তাহারেই পড়ে মনে সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর (এইচএসসি বাংলা ১মপত্র): শিক্ষার্থীরা তোমাদের বাংলা পদ্য তাহারেই মনে পড়ে এর সর্বশেষ বোর্ড প্রশ্ন উত্তরসহ এখানে দিয়েছি। আশাকরি তোমরা এখান থেকে প্রস্তুতি ও পরীক্ষার ধারণা নিতে পারবে।
যশোর বোর্ড ২০১৯
অকালে বাবাকে হারিয়ে আবিদের মন ভীষণ খারাপ। বন্ধু বাতেন এসে বলল, “তুমি তো ঘুরতে খুব পছন্দ কর, চলো নৌকায় কোথাও ঘুরে আসি। শরতের শুভ্র জ্যোৎস্নায় দু’ধারে কাশবন, মৃদু বাতাসে নৌকার দোলা– তোমার. জবাবে আবিদ বলল, “নির্মল জলে রুপালি চাঁদ কোনোকিছুতে আর মন নেই বন্ধু! আমার সব ভালো লাগা পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছে।” মন ভালো হয়ে যাবে।”
ক. ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় কবির নীরবতার কারণ কী?
খ. কবিতায় কবির ব্যক্তিজীবন কীভাবে ধরা পড়েছে?
গ. উদ্দীপকের বাতেন ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতার কার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়? উভয়ের ভূমিকার তুলনা কর ।
ঘ. “আবিদের জবাবে ‘তাহারই পড়ে মনে’ কবিতার মূল বক্তব্যই প্রতিধ্বনিত হয়েছে” – উক্তিটির যথার্থতা বিচার কর।
ক) ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় কবির নীরবতার কারণ প্রিয়জন হারানোর শোক ও গভীর বেদনাবোধ।
খ) ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় কবির প্রিয়জন হারানোর স্মৃতি মনে পড়ে। তাঁর প্রতি গভীর হৃদয়বেদনা অনুভবের মাধ্যমে কবির ব্যক্তিগত জীবন ধরা পডেছে।
‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় কবির ব্যক্তিগত শোক ও দুঃখবোধের বিষয়টি প্রতিফলিত হয়েছে। কবির সাহিত্য সাধনার প্রধান সহায়ক ছিলেন তাঁর স্বামী সৈয়দ নেহাল হোসেন। তাঁর মৃত্যুতে কবির জীবনে প্রচণ্ড শূন্যতা নেমে আসে। প্রকৃতিতে বসন্ত এলেও কবির অন্তরজুড়ে শীতের রিক্ততা বিরাজ করে। তিনি কোনোমতেই তাঁকে ভুলতে পারেন না। শীতের রিক্ত পরিবেশের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ হয়ে ওঠে তাঁর জীবন। প্রিয়জন হারিয়ে তাঁর হৃদয় বেদনায় কাতর, তার হৃদয়জুড়ে যেন সমস্ত শূন্যতা বিরাজ করছে। তিনি বসন্তের ফুলের সৌরভ অনুভব করতে পারেন না এবং তার ভক্তকুলের বিনীত অনুরোধও রক্ষা করতে পারেন না। শীতের প্রকৃতি যেন বিরাজ করছে তাঁর জীবনে। এভাবে কবিতায় কবির ব্যক্তিগত জীবন ধরা পড়েছে।
সারকথা : কবি প্রিয় স্বামী হারানোর গভীর বেদনায় ক্লান্ত-বিষণ্ন। প্রিয়জনের শোকের কারণে তিনি বসন্তকে স্বাগত জানাতে পারেন না। তাঁর জীবনজুড়ে যেন শীতের রিক্ততা বিরাজ করছে
তাহারেই মনে পড়ে সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর / বোর্ড প্রশ্ন
গ) উদ্দীপকের বাতেন ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতার কবিভক্তদের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।
প্রিয়জন হারানোর বেদনা অত্যন্ত গভীর। মানুষ সহজে তা ভুলতে পারে না। শোকাহত মানুষ প্রকৃতির রূপ-রস, গন্ধ-বর্ণ উপভোগ করতে পারে না। প্রিয়জন হারানোর বেদনা তাকে প্রকৃতিবিমুখ করে তোলে। প্রকৃতি সাধারণ মানুষকে আনন্দ দিতে পারলেও বেদনাহত মানুষকে আন্দোলিত করতে পারে না।
উদ্দীপকে পিতা হারানোর শোকে কাতর এক পুত্রের প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়ার কথা তুলে ধরা হয়েছে। এখানে আবিদ তার পিতাকে হারিয়ে গভীরভাবে শোকাহত। তাই সে তার বন্ধু বাতেনের শরতের শুভ্র জ্যোৎস্নায় দু’ধারের কাশবন, মৃদু বাতাসে নৌকার দোলা দর্শন উপভোগ করার আহ্বানে সাড়া দিতে পারে না। এই বিষয়টি ‘তাহারেই পড়ে মনে’
কবিতার বসন্ত গীত রচনা এবং বসন্তের সৌন্দর্য উপভোগের জন্য কবির প্রতি কবিভক্তদের আহ্বানের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ। কারণ কবিও তাঁর ভক্তদের ডাকে সাড়া দিতে পারেননি তাঁর হৃদয়-বেদনার জন্য। তিনি প্রকৃতির রূপৈশ্বর্য কিংবা প্রকৃতির পরিবর্তনে সাড়া না দিয়ে নীরব । কবিভক্তরা তাই কবিকে প্রকৃতির অমিয় সৌন্দর্য উপভোগ করার আহ্বান জানান। যেমন জানিয়েছে উদ্দীপকের বাতেন ।
