ্রহণ করে সালোকসংশ্লেষণের মাধ্যমে খাদ্য তৈরি করে। উদ্ভিদ নিজের তৈরিকৃত খাদ্য নিজে ব্যবহার করে এবং উদ্বৃত খাদ্য নিজ দেহের বিভিন্ন অংশে সঞ্চয় করে রাখে, যা প্রাণিকূল খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে। ক্লোরোপ্লাস্টের অনুপস্থিতিতে উদ্ভিদ খাদ্য তৈরি করতে না পারলে এক সময় খাদ্য অভাবে জীবজগৎ বিলীন হয়ে যাবে। তাই খাদ্য উৎপাদনে ক্লোরোপ্লাস্টের ভূমিকা অনস্বীকার্য।
আবার ক্লোরোপ্লাস্টের পরিবেশীয় গুরুত্বও অপরিসীম। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় অর্থাৎ O, ও CO2 এর সঠিক অনুপাত রক্ষায় সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়া বিশেষ ভূমিকা পালন করে আর এই সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়া ক্লোরোপ্লাস্ট ছাড়া সংঘটিত হতে পারে না। শ্বসনে জীব O2গ্রহণ করে এবং CO2 ত্যাগ করে। এ প্রক্রিয়া চলতে থাকলে পৃথিবীতে CO2 এর আধিক্য ও O2 এর স্বল্পতা দেখা দিত। কিন্তু সালোকসংশ্লেষণের সময় উদ্ভিদ CO2 গ্রহণ করে এবং O2 ত্যাগ করে বলে এখনও পরিবেশে O2 ও CO2 এর সঠিক অনুপাত রক্ষা হচ্ছে । অতএব, প্রাণীকুলের জীবনধারণের জন্য ক্লোরোপ্লাস্টের ভূমিকা অপরিসীম।
আপডেট প্রশ্ন ও উত্তরঃ ০৫
প্রশ্ন ৫ উদ্ভিদকোষের মধ্যে বিদ্যমান বিভিন্ন অংশের মধ্যে একটিকে ‘কোষের মস্তিষ্ক’ এবং অন্যটিকে ‘কোষের রান্নাঘর’ বলা হয়।
ক. নিউক্লিওসাইড কী?
খ. সমাপ্তি কোড বলতে কী বোঝায়?
গ. উদ্দীপকে প্রথমে উল্লিখিত অংশটির গঠন বর্ণনা করো।
ঘ. উদ্দীপকে শেষে উল্লিখিত অংশটি প্রাণিজগতের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে বিশ্লেষণ করো।
ক এক অণু নাইট্রোজেনঘটিত ক্ষারক ও এক অণু পেন্টোজ শ্যুগার যুক্ত হয়ে গঠিত গ্লাইকোসাইড যৌগই হলো নিউক্লিওসাইড।
খ) যে কোডন প্রোটিন সংশ্লেষণের সময় অ্যামিনো অ্যাসিডের সংকেত বহন করে না অর্থাৎ পলিপেপটাইড চেইন সংশ্লেষণ বন্ধ করার নির্দেশ করে বা সংকেত প্রদান করে তাকে সমাপ্তি কোড বলে। ৬৪টি কোডের মধ্যে ৩টি কোড কোনো অ্যামিনো অ্যাসিডকে শনাক্ত করে না। ফলে পলিপেপটাইড সংশ্লেষণের সমাপ্তি ঘটে। সমাপ্তি কোড তিনটি হলো UAA, UAG UGA ।
গ উদ্দীপকে প্রথমে উল্লিখিত অংশটি হলো নিউক্লিয়াস। নিউক্লিয়াসকে ‘কোষের মস্তিষ্ক’ বলা হয়। নিচের এর গঠন বর্ণনা করা হলোনিউক্লিয়ার মেমব্রেন: প্রতিটি নিউক্লিয়াস একটি জীবন্ত, দ্বিস্তরবিশিষ্ট পর্দা দ্বারা ঘেরা থাকে। একে নিউক্লিয়ার মেমব্রেন বা নিউক্লিওপৰ্দা বলে। নিউক্লিয়াসের রক্ষণাবেক্ষণ করাই এর প্রধান কাজ।
নিউক্লিওপ্লাজম: নিউক্লিওপর্দার ভিতর আবদ্ধ স্বচ্ছ, অর্ধতরল ও দানাদার পদার্থের নামই নিউক্লিওপ্লাজম। এটি মূলত প্রোটিন দিয়ে তৈরি। এছাড়া এতে RNA, বিভিন্ন এনজাইম ও কিছু খনিজ লবণ থাকে। 20 নিউক্লিওলাস: নিউক্লিয়াসের অভ্যন্তরে অবস্থিত অপেক্ষাকৃত উজ্জ্বল, গোলাকার ও ঘন বস্তুকে নিউক্লিওলাস বলে। প্রতি নিউক্লিয়াসে এদের সংখ্যা সাধারণত একটি। এটি নিউক্লিক এসিডের ভাণ্ডার হিসেবে কাজ করে। ক্রোমাটিন তন্তু: রঞ্জিত নিউক্লিয়াসের নিউক্লিওপ্লাজমে ভাসমান অবস্থায় এক ধরনের প্যাঁচানো সুতা, অবস্থান করতে দেখা যায়। এদের ক্রোমাটিন তন্তু বলা হয়। এটি DNA ও RNA ধারণ করে এবং প্রোটিন সংশ্লেষণ করে।
ঘ) উদ্দীপকে শেষে উল্লিখিত অংশটি হলো ক্লোরোপ্লাস্ট যাকে ‘কোষের ঘর’ বলা হয়। এটি প্রাণিজগতের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে গুরুত্বপূর্ণ। ভূমিকা পালন করে। নিচে তা বিশ্লেষণ করা হলোঃ
প্রাণী তথা জীবের মৌলিক চাহিদার মধ্যে অন্যতম হলো খাদ্য। আর সবুজ উদ্ভিদই কেবলমাত্র সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় শর্করা জাতীয় খাদ্য তৈরি করতে পারে। আর প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে প্রকৃতির সকল জীব খাদ্যের জন্য সবুজ উদ্ভিদের ওপর নির্ভরশীল। সবুজ উদ্ভিদ সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় খাদ্য তৈরি না করলে সকল জীবই খাদ্যাভাবে মারা যেত। সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়া সক্রিয় রাখতে ক্লোরোপ্লাস্টে অবস্থিত ক্লোরোফিল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। ক্লোরোফিল তথা ক্লোরোপ্লাস্টের অনুপস্থিতিতে সালোকসংশ্লেষণ অসম্ভব। আর সালোকসংশ্লেষণ না ঘটলে খাদ্য তৈরি সম্ভব নয়। অন্যদিকে, প্রাণীর অস্তিত্ব অনেকাংশেই নির্ভর করে পরিবেশের ভারসাম্যের ওপর। যদি কোনো কারণে পরিবেশে CO2 এর পরিমাণ বেড়ে যায় এবং O2, এর পরিমাণ কমে যায় তবে পরিবেশ তার ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে। সালোকসংশ্লেষণের সময় সবুজ উদ্ভিদ CO2 গ্রহণ ও O2, ত্যাগ করে। ফলে পরিবেশে CO2 ও O2 এর সাম্যাবস্থা বজায় থাকে। পরিবেশের এমন সাম্যাবস্থা বজায় রাখতে ক্লোরোপ্লাস্টই মুখ্য ভূমিকা পালন করে। তাই বলা যায়, প্রাণিজগতের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে ক্লোরোপ্লাস্টের গুরুত্ব অপরিসীম।
আপডেট প্রশ্ন ও উত্তরঃ ০৬
প্রশ্ন ৬ নিচের চিত্র দুটি দেখো- DH23
ক. জিন কাকে বলে?
খ. কোষের গলজি বস্তুকে কেন প্যাকেজিং কেন্দ্র বলা হয়?
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত ‘খ’ চিত্রের গঠন এবং কাজ বর্ণনা করো।
ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত ‘ক’ চিত্রটির ‘M’ এবং ‘N’ এর উপস্থিতি ও অনুপস্থিতির উপর জীবের কোষীয় পার্থক্য রয়েছে— বিশ্লেষণ করো।
ক ক্রোমোসোমের লোকাসে অবস্থিত DNA অণুর সুনির্দিষ্ট অংশ যা জীবের একটি নির্দিষ্ট কার্যকরী সংকেত আবদ্ধ করে রাখে এবং প্রোটিন হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে কোষের নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্যের বিকাশ ঘটায় তাকে জিন বলে ।
খ এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলামে প্রস্তুতকৃত দ্রব্যাদি গলজি বস্তু দ্বারা ঝিল্লিবদ্ধ হয়। এরপর কোষের কেন্দ্রীয় অংশ থেকে ঝিল্লিবদ্ধ বস্তু কোষের পরিধির দিকে প্লাজমামেমব্রেন পর্যন্ত নিয়ে যায়। এজন্য কোষের গলজি বস্তুকে প্যাকেজিং কেন্দ্র বলা হয়। এছাড়াও গলজি বস্তু পলিস্যাকারাইড সংশ্লেষণ, পরিবহন ও নিঃসরণ করে।
গ উদ্দীপকে উল্লিখিত চিত্র-‘খ’ দ্বারা RNA কে নির্দেশ করা হয়েছে। নিচে RNA এর গঠন এবং কাজ বর্ণনা করা হলোঃ
গঠন: RNA এক সূত্রক, চেইনের মতো; কখনোই দ্বিসূত্রক ও সর্পিলাকার হয় না। চার ধরনের নিউক্লিওটাইড যুক্ত হয়ে এক সূত্রক বিশিষ্ট RNA অণু গঠন করে। প্রতিটি নিউক্লিওটাইড পাঁচ কার্বন বিশিষ্ট রাইবোজ শ্যুগার অর্থাৎ পেন্টোজ শ্যুগার নিয়ে গঠিত। RNA-এর গঠনে চার ধরনের নাইট্রোজেন বেস যেমন— অ্যাডেনিন, গুয়ানিন, ইউরাসিল এবং সাইটোসিন থাকে। এছাড়া ফসফেট অর্থাৎ ফসফোরিক অ্যাসিড নিয়ে RNA গঠিত। নিউক্লিওটাইডগুলো 3′-5′ ফসফোডাইএস্টার বন্ধন দ্বারা পরস্পর যুক্ত থাকে। ফসফেট-শর্করা-ফসফেট-শর্করার বরাবর সংযুক্তির মাধ্যমে পলিনিউক্লিওটাইডের রেলিং বা হেলিক্স গঠিত হয়। কোনো RNA অণুর গঠনে একাধিক ‘U’-আকৃতির ফাঁস বা লুপ থাকে। অনেক সময় স্থানে স্থানে কুন্ডলীকৃত হয়ে ভাঁজ সৃষ্টি করার ফলে দ্বিসূত্রকের মতো আকৃতি গঠন করে এবং ভাঁজগুলোকে গৌণকুন্ডলী বলে। কুন্ডলীগুলোতে হাইড্রোজেন বন্ডের সাহায্যে বেসগুলো পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত থাকে।
কাজ:RNA-র প্রধান কাজ হলো প্রোটিন সংশ্লেষণ করা। rRNA রাইবোনিউক্লিও প্রোটিন তৈরির মাধ্যমে রাইবোসোম তৈরিতে বিশেষ ভূমিকা রাখে। প্রোটিন তৈরির সময় tRNA অ্যামিনো অ্যাসিডকে প্রোটিন তৈরির স্থানে নিয়ে আসে। mRNA, DNA থেকে সংকেত বহন করে রাইবোসোমে এসে tRNA-র সহযোগিতায় প্রোটিন তৈরি করে। gRNA-বিভিন্ন অণুজীবের বংশগতীয় বৈশিষ্ট্য ধারণ করে ও বহন করে। মাইনর RNA অধিকাংশ সময় এনজাইম্ হিসেবে কাজ করে।
ঘ। উদ্দীপকে উল্লিখিত চিত্র-‘ক’ দ্বারা নিউক্লিয়াসকে এবং ‘M’ ও ‘N’ দ্বারা যথাক্রমে নিউক্লিয়াসের মেমব্রেন এবং নিউক্লিওলাসকে নির্দেশ করা হয়েছে। নিউক্লিয়ার মেমব্রেন এবং নিউক্লিওলাসের উপস্থিতি ও অনুপস্থিতির উপর ভিত্তি করে জীব কোষকে দু’ভাগে ভাগ করা হয়, যথা- আদিকোষ এবং প্রকৃতকোষ। নিচে এদের মধ্যে পার্থক্য বিশ্লেষণ করা হলো
যেসব কোষে সুগঠিত নিউক্লিয়াস অর্থাৎ নিউক্লিয়ার মেমব্রেন, নিউক্লিওপ্লাজম, নিউক্লিওলাস ও নিউক্লিওজালক থাকে না তাদেরকে আদিকোষ বলে। অন্যদিকে, যেসব কোষে সুগঠিত নিউক্লিয়াস অর্থাৎ নিউক্লিয়ার মেমব্রেন, নিউক্লিওপ্লাজম, নিউক্লিওলাস ও নিউক্লিওজালক থাকে তাদেরকে প্রকৃতকোষ বলে।
আদি কোষে কোনো আবরণীবেষ্টিত অঙ্গাণু যেমন- মাইটোকন্ড্রিয়া, গলজি বস্তু, লাইসোজোম ইত্যাদি থাকে না, কিন্তু প্রকৃতকোষে এসব অঙ্গাণু উপস্থিত আদিকোষের নিউক্লিয়াসে শুধু একটি মাত্র ক্রোমাটিন বড়ি বা বৃত্তাকার এবং প্রান্তহীন DNA থাকে, কোনো ক্রোমোসোম গঠিত হয় না। অন্যদিকে প্রকৃতকোষের ক্রোমোসোম লম্বা, একাধিক ও দুই প্রান্তবিশিষ্ট এবং DNA সূত্রাকার।
আদিকোষে অ্যামাইটোসিস বা দ্বি-বিভাজন কোষ বিভাজন দেখা যায় কিন্তু প্রকৃতকোষে মাইটোসিস ও মিয়োসিস কোষ বিভাজন দেখা যায়।
ব্যাকটেরিয়া, সায়ানোব্যাকটেরিয়া বা নীলাভ সবুজ শৈবাল, মাইকোপ্লাজমা ইত্যাদি আদিকোষের উদাহরণ। অন্যদিকে উন্নত সব ধরনের উদ্ভিদকোষ ও সকল প্রাণীকোষ প্রকৃতকোষের উদাহরণ।
আপডেট প্রশ্ন ও উত্তরঃ ০৭
প্রশ্নঃ ৭ চিত্র দুটি দেখো- DH23
ক. থাইলাকয়েড কী?
খ. লাইসোজোমকে আত্মঘাতী থলিকা বলা হয় কেন?
