পরিপাক ও শোষণ অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর(৩য় অধ্যায়) পরিপাক ও শোষণ অনুধাবনমূলক সাজেশন এইচএসসি জীববিজ্ঞান ২য় পত্রের অনুধাবনমূলক প্রশ্নের সাজেশন ও অনুশীলন হিসেবে দেওয়া হয়েছে।
(অনুধাবনমূলক)
■ মুখগহ্বর ও পাকস্থলিতে সংঘটিত খাদ্য পরিপাক
প্রশ্ন-১. মানুষের মুখগহ্বরে পরিপাক প্রক্রিয়া লেখো।
উত্তর: মুখগহ্বরে অবস্থিত দাঁত, জিহ্বা ও লালাগ্রন্থি খাদ্য পরিপাকে অংশ নেয়। খাদ্যদ্রব্যকে কাটা, ছেঁড়া ও পেষণে দাঁত অংশ নেয়। জিহ্বা খাদ্য দ্রব্যের স্বাদ গ্রহণ করে, খাদ্য পেষণের সময় লালারস মিশ্রিত করে গিলবার জন্য পেছনে ঠেলে দেয়। লালাগ্রন্থি থেকে নিঃসৃত লালার মিউসিন খাদ্যকে পিচ্ছিল করে। টায়ালিন ও মল্টেজ এনজাইম শর্করা পরিপাকে সহায়তা করে। এভাবেই মানুষের মুখগহ্বরে পরিপাক প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়।
প্রশ্ন-২. মুখবিবরের কাজ লেখো।
উত্তর: মুখবিবর মূলত দাঁত, জিহ্বা ও লালাগ্রন্থি নিয়ে গঠিত।
মুখবিবরের কাজ হলো-
i. খাদ্যদ্রব্যকে কাটা, ছেঁড়া ও পেষণে দাঁত অংশ নেয়।
ii. জিহ্বা খাদ্যদ্রব্যের স্বাদ গ্রহণ করে, খাদ্য পেষণের সময় লালারস মিশ্রিত করে এবং গলাধঃকরণ করার জন্য পেছনে ঠেলে দেয়।
iii. লালাগ্রন্থি থেকে নিঃসৃত লালার মিউসিন খাদ্যকে পিচ্ছিল করে খাদ্য পরিপাকে সহায়তা করে।
প্রশ্ন-৩, মানুষের দত্ত সংকেতটি লেখো।
উত্তর: মানুষের দত্ত সংকেত হলো :
I2C1P2M3/I2C1P2M3 = 8 x 2/ 8 x 2= 16+16= 32
প্রশ্ন-৪. পরিপাকে দাঁতের ভূমিকা উল্লেখ করো। (ব.বো, ১৫)
উত্তর: মানুষের মুখগহ্বরে অবস্থিত দাঁতের সাথে পরিপাকের সরাসরি সম্পর্ক না থাকলেও খাদ্যদ্রব্যকে ছেঁড়া, কাটা, ছোট ছোট টুকরায় পরিণত করা এবং পেষণে দাঁত অংশ নেয়। ফলে খাবারের বড় টুকরো লালারসের সাথে মিশতে ও গলাধঃকরণ করতে সুবিধা হয়। এভাবেই বিভিন্ন প্রকার দাঁত পরিপাকে ভূমিকা রাখে।
■ মুখগহ্বর ও পাকস্থলিতে সংঘটিত খাদ্য পরিপাক
প্রশ্ন-৫. পেরিস্টালসিস বলতে কী বোঝায়? (রা বো, চ, বো. ১৯: সি. বো, ১৭)
উত্তর: পরিপাক নালির ক্রমসংকোচনের ফলে যে ছন্দময় আন্দোলন বা ঢেউয়ের সৃষ্টি হয়, তাকে পেরিস্টালসিস বলে। পেরিস্টালসিস ক্রিয়ার ফলে মুখগহ্বর হতে গলাধঃকরণকৃত খাদ্য পাকস্থলিতে এবং সেখান থেকে ক্ষুদ্রান্তে প্রবেশ করে। এই ক্রিয়ার ফলে খাদ্যবস্তু বিভিন্ন এনজাইমের সাথে মিশ্রিত হয়ে পাকমণ্ডে পরিণত হয়।
প্রশ্ন-৬. খাদ্য পরিপাকে মিউসিনের ভূমিকা লেখো।
উত্তর: মিউসিন হলো মিউকাস কোষ থেকে নিঃসৃত পিচ্ছিল পদার্থ যা খাদ্য পরিপাকে বিশেষ ভূমিকা রাখে। এটি খাদ্য বস্তুর সঙ্গে মিশে খাদ্যবস্তুকে নমনীয় ও পিচ্ছিল করে। ফলে খাদ্য গলাধঃকরণে সুবিধা হয়। এটি পাকস্থলির প্রাচীরকে HCI এর প্রভাব থেকেও রক্ষা করে।
প্রশ্ন-৭, পাকস্থলিতে শর্করা জাতীয় খাদ্য পরিপাক হয় না কেন? (ঢ.বো. ১৫)
উত্তর: পাকস্থলিতে শর্করা জাতীয় খাদ্য পরিপাক হয় না। কারণ শর্করা জাতীয় খাদ্য পরিপাককারী এনজাইম টায়ালিন, অ্যামাইলেজ, মল্টেজ, সুক্রেজ, ইনভারটেজ পাকস্থলিতে থাকে না। এসব এনজাইম পাকস্থলিতে না থাকায় শর্করা জাতীয় খাদ্য পরিপাক হয় না। পাকস্থলির নিঃসৃত রসের HCI শুধুমাত্র শর্করা জাতীয় খাদ্যে উপস্থিত ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে ।
পরিপাক ও শোষণ অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর(৩য় অধ্যায়) পরিপাক ও শোষণ অনুধাবনমূলক সাজেশন
প্রশ্ন-৮, পাকস্থলি নিজে পরিপাক হয় না কেন?