সারকথা : ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় কবি প্রিয়জন হারানোর বেদনায় ভারাক্রান্ত। উদ্দীপকের আবিদও তার পিতাকে হারিয়ে গভীরভাবে শোকাহত । তাই উদ্দীপকের বাতেনের আহ্বানে আবিদ এবং কবিতায় কবিভক্তদের ডাকে কবি সাড়া দিতে পারেন না।
ঘ) উচ্চতর দক্ষতা
“আবিদের জবাবে ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতার মূল বক্তব্যই প্রতিধ্বনিত হয়েছে”- উক্তিটি যথার্থ ।
প্রকৃতিতে শীতের শূন্যতাকে পূর্ণ করে তোলে বসন্ত। বসন্তের আগমনে গাছে গাছে নতুন পাতা দেখা দেয়, নানা রঙের ফুল ফোটে, মানবমনে শিহরণ জাগে। কিন্তু প্রিয়জন হারিয়ে যার মন বিরহকাতর তার মনে প্রকৃতির এই পরিবর্তনের ছোঁয়া লাগে না।
‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় কবির ব্যক্তিজীবনে প্রিয়জন হারানোর বেদনার ছায়াপাত ঘটেছে। শীতের প্রভাবে প্রকৃতির শূন্যতা যেমন স্পষ্ট হয়ে ওঠে, কবির বেলায়ও তাই হয়েছে। প্রকৃতিতে বসন্ত এলেও তাঁর বিরহকাতর মনকে জাগাতে পারেনি। কবিতায় প্রতিফলিত কবির এই হৃদয় বেদনার সঙ্গে উদ্দীপকের আবিদের বেদনার মিল লক্ষ করা যায়। আবিদও তার পিতাকে হারিয়ে গভীরভাবে শোকাহত । শরতের শুভ্র জ্যোৎস্নায় দু’ধারে কাশবন, মৃদু বাতাসে নৌকার দোলা- তার মনকে জাগাতে পারে না।
‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় কবি তাঁর অন্তর বেদনার কারণে বসন্ত প্রকৃতিকে অভ্যর্থনা জানাতে পারেন না। কারণ প্রিয়জন হারানোর স্মৃতি তাঁকে দুঃখভারাক্রান্ত করে রেখেছে।
তাঁর হৃদয়ে প্রকৃতির বসন্তের রূপবৈচিত্র্যের পরিবর্তে শীতের শূন্যতা বিরাজ করে। উদ্দীপকের আবিদের বেলায়ও অনুরূপ ঘটনা ঘটেছে। প্রিয় পিতার মৃত্যুতে সে গভীর বেদনায় আচ্ছন্ন বলে কোনোকিছুতেই তার মন বসে না। এইসব দিক বিচারে প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথার্থ ।
সারকথা : ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতার কবি শীতের রিক্ততার মাঝেই জীবনের অনন্ত শূন্যতা ও মর্মপীড়ার সাদৃশ্য খুঁজে পেয়েছেন। তাঁর বেদনাবোধের সঙ্গে উদ্দীপকের আবিদের বেদনাবোধ সাদৃশ্যপূর্ণ। এই দিক থেকে প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথার্থ।
তাহারেই পড়ে মনে সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর (এইচএসসি বাংলা ১মপত্র)
ঢাকা বোর্ড ২০১৯
রত্না ও রতনের দাম্পত্য জীবন বেশ সুখে-শান্তিতেই কাটছিল। কিন্তু বিনা মেঘে বজ্রপাতের ন্যায় মরণব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করল রতন। কালের বিবর্তনে জীবন নামের একজন ভালো মানুষের সাথে রত্নার পুনরায় বিয়ে হলেও প্রথম স্বামীর স্মৃতি এক মুহূর্তের জন্যও ভুলতে পারেনি সে। কেননা, প্রথম স্বামী ছিল তার সকল কাজের সহযোগী ও প্রেরণাদাতা। প্রতি বসন্তে রত্না তাই প্রথম স্বামীর কথা বিশেষভাবে স্মরণ করে নীরবে কাঁদে। কারণ, তার ভালোবাসার মানুষটি বসন্তকালের পূর্বলগ্নেই তাকে ছেড়ে চির বিদায় নিয়েছে।
ক. “কহিল সে স্নিগ্ধ আঁখি তুলি”কার কথা বলা হয়েছে?
খ. “পুষ্পশূন্য দিগন্তের পথে” বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
গ. উদ্দীপকে ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতার বিষয়বস্তু ভিন্ন আঙ্গিকে উপস্থাপিত হয়েছে। – বুঝিয়ে লেখ
ঘ. “উদ্দীপকের রত্না আর ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতার কবির কষ্ট একসূত্রে গাথা।” – বিশ্লেষণ কর।
ক) কহিল সে স্নিগ্ধ আঁখি তুলি”— এখানে কবির কথা বলা হয়েছে।
খ ) “পুষ্পশূন্য দিগন্তের পথে” কথাটি দিয়ে কবি তাঁর প্রিয়জন হারানোর শোকে হৃদয়ের শূন্যতাকে শীত প্রকৃতির রিক্ততার সঙ্গে তুলনা করেছেন।
শীত ঋতু প্রকৃতিকে শূন্য করে তোলে। গাছের পাতা ঝরে যায়। গাছ হয়ে পড়ে পত্র-পুষ্পহীন। কবির জীবনও শীতের মতোই রিক্ত হয়ে গেছে। কারণ তাঁর জীবন থেকে প্রিয়তম স্বামী চিরতরে হারিয়ে গেছেন। তাই নিজ জীবনের শূন্যতাকে শীতের প্রকৃতির সঙ্গে তুলনা করতে গিয়ে কবি ‘পুষ্পশূন্য দিগন্তের পথে’ কথাটি বলেছেন ।
সারকথা : শীতের রিক্ততার মতো নিজের জীবনের রিক্ততাকে কবি ‘পুষ্পশূন্য দিগন্তের পথে’ বলে অভিহিত করেছেন।
তাহারেই পড়ে মনে সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর (এইচএসসি বাংলা ১মপত্র)