গ. উদ্দীপকের চিত্র-‘P’ এর ভৌত গঠন বর্ণনা করো।
ঘ. প্রোটিন সংশ্লেষণে চিত্র- ‘O’ এর ভূমিকা বিশ্লেষণ করো।
ক) ক্লোরোপ্লাস্টে গ্রানার এক একটি একক, যা দেখতে চ্যাপ্টা থলে আকৃতির তাই হলো থাইলাকয়েড।
খ) লাইসোসোমকে আত্মঘাতী থলিকা বলা হয়। কারণ, কোষের কোনো ক্ষতি হলে বা খাদ্যাভাব দেখা দিলে লাইসোসোম অটোফ্যাগি প্রক্রিয়ায় কোষ উপাদান ও কোষ অঙ্গাণুগুলোকে বিগলিত করে ধ্বংস করে দেয়। পরবর্তীতে ধ্বংসপ্রাপ্ত কোষগুলোকে পর্দাবেষ্টিত গহ্বরে আবৃত করে পরিপাক করে ফেলে।
গ) উদ্দীপকের চিত্র-‘P’ দ্বারা DNA কে বোঝানো হয়েছে। নিচে DNA-র ভৌত গঠন বর্ণনা করা হলো—
DNA অণু দ্বিসূত্রক পলিনিউক্লিওটাইড শিকল দ্বারা গঠিত এবং প্যাঁচানো = সিঁড়ির মতো। সিঁড়ির রেলিং দুটি সমান্তরালভাবে অগ্রসর হয় এবং যার প্যাচগুলো ডানদিকে আবর্তিত। DNA সূত্রের প্রতিটি শিকল ডিঅক্সিরাইবোজ শর্করা এবং ফসফেটের পর্যায়ক্রমিক সংযুক্তির মাধ্যমে সৃষ্টি হয়। শিকল দুটির একটি ৫’→৩’ কার্বনমুখী এবং অন্যটি ৩→৫ কার্বনমুখী অবস্থানে থাকে। ডাবল হেলিক্সে বিদ্যমান প্রতিটি প্যাচের দৈর্ঘ্য ৩৪Å এবং শিকল দুটির মধ্যবর্তী দূরত্ব ২০Å । প্রতিটি প্যাচে ১০ জোড়া নিউক্লিওটাইড অণু থাকে। দুটি নিউক্লিওটাইডের মধ্যবর্তী দূরত্ব ২০Å পাশাপাশি দুটি পলিপেপটাইড চেইনের ক্ষারকগুলোর মধ্যে গুয়ানিন সবসময় তিনটি হাইড্রোজেন বন্ধনী দিয়ে সাইটোসিনের সাথে এবং অ্যাডেনিন সবসময় দুটি হাইড্রোজেন বন্ধনী দিয়ে থাইমিনের সাথে জোড় বাঁধে। ক্ষারকগুলো সবসময় শর্করার ১নং কার্বনের সাথে যুক্ত থাকে। ঘ
ঘ) উদ্দীপকের চিত্র-Q’ হলো RNA প্রোটিন সংশ্লেষণে RNA গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। RNA থেকে প্রোটিন তৈরির প্রক্রিয়াকে বলা হয় ট্রান্সলেশন। ট্রান্সলেশন প্রক্রিয়াটি বিশ্লেষণের মাধ্যমে সহজেই প্রোটিন তৈরিতে RNA-র ভূমিকা বা গুরুত্ব অনুধাবন করা যায়।
এক্ষেত্রে প্রথমে অ্যামিনো অ্যাসিডসহ সক্রিয় tRNA এবং রাইবোসোমের ক্ষুদ্র একক mRNA সূত্রের সূচনা বিন্দুতে যুক্ত হয়।
এরপর রাইবোসোমের বড় এককটি এসে এই যৌগের সাথে যুক্ত হয়। বড় এককে দুটি সাইট থাকে। প্রথমটি-A সাইট এবং পরেরটি P সাইট ।
সংযুক্ত স্থানে mRNA এবং tRNA সূত্রদ্বয় বিপরীতমুখীভাবে এবং বেস-পেয়ারিং কমপ্লিমেন্টারিভাবে অবস্থান করে।
অ্যামিনো অ্যাসিডকে সংযুক্ত করে tRNA সাইটোসলে চলে আসে এবং পুনরায় অ্যামিনো অ্যাসিড আনার জন্য প্রস্তুত হয়। রাইবোসোম mRNA সূত্রের ৫→৩ মুখী অবস্থায় চলতে থাকে, ফলে একটির পর একটি অ্যামাইনো অ্যাসিড পেপটাইড বন্ধনীর মাধ্যমে সংযুক্ত হয়ে পলিপেপটাইড তথা প্রোটিন অণু গঠন করে। রাইবোসোম mRNA বরাবর চলতে চলতে যখন স্টপ কোডন (UAA, UAG বা UGA)-এ প্রবেশ করে তখন ট্রান্সলেশন বন্ধ হয়ে যায়।
এভাবে প্রোটিন তৈরির প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। প্রক্রিয়াটি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায় যে, এখানে বিভিন্ন ধরনের RNA প্রত্যক্ষভাবে জড়িত। RNA-র অনুপস্থিতিতে প্রোটিন তৈরি অসম্ভব। সুতরাং প্রোটিন তৈরিতে চিত্র-‘Q’ তথা RNA-র ভূমিকা অপরিসীম
আপডেট প্রশ্ন ও উত্তরঃ ০৮
প্রশ্নঃ ৮ DNA= ‘M’ প্ৰক্ৰিয়া → ‘Q’ অণু =’N’ প্ৰক্ৰিয়া → প্রোটিন।
ক. মেটাসেন্ট্রিক ক্রোমোজোম কী?
খ. জেনেটিক কোড বলতে কী বোঝায়?
গ. ‘Q’ দ্বারা নির্দেশিত অণুর রাসায়নিক গঠন বর্ণনা করো।
ঘ. উদ্দীপকে নির্দের্শিত ‘M’ ও ‘N’ প্রক্রিয়ার মধ্যে পার্থক্য দেখাও।
ক) যে ক্রোমোসোমের সেন্ট্রোমিয়ারটি একেবারে মধ্যখানে অবস্থিত, তাই মেটাসেন্ট্রিক ক্রোমোসোম।
খ নাইট্রোজেনের যে গ্রুপ কোনো অ্যামাইনো অ্যাসিডের সংকেত গঠন করে তাদের বলা হয় জেনেটিক কোড। DNA অণুতে পাশাপাশি অবস্থিত তিনটি নাইট্রোজেন বেস মিলিতভাবে একটি সক্রিয় জেনেটিক কোড হিসেবে কাজ করে। প্রোটিন সংশ্লেষণে AUG সূচনা কোড হিসেবে এবং UAA, UAG অথবা UGA-এর যে কোনো একটি সমাপ্তি কোড হিসেবে কাজ করে।
গ উদ্দীপকে Q দ্বারা নির্দেশিত অণুটি হলো mRNA । নিচে mRNAএর রাসায়নিক গঠন বর্ণনা করা হলোঃ
mRNA অণু একসূত্রক চেইনের মতো। চার ধরনের নিউক্লিওটাইড যুক্ত হয়ে এক সূত্রকবিশিষ্ট mRNA অণু গঠন করে। প্রতিটি নিউক্লিওটাইড পাঁচ কার্বন বিশিষ্ট রাইবোজ শ্যুগার অর্থাৎ পেন্টোজ শ্যুগার নিয়ে গঠিত 1 mRNA-এর গঠনে চার ধরনের নাইট্রোজেন বেস যেমন— অ্যাডেনিন, গুয়ানিন, ইউরাসিল এবং সাইটোসিন থাকে। এছাড়া ফসফেট অর্থাৎ ফসফোরিক অ্যাসিড নিয়ে mRNA গঠিত। নিউক্লিওটাইডগুলো 3’-5′ ফসফোডাইএস্টার বন্ধন দ্বারা পরস্পর যুক্ত থাকে। ফসফেট-শর্করা-ফসফেট-শর্করার বরাবর সংযুক্তির মাধ্যমে পলিনিউক্লিওটাইডের রেলিং বা হেলিক্স গঠিত হয়। কোনো mRNA অণুর গঠনে একাধিক ‘U’-আকৃতির ফাঁস বা লুপ থাকে। mRNA সূত্রক যখন ফাঁস গঠন করে তখন ফাঁসের ভেতরে সাইটোসিন তিনটি হাইড্রোজেন বন্ধনী দিয়ে গুয়ানিনের সাথে এবং অ্যাডেনিন দুইটি হাইড্রোজেন বন্ধনী দিয়ে ইউরাসিলের সাথে জোড় বাঁধে। mRNA স্থানে স্থানে কুণ্ডলিত অবস্থায় থাকতে পারে।
ঘ উদ্দীপকের ‘M’ ও ‘N’ প্রক্রিয়া দুটি যথাক্রমে ট্রান্সক্রিপশন ও ট্রান্সলেশন। নিচে এদের মধ্যে পার্থক্য উল্লেখ করা হলোঃ
তুলনা করার জন্য বেস | ট্রান্সক্রিপশন | ট্রান্সলেশন |
---|---|---|
উদ্দেশ্য | ট্রান্সক্রিপশনের উদ্দেশ্য হল পৃথক জিনের আরএনএ কপি তৈরি করা যা কোষ জৈব রসায়নে ব্যবহার করতে পারে। | অনুবাদের উদ্দেশ্য হল প্রোটিন সংশ্লেষিত করা, যা লক্ষ লক্ষ সেলুলার ফাংশনের জন্য ব্যবহৃত হয়। |
সংজ্ঞা | RNA এর বিভিন্ন কার্যকরী ফর্ম তৈরি করতে টেমপ্লেট হিসাবে জিন ব্যবহার করে | অনুবাদ হল একটি mRNA টেমপ্লেট থেকে প্রোটিনের সংশ্লেষণ। এটি জিন প্রকাশের দ্বিতীয় ধাপ। সমাবেশ উদ্ভিদ হিসাবে rRNA ব্যবহার করে; এবং অনুবাদক হিসাবে tRNA প্রোটিন তৈরি করতে। |
বংশ পরম্পরা | ট্রান্সক্রিপশন হল জিন প্রকাশের প্রক্রিয়ার প্রথম ধাপ। | অনুবাদ প্রক্রিয়াটি প্রকাশের দ্বিতীয় এবং চূড়ান্ত পর্যায়। |
ঘটে | অনুবাদের আগে ট্রান্সক্রিপশন ঘটে। | ট্রান্সক্রিপশনের পরে অনুবাদ প্রক্রিয়া শুরু হয়। |
অগ্রদূত | ট্রান্সক্রিপশনের অগ্রদূত হল অ্যান্টিসেন্স বা নন-কোডিং ডিএনএ স্ট্র্যান্ড। | অনুবাদের অগ্রদূত হল mRNA যা ট্রান্সক্রিপশনের ফলে। |
উপাদান | ট্রান্সক্রিপশনের কাঁচামাল RNA-এর চারটি ঘাঁটি নিয়ে গঠিত: অ্যাডেনিন, গুয়ানিন, ইউরাসিল এবং সাইটোসিন। | অনুবাদের মৌলিক উপাদান হল বিশটি অ্যামিনো অ্যাসিড। |
সংশ্লেষ | ট্রান্সক্রিপশন আরএনএ সিকোয়েন্সের সংশ্লেষণের দিকে নিয়ে যায়। | অনুবাদ প্রোটিন সংশ্লেষণ বাড়ে. |
সাইট | ট্রান্সক্রিপশন ইউক্যারিওটের নিউক্লিয়াসে এবং প্রোক্যারিওটের সাইটোপ্লাজমে ঘটে, যেখানে নিয়ন্ত্রক এবং এনজাইম উপস্থিত থাকে। | অনুবাদটি প্রোক্যারিওটের সাইটোপ্লাজমে এবং ইউক্যারিওটে এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলামের আস্তরণযুক্ত রাইবোসোমে ঘটে। |
এনজাইম | প্রতিলিপিতে জড়িত প্রধান এনজাইমগুলি হল ডিএনএ-নির্ভর পলিমারেস। | অনুবাদের জন্য দায়ী প্রধান এনজাইম হল অ্যামিনোঅ্যাসিল সিন্থেটেজ। |
পরিবর্তন | ট্রান্সক্রিপশনাল-পরবর্তী পরিবর্তনগুলি পরিপক্ক এমআরএনএ অনুবাদের জন্য প্রস্তুত হওয়ার আগে প্রি-এমআরএনএ, যেমন স্প্লিসিং-এর প্রক্রিয়াকরণ জড়িত। | অনুবাদ-পরবর্তী পরিবর্তনের জন্য প্রোটিনের ত্রি-মাত্রিক গঠন তৈরি করতে পলিপেপটাইড চেইন প্রসারিত করা প্রয়োজন। |
সনাক্তকরণ | ট্রান্সক্রিপশন শনাক্ত করতে ডিএনএ মাইক্রোয়ারে, আরটি-পিসিআর, ইন-সিটু হাইব্রিডাইজেশন এবং নর্দার্ন ব্লটিং-এর মতো প্রযুক্তি ব্যবহার করা যেতে পারে। | ওয়েস্টার্ন ব্লটিং, ইমিউনোব্লটিং, এনজাইম অ্যাসেস এবং প্রোটিন সিকোয়েন্সিংয়ের মতো পদ্ধতির মাধ্যমে অনুবাদ চিহ্নিত করা যেতে পারে। |
উদ্দেশ্য | ট্রান্সক্রিপশনের উদ্দেশ্য হল পৃথক জিনের আরএনএ কপি তৈরি করা যা কোষ জৈব রসায়নে ব্যবহার করতে পারে। | অনুবাদের উদ্দেশ্য হল প্রোটিন সংশ্লেষিত করা, যা লক্ষ লক্ষ সেলুলার ফাংশনের জন্য ব্যবহৃত হয়। |
পণ্য | mRNA, tRNA, rRNA, এবং নন-কোডিং RNA (যেমন, মাইক্রোআরএনএ) | প্রোটিন |
পরিসমাপ্তি | আরএনএ ট্রান্সক্রিপ্ট প্রকাশিত হয় এবং পলিমারেজ ডিএনএ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়। ডিএনএ নিজেকে একটি ডাবল-হেলিক্সে পরিণত করে এবং এই প্রক্রিয়া জুড়ে অপরিবর্তিত থাকে। | যখন রাইবোসোম তিনটি স্টপ কোডনের একটির মুখোমুখি হয়, তখন এটি রাইবোসোমকে বিচ্ছিন্ন করে এবং পলিপেপটাইড ছেড়ে দেয়। |
স্থানীয়করণ | নিউক্লিয়াস | সাইটোপ্লাজম |
আপডেট প্রশ্ন ও উত্তরঃ ০৯
প্রশ্নঃ ৯ DNA(P) → mRNA(Q)→প্রোটিন
ক. লিউকোপ্লাস্ট কী?
খ. লাইসোসোমকে আত্মঘাতী থলিকা বলার কারণ ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকের ‘P’ প্রক্রিয়াটি বর্ণনা করো।
ঘ. উদ্দীপকের P ও Q প্রক্রিয়া দুটির মাঝে ভিন্নতা বিশ্লেষণ করো ।
ক রঞ্জক পদার্থবিহীন প্লাস্টিডই হলো লিউকোপ্লাস্ট।
খ) লাইসোসোমকে আত্মঘাতী থলিকা বলা হয়। কারণ, কোষের কোনো ক্ষতি হলে বা খাদ্যাভাব দেখা দিলে লাইসোসোম অটোফ্যাগি প্রক্রিয়ায় কোষ উপাদান ও কোষ অঙ্গাণুগুলোকে বিগলিত করে ধ্বংস করে দেয়। পরবর্তীতে ধ্বংসপ্রাপ্ত কোষগুলোকে পর্দাবেষ্টিত গহ্বরে আবৃত করে পরিপাক করে ফেলে।
গ উদ্দীপকের ‘P’ দ্বারা ট্রান্সক্রিপশন প্রক্রিয়াকে বোঝানো হয়েছে। নিচে ট্রান্সক্রিপশন প্রক্রিয়াটি বর্ণনা করা হলো:
ট্রান্সক্রিপশন প্রক্রিয়ার শুরুতে DNA -এর একটি স্ট্র্যান্ড থেকে RNAM প্রতিলিপিত হয়। এ স্ট্র্যান্ডকে বলা হয় অ্যান্টিসেন্স। এটি ৩ → ৫ অভিমুখী। RNA পলিমারেজ এনজাইমের সাহায্যে DNA থেকে RNA তথা mRNA ট্রান্সক্রিপশন হয়। এ এনজাইমের ফলে DNA-র ডাবল স্ট্র্যান্ড পৃথক হয়ে যায়। এনজাইম প্রোমোটারের সাথে যুক্ত হলে mRNA ট্রান্সক্রিপশন শুরু হয়। ট্রান্সক্রিপশনের সময় DNA শৃঙ্খলের থাইমিনের (T) স্থলে ইউরাসিল (U) বেস প্রতিস্থাপিত হয়। ট্রান্সক্রিপশন চূড়ান্তকরণ স্থানে পৌঁছালে এনজাইম বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় এবং ট্রান্সক্রিপশন বন্ধ হয়ে যায়। এভাবে ট্রান্সক্রিপশন প্রক্রিয়ায় DNA থেকে RNA তথা mRNA তৈরি হয়।
ঘ) উদ্দীপকের P ও Q প্রক্রিয়া দু’টি যথাক্রমে ট্রান্সক্রিপশন ও ট্রান্সলেশন প্রক্রিয়া। ট্রান্সক্রিপশন ও ট্রান্সলেশনের মাঝে ভিন্নতা নিচে বিশ্লেষণ করা হলো:
DNA-এর কোড অনুসারে নির্দিষ্ট DNA অংশ বা জিন থেকে RNAসৃষ্টির প্রক্রিয়া হলো ট্রান্সক্রিপশন; আর mRNA এর কোডনের ক্রম অনুসারে নির্দিষ্ট অ্যামিনো অ্যাসিডসমূহ যুক্ত হয়ে পলিপেপটাইড বা প্রোটিন সংশ্লেষণের প্রক্রিয়াকে বলা হয় ট্রান্সলেশন।
আদিকোষের ট্রান্সক্রিপশন সাইটোপ্লাজমে এবং প্রকৃত কোষের ট্রান্সক্রিপশন নিউক্লিয়াসের মধ্যে ঘটে, কিন্তু ট্রান্সলেশন সমস্ত জীবকোষের সাইটোপ্লাজমে ঘটে।
ট্রান্সক্রিপশনের জন্য রাইবোসোমের প্রয়োজন হয় না; কিন্তু ট্রান্সলেশন রাইবোসোম ছাড়া ঘটে না, এক্ষেত্রে রাইবোসোম ট্রান্সলেশনের যন্ত্র হিসেবে কাজ করে।
ট্রান্সক্রিপশনের জন্য প্রধানত RNA পলিমারেজ এনজাইমের প্রয়োজন হয়; কিন্তু ট্রান্সলেশনের জন্য বিভিন্ন রকম এনজাইম ও প্রোটিন ফ্যাক্টরের প্রয়োজন হয়।
গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন সাজেশন
অনুশীলন প্রশ্ন ১
১৯৬৩ সালে যৌথভাবে তিনজন বিজ্ঞানী জীবকোষের অতিসূক্ষ্ম মলিকুলার অঙ্গাণুর ভৌত, মডেল উপস্থাপনের জন্য নোবেল পুরস্কার পান। যা জীবনের যাবতীয় বৈশিষ্ট্য প্রকাশের মৌলিক একক হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। অপর একটি সূক্ষ্ম অঙ্গাণু যা প্রোটিন সংশ্লেষণে এবং বিশেষ ক্ষেত্রে জেনেটিক বস্তু হিসেবে ব্যবহৃত হয়। DH22
ক. ট্রান্সক্রিপশন কী?