গ) উদ্দীপকে ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতার বিষয়বস্তু ভিন্ন আঙ্গিকে উপস্থাপিত হয়েছে। তবে এর তাৎপর্য কবিতার মূলভাবের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ।
সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা নিয়েই মানুষের জীবন। মানুষ সুখের স্মৃতি ভুলে গেলেও দুঃখের স্মৃতি কখনই ভুলতে পারে না। প্রিয়জন হারানোর স্মৃতি মানুষকে প্রতিনিয়ত কষ্ট দেয়। যা হারিয়েছে তা আর ফিরে আসবে না জেনেও মানুষ হারানো প্রিয়জনের কথা ভেবে আকুল হয়।
উদ্দীপকে রত্নার সুখের জীবনে হঠাৎ দুঃখ নেমে আসা এবং প্রথম স্বামীর জন্য তার দুঃখবোধ ও বেদনাভারাক্রান্ত মনের দিকটি তুলে ধরা হয়েছে। প্রথম স্বামী রতনের মৃত্যুর পর রত্নার আবার বিয়ে হলেও রতনের কথা সে ভুলতে পারে না। হারিয়ে যাওয়া মানুষটির কথা স্মরণ করে সে নীরবে কাঁদে। শীতের রিক্ততা যেমন প্রকৃতিকে বেদনাচ্ছন্ন করে, প্রথম স্বামীর মৃত্যুতেও রত্নার জীবন তেমনই শূন্যতায় শোকাচ্ছন্ন। এই বিষয়টি ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতার কবির প্রিয়জন হারানোর বেদনার সঙ্গে
সাদৃশ্যপূর্ণ। সেখানে প্রকৃতি, পরিবেশ, কবি ও কবিভক্তদের সমন্বয়ে যে সংলাপধর্মিতা লক্ষ করা যায় তা উদ্দীপকে নেই। কিন্তু উদ্দীপকে রতনের জন্য রত্নার যে শোকানুভূতি তা কবিতার কবির শোকানুভূতির সঙ্গে এক ও অভিন্ন।
সারকথা ; উদ্দীপকের রত্নার প্রথম স্বামীর মৃত্যুতে যে শোকানুভূতি প্রকাশ পেয়েছে তা ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতার কবির শোকানুভূতির সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ।
তাহারেই মনে পড়ে সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর / বোর্ড প্রশ্ন
ঘ) উচ্চতর দক্ষতা
“উদ্দীপকের রত্না আর ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতার কবির কষ্ট একসূত্রে গাঁথা।”- মন্তব্যটি যথার্থ।
প্রিয়জনের মৃত্যু মানুষকে দুঃখভারাক্রান্ত করে তোলে। প্রিয় মানুষের বিয়োগব্যথা তাকে চারপাশের জীবন ও জগৎ থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলে। কারণ শোকাচ্ছন্ন হৃদয়ে জগতের কোনো সৌন্দর্য, কোনো আনন্দই রেখাপাত করে না।
‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় প্রকৃতিতে বসন্তের আগমন এবং তাতে কবির সাড়া না দেওয়ার বিষয়টি প্রকাশ পেয়েছে। বাতাবি লেবুর ফুল ফোটা, আমের মুকুল ধরা, দখিনা বাতাসে মাধবী কুঁড়ির গন্ধ ভেসে বেড়ানোতে কবির মনোযোগ নেই। কারণ কবির ব্যক্তিগত শোক কবিকে এসবের প্রতি মুগ্ধ হওয়া থেকে বিচ্ছিন্ন করেছে। কবির সাহিত্য সাধনার একান্ত সহায়ক ছিলেন তাঁর স্বামী সৈয়দ নেহাল হোসেন। তাঁর মৃত্যুতে কবির জীবনে প্রচণ্ড শূন্যতা নেমে আসে। কবিতার কবির এই শূন্যতার সঙ্গে উদ্দীপকের
রত্নার শূন্যতার সাদৃশ্য রয়েছে। সেও প্রথম স্বামীকে কোনোভাবেই ভুলতে পারে না। কারণ রত্নার জীবনের সব কাজের প্রেরণাদাতা ছিল তার স্বামী রতন। জীবনের প্রয়োজনে সে পুনরায় বিয়ে করলেও প্রথম স্বামী রতনের স্মৃতি কিছুতেই ভুলতে পারে না।
‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় প্রকৃতিতে বসন্ত এলেও কবির মনে তা রেখাপাত করে না। কারণ তিনি প্রিয় স্বামীর মৃত্যুর শোকে উন্মনা, উদাসীন। উদ্দীপকের রত্নার দ্বিতীয়বার বিয়ে হলেও তার সব কাজে-কর্মে প্রথম স্বামীর সহযোগিতার কথা ভুলতে পারে না। সে তার কথা
মনে করে নীরবে কাঁদে। এক্ষেত্রে কবিতার কবি এবং উদ্দীপকের রত্নার বেদনাবোধ এক ও অভিন্ন। এই বিচারে প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথার্থ।
সারকথা : প্রিয়জনের শোক মানুষকে সারা জীবন ধরে কাঁদায়, নানা আনন্দ আয়োজন থেকে সরিয়ে রাখে। উদ্দীপকের রত্না এবং ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতার কবি উভয়ই স্বামী হারানোর ব্যথায় কাতর। বেদনাচ্ছন্নতার দিক থেকে তাদের জীবনবোধ একসূত্রে গাঁথা।
তাহারেই পড়ে মনে সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর (এইচএসসি বাংলা ১মপত্র)
কুমিল্লা বোর্ড ২০১৯
“বহুদিন পরে মনে পড়ে আজি পল্লীমায়ের কোল,
ঝাউশাখে সেথা বনলতা বাঁধি, হরষে খেয়েছি দোল,
কুলের কাঁটার আঘাত সহিয়া কাঁচাপাকা কুল খেয়ে,
অমৃতের স্বাদ যেন লভিয়াছি গাঁয়ের দুলালী মেয়ে।”
ক. ‘পাথার’ শব্দের অর্থ কী?