খ. প্রোটোপ্লাজমকে জীবনের ভৌত ভিত্তি বলা হয় কেন? ২
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত দ্বিতীয় সূক্ষ্ম মলিকুলার অঙ্গাণুটির শ্রেণিবিন্যাস বর্ণনা কর।
ঘ. চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে উদ্দীপকে উল্লিখিত ১ম মলিকুলার অঙ্গাণুটির ভূমিকা বিশ্লেষণ কর।
১নং প্রশ্নের উত্তর :
ক) যে প্রক্রিয়ায় RNA পলিমারেজ এনজাইমের মাধ্যমে DNA অণুর একটি পলিনিউক্লিওটাইড সূত্রকে ছাঁচ হিসেবে ব্যবহার করে RNA (mRNA) উৎপন্ন হয়, তাকে ট্রান্সক্রিপশন বলে।
খ জীবকোষের অভ্যন্তরে সজীব, ঈষৎ স্বচ্ছ, দানাদার, কলয়েডধর্মী পদার্থ যা কোষপর্দা দ্বারা আবৃত থাকে তাকে প্রোটোপ্লাজম বলে। বিজ্ঞানী হাক্সলির (১৮৩৮) মতে, প্রোটোপ্লাজম হলো “জীবনের ভৌত ভিত্তি” কারণ— একটি সজীব কোষের পুষ্টি, ক্ষরণ, রেচন, উত্তেজনা ইত্যাদি বিভিন্ন প্রকার ধর্ম অর্থাৎ কোষের তথা দেহের সকল মৌলিক জৈবিক কার্যাদি প্রোটোপ্লাজমই নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। প্রোটোপ্লাজমের ক্রিয়া নিরন্তরভাবে চলতে থাকে এবং এর ক্রিয়া বন্ধ হয়ে গেলে জীবনের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যায়।
গ উদ্দীপকে উল্লিখিত দ্বিতীয় সূক্ষ্ম মলিকুলার অঙ্গাণুটি হলো একসূত্রক RNA অণু। বংশগত বৈশিষ্ট্য বহনের ভিত্তিতে RNA কে দুটি প্রধান ভাগে ভাগ করা যায়। যথা- (১) জেনেটিক RNA ও (২)জেনেটিক RNA ।
নিচে RNA অণুর শ্রেণিবিন্যাস বর্ণনা করা হলো— ১. জেনেটিক RNA বা gRNA যেসব RNA জেনেটিক বস্তু বা বংশগতি বস্তু হিসেবে কাজ করে তাদের জেনেটিক RNA বা gRNA বলে। যেসব দেহে gRNA থাকে, তাদের DNA থাকে না। (যেমন- TMV, HIV) – gRNA এর প্রধান কাজ প্রোটিন তৈরি করা এবং কিছু ভাইরাসে (TMV) বংশগতি বস্তু হিসেবে কাজ করে। ২. নন-জেনেটিক RNA যেসব RNA প্রোটিন সংশ্লেষণে অংশগ্রহণ করে কিন্তু সরাসরি বংশগতির কাজে অংশগ্রহণ করে না, তাদের ননজেনেটিক RNA বলে। যেমন— সকল আদিকোষ ও প্রকৃতকোষের RNA।
নন-জেনেটিক RNA আবার চার প্রকার। যথা-
i. বার্তাবহ RNA বা mRNA : যেসব RNA জিনের সংকেত অনুযায়ী প্রোটিন সংশ্লেষণের ছাঁচ হিসেবে কার্যকর হয়ে নির্দিষ্ট অ্যামিনো অ্যাসিড অনুক্রম বাছাই করে, তাদেরকে মেসেঞ্জার RNA বা বার্তাবহ RNA বলে। DNA থেকে ট্রান্সক্রিপশনের মাধ্যমে mRNA সৃষ্টি হয়। কোষের মোট RNA এর ৫ – ১০% mRNA |
ii. tRNA বা ট্রান্সফার RNA যেসব RNA জেনেটিক কোড অনুযায়ী একেকটি অ্যামিনো অ্যাসিডকে mRNA অণুতে স্থানান্তর করে প্রোটিন সংশ্লেষে সাহায্য করে সেগুলোকে ট্রান্সফার RNA বা tRNA বলে। নিউক্লিয়াসের ভিতরে IRNA সৃষ্টি হয়। প্রতিটি tRNA-তে মোটামুটি ৭৫-৯০টি রাইবোনিউক্লিওটাইড অণু থাকে। কোষের প্রায় ১৫% RNA-ই tRNA
iii. রাইবোসোমাল RNA বা rRNA: যেসব RNA রাইবোসোমের প্রধান গাঠনিক উপাদান হিসেবে কাজ করে, তাকে রাইবোসোমাল RNA বলে। কোষের সমস্ত RNA-এর শতকরা ৮০–৯০% ই rRNA। কোষের রাইবোসোমে এদের অবস্থান।
iv. মাইনর RNA (Minor RNA) : সাইটোপ্লাজমীয়, RNA ও নিউক্লিও RNA নামে কিছু ক্ষুদ্র RNA রয়েছে যারা কোষে বিভিন্ন প্রোটিনের সাথে মিশে এনজাইমের কাঠামো দান করে, তাদের মাইনর RNA বলে।
ঘ উদ্দীপকে উল্লিখিত ১ম মলিকুলার অঙ্গাণুটি হলো DNA । DNA এক রকমের নিউক্লিক এসিড। এটি জীবদেহের একটি গুরুত্বপূর্ণ রাসায়নিক উপাদান। মূলত DNA এর মাধ্যমেই বংশগত বৈশিষ্ট্যগুলো জনু থেকে জনুতে এবং কোষ থেকে কোষে বাহিত হয়। এজন্য DNA কে বংশগতির রাসায়নিক ভিত্তি বলা হয়। জীবের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে DNA এর ভূমিকা নিচে বিশ্লেষণ করা হলো—
১. DNA মূলত ডি-অক্সিরাইবোনিউক্লিয়িক এসিড যা একটি রাসায়নিক জৈব যৌগ। DNA জীবদেহের সকল বৈশিষ্ট্য নিয়ন্ত্রণ করে।
২. অনুলিপন প্রক্রিয়ায় জীবের জাতিসত্ত্বা অটুট রাখে। এছাড়া DNA প্রজাতি শনাক্তকরণেও ভূমিকা রাখে এবং বংশগতি বৈশিষ্ট্যের ধারক ও বাহক হিসেবে কাজ করে।
৩. DNA অণুর মাধ্যমে বিভিন্ন চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য পিতা-মাতা থেকে সন্তানের মধ্যে সঞ্চারিত হয়। এ কারণে DNA কে বংশগতির রাসায়নিক ভিত্তি বলা হয়।
৪. বংশগতি বস্তুর প্রধান উপাদান হচ্ছে ক্রোমোসোম। এ ক্রোমোসোমে রয়েছে DNA যেখানে জিনগুলো সুসজ্জিত থাকে। জিন হলো ক্রোমোসোমে বিদ্যমান DNA অণুর এমন একটি অংশ যা কোষে প্রোটিন সংশ্লেষণের জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশ প্রদান করতে সক্ষম।
৫. বিভিন্ন বিজ্ঞানীর পরীক্ষা থেকে প্রমাণিত হয়েছে যে, DNA এর অংশ বিশেষই জিন হিসেবে কাজ করে অর্থাৎ DNA-ই জিন। জিনই হচ্ছে জীবের সব চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের ধারক যা পর্যায়ক্রমে বাহ্যিক চরিত্রসমূহ ফুটিয়ে তোলে।
অনুশীলন প্রশ্ন ২
জীব কোষে ‘A’ অঙ্গাণুটি প্রোটিন ফ্যাক্টরি এবং ‘B’ অঙ্গাণুটি কোষের ট্রাফিক পুলিশ হিসেবে অভিহিত।RH22
ক. সাইক্লোসিস কী?
খ. রেপ্লিকেশন বলতে কী বোঝায়?
গ. ‘A’ অঙ্গাণুটির গঠন বর্ণনা কর।
ঘ. জীবদেহে ‘B’ অঙ্গাণুটির গুরুত্ব বিশ্লেষণ কর।
২নং প্রশ্নের উত্তর :
ক কোষপ্রাচীরযুক্ত প্রোটোপ্লাজমে জলস্রোতের মতো যে চলন দেখা যায় তাই আবর্তন বা সাইক্লোসিস।
খ) যে প্রকিয়ায় একটি DNA অণু থেকে দুটি DNA অণু সৃষ্টি হয় তাকে DNA অনলিপন বা রেপ্লিকেশন বলে। সংক্ষেপে DNA রেপ্লিকেশন হলো DNA অণুর প্রতিলিপি সৃষ্টি করা বা DNA Copying। কোষ বিভাজনের পূর্বশর্ত হলো DNA অণুর অনুলিপন। কোষচক্রের ইন্টারফেজ দশার সংশ্লেষ দশা বা S-দশায় এবং মিয়োসিস-১ এর প্রোফেজ-১ এর লেন্টোটিন উপপর্যায়ে DNA অণুর অনুলিপন বা রেপ্লিকেশন ঘটে। ফলে মাতৃ DNA অণু থেকে অবিকল দুটি অপত্য DNA অণু গঠিত হয়। জীবের বৃদ্ধি ও প্রজননের ক্ষেত্রে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
গ উদ্দীপকে উল্লিখিত ‘A’ অঙ্গাণুটি হলো রাইবোসোম। নিচে রাইবোসোমের গঠন বর্ণনা করা হলো-
প্রোটিন ও RNA দ্বারা গঠিত ঝিল্লিবিহীন যে কোষীয় অঙ্গাণুটি প্রোটিন সংশ্লেষণের স্থান হিসেবে কাজ করে তাকে রাইবোসোম বলে। একে “প্রোটিন ফ্যাক্টরি” বা “প্রোটিন সংশ্লেষণের যন্ত্র” বলা হয় রাইবোসোম আদিকোষের DNA (আদি ক্রোমোসোম) থেকে এবং প্রকৃত কোষের নিউক্লিয়াসের নিউক্লিওলাস থেকে উৎপন্ন হয়। সকল সজীব কোষে রাইবোসোম থাকে। রাইবোসোম সাধারণত গোল বা বৃত্তাকার বা উপবৃত্তাকার, পার্শ্বীয়ভাবে চ্যাপ্টা পর্দাবিহীন এবং অত্যন্ত ক্ষুদ্র আকৃতির হয়। প্রতিটি কার্যকর রাইবোসোম দুটি অসম উপএকক বা সাব-ইউনিট নিয়ে গঠিত। সাধারণত বড় উপ-এককটি গোলাকার ও ছোট উপ-এককটি ডিম্বাকার হয়।
চিত্র : রাইবোসোম দুটি সাব-ইউনিট এবং IRNA ও RNA এর সম্ভাব্য অবস্থান
ছোট উপ-এককটি বড় উপ-এককের উপরে অবস্থান করে। এদের ব্যাস ১৫০Å – ২৬০Å পর্যন্ত হতে পারে। অনেকগুলো রাইবোসোম একটি সূক্ষ্ম mRNA সূত্রের সহায়তায় সংযুক্ত থাকলে তাকে পলিজোম বা পলিৱাইবোসোম বলে। কোষভেদে রাইবোসোম দুই ধরনের হয়। যথা- 70S হচ্ছে আদিকোষে (যার উপ-একক হলো 50S ও 30S ) এবং 80 S হলো প্রকৃতকোষে (যার উপ-একক হলো 60 Sও 40S)। রাইবোসোমের প্রধান উপাদান হচ্ছে RNA ও প্রোটিন। এছাড়া অল্প পরিমাণে বিভিন্ন ধাতব আয়ন, যেমন- Mg++ ; Ca++ ও Mn++ থাকে।
ঘ উদ্দীপকে উল্লিখিত “B” অঙ্গাণুটি হলো গলজি বস্তু যা কোষের ট্রাফিক পুলিশ হিসেবে পরিচিত। নিচে জীবদেহে গলজি বস্তুর গুরুত্ব বিশ্লেষণ করা হলো-
১. জীবদেহে এনজাইম, হরমোন, মিউকাস, নিউরোসিক্রিটরি পদার্থ ইত্যাদি ক্ষরণ করে থাকে।
২. কোষমধ্যস্থ বিভিন্ন পদার্থ (যেমন- এনজাইম, যোজক কলার মাতৃকা, ক্ষরিত প্রোটিন ইত্যাদি) পরিবহনে সহায়তা করে।
৩. কোষপ্রাচীর ও প্লাজমামেমব্রেন গঠনে সহায়তা করে।
৪. অ-প্রোটিন জাতীয় পদার্থ (যেমন— কার্বোহাইড্রেট) সংশ্লেষণ করে।
৫. বিভিন্ন প্রকার খাদ্যবস্তুর (যেমন- প্রোটিন, ভিটামিন-সি ইত্যাদি) সঞ্চয় ভাণ্ডার হিসেবে কাজ করে।
৬. শুক্রাণুর অ্যাক্রোজোম গঠন করে।
৭. লাইসোসোম সৃষ্টি করে।
৮. মাইটোকন্ড্রিয়ায় ATP সৃষ্টির জন্য প্রয়োজনীয় এনজাইম সৃষ্টি করে।
৯. কোষ বিভাজনের টেলোফেজ দশায় কোষপ্লেট তৈরি করে।
১০. প্রোটিন, হেমিসেলুলোজ, মাইক্রোফাইব্রিল তৈরি করে থাকে।
১১. বিভিন্ন পলিস্যাকারাইড ও পরিবহনে অংশগ্রহণ করে থাকে।
অনুশীলন প্রশ্ন ৩
নিচের চিত্রটি লক্ষ কর :
চিত্র-A
ক. হিল বিক্রিয়া কী?
খ. শ্বসনিক হার বলতে কী বুঝ?
গ. উদ্দীপকের চিত্রটির গঠন বর্ণনা কর।
ঘ. উদ্দীপকের অঙ্গাণুটি কীভাবে জীবজগতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ? বিশ্লেষণ কর।
৩নং প্রশ্নের উত্তর :
ক ব্রিটিশ প্রাণ-রসায়নবিদ রবিন হিল (১৯৩৭) সর্ব প্রথম প্রমাণ করেন যে, সালোকসংশ্লেষণে নির্গত অক্সিজেন অবশ্যই পানি থেকে আসে। বিক্রিয়াটি তিনি CO2-এর অনুপস্থিতিতে করেন। এ বিক্রিয়াই হিল বিক্রিয়া।
শ্বসন প্রক্রিয়ায় উদ্ভিদ যে পরিমাণ CO2 ত্যাগ করে এবং যে পরিমাণ O2 গ্রহণ করে তার অনুপাতকে শ্বসন হার বলে। বিভিন্ন শ্বসনিক বস্তুর শ্বসন হার বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় শ্বসনিক বস্তু যদি গ্লুকোজ হয় তবে এটি সবাত শ্বসনের মাধ্যমে ছয় অণু. CO2 ত্যাগ করে এবং ছয় অণু), গ্রহণ করে।
কাজেই এর শ্বসনিক বা শ্বসন হার (R.Q) = 6CO2 / 6O2 = 1
C6H1206 + 602 → 6CO2 + 6H2O :
শ্বসনিক হার (R.Q) = CO2 / 6O2 = 1
গ উদ্দীপকে উল্লিখিত চিত্র- A হলো ক্লোরোপ্লাস্ট। নিচে ক্লোরোপ্লাস্টের গঠন বর্ণনা করা হলো
১. আবরণী ঝিল্লি : প্রতিটি ক্লোরোপ্লাস্ট লিপোপ্রোটিন দিয়ে গঠিত দুটি একক পর্দা দিয়ে আবৃত থাকে। বাইরের পর্দাটি বহিঃপর্দা ও ভিতরেরটিকে অন্তঃপর্দা বলে। বহিঃপর্দাটি ভেদ্য কিন্তু অন্তঃপর্দা বৈষম্যভেদ্য।
২. স্ট্রোমা : আবরণী ঝিল্লি দ্বারা আবৃত পানিগ্রাহী, কলয়েডধর্মী ম্যাট্রিক্স তরলকে স্ট্রোমা বলে। স্ট্রোমাতে 705 রাইবোসোম, অসমোফিলিক দানা, DNA, RNA ইত্যাদি থাকে। এতে শর্করা তৈরির এনজাইমও থাকে।
৩. থাইলাকয়েড ও গ্রানা স্ট্রোমায় একক পর্দাবেষ্টিত চ্যান্টা থলির মতো যে অংশগুলো থাকে তাদের থাইলাকয়েড বা গ্রানাম চক্র বলে। উচ্চ শ্রেণির উদ্ভিদে কতগুলো খাঁইলাকয়েড স্তরীভূত হয়ে গ্রানা গঠন করে। প্রতিটি ক্লোরোপ্লাস্টে প্রায় 40-60টি গ্রানা থাকে। প্রতিটি গ্রানাম 10-100টি থাইলাকয়েড নিয়ে গঠিত।
৪. স্ট্রোমা ল্যামেলি : দুটি পাশাপাশি গ্রানার কিছু সংখ্যক থাইলাকয়েডস সূক্ষ্ম নালিকা দ্বারা সংযুক্ত থাকে। এই সংযুক্তকারী নালিকাকে স্ট্রোমা ল্যামেলি বলে। এদের অভ্যন্তরেও কিছু পরিমাণ ক্লোরোফিল বিদ্যমান থাকে।
৫. ফটোসিনথেটিক ইউনিট ও ATP Synthases : থাইলাকয়েড মেমব্রেনের ভেতরের গাত্রে অসংখ্য সালোকসংশ্লেষণকারী একক ও ATP Synthases নামক বস্তু থাকে। ATP Synthases নামক বস্তুতে ATP তৈরির সকল এনজাইম থাকে। মেমব্রেনগুলোতে অসংখ্য ফটোসিনথেটিক ইউনিট থাকে।
৬. DNA ও রাইবোসোম : ক্লোরোপ্লাস্টে তার নিজস্ব বৃত্তাকার, নগ্ন, চক্রাকার বা রেখাকার DNA থাকে। তাছাড়া এতে 70s প্রকৃতির রাইবোসোম থাকে। এদের সাহায্যে ক্লোরোপ্লাস্ট নিজস্ব অনুরূপ সৃষ্টি ও কিছু প্রয়োজনীয় প্রোটিন সংশ্লেষ করতে পারে।
ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত অঙ্গাণুটি হলো ক্লোরোপ্লাস্ট। নিচে জীবজগতে ক্লোরোপ্লাস্টের ভূমিকা বিশ্লেষণ করা হলো:
ক্লোরোপ্লাস্ট এক ধরনের সবুজ বর্ণের প্লাস্টিড। ক্লোরোপ্লাস্ট লিপিড ও প্রোটিনের দ্বিস্তর বিশিষ্ট পর্দার ভেতর স্ট্রোমা নামক জলীয় মাধ্যমে অসংখ্য থলে সদৃশ চাকতির সমন্বয়ে গঠিত। এ চাকৃতির ভেতরে রয়েছে ATP তৈরির যাবতীয় এনজাইম। এছাড়াও ফটোসিনথেটিক ইউনিটে রয়েছে ক্লোরোফিল-এ, ক্লোরোফিল-বি, ক্যারোটিন এবং জ্যান্থোফিল। ক্লোরোপ্লাস্টের প্রধান কাজ হলো সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় CO2 ও পানির সাহায্যে শর্করা উৎপন্ন করা। এর জন্য সৌরশক্তিকে রাসায়নিক শক্তিতে পরিণত করার কাজও করে থাকে ক্লোরোপ্লাস্ট।
যে কোনো সবুজ উদ্ভিদ খাদ্য তৈরির জন্য এ সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ার উপর নির্ভরশীল। শক্তির জন্য সকল প্রাণী প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সবুজ উদ্ভিদের উপর নির্ভরশীল। সবুজ উদ্ভিদ সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় শর্করা উৎপন্ন করার সময় (), উৎপন্ন করে। 02 ছাড়া কোনো জীব বেঁচে থাকতে পারে না। যেহেতু, এ প্রক্রিয়াগুলোর সাথে ক্লোরোপ্লাস্ট প্রত্যক্ষভাবে জড়িত তাই জীবের অস্তিত্ব রক্ষায় এ কোষীয় অঙ্গাণুটি অপরিহার্য। আর এভাবেই ক্লোরোপ্লাস্ট জীবের অস্তিত্ব রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
অনুশীলন প্রশ্ন ৪
উদ্ভিদকোষেএমন দুটি অঙ্গাণু উপস্থিত যার প্রথমটি না থাকলে কোষটিতে সবাত শ্বসন সম্পন্ন হয় না এবং অপরটির উপর পৃথিবীর সকল জীবকূল প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে নির্ভরশীল। JS22
ক. জিন কী?
খ. ট্রান্সক্রিপশন কাকে বলে?
গ. উদ্দীপকের প্রথম অঙ্গাণুটির গঠন লেখ।
ঘ. উদ্দীপকের আলোকে দ্বিতীয় অঙ্গাণুটির খাদ্য উৎপাদন ও পরিবেশীয় গুরুত্ব বিশ্লেষণ কর।
৪নং প্রশ্নের উত্তর
ক) ডিএনএর নির্দিষ্ট এক্টিক অংশ যা জীবের নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য বহন করে তাকে জিন বলে।
গ। উদ্দীপকে উল্লিখিত প্রথম অঙ্গাণুটি হলো মাইটোকন্ড্রিয়া। নিচে মাইটোকন্ড্রিয়ার গঠন চিত্রসহ বর্ণনা করা হলো-
১. আবরণী : প্রতিটি মাইটোকন্ড্রিয়ন লিপোপ্রোটিন বাইলেয়ারের দুটি মেমব্রেন নিয়ে গঠিত। বাইরের মেমব্রেন ভেদ করে বিভিন্ন ক্ষুদ্র অণু এবং আয়ন ভেতরে প্রবেশ করতে পারে, আবার বের হয়ে যেতেও পারে।
২. প্রকোষ্ঠ : দুই মেমব্রেনের মাঝখানের ফাঁকা স্থানকে বলা হয় বহিঃস্থ কক্ষ বা আন্তঃমেমব্রেন ফাঁক এবং ভেতরের মেমব্রেন দিয়ে আবদ্ধ কেন্দ্রীয় অঞ্চলকে বলা হয় অভ্যন্তরীণ কক্ষ। অভ্যন্তরীণ কক্ষ জেলির ন্যায় ঘন সমসত্ত্ব ম্যাট্রিক্স দ্বারা পূর্ণ থাকে।
৩. ক্রিস্টি বা প্রবর্ধক : বাইরের মেমব্রেন সোজা কিন্তু ভেতরের মেমব্রেনটি নির্দিষ্ট ব্যবধানে ভেতরের দিকে ভাঁজ হয়ে আঙ্গুলের মতো প্রবর্ধক সৃষ্টি করে। প্রবর্ধিত অংশকে ক্রিস্টি বলে। এগুলো মাইটোকন্ড্রিয়ার ধাত্রকে কতকগুলো অসম্পূর্ণ প্রকোষ্ঠে বিভক্ত করে । ৪. অক্সিসোম : মাইটোকন্ড্রিয়ার অন্তঃআবরণীর অন্তর্গাত্রে অতি সূক্ষ্ম অসংখ্য দানা লেগে থাকে। এদের অক্সিসোম বলে। অক্সিসোম বৃন্তক বা অবৃন্তক হতে পারে। বৃন্তক অক্সিসোম মস্তক, বোঁটা ও ভূমি নিয়ে গঠিত হয়ে থাকে।
5. ATP Synthases ও ETC : ক্রিস্টিতে স্থানে স্থানে ATPSynthases নামক গোলাকার বস্তু আছে। এতে ATP সংশ্লেষিত হয়। এছাড়া সমস্ত ক্রিস্টিব্যাপী অনেক ইলেকট্রন ট্রান্সপোর্ট চেইন (ETC) অবস্থিত ।
৬. বৃত্তাকার DNA ও রাইবোসোম মাইটোকন্ড্রিয়ার নিজস্ব বৃত্তাকার DNA এবং রাইবোসোম (708) রয়েছে। এটিও আদি কোষীয় বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন। এরা ম্যাট্রিক্স-এ থাকে।
৭. রাসায়নিক উপাদান মাইটোকন্ড্রিয়ার শুষ্ক ওজনের প্রায় ৬৫% প্রোটিন, ২৯% গ্লিসারাইডসমূহ, ৪% লেসিথিন ও সেফালিন এবং ২০% কোলেস্টেরল। লিপিডের মধ্যে ৯০% ফসফোলিপিড, বাকি ১০% ফ্যাটি এসিড ক্যারোটিনয়েড, ভিটামিন E এবং কিছু অজৈব পদার্থ।
ঘ উদ্দীপকে উল্লেখিত ২য় অঙ্গাণুটি হলো ক্লোরোপ্লাস্ট। খাদ্য উৎপাদন ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় ক্লোরোপ্লাস্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নিচে তা বিশ্লেষণ করা হলো-
১. খাদ্য উৎপাদন : ক্লোরোপ্লাস্ট উদ্ভিদের খাদ্য তৈরিতে সহায়তা করে। সবুজ উদ্ভিদ ক্লোরোপ্লাস্টের সাহায্যে সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় খাদ্য তৈরি করে। এ খাদ্য উদ্ভিদের বিভিন্ন জৈবিক কাজ করার শক্তি জোগায়। উদ্ভিদের বৃদ্ধি ঘটে। উদ্ভিদ বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হলে এতে ফুল ফোটে। পরাগায়ন ও নিষেকের মাধ্যমে ফুল থেকে ফল ও বীজ উৎপন্ন হয়। এ ফল ও বীজ প্রাণিকুল খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে। বীজ থেকে নতুন গাছ জন্মে এবং উদ্ভিদকুল দীর্ঘদিন পৃথিবীতে টিকে থাকে। ক্লোরোপ্লাস্টের অনুপস্থিতিতে উদ্ভিদ খাদ্য তৈরি করতে না পারলে এক সময় খাদ্যাভাবে জীবকূল বিলীন হয়ে যাবে। তাই খাদ্য উৎপাদনে ক্লোরোপ্লাস্টের গুরুত্ব অপরিসীম।
২. পরিবেশীয় গুরুত্ব : ক্লোরোপ্লাস্টের পরিবেশীয় গুরুত্বও অপরিসীম। কারণ উদ্ভিদ খাদ্য তৈরি করার সময় বায়ু থেকে CO2 গ্রহণ করে এবং O2 ত্যাগ করে যা প্রাণিকুল গ্রহণ করে বেঁচে থাকে। এতে পরিবেশে O2 ও CO2 এর ভারসাম্য বজায় থাকে। ফলে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ও গ্রিন হাউজ প্রতিক্রিয়াসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে পৃথিবীকে রক্ষা করে।
উপর্যুক্ত আলোচনা থেকে প্রতীয়মান হয় যে, উদ্দীপকে উল্লেখিত ২য় অঙ্গাণুটি খাদ্য উৎপাদন ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
অনুশীলন প্রশ্ন ৫
জীবজগতে পিতামাতার বৈশিষ্ট্যগুলো সন্তান-সন্ততিতে স্থানান্তরিত হয় একটি জৈব অণুর মাধ্যমে। জীবের কোষবিভাজনের অন্যতম পূর্বশর্ত উক্ত জৈব অণুটির একটি থেকে দুটিতে পরিণত হওয়া। এ জৈব অণুটির সাথে রাইবোজ সমৃদ্ধ এক সূত্রক জৈব অণুর গুরুত্বপূর্ণ বৈসাদৃশ্য বিদ্যমান ।
ক. মাইসেলি কী?
খ. ট্রিপলেট কোডন বলতে কী বোঝায়?