খ. “কুহেলি উত্তরী তলে মাঘের সন্ন্যাসী।”— পঙ্ক্তিটি বুঝিয়ে লেখ।
গ. উদ্দীপকের ভাববস্তুর সাথে ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতার ভাববস্তুর বৈসাদৃশ্য আলোচনা কর।
ঘ. উদ্দীপকে ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতার মূল সুর প্রতিফলিত হয়েছে কি? তোমার মতামত দাও।
ক) ‘পাথার’ শব্দের অর্থ সমুদ্র।
খ) “কুহেলি উত্তরী তলে মাঘের সন্ন্যাসী।” – এই পঙ্ক্তিটিতে কবি শীতকে মাঘের সন্ন্যাসীরূপে কল্পনা করেছেন।
শীত ঋতুতে কুয়াশা চারদিক আচ্ছন্ন করে রাখে। গাছের পাতা ঝরে যায়। পরিবেশে এক নিঃস্ব-রিক্ত রূপ চোখে পড়ে। কবি শীতের এই অবস্থাকে সন্ন্যাসীর সঙ্গে তুলনা করেছেন। সন্ন্যাসীরা জাগতিক বিলাস-ব্যসন ত্যাগ করে সহজ-সরল জীবনযাপন করেন। তারা সংসারবিবাগী, সর্বত্যাগী। শীতও যেন তাই বসন্ত আসার আগে সর্বত্যাগী সন্ন্যাসীর মতো প্রকৃতিকে রিক্ত-শূন্য করে কুয়াশার চাদরে আচ্ছন্ন করে রাখে।
সারকথা : শীত ঋতুতে প্রকৃতি রিক্ত-শূন্য হয়ে পড়ে। এই অবস্থায় প্রকৃতিতে যেন কোনো প্রাণের সাড়া থাকে না। মনে হয় কোনো সন্ন্যাসী রিক্ত-নিঃস্ব অবস্থায় ধ্যানে মগ্ন।
তাহারেই পড়ে মনে সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর (এইচএসসি বাংলা ১মপত্র)
গ) অতীত সুখস্মৃতি রোমন্থনের দিক দিয়ে উদ্দীপকের ভাববস্তুর সঙ্গে ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতার ভাববস্তু বৈসাদৃশ্যপূর্ণ।
সুখ-দুখ, আনন্দ-বেদনা নিয়েই মানুষের জীবন। জীবন চলার পথে মানুষ সুখের স্মৃতি ভুলে গেলেও দুঃখের স্মৃতি ভুলতে পারে না। প্রিয়জন হারানোর বেদনাহত মনকে কেউ জাগাতে পারে না। ব্যক্তি তার জীবনের বেদনার স্মৃতি আমৃত্যু বয়ে বেড়ায়।
উদ্দীপকে পল্লিপ্রকৃতিতে বেড়ে ওঠা কবি তাঁর শৈশবে ঝাউশাখে বনলতা বেঁধে আনন্দে দোল খাওয়া, কাঁটার আঘাত সহ্য করে।
কাঁচা-পাকা কুল খেয়ে অমৃতের স্বাদ লাভের কথা বলেছেন। অর্থাৎ উদ্দীপকে শৈশবের আনন্দঘন স্মৃতির কথা বলা হয়েছে।
‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় কবি প্রিয়জনকে হারানোর শোকস্মৃতিতে ভারাক্রান্ত। তিনি গভীরভাবে বেদনাহত বলে প্রকৃতিতে বসন্তের আগমনকে সাদরে গ্রহণ করতে পারেন না। তাঁর মনে কোনো আনন্দ নেই বলে বসন্তের ঘনঘটা তাঁকে জাগায় না।
কবির জীবনে প্রিয়জন হারানোর বিয়োগব্যথার ছায়াপাত ঘটেছে। ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতার এই মৌল বিষয়টি উদ্দীপকের কবিতাংশের বিষয়বস্তুর বিপরীত।
সারকথা : উদ্দীপকে শৈশবের আনন্দঘন স্মৃতি প্রতিফলিত হয়েছে। আর ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় প্রিয়জন হারানোর শোকস্মৃতি এবং শূন্য হৃদয়ের আকুতি প্রকাশ পেয়েছে। এভাবে উদ্দীপক ও কবিতার ভাববস্তু পরস্পর বৈসাদৃশ্যপূর্ণ।
তাহারেই মনে পড়ে সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর / বোর্ড প্রশ্ন
ঘ উচ্চতর দক্ষতা
• না, উদ্দীপকে ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতার মূল সুর প্রতিফলিত হয়নি।
শৈশবের আনন্দস্মৃতি মানুষকে যেমন আলোড়িত করে, তেমনই শোকের স্মৃতি মানুষকে গভীরভাবে যন্ত্রণাকাতর করে। মানুষের ব্যক্তিজীবনে নানা রকম সুখ-দুঃখ-আনন্দ-বেদনার স্মৃতি থাকে। সেসব নিয়েই তাদের বাঁচতে হয়।
উদ্দীপকের কবিতাংশে কবি তাঁর শৈশবের আনন্দঘন দিন কাটানোর কথা বলেছেন। তিনি পল্লিমায়ের কোলে ঝাউশাখে বনলতা বেঁধে আনন্দে দোল খাওয়া, কাঁটার আঘাত সহ্য করে কাঁচা-পাকা কুল খাওয়ার কথা বলেছেন। এসব কাজ করে কবি অমৃতের স্বাদ লাভ করেছেন। উদ্দীপকের এই বিষয় বর্ণনায় প্রিয়জন হারানোর কষ্ট বা বেদনা নেই। ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় কবির ব্যক্তিগত জীবনের যে দুঃখময় স্মৃতির কথা বলা হয়েছে তা উদ্দীপকের বিষয়ের সঙ্গে বৈসাদৃশ্যপূর্ণ। উদ্দীপকের স্মৃতিটি শৈশবের সুখস্মৃতি । অন্যদিকে ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় বর্ণিত হয়েছে কবির স্বামী হারানোর শোকস্মৃতি ।
‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় বিচ্ছেদ বেদনায় কবির মন দুঃখভারাক্রান্ত। তাঁর কণ্ঠ নীরব। প্রকৃতিতে বসন্ত এলেও তাঁর মনজুড়ে শীতের রিক্ততা। ভক্তদের আহ্বান সত্ত্বেও তাঁর মন জাগে না, প্রকৃতির পরিবর্তন তাঁকে প্রভাবিত করতে পারে না। এসব বিষয়ের কোনোটিই উদ্দীপকে নেই। সেখানে কবির শৈশবের সুখের স্মৃতি প্রতিফলিত হয়েছে। এই কারণেই বলা যায়, উদ্দীপকে ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতার মূল সুর প্রতিফলিত হয়নি।
সারকথা : উদ্দীপকের কবিতাংশে কবির শৈশবের আনন্দঘন পল্লিস্মৃতি মনে পড়েছে। আর ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতার কবির স্বামী না হারানোর বেদনাঘন শোকস্মৃতি প্রতিফলিত হয়েছে। উদ্দীপক ও কবিতার ভাববস্তু এভাবে পরস্পরের বিপরীত। তাই উদ্দীপকে ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতার মূল সুর প্রতিফলিত হয়নি।
তাহারেই পড়ে মনে সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর (এইচএসসি বাংলা ১মপত্র)
সিলেট বোর্ড ২০১৯
আজ তুমি নেই সাথে ভুলে থাকা ছলনাতে
মনে মনে ভাবি শুধু তোমারি কথা।
পাওয়া না পাওয়ার মাঝে অচেনার সুর বাজে,
সুরভিত বিরহের মরম ব্যথা।
ক. কবি সুফিয়া কামাল কত সালে মৃত্যুবরণ করেন?
খ. “কোথা তব নব পুষ্প সাজ?” – উক্তিটি বুঝিয়ে লেখ।
গ. উদ্দীপকটিতে ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতার আংশিক প্রতিফলন ঘটেছে – মন্তব্যটি বিশ্লেষণ কর ।
ঘ. উদ্দীপকের কথকের হৃদয়বেদনা যেন ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতার মূল সুর – যুক্তিসহ বিশ্লেষণ কর ।
ক) কবি সুফিয়া কামাল ১৯৯৯ সালে মৃত্যুবরণ করেন।
খ ) “কোথা তব নব পুষ্প সাজ?”- উক্তিটির মাধ্যমে কবির হৃদয়ে বসন্তের ছোঁয়া না লাগার বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়েছে। ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় শীত ও বসন্ত প্রকৃতিকে সামনে রেখে কবির ব্যক্তিগত জীবনের দুঃখময় ঘটনার কথা প্রকাশ পেয়েছে।
প্রকৃতিতে ঋতুরাজ বসন্ত এলেও কবির কোনো পরিবর্তন নেই। বসন্তের আগমনে বাতাবি লেবুর ফুল ও আমের মুকুলের গন্ধ দখিনা বাতাস বইয়ে দিচ্ছে, প্রকৃতি নতুন সাজে সেজে উঠেছে। অথচ কবি উন্মনা। এসব কিছুই তিনি লক্ষ করেননি। নতুন ফুলে তিনি নিজেও সাজেননি, ঘরও সাজাননি। আলোচ্য উক্তির মাধ্যমে কবিভক্ত এর কারণ জানতে চেয়েছেন।
সারকথা : বসন্ত প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য কবির মনে শিহরণ জাগাবে সেটাই স্বাভাবিক। অথচ কবির মন রিক্ততার হাহাকারে আচ্ছন্ন হয়ে বসন্তের সাজ-সৌন্দর্য উপভোগ থেকে বিচ্ছিন্ন।
তাহারেই পড়ে মনে সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর (এইচএসসি বাংলা ১মপত্র)
গ) প্রয়োগ
উদ্দীপকটিতে ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতার আংশিক প্রতিফলন ঘটেছে- মন্তব্যটি সঠিক।
প্রিয়জনের মৃত্যু মানুষের জীবনে বিষণ্নতা, রিক্ততা নিয়ে আসে। মানুষের হৃদয়কে দুঃখভারাক্রান্ত করে। মানুষকে তার চারপাশের জগৎ থেকেও বিচ্ছিন্ন করে রাখে। প্রকৃতির কোনো পরিবর্তন, আনন্দ বারতা তাকে আন্দোলিত করে না।
উদ্দীপকে প্রিয়জন কাছে না থাকায় বিরহ ব্যথায় আচ্ছন্ন এক ব্যক্তির আকুতি প্রকাশ পেয়েছে। ঐ ব্যক্তি মনে মনে তার প্রিয়
মানুষটির কথা ভাবেন অথচ তাকে কাছে পান না। প্রিয় মানুষকে কাছে পাওয়া না-পাওয়ার মাঝখানে দাঁড়িয়ে তিনি অচেনা সুর
অনুভব করেন। উদ্দীপকের এই ব্যক্তির বিয়োগব্যথা ও বিরহকাতরতার বিষয়টি তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতার কবির প্রিয়জন
হারানোর কাতরতার সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ। তবে তার পরিপূর্ণ প্রতিফলন নয়। কারণ কবি তাঁর প্রিয় স্বামীকে হারিয়ে গভীরভাবে
শোকাচ্ছন্ন, উদাসীন। প্রকৃতিতে বসন্ত এলেও তিনি তাকে অভ্যর্থনা জানাতে পারেন না। কবিভক্তদের ডাকে সাড়া দিয়ে তিনি বসন্ত সংগীতও রচনা করতে আগ্রহবোধ করেন না। তাঁর জীবনে শীতের শূন্যতা, রিক্ততা বিরাজ করে। উদ্দীপকে এসব গভীর শোক-বেদনার কথা প্রকাশ পায়নি। তাই উদ্দীপকের বিষয়টিকে ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতার আংশিক প্রতিফলন বলা হয়েছে।
সারকথা : প্রিয়জন হারানোর কারণে মানুষের জীবনে যে বিয়োগব্যথা তা ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় যেভাবে প্রতিফলিত হয়েছে, উদ্দীপকে সেভাবে প্রতিফলিত হয়নি। কবিতায় প্রকৃতির পরিবর্তন ও জাগরণে কবির নীরবতার যে বিষয় অনুষঙ্গ দেখানো হয়েছে তা উদ্দীপকে নেই।
তাহারেই পড়ে মনে সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর (এইচএসসি বাংলা ১মপত্র)
ঘ উচ্চতর দক্ষতা
উদ্দীপকের কথকের হৃদয়বেদনা যেন ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতার মূল সুর— মন্তব্যটি যথার্থ।
প্রিয়জন কাছে না থাকার বেদনা অত্যন্ত করুণ ও মর্মান্তিক। মানুষ সুখ-দুঃখ-আনন্দ-বেদনার সার্বক্ষণিক সঙ্গীর হারিয়ে যাওয়া সহ্য করতে পারে না । যাপিত জীবনে নানা কাজে, অবসরে প্রিয়জনের কথা মনে পড়ে। প্রিয়জন হারিয়ে জীবন বিষণ্ন হয়ে পড়ে।
উদ্দীপকের কথক প্রিয় মানুষের অনুপস্থিতির জন্য বিরহকাতর। তিনি মনে মনে তার প্রিয় মানুষের কথাই ভাবেন। তাকে পাওয়া না-পাওয়ার মাঝে এক অজানা-অচেনা বেদনার সুর কথককে আচ্ছন্ন করে রাখে। এই বিষয়টি ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতার কবির বিরহকাতরতার সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ।
অবস্থা ও প্রেক্ষাপট ভিন্ন হলেও তাদের উভয়ের মধ্যে প্রিয়জন হারানোর বেদনার দিকটি এক ও অভিন্ন। তারা দুজনই মনে মনে প্রিয় মানুষের কথা ভাবেন এবং প্রিয়জনের বিরহের ব্যথা অনুভব করেন।
উদ্দীপকেও ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতার কবির মতো ব্যক্তিগত জীবনের দুঃখময় ঘটনার ছায়াপাত ঘটেছে। ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় কবির ব্যক্তিগত শোক ও দুঃখবোধের বিষয়টি প্রতিফলিত হয়েছে। এখানে কবি প্রিয় স্বামী হারানোতে গভীরভাবে শোকাহত ও বেদনাচ্ছন্ন। কবির এই ব্যক্তিগত বেদনাবোধ উদ্দীপকের কথকের বেদনাবোধের সঙ্গে একসূত্রে গাঁথা।
কবিতায় প্রকৃতির প্রসঙ্গ বাদ দিলে উদ্দীপকের কথকের জীবনবোধের সঙ্গে এবং তার বিরহকাতরতার সঙ্গে ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতার কবির জীবনবোধ অভিন্ন। কবি কোনোমতেই তাঁর প্রিয়জনকে ভুলতে পারেন না। উদ্দীপকের কথকও ভুলতে পারেন না তার প্রিয়জনকে। এই দিক থেকে প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথার্থ।
সারকথা : উদ্দীপকে প্রিয়জন হারানোর বিরহকাতরতা প্রকাশ পেয়েছে। উদ্দীপকের কথকের এই বিরহবোধ ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতার কবির ব্যক্তিগত শোক, দুঃখবোধ ও বিরহকাতরতার সঙ্গে একসূত্রে গাঁথা। এই দিক বিচারে উদ্দীপক ও কবিতার মূল সুর এক।
তাহারেই পড়ে মনে সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর (এইচএসসি বাংলা ১মপত্র)
দিনাজপুর বোর্ড ২০১৯
একুশের বইমেলায় প্রতিবছর সবুজ সাহেবের কবিতার নতুন বই প্রকাশিত হয়। এ বছর তা হয়নি। গত ঈদে গ্রামের বাড়ির পুকুরে ডুবে সবুজ সাহেবের একমাত্র পুত্র ফয়সাল মারা যান। কবি পুত্রশোকে শোকগ্রস্ত। বইমেলা উপলক্ষে নতুন বই প্রকাশে কয়েকজন প্রকাশক কবি সবুজ সাহেবের কাছে পাণ্ডুলিপি চেয়েছেন। কিন্তু কবি কারো কথা রাখতে পারেননি।
ক. ‘পাথার’ শব্দের অর্থ কী?