গ. উদ্দীপকে আলোচিত জৈব অণুটির দুটিতে পরিণত হওয়ার পদ্ধতি বর্ণনা কর।
ঘ. উদ্দীপকের শেষ বাক্যটির যথার্থতা বিশ্লেষণ কর।
৫নং প্রশ্নের উত্তর :
ক কোষপ্রাচীরের ক্ষুদ্রতম গাঠনিক এককই হলো মাইসেলি।
খ অ্যামিনো এসিডের সংকেত গঠনকারী তিনটি নাইট্রোজেন বেসের সমন্বয়ে গঠিত গ্রুপকে বলা হয় ট্রিপলেট কোডন। প্রতিটি জেনেটিক কোডই হলো এক একটি ট্রিপলেট কোডন। প্রতিটি ট্রিপলেট কোডন কোনো একটি সুনির্দিষ্ট অ্যামিনো এসিডকে নির্দেশ করে। যেমনAUG. AAA, UUU ইত্যাদি ট্রিপলেট কোডন।
গ উদ্দীপকে উল্লেখিত আলোচিত জৈব অণুটি হলো DNA । একটি DNA থেকে দুটি নতুন DNA সৃষ্টির প্রক্রিয়া হলো DNA রেপ্লিকেশন বা অনুলিপন। নিচে DNA অনুলিপন প্রক্রিয়াটি বর্ণনা করা হলো1. DNA ডাবল হেলিক্স-এর এক বা একাধিক বিন্দুতে প্রতিলিপন কাজের সূচনা ঘটে যাকে বলা হয় Origin of replication বা সংক্ষেপে ওরি (Ori) বা প্রতিলিপন সূচনা বিন্দু।
২. সূচনা বিন্দু থেকে ডাবল হেলিক্সের এক পাক খুলতে শুরু করে এবং একই সাথে A = T. G = C নিউক্লিয়োটাইডের মধ্যকার হাইড্রোজেন বন্ড বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। এর ফলে উক্ত স্থানে ডাবল হেলিক্স দুটি একক হেলিক্স-এ পরিণত হয়। হেলিকেজ এনজাইম ATP থেকে শক্তি নিয়ে হাইড্রোজেন বন্ড ভাঙ্গার কাজ করে।
৩. রেপ্লিকেশনের জন্য পৃথক হওয়া প্রতিটি স্ট্র্যান্ড নতুন স্ট্র্যান্ড তৈরির ছাঁচ (Template) হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
৪. প্রতিটি সূচনা বিন্দুতে দুটি করে রেপ্লিকেশন কমপ্লেক্স থাকে। ডাবল হেলিক্স এর জোড়া ভেঙ্গে অগ্রসর হওয়ার সাথে সাথে রেপ্লিকেশন কমপ্লেক্স দুটি একটি অপরটির বিপরীত দিকে চলতে শুরু করে ।
৫. প্রাইমেজ এনজাইম পৃথককৃত একটি সূত্রকে ছাঁচ হিসেবে ব্যবহার করে তার একটি অংশ কপি করে একটি প্রাইমার তৈরি করে দেয়। প্রাইমার হলো RNA এর কয়েকটি ক্ষারকের সংক্ষিপ্ত সিকোয়েন্স।
৬. পৃথককৃত দুটি সূত্রের একটি তার প্রতিরূপ সৃষ্টি করে নিরবচ্ছিন্নভাবে ফর্ক-এর দিকে বৃদ্ধি পেতে থাকে। এই সূত্রকে বলা হয় অগ্রগামী সূত্র বা লিডিং সূত্র। অপর সূত্রটি নিরবচ্ছিন্নভাবে প্রতিরূপ সৃষ্টি করতে পারে না। এই সূত্রকে বলা হয় ধীরগামী সূত্র বা ল্যাগিং সূত্র।
৭. লিডিং সূত্র নিরবচ্ছিন্নভাবে তার প্রতিরূপ সৃষ্টি করে অগ্রসর হওয়ার কারণে ল্যাগিং সূত্রে জোড়াবিহীন নিউক্লিওটাইডের সারি তৈরি হয়।
৮. DNA অণুর রেপ্লিকেশনে ল্যাগিং সূত্রের খণ্ড খণ্ড বিচ্ছিন্ন অংশকে ওকাজাকি (Okazaki) খণ্ড বলে ।
৯. DNA অণুর বিচ্ছিন্নকৃত স্ট্র্যান্ড দুটির নতুন সৃষ্ট সম্পূরক স্ট্র্যান্ডের নাইট্রোজেন ক্ষারকগুলো সঠিকভাবে মিলে গেলে (A = T এবং C = G) এক্সোনিউক্লিয়েজ এনজাইম দ্বারা প্রাইমারগুলো অপসারিত হয় এবং এদের খালি স্থানগুলো সম্পূরক নিউক্লিওটাইড দ্বারা পূর্ণ হয়।
১০. রেপ্লিকেশনের শেষ পর্যায়ে DNA লাইগেজ এনজাইম স্ট্র্যান্ডের DNA সিকুয়েন্স প্রলম্বন রহিত করে দেয়। ফলে ছাঁচ স্ট্র্যান্ড ও সম্পূরক স্ট্র্যান্ডের পিউরিন ও পাইরিমিডিন ক্ষারকগুলো সুনির্দিষ্ট নিয়মে হাইড্রোজেন বন্ড দ্বারা সংযুক্ত হয়ে একটি DNA অণু গঠন করে।
১১. এভাবে অর্ধসংরক্ষণশীল রেপ্লিকেশনের মাধ্যমে একটি DNA অণুর দুটি স্ট্র্যান্ড দুটি ছাঁচরূপে ব্যবহৃত হয়ে দুটি নতুন DNA অণু সৃষ্টি করে এবং প্রতিলিপন সমাপ্ত হয়।
ঘ) উদ্দীপকে প্রথম জৈব অণুটি হলো ডাবল স্ট্র্যান্ডবিশিষ্ট DNA এবং রাইবোজ সমৃদ্ধ এক সূত্রক বিশিষ্ট জৈব অণুটি হলো RNA DNA এবং RNA অণুর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ বৈসাদৃশ্য বিদ্যমান। নিচে বাক্যটির যথার্থতা অর্থাৎ বৈসাদৃশ্য বিশ্লেষণ করা হলো-
DNA | RNA |
১. দ্বিসূত্রক প্যাচানো বা ঘুরানো সিঁড়ির মতো | ১. একসূত্রক শিকলের ন্যায়। |
এতে ডিঅক্সিরাইবোজ স্যুগার থাকে | ২: এতে থাকে রাইবোজ |
3. DNA অণুর কোনো প্রকার নেই। | RNA পাঁচ প্রকার। যথা : tRNA. mRNA. gRNA, |
৫. বংশগতির ধারক, বাহক | প্রোটিন সংশ্লেষ করে। |
৬. DNA বংশগত চরিত্র বহন করে। | ভাইরাল RNA ছাড়া বংশগত চরিত্র বহন করে না। |
৭. এতে নিউক্লিওটাইডের সংখ্যা অনেক বেশি। | ৭. এতে নিউক্লিওটাইডের সংখ্যা অনেক কম। |
৮. অধিক পরিমাণে অতি বেগুনি রশ্মি শোষণ করে | ৮. কম অতিবেগুনি রশ্মি শোষণ করে। |
অনুশীলন প্রশ্ন ৬
A = প্যাঁচানো, দ্বিসূত্রক নিউক্লিক এসিড
B = অ্যামাইনো এসিড বহনকারী একসূত্রক নিউক্লিক এসিড DP22
ক. জিনোম কী?
খ. রাইবোসোমকে প্রোটিন তৈরির কারখানা বলা হয় কেন ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপক ‘B’-তে নির্দেশিত নিউক্লিক এসিডের গঠন বর্ণনা কর ।
ঘ. উদ্দীপকে নির্দেশিত ‘A’ নিউক্লিক এসিডের গুরুত্ব বিশ্লেষণ কর।
৬নং প্রশ্নের উত্তর :
ক) কোনো প্রজাতির কোষে বিদ্যমান সকল ধরনের একসোঁট ক্রোমোসোমে বিদ্যমান সকল জিনের সমষ্টিকে বলা হয় জিনোম।
খ রাইবোসোমকে কোষের প্রোটিন তৈরির কারখানা বলা হয় সাইটোপ্লাজমে বিক্ষিপ্তভাবে ছড়ানো গোলাকার বা ডিম্বাকার অঙ্গাণুর নাম রাইবোসোম। রাইবোসোমের প্রধান রাসায়নিক উপাদান হলো RNA এবং প্রোটিন। প্রোটিন সংশ্লেষণ করাই রাইবোসোমের প্রধান কাজ। প্রোটিন সংশ্লেষণের সাথে জড়িত থাকার কারণে রাইবোসোমকে কোষের প্রোটিন তৈরির কারখানা বলা হয় ।
গ উদ্দীপকে নির্দেশিক ‘B’ দ্বারা একসূত্রক RNA কে বুঝানো হয়েছে। সকল জীবকোষে RNA থাকে। নিচে RNA এর গঠন বর্ণনা করা হলোRNA হলো Ribonucleic Acid এর সংক্ষিপ্ত রূপ। যে নিউক্লিক এসিডের পলিনিউক্লিওটাইড শৃঙ্খলের মনোমার এককগুলোর সুগার অণুটি রাইবোজ প্রকৃতির এবং বিশেষ নাইট্রোজেন বেস হিসেবে থাইমিনের পরিবর্তে ইউরাসিল থাকে এবং যা প্রোটিন সংশ্লেষণ প্রক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করে তাকে রাইবোনিউক্লিক এসিড বলে।
RNA অণু একসূত্রক চেইন-এর মতো, কখনোই দ্বিসূত্রক সর্পিলাকার হয় না। তবে এটি অনেক সময় স্থানে স্থানে কুন্ডলীকৃত হয়ে ভাঁজ সৃষ্টি করে। কোনো কোনো RNA অণুর গঠনে একাধিক u-আকৃতির ফাঁস বা লুপ থাকে। কুণ্ডলীগুলোতে হাইড্রোজেন বন্ডের সাহায্যে বেসগুলো পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত থাকে আবার, রাসায়নিক দিক দিয়ে RNA অণু রাইবোনিউক্লিওটাইড অণুর পলিমার। RNA অণুতে প্রধানত ৩ ধরনের রাসায়নিক উপাদান থাকে। যেমনঃ
১. পেন্টোজ সুগার : ৫-কার্বনবিশিষ্ট রাইবোজ সুগার।
২. নাইট্রোজেন বেস : এটি দু’ধরনের। যথাপিউরিন বেস : অ্যাডেনিন ও গুয়ানিন পাইরিমিডিন : সাইটোসিন ও ইউরাসিল
৩. ফসফোরিক এসিড।
ঘ উদ্দীপকে নির্দেশিত “A” দ্বারা গঠিত জৈব এসিডটি হলো দ্বিসূত্রক DNA। প্রতিটি সজীব কোষের বংশগতির বাহক বা জেনেটিক বস্তু হলো DNA। নিচে DNA এর গুরুত্ব বা তাৎপর্য বিশ্লেষণ করা হলো— ১. DNA ক্রোমোসোমের মূল গাঠনিক উপাদান হিসেবে কাজ করে।
2. DNA বংশগতীয় বৈশিষ্ট্যের ধারক ও বাহকের ভূমিকা রাখে।
৩. কোষ বিভাজনের সময় DNA এর এক নির্ভুল প্রতিলিপি সৃষ্টি হয়।
8. DNA কোষের জন্য নির্দিষ্ট প্রকারের প্রোটিন সংশ্লেষ করে।
৫. DNA বংশগতির সব ধরনের জৈবিক সংকেত বহন করার ক্ষমতা রাখে।
৬. DNA-এর গঠন অত্যন্ত স্থায়ী এবং মিউটেশন ছাড়া এর কোন পরিবর্তন হয় না।
৭. জীবকোষের জৈবিক সংকেত প্রেরক হচ্ছে DNA। ৮. কোনো কারণে DNA অণুর গঠনে কোনো পরিবর্তন হলে পরিবৃত্তির উদ্ভব হয়। আর পরিবৃত্ত হলো বিবর্তনের মূল উপাদান। ৯. প্রজাতি শনাক্তকরণে DNA ভূমিকা রাখে। ১০. DNA জীবের সকল বিপাকীয় কার্যাবলি নিয়ন্ত্রণ করে।
অনুশীলন প্রশ্ন ৭
একটি নির্জীব, দৃঢ়, ভেদ্য আবরণ উদ্ভিদ কোষে থাকে। একটি সজীব, স্থিতিস্থাপক বৈষম্যভেদ্য আবরণ সকল জীব কোষে থাকে । DP22
ক. ক্রিস্টি কী?
খ. ক্লোরোপ্লাস্টকে ‘কোষের রান্নাঘর’ বলা হয় কেন?
গ. উদ্দীপকে বর্ণিত ১ম আবরণটির গঠন বর্ণনা কর।
ঘ. উদ্দীপকে বর্ণিত ২য় আবরণের সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য মডেলের নামকরণের যথার্থতা বিশ্লেষণ কর।
৭নং প্রশ্নের উত্তর :
ক) মাইটোকন্ড্রিয়ার অন্তঃপর্দার ভাঁজগুলো নির্দিষ্ট ব্যবধানে আঙ্গুলের মতো প্রবর্ধক সৃষ্টি করে, এদেরকে ক্রিস্টি বলে।
খ. ক্লোরোপ্লাস্টকে “কোষের রান্নাঘর” বলা হয়। কারণ ক্লোরোপ্লাস্ট সৌরশক্তিকে রাসায়নিক শক্তিতে (ATP, NADPH + H’) পরিণত করে ও সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় CO, ও পানির সাহায্যে শর্করা জাতীয় খাদ্য তৈরি করে, যা উদ্ভিদের অত্যাবশ্যকীয় খাদ্য উপাদান।
গ উদ্দীপকে বর্ণিত ১ম আবরণটি হলো কোষপ্রাচীর। কোষপ্রাচীর উদ্ভিদকোষের একটি অনন্য বৈশিষ্ট্য। নিচে কোষপ্রাচীরের গঠন বর্ণনা করা হলো
১. মধ্যপর্দা : মাইটোটিক কোষ বিভাজনের টেলোফেজ পর্যায়ে এর সূচনা ঘটে। সাইটোপ্লাজম থেকে আসা ফ্র্যাগমোপ্লাস্ট এবং গলগি বডি থেকে আসা পেকটিন জাতীয় ভেসিকলস্ মিলিতভাবে মধ্য পর্দা সৃষ্টি করে। পেকটিক অ্যাসিড বেশি থাকার কারণে এটি প্রথম দিকে জেলির মতো থাকে। কোষ প্রাচীরের সে স্তরটি দুটি পাশাপাশি কোষের মধ্যবর্তী সাধারণ পর্দা হিসেবে অবস্থান করে তার নাম মধ্যপর্দা। এটি বিগলিত হয়ে গেলে দুটি কোষ পৃথক হয়ে যায়।
২. প্রাথমিক প্রাচীর : এটি দ্বিতীয় স্তর। মধ্যপর্দার ওপর সেলুলোজ, হেমিসেলুলোজ এবং গ্লাইকোপ্রোটিন ইত্যাদি জমা হয়ে একটি পাতলা স্তর তৈরি করে। এটিই প্রাথমিক প্রাচীর। মধ্য পর্দার অন্তঃতলে এটি তৈরি হয়।
৩ সেকেন্ডারী প্রাচীর : কোনো কোনো কোষে প্রাথমিক প্রাচীরের ওপর আর একটি স্তর তৈরি হয়। এটি সাধারণত কোষের বৃদ্ধি পূর্ণাঙ্গ হবার পর ঘটে থাকে। এ স্তরটি অধিকতর পুরু (৫-১০ (Am)। এতে সাধারণত সেলুলোজ এবং লিগনিন জমা হয়। এটি সেকেন্ডারি প্রাচীর। ভাজক কোষে এবং অধিক মাত্রায় বিপাকীয় অন্যান্য কোষে সেকেন্ডারি প্রাচীর তৈরি হয় না।
ঘ উদ্দীপকে বর্ণিত দ্বিতীয় আবরণটি হলো কোষঝিল্লি বা প্লাজমামেমব্রেন এবং এর গ্রহণযোগ্য মডেল বলতে এখানে ফ্লুইড মোজাইক মডেলের কথা বলা হয়েছে। নিচে মডেলটির নামকরণের যথার্থতা বিশ্লেষণ করা হলো-
বিজ্ঞানী Singer ও Nicolson ১৯৭২ সালে প্লাজমামেমব্রেনের ফ্লুইড মোজাইক মডেলটি প্রবর্তন করেন। এ মডেলটি সর্বাধুনিক এবং সর্বজনস্বীকৃত হয়েছে। এ মডেল অনুযায়ী প্লাজমামেমব্রেন দ্বিস্তরী । মেমব্রেনের প্রত্যেক স্তরে ফসফোলিপিড থাকে এবং ‘লিপিড বাইলেয়ার’ গঠন করে। প্রতিটি ফসফোলিপিডে এক অণু গ্লিসারল থাকে এবং এর সাথে দুটি নন পোলার ফ্যাটি এসিড লেজ ও একটি পোলার ফসফেট মাথা থাকে। এছাড়াও থাকে বিভিন্ন ধরনের প্রোটিন সমন্বয়ে গঠিত মেমব্রেন প্রোটিন। ফসফোলিপিড অণুর ফাঁকে ফাঁকে কোলেস্টেরল থাকে যা প্রাণিকোষের মেমব্রেনে বেশি থাকে। এ মডেল অনুযায়ী প্রোটিন এবং গঠন উপাদানসমূহকে স্থির ধরা হয় না বরং
মনে করা হয় এরা ফসফোলিপিডে ভেসে থাকে। ফলে এদের মোজাইকের মতো দেখা যায়। এ মডেল অনুযায়ী প্লাজমামেমব্রেন অনেকটা তরল পদার্থের ন্যায় আচরণ করে এবং এতে বিভিন্ন গঠন উপাদানের স্থানান্তর, ঘূর্ণন বা flip-flop movement ঘটে। এসব বৈশিষ্ট্যের কথা বিবেচনা করে প্লাজমামেমব্রেনের এই মডেলটির নামকরণ হয়েছে ফ্লুইড মোজাইক মডেল। পরিশেষে বলা যায় মডেলটির নামকরণ যথার্থ হয়েছে।
অনুশীলন প্রশ্ন ৮
৮। শিক্ষক শ্রেণিকক্ষে কোষের গঠন পড়াতে গিয়ে কোষকে বেষ্টন করে থাকা x ও y দু’ধরনের আবরণীর গঠন বর্ণনা দিলেন। x শুধু উদ্ভিদ কোষে পাওয়া যায় এবং y উদ্ভিদ ও প্রাণী উভয় কোষে পাওয়া যায়। JS19
(ক) ক্লোরোপ্লাস্ট কী?
(খ) লাইসোজোমকে আত্মঘাতী থলিকা বলার কারণ ব্যাখ্যা কর।
(গ) উদ্দীপকে নির্দেশিত x অংশের ভৌত গঠন বর্ণনা কর।
(ঘ) উদ্দীপকে নির্দেশিত y অংশের সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য মডেলের নামকরণের যথার্থতা বিশ্লেষণ কর।
ক) উদ্ভিদকোষের সাইটোপ্লাজমে অবস্থিত বিভিন্ন আকৃতির এবং সবুজ বর্ণের যে প্লাস্টিড সালােকসংশ্লেষণে বিশেষ ভূমিকা রাখে তাই ক্লোরােপ্লাস্ট।
খ) লাইসােসােমের ভেতর বিভিন্ন ধরনের এনজাইম থাকে। অনেক সময় তীব্র খাদ্যাভাবে লাইসােসােমের প্রাচীর ফেটে যায় এবং আবদ্ধকৃত এনজাইম ভেতর থেকে বের হয়ে কোষের অন্যান্য ক্ষুদ্রাগুলােকে ধ্বংস করে ফেলে। এজন্য লাইসােসােমকে আত্মঘাতী থলিকা বলা হয়।
গ নং প্রশ্নের উত্তর
গ) উদ্দীপকে নির্দেশিত X অংশটি হলাে কোষ প্রাচীর। নিচে কোষ প্রাচীরের ভৌত গঠন বর্ণনা করা হলাে-
১. মধ্যপর্দা : মাইটোটিক কোষ বিভাজনের টেলােফেজ পর্যায়ে এর সূচনা ঘটে। সাইটোপ্লাজম থেকে আসা ফ্র্যাগমােপ্লাস্ট এবং গলগি বডি থেকে আসা পেকটিন জাতীয় ভেসিকলস্ মিলিতভাবে মধ্য পর্দা সৃষ্টি করে। পেকটিক অ্যাসিড বেশি থাকার কারণে এটি প্রথম দিকে জেলির মতাে থাকে। কোষ প্রাচীরের সে স্তরটি দুটি পাশাপাশি কোষের মধ্যবর্তী সাধারণ পর্দা হিসেবে অবস্থান করে তার নাম মধ্যপর্দা । এটি বিগলিত হয়ে গেলে দুটি কোষ পৃথক হয়ে যায়।
২. প্রাথমিক প্রাচীর : এটি দ্বিতীয় স্তর। মধ্যপর্দার ওপর সেলুলােজ,হেমিসেলুলােজ এবং গ্লাইকোপ্রােটিন ইত্যাদি জমা হয়ে একটি পাতলা স্তর তৈরি করে। এটিই প্রাথমিক প্রাচীর । মধ্য পর্দার অন্তঃতলে এটি তৈরি হয়।
৩. সেকেন্ডারি প্রাচীর : কোনাে কোনাে কোষে প্রাথমিক প্রাচীরের ওপর আর একটি স্তর তৈরি হয়। এটি সাধারণত কোষের বৃদ্ধি পূর্ণাঙ্গ হবার পর ঘটে থাকে। এ স্তরটি অধিকতর পুরু (৫-১০ gm)। এতে সাধারণত সেলুলােজ এবং লিগনিন জমা হয়। এটি সেকেন্ডারি প্রাচীর । এটির তিনটি স্তর থাকে। ভাজক কোষে এবং অধিক মাত্রায় বিপাকীয় অন্যান্য কোষে সেকেন্ডারি প্রাচীর তৈরি হয় না ।
ঘ প্রশ্নের উত্তর
ঘ) উদ্দীপকে নির্দেশিত y অংশটি হলাে প্লাজমামেমব্রেন বা কোষঝিল্লি এবং এর গ্রহণযােগ্য মডেল বলতে এখানে ফ্লুইড মােজাইক মডেলের কথা বলা হয়েছে। নিচে মডেলটির নামকরণের যথার্থতা বিশ্লেষণ করা হলাে-
বিজ্ঞানী Singer ও Nicolson ১৯৭২ সালে প্লাজমামেমব্রেনের ফ্লুইড মােজাইক মডেলটি প্রবর্তন করেন। এ মডেলটি সর্বাধুনিক এবং সর্বজনস্বীকৃত হয়েছে। এ মডেল অনুযায়ী প্লাজমামেমব্রেন দ্বিস্তরী মেমব্রেনের প্রত্যেক স্তরে ফসফোলিপিড থাকে এবং ‘লিপিড বাইলেয়ার গঠন করে। প্রতিটি ফসফোলিপিডে এক অণু গ্লিসারল থাকে এবং এর সাথে দুটি নন পােলার ফ্যাটি এসিড লেজ ও একটি পােলার ফসফেট মাথা থাকে।
এছাড়াও থাকে বিভিন্ন ধরনের প্রােটিন সমন্বয়ে গঠিত মেমব্রেন প্রােটিন। ফসফোলিপিড অণুর ফাকে ফাকে কোলেস্টেরল থাকে যা প্রাণিকোষের মেমব্রেনে বেশি থাকে। এ মডেল অনুযায়ী প্রােটিন এবং গঠন উপাদানসমূহকে স্থির ধরা হয় না বরং মনে করা হয় এৱা ফসফোলিপিডে ভেসে থাকে। ফলে এদের মােজাইকের মতাে দেখা যায়। এ মডেল অনুযায়ী প্লাজমামেমব্রেন অনেকটা তরল পদার্থের ন্যায় আচরণ করে এবং এতে বিভিন্ন গঠন উপাদানের স্থানান্তর, ঘূর্ণন বা flip-flop movement ঘটে। এসব বৈশিষ্ট্যের কথা বিবেচনা করে প্লাজমামেমব্রেনের এই মডেলটির নামকরণ হয়েছে ফ্লুইড মােজাইক মডেল । পরিশেষে বলা যায়। মডেলটির নামকরণ যথার্থ হয়েছে।
এখানে কোষ ও এর গঠন সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর এবং সাজেশান্স দেওয়া হয়েছে।
অনুশীলন প্রশ্ন ৯
৯। একজন শিক্ষার্থী উদ্ভিদ ও প্রাণিকোষের চিত্র পর্যবেক্ষণ করতে গিয়ে উদ্ভিদকোষে একটি প্রাচীর দেখতে পেল, যা প্রাণিকোষে নেই। আবার প্রাচীরের ভিতরে একটি পর্দা দেখতে পেল, যা প্রাণিকোষকেও আবৃত করে রেখেছে। এই পর্দা সম্পর্কে পড়তে গিয়ে দেখল, সূক্ষ্ম গঠনে এটি মোজাইক সদৃশ। SL19
(ক) SSBP কী?
(খ) কোষকে জীবদেহের গঠন এবং কাজের একক বলা হয় কেন?
(গ) উদ্দীপকে উল্লিখিত প্রাচীরটির ভৌত গঠন বর্ণনা কর।
(ঘ) উদ্দীপকে উল্লিখিত পর্দাটিকে কেন মােজাইক সদৃশ বলা হয়েছে- বিশ্লেষণ কর।
ক) একজন শিক্ষার্থী উদ্ভিদ ও প্রাণিকোষের চিত্র পর্যবেক্ষণ করতে গিয়ে উদ্ভিদকোষে একটি প্রাচীর দেখতে পেল যা প্রাণিকোষে নেই। আবার SSBP হলাে Single Strand Binding Protein নামক এক ধরনের প্রােটিন যা DNA রেপ্লিকেশনের সময় DNA অণু আলাদা রাখে।
খ) কোষের মধ্যেই জীবদেহের সকল বিপাকীয় কর্মকাণ্ড চলমান । কোষের মধ্যে জীবের ধর্মগুলাের প্রতিফলন দেখা যায় । সজীব ভেদ্য পর্দা দ্বারা আবৃত কোষের মধ্যেই প্রতিনিয়ত ঘটে চলে জীবনের প্রয়ােজনীয় জৈব রাসায়নিক বিক্রিয়াগুলাে। এ কারণেই কোষকে জীবদেহের গঠন এবং কাজের একক বলা হয়।
গ) উদ্দীপকে উল্লিখিত প্রাচীরটি হলাে কোষ প্রাচীর। নিচে কোষ প্রাচীরের ভৌত গঠন বর্ণনা করা হলাে-
১. মধ্যপর্দা : মাইটোটিক কোষ বিভাজনের টেলােফেজ পর্যায়ে এর সূচনা ঘটে। সাইটোপ্লাজম থেকে আসা ফ্র্যাগমােপ্লাস্ট এবং গলগি বডি থেকে আসা পেকটিন জাতীয় ভেসিকলস্ মিলিতভাবে মধ্য পর্দা সৃষ্টি করে। পেকটিক অ্যাসিড বেশি থাকার কারণে এটি প্রথম দিকে জেলির মতাে থাকে। কোষ প্রাচীরের সে স্তরটি দুটি পাশাপাশি কোষের মধ্যবর্তী সাধারণ পর্দা হিসেবে অবস্থান করে তার নাম মধ্যপর্দা । এটি বিগলিত হয়ে গেলে দুটি কোষ পৃথক হয়ে যায়।
২. প্রাথমিক প্রাচীর : এটি দ্বিতীয় স্তর। মধ্যপর্দার ওপর সেলুলােজ,হেমিসেলুলােজ এবং গ্লাইকোপ্রােটিন ইত্যাদি জমা হয়ে একটি পাতলা স্তর তৈরি করে। এটিই প্রাথমিক প্রাচীর । মধ্য পর্দার অন্তঃতলে এটি তৈরি হয়।
৩. সেকেন্ডারি প্রাচীর : কোনাে কোনাে কোষে প্রাথমিক প্রাচীরের ওপর আর একটি স্তর তৈরি হয়। এটি সাধারণত কোষের বৃদ্ধি পূর্ণাঙ্গ হবার পর ঘটে থাকে। এ স্তরটি অধিকতর পুরু (৫-১০ gm)। এতে সাধারণত সেলুলােজ এবং লিগনিন জমা হয়। এটি সেকেন্ডারি প্রাচীর । এটির তিনটি স্তর থাকে। ভাজক কোষে এবং অধিক মাত্রায় বিপাকীয় অন্যান্য কোষে সেকেন্ডারি প্রাচীর তৈরি হয় না ।
ঘ প্রশ্নের উত্তর
ঘ) উদ্দীপকে উল্লিখিত পর্দাটি হলাে প্লাজমামেমব্রেন বা কোষঝিল্লি প্লাজমামেমব্রেন একটি গতিশীল অর্ধতরল গঠন। এটি প্রধানত লিপিড ও প্রােটিন দিয়ে তৈরি। প্লাজমামেমব্রেনের গঠনশৈলী সম্পর্কিত কয়েকটি মডেল রয়েছে তন্মধ্যে ফ্লুইড-মােজাইক মডেলটি সর্বাধুনিক এবং সর্বজনস্বীকৃত। এ মডেল অনুযায়ী প্লাজমামেমব্রেনে লিপিড বাইলেয়ার, মেমব্রেন প্রােটিন, গ্লাইকোক্যালিক্স, কোলেস্টেরল ইত্যাদি গাঠনিক উপাদান দেখা যায়।
সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে যে, প্লাজমামেমব্রেনটি বা কোষঝিল্লিটি অনেকটা অর্ধতরল পদার্থের ন্যায় আচরণ করে। অর্ধতরল এ সংগঠনে লিপিড অণু তরল পদার্থের ন্যায় ঝিল্লির একই স্তরে স্থান পরিবর্তন করে, পাশে ব্যাপ্ত হয় এবং অক্ষ বরাবর ঘুরতে পারে; একে ফ্লিপ-ফ্লপ সঞ্চালন বা flip-flop movement বলে। এসব কারণে এদের মােজাইকের মতাে দেখা যায় । অর্থাৎ, প্লাজমামেমব্রেনের উপাদানসমূহ স্থির না থেকে স্থানপরিবর্তন, ব্যাপ্ত হওয়া এবং চলাচলের কারণে প্লাজমামেমব্রেনকে মােজাইক সদৃশ বলা হয়েছে।
জীববিজ্ঞানঃ কোষ ও এর গঠন সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর এবং সাজেশান্স
অনুশীলন প্রশ্ন ১০
১০। রবিন, কোষের বিভিন্ন অঙ্গাণু পড়ার সময় দেখল দ্বিস্তরবিশিষ্ট দুটি কোষীর অঙ্গাণু একটি শক্তিঘর নামে ও অপরটি কোষের ট্রাফিক পুলিশ।DH19
(ক) অটোফ্যাগী কী?
(খ) রাইবােসােমকে সর্বজনীন অঙ্গাণু বলা হয় কেন?
(গ) উদ্দীপকের ২য় অঙ্গাণুটির গঠন চিত্রসহ লিখ।
(ঘ) উদ্দীপকের ১ম অঙ্গাণুটির গুরুত্ব বিশ্লেষণ কর।
ক) প্রতিকূল পরিবেশে অর্থাৎ তীব্র খাদ্যাভাবের সময় বা ক্ষতিগ্রস্ত অবস্থায় লাইসােসােমের এনজাইম মুক্ত হয়ে কোষের অন্যান্য অঙ্গাণুকে বিনষ্ট করার প্রক্রিয়াকে অটোফ্যাগী বা স্বগ্রাস বলে।
খ ঝিল্লীবিহীন যে কোষীয় অঙ্গাণুতে প্রােটিন সংশ্লেষণ হয় তাকে রাইবােসােম বলে। সকল সজীব কোষে রাইবােসােম থাকে। তবে আদিকোষ ও প্রকৃত কোষে উপস্থিত থাকার কারণেই রাইবােসােমকে সর্বজনীন অঙ্গাণু বলা হয়। আদিকোষে 70 S ও প্রকৃতকোষে ৪০ S ধরনের রাইবােসােম থাকে ।
গ) উদ্দীপকের ২য় অঙ্গাণুটি হলাে গলজি বডি। এটি কোষের ট্রাফিক পুলিশ হিসেবে পতি। নিচে গলজি বডির গঠন চিত্রসহ লেখা হলাে-
১. সিস্টারনি : অসমান দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট ও সমান্তরালভাবে অবস্থিত লম্বা ও চ্যাপ্টা নালিকা সদৃশ বস্তুগুলাে সিস্টারনি নামে পরিচিত। সম্ভবত মসৃণ এন্ডােপ্লাজমিক রেটিকুলাম থেকে সিস্টারনির উৎপত্তি হয় ।
২. ভ্যাকুওল : সিস্টারনির কাছে অবস্থিত গােলাকৃতির থলির মতাে অংশগুলােকে ভ্যাকুওল বলে। সিস্টারনির প্রাচীর চওড়া হয়ে ভ্যাকুওলের সৃষ্টি করে।
৩. ভেসিকল : সিস্টারনির নিচের দিকে অপেক্ষাকৃত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র থলির মতাে বস্তুগুলােকে ভেসিকল বলে ।
ঘ প্রশ্নের উত্তর
ঘ) উদ্দীপকের ১ম অঙ্গাণুটি হলাে মাইটোকন্ড্রিয়া। এটি কোষের শক্তিঘর হিসেবে পরিচিত। নিচে মাইটোকন্ড্রিয়ার গুরুত্ব বিশ্লেষণ করা হলাে—
১. কোষের যাবতীয় কাজের জন্য শক্তি উৎপাদন ও নিয়ন্ত্রণ করে।
২. শ্বসন ও প্রােটিন সংশ্লেষণের জন্য প্রয়ােজনীয় এনজাইম ও কো-এনজাইম ধারণ করে।
৩. গ্লাইকোলাইসিস ছাড়া শ্বসনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পর্যায় যেমন- ক্রেবস চক্র, ETS, অক্সিডেটিভ ফসফোরাইলেসন সম্পন্ন করে।
৪. ADP থেকে ATP অণুর সংশ্লেষ করে ।
৫. বিভিন্ন ধরনের ক্যাটায়ন সতি থাকে।
৬. নিজস্ব DNA, RNA সংশ্লেষ করে।
৭. ডিম্বাণু ও শুক্রাণুর গঠনে ও শুক্রাণুর চলনে সহায়তা করে।
৮. স্নেহ বা লিপিড বিপাকে সাহায্য করে।
৯. এরা Ca, K এর সক্রিয় পরিবহনে সক্ষম।
১০. কোষের পূর্বনির্ধারিত মৃত্যু নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে।
১১. অনেক সময় রক্তকণিকা ও হরমােন উৎপাদনে সাহায্য করে।
১২. DNA থাকায় সাইটোপ্লাজমিক ইনহেরিটেন্সে সাহায্য করে।
সাজেসান্সঃ কোষ ও এর গঠন সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর
অনুশীলন প্রশ্ন ১১
১১। কোষ অঙ্গাণু ‘J’ উদ্ভিদ কোষে বর্তমান এবং আলোক শক্তিকে রাসায়নিক শক্তিতে রূপান্তরিত করে। কোষ অঙ্গাণু ‘K’ সকল কোষে বর্তমান এবং এক প্রকার জৈব এসিডের ছাঁচ অনুযায়ী অ্যামিনো এসিড দ্বারা বৃহদাকার জৈব অণু তৈরি করে।RJ19
(ক) সাইটোপ্লাজম কী?