খ. ‘সে ভুলেনি তো, এসেছে তা ফাগুনে স্মরিয়া’- উক্তিটির তাৎপর্য ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকের সবুজ সাহেবের সাথে ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতার কবির সাদৃশ্য দেখাও।
ঘ. “উদ্দীপক ও ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় বিষ্ণণ্নতার সুর স্পষ্ট হয়েছে।”— মন্তব্যটি বিশ্লেষণ কর।
ক) ‘পাথার’ শব্দের অর্থ— সমুদ্র।
খ) ‘সে ভুলেনি তো এসেছে তা ফাগুনে স্মরিয়া- উক্তিটির মাধ্যমে প্রকৃতির পরিবর্তনে ব্যক্তির সুখ-দুঃখের প্রভাব না পড়ার দিকটিকে বোঝানো হয়েছে।
‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় কবির ব্যক্তিগত জীবনের দুঃখময় ঘটনার ছায়াপত ঘটেছে। কবিতায় কবির ব্যক্তিগত শোক ও দুঃখবোধের বিষয়টি প্রতিফলিত হয়েছে। এখানে কবির স্থবিরতা প্রকৃতির গতিময়তাকে থামাতে পারেনি। কারণ প্রকৃতি তার আপন নিয়মে সদা পরিবর্তনশীল। মানুষের সুখ-দুঃখ প্রকৃতিকে প্রভাবিত করতে পারে না। কবিতার আলোচ্য পতিতে এই বিষয়টিই মূর্ত হয়ে উঠেছে।
সারকথা : কবি প্রিয়জন হারিয়ে শোকাচ্ছন্ন থাকায় বসন্ত বন্দনা না করলেও ফাগুন আসার সঙ্গে সঙ্গে প্রকৃতিতে বসন্ত তার বৈচিত্র্য নিয়ে হাজির হয়েছে।
তাহারেই পড়ে মনে সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর (এইচএসসি বাংলা ১মপত্র)
গ প্রয়োগ
উদ্দীপকের সবুজ সাহেবের সঙ্গে ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতার কবির সাদৃশ্য রয়েছে প্রিয়জন হারানোর বেদনার দিক থেকে।
প্রিয়জন হারানোর শোক মানুষ সহজে ভুলতে পারে না। প্রিয় মানুষটিকে হারিয়ে অনেকেই শোকাচ্ছন্ন থাকে। তাই প্রকৃতির পরিবর্তন তাকে পুলকিত করে না। প্রকৃতিতে বসন্ত এলেও তার মনে সাড়া জাগাতে পারে না।
উদ্দীপকের বইমেলায় প্রতিবছর কবি সবুজ সাহেবের কবিতার বই বের হয়। কিন্তু একমাত্র পুত্র ফয়সালের মৃত্যুশোকে তিনি কাতর বলে এবার তা বের হয়নি। সন্তান হারানোর শোক ঘটনা তাকে এতটাই আচ্ছন্ন করে রেখেছে যে বইমেলার জন্য তিনি কোনো বইয়ের পাণ্ডুলিপিই প্রস্তুত করতে পারেননি। ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতার কবিও একইরূপ শোকে আচ্ছন্ন। প্রিয়জনের শোক তাঁকে বিষণ্ন করে তুলেছে বলে তিনি বসন্ত বন্দনায় নিমগ্ন হতে পারেননি। এভাবে ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতা এবং উদ্দীপকের কবির বেদনা সাদৃশ্যপূর্ণ হয়ে ওঠেছে।
সারকথা : যে যেভাবেই হারাক, প্রিয়জন হারানের বেদনা সবার ক্ষেত্রে অভিন্ন। এই দিক থেকে উদ্দীপকের সবুজ সাহেব এবং ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতার কবির মধ্যে সাদৃশ্য বিদ্যমান।
তাহারেই পড়ে মনে সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর (এইচএসসি বাংলা ১মপত্র)
ঘ) উচ্চতর দক্ষতা
“উদ্দীপক ও ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় বিষণ্নতার সুর স্পষ্ট।”— মন্তব্যটি যথার্থ।
প্রিয়জন হারানোর বেদনা মানুষকে প্রকৃতির নানা পরিবর্তন থেকে বিচ্ছিন্ন করে তোলে। জগতের সব আনন্দ থেকে সে নিজেকে আলাদা করে রাখে। উদ্দীপকের সবুজ সাহেব একমাত্র পুত্র ফয়সালকে হারিয়ে শোকে মুহ্যমান। তাই তিনি সাহিত্য সাধনায় মগ্ন হতে পারেননি। ।
প্রকাশকদেরকে তিনি এবারের বইমেলায় তাঁর কোনো পাণ্ডুলিপি দিতে পারেননি। ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতার কবিও প্রিয়জন হারানোর শোকে তার ভক্তদের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেননি। তিনি বসন্ত সংগীত রচনা করে বসন্তকে স্বাগত জানাতেও আগ্রহ প্রকাশ করেননি।
‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় কবির ব্যক্তিজীবনের দুঃখময় ঘটনার প্রতিফলন ঘটেছে। কবির সাহিত্য সাধনার প্রধান সহায়ক ও উৎসাহদাতা স্বামীর আকস্মিক মৃত্যুতে তাঁর জীবনে শূন্যতা নেমে এসেছে। এ কারণেই প্রকৃতিতে বসন্তের আগমন তার চোখে পড়েনি। একইভাবে বিষণ্নতায় মর্মাহত হওয়ার কারণেই উদ্দীপকের কবি সবুজ সাহেব সাহিত্য সাধনায় অনাগ্রহী হয়ে পড়েছেন। এসব দিক বিচারে তাই বলা যায়। প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথার্থ।
সারকথা : প্রিয়জন হারানোর বেদনাবোধের দিক থেকে উদ্দীপকের সবুজ সাহেব এবং ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতার কবির অনুভূতি ও শোক
এক ও অভিন্ন। উভয় ক্ষেত্রেই প্রিয়জনের জন্য তাদের মনে বিষণ্নতার সুর বেজে উঠেছে।
প্র্যাকটিস প্রশ্ন ও উত্তর
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
যারে খুব বেসেছিনু ভালো
সে মোরে ছেড়ে চলে গেল
যে ছিল মোর জীবন ছায়া
রেখে গেছে শুধু মায়া।
লাগে না ভালো অপরূপ প্রকৃতি
যতই করুক কেউ মিনতি
আমি এখন রিক্ত শূন্য
মন পড়ে রয়েছে তার জন্য
সে দিল মোরে কেমনে ফাঁকি
আমি এখন বড় একাকী।
ক. ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতাটি প্রথম কোন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়?
খ. “উপেক্ষায় ঋতুরাজে কেন কবি দাও তুমি ব্যথা?” উক্তিটি দ্বারা কী বোঝানো হয়েছে?