(খ) নিউট্রাল লিপিড বলতে কী বুঝ?
(গ) উদ্দীপকে ‘J’ কোষ অঙ্গাণুর গঠন চিহ্নিত চিত্রসহ বর্ণনা কর।
(ঘ) মানবদেহে উদ্দীপকের জৈব অণুর গুরুত্ব ব্যাখ্যা কর।
ক) নিউক্লিয়াসের বাইরে অবস্থিত এবং কোষঝিল্লি দিয়ে পরিবেষ্টিত প্রােটোপ্লাজমীয় অংশের নামই হলাে সাইটোপ্লাজম ।
খ) কোষের মধ্যেই জীবদেহের সকল বিপাকীয় কর্মকাণ্ড চলমান কোষের মধ্যে জীবের ধর্মগুলাের প্রতিফলন দেখা যায়। সজীবভেদ্য পর্দা দ্বারা আবৃত কোষুের মধ্যেই প্রতিনিয়ত ঘটে চলে জীবনের প্রয়ােজনীয় জৈব রাসায়নিক বিক্রিয়াগুলাে। এ কারণেই কোষকে জীবদেহের গঠন এবং কাজের একক বলা হয়।
গ) উদ্দীপকে বর্ণিত ‘J’ কোষ অঙ্গাণুটি হলাে ক্লোরােপ্লাস্ট। নিচে ক্লোরােপ্লাস্টের গঠন চিহ্নিত চিত্রসহ বর্ণনা করা হলাে-
প্রতিটি ক্লোরােপ্লাস্টে লিপিড ও প্রােটিন দ্বারা তৈরি একটি দ্বিস্তরী আবরণী বা ঝিল্লি থাকে। আবরণীটি ক্লোরােপ্লাস্টের অভ্যন্তরস্থ নানাবিধ বস্তুসমূহকে রক্ষা করে এবং ক্লোরােপ্লাস্টের ভিতরে বাইরে নানাবিধ বস্তুর যাতায়াত নিয়ন্ত্রণ করে। আবরণী দ্বারা আবৃত ক্লোরােপ্লাস্টের অভ্যন্তরে যে স্বচ্ছ, দানাদার, অসমসত্ত্ব জলীয় পদার্থ থাকে তাকে স্ট্রোমা বলে। স্ট্রোমার মধ্যে চাকতির মতাে বস্তু সহযােগে ৬০-৮০ টি ঢাক-সদৃশ দেখা যায়।
এরকম এক একটি গঠনকে গ্রানাম (বহুবচনে গ্রানা) এবং এক একটি চাকতি সদৃশ বস্তুকে থাইলাকয়েড বা গ্রানাম ল্যামেলাম বলে। দুটি পাশাপাশি অবস্থিত গ্রানাম কিছুসংখ্যক সুস্থ নালিকা দ্বারা যুক্ত থাকে। এদেরকে স্ট্রোমা ল্যামেলী বলে। এদের অভ্যন্তরে ক্লোরােফিল বিদ্যমান। থাইলাকয়েড মেমব্রেন বহু গােলাকার বস্তু বহন করে। এর মধ্যে ATP তৈরির সকল এনজাইম থাকে। এছাড়া মেমব্রেনগুলােতে অসংখ্য ফটোসিনথেটিক ইউনিট থাকে। এসব ইউনিটে ক্লোরােফিল-এ ও ক্লোরােফিল-বি, ক্যারােটিন, জ্যাস্তােফিল এর প্রায় ৩০০-৪০০ অণু থাকে। এছাড়া বিভিন্ন ধরনের এনজাইম, ধাতব আয়ন, ফসফোলিপিড ইত্যাদি থাকে। প্রতিটি ক্লোরােপ্লাস্টে নিজস্ব DNA ও রাইবােসোম থাকে। এগুলাের সাহায্যে ক্লোরােপ্লাস্ট সংখ্যা বৃদ্ধি ও প্রয়ােজনীয় প্রােটিন তৈরি করতে পারে ।
ঘ প্রশ্নের উত্তর
ঘ) উদ্দীপকের জৈব অণুটি বলতে প্রােটিনকে বােঝানাে হয়েছে। এটি কোষ অঞ্জগাণু K, অর্থাৎ রাইবােসােমে সংশ্লেষিত হয়। প্রােটিন অসংখ্য অ্যামিনাে এসিড সমন্বয়ে গঠিত বৃহদাকার যৌগিক জৈব অণু । মানবদেহে তাই প্রােটিনের ব্যাপক গুরুত্ব রয়েছে। প্রােটিন মানবদেহের গঠন উপাদানের একটি বড় অংশ। প্রােটিন ছাড়া দেহাঞ্জা বা অঙ্গাণুর গঠন সম্ভব নয়। সজীব দেহ কতগুলাে রাসায়নিক ক্রিয়া-বিক্রিয়ার সমষ্টিমাত্র। আর এসব ক্রিয়া-বিক্রিয়া এনজাইম কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত । সব এনজাইম প্রােটিন।
“জিন’-এর বৈশিষ্ট্য প্রকাশ ঘটে প্রােটিনের মাধ্যমে,আর বৈশিষ্ট্য প্রকাশ ছাড়া জীবের অস্তিত্ব নেই। জীবদেহের বিভিন্ন কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন হরমােন (যেমন- ইনসুলিন, হিমােগ্লোবিন) বিশেষ বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। আর অধিকাংশ হরমােনই প্রােটিন। দেহের ইমিউন সিস্টেমও প্রােটিন নির্ভর। প্রােটিন দেহের শক্তির উৎস হিসেবেও কাজ করে। এছাড়া কোষচক্র, ট্রান্সক্রিপশন ইত্যাদি সম্পন্ন করতেও প্রােটিনের প্রয়ােজন হয় ।অতএব বলা যায় যে, প্রােটিন একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান যা মানবদেহে অপরিসীম ভূমিকা পালন করে থাকে।
বায়োলজি প্রথম অধ্যায়ঃ কোষ ও এর গঠন সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর এবং সাজেশান্স
অনুশীলন প্রশ্ন ১২
১২। উদ্ভিদ কোষের মধ্যে দুটি বিশেষ অঙ্গাণু রয়েছে। প্রথমটিতে ETS এবং দ্বিতীয়টিতে ফটোসিন্থেটিক ইউনিট বিদ্যমান।
(ক) জীবন্ত জীবাশ্ম কী?
(খ) ফুটবডি বলতে কী বুঝ?
(গ) উদ্দীপকে উল্লিখিত প্রথম অঙ্গাণুটির চিহ্নিত চিত্রসহ বর্ণনা কর।
(ঘ) জীবের অস্তিত্ব রক্ষায় উদ্দীপকের দ্বিতীয় অঙ্গাণুটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে- বিশ্লেষণ কর। DP19
ক) বর্তমানকালের কোনাে জীবিত উদ্ভিদের বৈশিষ্ট্য অতীতকালের কোনাে জীবাশ্ম উদ্ভিদের বৈশিষ্ট্যের সাথে মিলসম্পন্ন হলে তাকে জীবন্ত জীবাশ্ম বলা হয়।
খ) এক অণু নিউক্লিওসাইডের সাথে এক অণু ফসফেট যুক্ত হয়ে গঠিত যৌগকে নিউক্লিওটাইড বলে। অন্যভাবে বলা যায় নিউক্লিওসাইডের ফসফেট এস্টার হলাে নিউক্লিওটাইড। এটি নিউক্লিক এসিডের গাঠনিক একক। সাধারণত এক অণু পেন্টোজ সুগার, এক অণু নাইট্রোজেন ক্ষারক ও এক অণু অজৈব ফসফেটের সমন্বয়ে নিউক্লিওটাইড গঠিত। এক্ষেত্রে নিউক্লিওসাইডের ৩নং অথবা ৫নং কার্বনের সাথে ফসফেট গ্রুপটি যুক্ত হয়ে নিউক্লিওটাইড গঠন করে।
গ নং প্রশ্নের উত্তর
গ) উদ্দীপকে উল্লিখিত প্রথম অঙ্গাণুটি হলাে মাইটোকন্ড্রিয়া । নিচে মাইটোকন্ড্রিয়ার গঠন চিত্রসহ বর্ণনা করা হলো-
মাইটোকন্ডিয়া একটি দ্বি-স্তরী আবরণী বা মেমব্রেন দ্বারা আবৃত মেমব্রেনটি লিপােপ্রােটিন বাইলেয়ার প্রকৃতির । বাইরের মেমব্রেনটি মসৃণ কিন্তু ভেতরের মেমব্রেনটি কেন্দ্রের দিকে অনেক ভঁজবিশিষ্ট আঙ্গুলের মতাে প্রবর্ধক সৃষ্টি করে । এগুলােকে ক্রিস্টি বলে। দুই মেমব্রেনের মাঝখানের ফাকা স্থানকে বলা হয় বহিঃস্থ কক্ষ এবং ভেতরের মেমব্রেন দিয়ে আবদ্ধ কেন্দ্রীয় অঞ্চলকে বলা হয় অভ্যন্তরীণ কক্ষ,। অভ্যন্তরীণ কক্ষ জেলীর ন্যায় ঘন সমসত্ব পদার্থ ম্যাট্রিক্স দ্বারা পূর্ণ থাকে। অন্তঃআবরণীর অন্তর্গাত্রে অসংখ্য অক্সিজোম থাকে। অক্সিসােম বৃন্তকে স্থানে স্থানে ATP-Synthesis নামক গােলাকার বস্তু আছে। এতে ATP সংশ্লেষিত হয়। এছাড়া সমস্ত ক্রিস্টিব্যাপী অনেক ইলেকট্রন ট্রান্সপাের্ট চেইন অবস্থিত। আগে এগুলােকে একত্রে অক্সিসােম নামে অভিহিত করা হতাে। মাইটোকন্ড্রিয়ার নিজস্ব বৃত্তাকার DNA এবং রাইবােসােম রয়েছে ।
ঘ প্রশ্নের উত্তর
ঘ) উদ্দীপকে বর্ণিত দ্বিতীয় অগাণুটি হলাে ক্লোরােপ্লাস্ট। জীবের অস্তিত্ব রক্ষায় ক্লোরােপ্লাস্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিচে বিশ্লেষণ করা হলাে-
ক্লোরােপ্লাস্ট এক ধরনের প্লাস্টিড যার বর্ণ সবুজ। ক্লোরােপ্লাস্ট লিপিড ও প্রােটিনের দ্বিস্তর বিশিষ্ট পর্দার ভেতর স্ট্রোমা নামক জলীয় মাধ্যমে অসংখ্য থলে সদৃশ চাকতির সমন্বয়ে গঠিত। এ চাকতির ভেতরে রয়েছে ATP তৈরির যাবতীয় এনজাইম। এছাড়াও ফটোসিনথেটিক ইউনিটে রয়েছে ক্লোরােফিল-এ, ক্লোরােফিল-বি, ক্যারােটিন এবং জ্যান্থোফিল। ক্লোরােপ্লাস্টের প্রধান কাজ হলাে সালােকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় CO2 ও পানির সাহায্যে শর্করা উৎপন্ন করা।
এর জন্য সৌরশক্তিকে রাসায়নিক শক্তিতে পরিণত করার কাজও করে থাকে ক্লোরােপ্লাস্ট। যে কোনাে সবুজ উদ্ভিদ খাদ্য তৈরির জন্য এ সালােকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ার উপর নির্ভরশীল। শক্তির জন্য সকল প্রাণী প্রত্যক্ষ বা পরােক্ষভাবে সবুজ উদ্ভিদের উপর নির্ভরশীল। সবুজ উদ্ভিদ সালােকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় শর্করা উৎপন্ন করার সময় O2 উৎপন্ন করে। O2 ছাড়া কোনাে জীব বেঁচে থাকতে পারে না। যেহেতু, এ প্রক্রিয়াগুলাের সাথে ক্লোরােপ্লাস্ট প্রত্যক্ষভাবে জড়িত তাই জীবের অস্তিত্ব রক্ষায় এ কোষীয় অঙ্গাণুটি অপরিহার্য। আর এভাবেই ক্লোরােপ্লাস্ট জীবের অস্তিত্ব রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ।
জীববিজ্ঞান ১মপ্ত্রঃ কোষ ও এর গঠন সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর এবং সাজেশান্স
অনুশীলন প্রশ্ন ১৩
১৩।
ক) জীব সম্প্রদায় কী?
(খ) মরুজ উদ্ভিদ কীভাবে প্রকৃতিতে টিকে থাকে?
(গ) উদ্দীপকের A থেকে B সৃষ্টির প্রক্রিয়া বর্ণনা কর।
(ঘ) উদ্দীপকের চিত্র A থেকে চিত্র B তৈরির প্রক্রিয়াটি প্রোটিন উৎপাদনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ- বিশ্লেষণ কর। CU19
ক) জিন হলাে ক্রোমােসােমের লােকাসে অবস্থিত DNA অণুর সুনির্দিষ্ট সিকুয়েন্স যা জীবের একটি নির্দিষ্ট কার্যকর সংকেত আবদ্ধ করে এবং প্রােটিন হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে বৈশিষ্ট্যের বিকাশ ঘটায়।
খ) মাইটোকন্ড্রিয়াতে ক্রেবস চক্র, ফ্যাটি এসিড চক্র, ইলেকট্রন ট্রান্সপাের্ট সিস্টেম প্রভৃতি ঘটে থাকে। এটি কোষের যাবতীয় বৈজ্ঞানিক কাজ সম্পাদনের প্রয়ােজনীয় শক্তির একমাত্র উৎস। এজন্য মাইটোকন্ড্রিয়াকে কোষের শক্তিঘর বা পাওয়ার হাউস বলে।
গ নং প্রশ্নের উত্তর
গ) উদ্দীপকের A ও B দ্বারা DNA ও mRNA এবং A থেকে B সৃষ্টির প্রক্রিয়া বলতে ট্রান্সক্রিপশন প্রক্রিয়াকে বােঝানাে হয়েছে। ট্রান্সক্রিপশন প্রক্রিয়াকে প্রধান ৩টি ধাপে ভাগ করা যায়, যথা—
১. সূচনা বা প্রারম্ভিক ধাপ : এ ধাপে DNA অণুর প্রােমােটার নামক বিশেষ বেস সিকোয়েন্স অংশে ট্রান্সক্রিপশন ফ্যাক্টর ও RNA-পলিমারেজ এনজাইম যুক্ত হয়। প্রােমােটারই RNA-পলিমারেজকে নির্দেশ দেয় DNA অণুর কোন সূত্রের ট্রান্সক্রিপশন ঘটবে এবং ট্রান্সক্রিপশন কোথা থেকে শুরু হবে। প্রােমােটারে সংযুক্ত হওয়ার পর প্রথমে RNA-পলিমারেজ DNA অণুর অংশ বিশেষের পাক খুলে দেয় এবং হাইড্রোজেন বন্ড ভেঙ্গে সূত্র দুটিকে আলাদা করে ফেলে।
২. সূত্র বর্ধিতকরণ বা দীর্ঘায়ন ধাপ : RNA পলিমারেজ-II এনজাইম ATP, GTP, UTP ও” CTP থেকে টেমপ্লেটের ভিত্তিতে প্রয়ােজনীয় নিউক্লিওটাইড যুক্ত করতে থাকে। এভাবে সূচনা স্থান থেকে mRNA-এর সূত্র বর্ধিতকরণ চলতে থাকে (5′ → 3 অভিমুখে) এবং RNA-পলিমারেজ অগ্রসর হতে থাকে। RNA- পলিমারেজ অগ্রসর হওয়ার পর DNA অণুর পাক খুলে যাওয়া অংশে আবার পাক তৈরি হয়।
৩. সমাপ্তিকরণ বা সমাপন ধাপ : RNA সূত্র বর্ধিতকরণ শেষে RNA-পলিমারেজ সমাপ্তি স্থানে পৌছালে এনজাইমটি মুক্ত হয়ে যায় এবং ট্রান্সক্রিপশনের সমাপ্তি ঘটে।
ঘ প্রশ্নের উত্তর
ঘ উদ্দীপকের A থেকে B তৈরির প্রক্রিয়াটি অর্থাৎ ট্রান্সক্রিপশন প্রক্রিয়াটি প্রােটিন উৎপাদনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। নিচে তা বিশ্লেষণ করা হলাে—ট্রান্সক্রিপশন হলাে প্রােটিন উৎপাদনের প্রথম ধাপ। এ প্রক্রিয়ায় দ্বি-সূত্ৰক DNA থেকে mRNA উৎপন্ন হয় যা নিউক্লিয়ার র দ্বারা বের হয়ে ট্রান্সলেশন প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে। ট্রান্সলেশন হলাে mRNA-এর কোডন অনুসারে অ্যামিনাে এসিড যুক্ত হয়ে পলিপেপটাইড তথা প্রােটিন সৃষ্টির প্রক্রিয়া।
ট্রান্সলেশনে রাইবােসােমের 80s ও 40s ইউনিটের সাথে mRNA যুক্ত এবং নির্দিষ্ট অ্যান্টিকোড়নের জন্য নির্দিষ্ট কোড়ন সংযুক্ত হয়। পরবর্তীতে tRNA এর সাথে যুক্ত অ্যামিনাে এসিডগুলাে পরস্পর পলিপেপটাইড চেইন গঠন করে এবং রাইবােসােমের সাইট হতে বের হয়ে আসে। এই পলিপেপটাইড চেইনই হলাে প্রােটিন। অর্থাৎ বলা যায় যে, ট্রান্সলেশন প্রক্রিয়ায় প্রােটিন উৎপাদনের ছাঁচ হিসেবে কাজ করে mRNA, যা ট্রান্সক্রিপশন প্রক্রিয়ায় DNA থেকে উৎপন্ন হয়। যদি ট্রান্সক্রিপশন না হতাে এবং DNA থেকে mRNA উৎপন্ন না হতাে তাহলে ট্রান্সলেশন প্রক্রিয়া ঘটতাে না এবং প্রােটিনও উৎপন্ন হতে পারতাে না। অতএব বলা যায়, A থেকে B অর্থাৎ DNA থেকে mRNA তৈরির ট্রান্সক্রিপশন প্রক্রিয়াটি প্রােটিন উৎপাদনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
জীববিজ্ঞান ১মপত্র প্রথম অধ্যায়ঃ কোষ ও এর গঠন সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর এবং সাজেশান্স
অনুশীলন প্রশ্ন ১৪
১৪।
ক) কূপ কী?
(খ) র্যাফাইড কী- ব্যাখ্যা কর।
(গ) উদ্দীপকে ‘A’ এর অনুরূপ অণু সৃষ্টির প্রক্রিয়া বর্ণনা কর।
(ঘ) বৈশিষ্ট্য প্রকাশে উদ্দীপকে উল্লিখিত ‘B’ এর গুরুত্ব বিশ্লেষণ কর। CH19
ক) কোষপ্রাচীরে গর্তের ন্যায় অনেক পাতলা এলাকা দেখা যায়,গর্তের ন্যায় ঐ অংশগুলােই হচ্ছে কূপ।
খ) উদ্ভিদ কোষে উপস্থিত সূঁচ আকৃতির ক্যালসিয়াম অক্সালেটের কৃস্টালই হলাে র্যাফাইড । এটি এক প্রকার কোষস্থ নির্জীব বস্তু। কোষীয় বিপাক ক্রিয়ার ফলে উপজাত পদার্থ হিসেবে র্যাফাইড তৈরি হয়। উদ্ভিদে বর্জ্য পদার্থ নির্গমনের পৃথক তন্ত্র না থাকায় এরা উদ্ভিদ কোষে জমা থাকে। কচুতে র্যাফাইড দেখা যায়।
গ নং প্রশ্নের উত্তর
গ) উদ্দীপকে ‘A’ হলাে ডাবল হেলিক্স DNA। DNA রেপ্লিকেশন বা অনুলিপন প্রক্রিয়ায় A অর্থাৎ DNA তার অনুরূপ অণু সৃষ্টি করে। নিচে DNA অনুলিপন প্রক্রিয়া বর্ণনা করা হলাে-
১. হাইড্রোজেন বন্ধনের বিলুপ্তি : রেপ্লিকেশনের প্রথম পর্যায়েই DNA ডাবল হেলিক্স এর মধ্যকার পিউরিন, ও পাইরিমিডিন বেসসমূহের সংযােগকারী হাইড্রোজেন বন্ধনের বিলুপ্তি ঘটে। এর ফলে প্রতিটি পলিনিউক্লিওটাইড শিকল পরস্পর থেকে পৃথক হয়ে একক হেলিক্সে পরিণত হয়। শিকল পৃথক করার ক্ষেত্রে DNA হেলিকেজ এনজাইম সহায়তা করে।
২. পরিপূরক সৃষ্টি : পরস্পর থেকে পৃথক হয়ে প্রতিটি একক হেলিক্স তার জন্য নতুন পরিপূরক একক হেলিক্স তৈরির ছাঁচ হিসেবে কাজ করে। এখানে নতুন হেলিক্স তৈরির প্রয়ােজনীয় উপাদান, যেমন : শর্করা, নাইট্রোজেন বেস ও ফসফেট যথাস্থানে উপস্থিত হয়ে পরিপূরক সূত্র গঠন করে। এক্ষেত্রে DNA পলিমারেজ এনজাইম ও ম্যাগনেসিয়াম আয়ন অত্যাবশ্যকীয়। নতুন হেলিক্স এর একটি সব সময়ই ৫’– ৩’ অভিমুখী বৃদ্ধি পায়। একে অগ্রগামী সূত্রক বলে। অপর সূত্রকটি ৩-৫’ অভিমুখী বৃদ্ধি পায়। একে পিছিয়ে পড়া সূত্রক বলে।
চিত্র : অর্ধসংরক্ষণশীল পদ্ধতির মাধ্যমে DNA অণুর রেপ্লিকেশন
৩. পরিপূরক বেস এর বিন্যাস ও নতুন হাইড্রোজেন বন্ড গঠন :রেপ্লিকেশনের ফলে সৃষ্ট নতুন সূত্রক দুটিতে ঘঁচের বেস ক্রমানুসারে পরিপূরক বেসগুলাে বিন্যস্ত হতে থাকে। যেমন : ছাঁচে থায়ামিন বেস থাকলে এর বিপরীতে নতুন সূত্রকে অ্যাডেনিন বেস সংযােজন হবে।
অনুরূপভাবে ছাঁচে সাইটোসিনের বিপরীতে পরিপূরক বেস গুয়ানিনই সংযােজিত হবে। এভাবে পরিপূরক বেসসমূহ হাইড্রোজেন বন্ড দ্বারা আবদ্ধ হয়েই নতুন DNA অণু সৃষ্টি হয়।
ঘ প্রশ্নের উত্তর
ঘ) উদ্দীপকে চিত্রে প্রদর্শিত ‘B’ অংশটি হলাে mRNA । জীবের বৈশিষ্ট্য প্রকাশে mRNA-এর গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। নিচে তা বিশ্লেষণ করা হলাে-
বংশগতীয় বস্তুর প্রধান উপাদান হচ্ছে ক্রোমােসােম। এ ক্রোমােসােমে রয়েছে DNA যেখানে জিনগুলাে সজ্জিত থাকে। জিনই হচ্ছে জীবের সব চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের ধারক যা পর্যায়ক্রমে বাহ্যিক চরিত্রসমূহ ফুটিয়ে তােলে। এক্ষেত্রে জিনের মাধ্যমে জীবের বৈশিষ্ট্য প্রকাশের প্রথম ধাপ হলাে DNA অণু ব্যবহার করে RNA অণু তৈরি করা। RNA অণু বলতে mRNA-কে বুঝায় । mRNA অণু DNA থেকে আলাদা হয়ে নিউক্লিয়াস থেকে রাইবােসােমে আসে।
সেখান থেকে mRNA কোড করা তথ্য ব্যবহার করে tRNA-র সহায়তায় নির্দিষ্ট সিকুয়েন্স অনুযায়ী প্রয়ােজনীয় অ্যামিনাে অ্যাসিড সংযুক্ত করে পলিপেপটাইড চেইন তৈরি করে। এই চেইন তথা প্রােটিন জীবের বৈশিষ্ট্য প্রকাশ করে । উপরের আলােচনা থেকে প্রতীয়মান হয় যে, জীবের বৈশিষ্ট্য প্রকাশে প্রােটিন যে ভূমিকা রাখে তা তৈরিতে mRNA গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে । mRNA-র অনুপস্থিতিতে প্রােটিন তৈরি অসম্ভব। আবার প্রােটিন তৈরি না হলে জীবের বাহ্যিক বৈশিষ্ট্যও প্রকাশ পাবে না । সুতরাং জীবের বৈশিষ্ট্য প্রকাশে ৪ তথা mRNA-র গুরুত্ব অপরিসীম।
অনুসরণঃ কোষ ও এর গঠন সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর এবং সাজেশান্স
অনুশীলন প্রশ্ন ১৫
১৫।
(ক) সাইন্যাপসিস কী?
(খ) জেনেটিক কোড়কে ট্রিপলেট কোড বলা হয় কেন?
(গ) উদ্দীপকের প্রদর্শিত ‘B’ এর গঠন বর্ণনা কর।
(ঘ) উদ্দীপকের D প্রক্রিয়ার জৈবিক গুরুত্ব বিশ্লেষণ কর। BS19
ক) দুটি হােমােলােগাস ক্রোমােসােমের জোড় বাঁধার প্রক্রিয়াই হলাে সাইন্যাপসিস ।
খ) যে সংকেত নিউক্লিক এসিডের নিউক্লিওটাইড় অণুক্রমের সাথে অ্যামিনাে এসিডের ক্রমের সম্পর্ক সৃষ্টি করে তাকে জেনেটিক কোড বলা হয়। DNA-তে পাশাপাশি তিনটি নাইট্রোজিনাস বেস মিলিত হয়ে ট্রিপলেট কোড গঠিত হয়। অর্থাৎ প্রত্যেকটা জেনেটিক কোড।তিন অক্ষর বিশিষ্ট (যেমন— AUG, AAA, UUU) হওয়ায় একে টিপলেট কোড বলা হয় ।
গ নং প্রশ্নের উত্তর
গ। উদ্দীপকে প্রদর্শিত B-চিত্রটি হলাে tRNA বা ট্রান্সফার RNA। যেসব RNA জেনেটিক কোড অনুযায়ী একেকটি অ্যামিনাে অ্যাসিডকে mRNA অণুতে স্থানান্তর করে প্রােটিন সংশ্লেষে সাহায্য করে। সেগুলােকে ট্রান্সফার RNA বলে। প্রতিটি কোষে প্রায় ৩১ – ৪২ ধরনের tRNA থাকে। নিউক্লিয়াসের ভিতরে tRNA সৃষ্টি হয়। প্রতিটি tRNA-তে মােটামুটিভাবে ৯০টি নিউক্লিয়ােটাইড থাকে। প্রাথমিকভাবে প্রতিটি tRNA একসূত্রক এবং লম্বা চেইনের মতাে থাকে কিন্তু পরবর্তীতে এটি ভঁজ হয়ে যায় এবং বিভিন্ন বেস-এর মধ্যে জোড়ার সৃষ্টি হয়ে প্রতিটি tRNA-তে একাধিক ফাঁস সৃষ্টি হয়। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ফাঁস হলাে অ্যান্টিকোডন ফাস যা mRNA-এর কোডন-এর সাথে মুখেমুখে বসে যেতে পারে। tRNA-৩’ প্রতি একসূত্রক এবং সবসময়ই CCA ধারায় বেস সজ্জিত থাকে। এখানে অ্যামিনাে অ্যাসিড সংযুক্ত হয়। একে বলা হয় অ্যামিনাে অ্যাসিড সাইট। ফাস অবস্থায় সবসময়ই অ্যান্টিকোন ফাঁস ও অ্যামিনাে অ্যাসিড সাইট বিপরীত অবস্থানে থাকে । তিনটি বেস নিয়ে অ্যান্টিকোডন সৃষ্টি হয়।
ঘ প্রশ্নের উত্তর
ঘ উদ্দীপকের D প্রক্রিয়া হলাে DNA অনুলিপন প্রক্রিয়া। নিচে DNA অনুলিপন প্রক্রিয়ার জৈবিক গুরুত্ব বিশ্লেষণ করা হলাে-
যে প্রক্রিয়ায় একটি DNA অণু হতে পূর্বানুরূপ দুটি DNA অণুর সৃষ্টি হয়, তাকে DNA অনুলিপন বলে। DNA অণুর অনুলিপন হয়ে থাকে অর্ধরক্ষণশীল, রক্ষণশীল এবং বিচ্ছুরনশীল পদ্ধতিতে। প্রতিটি জীবের জীবন শুরু হয় একটিমাত্র কোষ থেকে। বহুকোষী জীবের ক্ষেত্রে এককোষী জাইগােট বিভাজিত হয়ে বিভিন্ন টিস্যুতে রূপান্তরিত হয়ে পরিণত জীবদেহ গঠন করে। এককোষী জীবেরা কোষ বিভাজনের মাধ্যমে প্রজনন বা সংখ্যাবৃদ্ধি ঘটায়।
একটি কোষ বিভাজিত হয়ে দুটি কোষে পরিণত হওয়ার আগেই মাতৃকোষের DNA-ডাবল হেলিক্সটি DNA অনুলিপন প্রক্রিয়ায় দুটি ডাবল হেলিক্সে পরিণত হয়।
অর্থাৎ,DNA-র প্রতিলিপি সৃষ্টিই কোষ বিভাজনের পূর্বশর্ত। গ্যামিট সৃষ্টির জন্যও DNA অনুলিপন প্রয়ােজন। এছাড়াও পূর্ব পুরুষের বৈশিষ্ট্য উত্তর পুরুষে স্থানান্তরের জন্য DNA-অনুলিপন বাধ্যতামূলক প্রক্রিয়া ।পরিশেষে বলা যায় যে, DNA অনুলিপন জীবজগতের জন্য একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং অত্যাবশ্যকীয় প্রক্রিয়া।