গ. উদ্দীপকের প্রথম দুচরণে ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতার কোন দিকটি প্রকাশ পেয়েছে? আলোচনা কর।
ঘ. উদ্দীপকটি যেন ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবির মর্মবাণীকেই ধারণ করেছে। তোমার মতের পক্ষে যুক্তি দাও।
আরো পড়ুনঃ
১ নং প্রশ্নের উত্তর
ক) ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতাটি প্রথম ‘মাসিক মোহাম্মদী’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।
খ) “উপেক্ষায় ঋতুরাজে কেন কবি দাও তুমি ব্যথা” উক্তিটি দ্বারা সানন্দে বসন্ত না করে তার দিকে কবির মুখ ফিরিয়ে থাকার কথা বোঝানো হয়েছে।
প্রতি বছর বসন্তের আগমন ঘটে। গাছে গাছে ফুল ফোটে, বিচিত্র রঙের ফুলে ফুলে শাখা ভরে যায়। মাধবী কুঁড়ি সুগন্ধ ছড়িয়ে দেয় চারদিকে। প্রকৃতি বিচিত্র সাজে সজ্জিত হয়ে ফুল ও তার সৌরভ উপহার দিয়ে বসন্তকে বরণ করে নেয়। কবি ভক্তের অনুযোগ, বসন্তকে কবি বরণ না করায়, বসন্তের আবেদন যেন গুরুত্ব হারিয়েছে। কবিভক্ত বুঝতে পারছেন না, কেন কবি বসন্তের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। ঋতুরাজকে উপেক্ষা করে কবি যেন তাকে তীব্র ব্যথা দিয়েছেন।
গ) উদ্দীপকের প্রথম দুচরণে ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতার বিষাদময় রিক্ততার হাহাকার দিকটি প্রকাশ পেয়েছে।
‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতার বসন্ত প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য কবিমনে আনন্দের শিহরন জাগাবে, তিনি তাকে ভাবে ছন্দে সুরে ভরিয়ে তুলবেন সেটাই প্রত্যাশিত। কিন্তু কবিমন যদি কোনো কারণে শোকাচ্ছন্ন বা বেদনা ভারাতুর থাকে তবে তা কবির অন্তরকে স্পর্শ করতে পারবে না। কবির মন জুড়ে আছে শীতের রিক্ত ও বিষন্ন ছবি। তাঁর মন গভীরভাবে দুঃখ ভারাক্রান্ত। তাঁর কণ্ঠ নীরব। শীতের করুণ বিদায়কে কবি কিছুতেই ভুলতে পারছেন না। আর তাই বসন্তও তাঁর মনে কোনো সাড়া জাগাতে পারছে না। প্রসঙ্গত উলেখ্য, তাঁর প্রথম স্বামী তাঁর কাব্য সাধনার প্রেরণা-পুরুষ ছিলেন।
তাঁরই আকস্মিক মৃত্যুতে কবির অন্তরে যে বিষন্ন বেদনার রিক্ততার সুর বেজে উঠেছে, তারই সুস্পষ্ট প্রভাব ও ইঙ্গিত এ কবিতায় বিধৃত হয়েছে। উদ্দীপকের কবিতাংশেও রয়েছে আকস্মিক বিচ্ছেদ-বেদনার করুণ হাহাকার। কেননা, কবি যাকে ভালোবেসেছিলেন। সে ছিল তাঁর জীবন-ছায়া, সে শুধু মায়াভরা স্মৃতি রেখে তাঁর জীবন থেকে চিরদিনের জন্য হারিয়ে গেছে। তাঁর জীবন এখন ফাঁকা, তিনি এখন একাকী। সব সৌন্দর্যবোধ, সব কিছুর গুরুত্ব এখন ম্লান হয়ে গেছে। তাই অপরূপ প্রকৃতির রূপের প্রতি তাঁর কোনো আকর্ষণ নেই। কেননা, সমস্ত মন পড়ে আছে কেবল তাঁরই জন্য। কাজেই একথা বলা যায় যে, উদ্দীপকের প্রথম দুরচণে ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতার বিষন্ন বেদনার রিক্ততার সুর প্রকাশ পেয়েছে।
ঘ) “উদ্দীপকটি যেন ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতার মর্মবাণীকেই ধারণ করেছে” কথাটা যথার্থ ও যৌক্তিক। কেননা উদ্দীপক এবং ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতার মর্মবাণী একই।
প্রিয়জন হারানোর বেদনা বড়ই মর্মান্তিক। যে প্রিয়জন কষ্ট-দুঃখে সমব্যথী, উৎসাহ-অনুপ্রেরণায় উদার, প্রেম-ভালোবাসায় অতুলনীয়, বন্ধুত্বে অনুপম, সেই প্রিয়জনকে কখনো বিস্মৃত হওয়া যায় না। তাঁকে হারিয়ে জীবন হয়ে যায় রিক্ত-শূন্য-মূল্যহীন।
উদ্দীপকে এবং ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় প্রিয়জন হারানোর বিষন্ন বেদনার রিক্ততার হাহাকার ধ্বনিত হয়েছে। এটাই এ দুটোর মর্মবাণী বা মূলসুর। উদ্দীপকের কবিতাংশে কবি যাকে ভালোবেসেছিলেন, সে তাঁর জীবন থেকে চলে গেছে চিরদিনের মতো। শুধু রয়ে গেছে মায়াভরা স্মৃতি। অপরূপ প্রকৃতি সৌন্দর্য তাঁর ভালো লাগে না।
রিক্ত শূন্য একাকী জীবনে তাঁর স্মৃতিটুকুই এখন সান্ত্বনা। একইভাবে ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতার কবি তাঁর স্বামী সৈয়দ নেহাল হোসেনকে হারিয়ে রিক্ত ও শূন্য হয়ে গেছেন। কেননা, তিনিই ছিলেন তাঁর সাহিত্য সাধনার প্রধান সহায়ক ও প্রেরণাদাতা। এর ফলে তাঁর সাহিত্য সাধনায়ও নেমে আসে এক দুঃসহ বিষন্নতা। কবিমন আচ্ছন্ন হয়ে যায় রিক্ততার করুণ হাহাকারে।
উপরিউক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে একথা নির্দ্বিধায় বলা যায় যে, উদ্দীকপটি ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতার মর্মবাণীকেই ধারণ করেছে।
এই তাহারেই পড়ে মনে সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর (এইচএসসি বাংলা ১মপত্র)ছাড়াও আরো জানুন