উত্তর: পাকস্থলি নিঃসৃত প্রোটিয়েজগুলো নিষ্ক্রিয় অবস্থায় থাকে। এটি গ্যাস্ট্রিক রসের HCI-এর সাথে বিক্রিয়া করে সক্রিয় এনজাইম পেপসিন ও রেনিনে পরিণত হয়। এছাড়াও পাকস্থলির তিন স্তরবিশিষ্ট প্রাচীর খাদ্য পরিপাকের সময় সঞ্চালন মাত্রা বৃদ্ধি করে। এ সংকোচন প্রসারণের জন্য এনজাইম খাদ্যের সাথে ভালভাবে মিশে যায় এবং পাকস্থলি প্রাচীরের কিছু কোষ ও লালাগ্রন্থি মিউকাস উৎপাদন করে।এসব কারণে পাকস্থলি পরিপাকে অংশগ্রহণ করলেও নিজে পরিপাক হয় না।
■ মুখগহ্বর ও পাকস্থলিতে সংঘটিত খাদ্য পরিপাক
প্রশ্ন-৯. অম্লীয় মাধ্যমে পরিপাক বলতে কী বোঝায়?
উত্তর: পাকস্থলির প্রাচীরের প্যারাইটাল কোষ কর্তৃক নিঃসৃত হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড পাকস্থলিতে অম্লীয় পরিবেশ সৃষ্টি করে। ফলে গ্যাস্ট্রিক জুসের নিষ্ক্রিয় এনজাইম সক্রিয় হয়ে প্রোটিন জাতীয় খাদ্য পরিপাকে সহায়তা করে। এছাড়া অম্লীয় মাধ্যমে খাদ্যে বিদ্যমান ব্যাকটেরিয়া ও জীবাণুকে ধ্বংস করে।
■ পরিপাক গ্রন্থির কাজ
প্রশ্ন-১০, পৌষ্টিক গ্রন্থি বলতে কী বোঝায়?
উত্তর: পৌষ্টিকতন্ত্রের সাথে সংশ্লিষ্ট যেসব গ্রন্থি থেকে বিভিন্ন রস নিঃসৃত হয়ে খাদ্য পরিপাকে সহায়তা করে তাদের পৌষ্টিক গ্রন্থি বলে। যেমন— লালাগ্রন্থি, অগ্ন্যাশয়, যকৃত, আন্ত্রিক গ্রন্থি। এদের নিঃসৃত বিভিন্ন প্রকার এনজাইম জটিল খাদ্যকে ভেঙ্গে সরল খাদ্য উপাদানে পরিণত করতে সাহায্য করে।
প্রশ্ন-১১. জৈব রসায়নাগার বলতে কী বোঝায়? (চবো. ১৯)
উত্তর: যকৃত মানবদেহের সবচেয়ে বড় ও গুরুত্বপূর্ণ পরিপাক গ্রন্থি। যকৃত বিভিন্ন বিপাকীয় কাজ, ক্ষরণ সম্পৃক্ত ও রেচনকাজও সম্পাদন করে। বিজ্ঞানীরা যকৃতে প্রায় ৫০০ ধরনের জৈব রাসায়নিক ক্রিয়া শনাক্ত করেছেন। যকৃতে বিভিন্ন প্রকার জৈব রাসায়নিক বিক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ায় একে জৈব রসায়নাগার বলে অভিহিত করা হয়।
প্রশ্ন-১২, ডিঅ্যামিনেশন বলতে কী বোঝ?( চ. বো, ১৯)
উত্তর: ডিঅ্যামিনেশন হলো এক ধরনের প্রক্রিয়া যা মানবদেহের যকৃতে সংঘটিত হয়। এই প্রক্রিয়ায় অ্যামিনো অ্যাসিড বা অন্য কোন উপাদান থেকে অ্যামিনো গ্রুপ অপসারিত হয়। যকৃতে অ্যামিনো গ্রুপ প্রথমে অ্যামোনিয়া এবং পরবর্তীতে ইউরিয়ায় পরিণত হয়। এই ইউরিয়া বর্জ্য হিসেবে দেহ থেকে বের হয়ে যায়।
■ পরিপাক গ্রন্থির কাজ
প্রশ্ন-১৩. যকৃতে জন্ডিস হয় কেন?
উত্তর: যকৃতের ম্যাক্রোফেজের অভ্যন্তরে হিমোগ্লোবিন ভেঙে হিম ও গ্লোবিন গঠন করে। গ্লোবিন হচ্ছে অণুর প্রোটিন অংশ, এটি তার নিজস্ব অ্যামিনো অ্যাসিডে বিশ্লিষ্ট হয়। হিম থেকে আয়রন অংশ সরে গেলে অণুর বাকি অংশ বিলিভারডিন নামক সবুজ রঞ্জক উৎপন্ন করে। এ রঞ্জক হলদে বিলিরুবিন পরিবর্তিত হয়। রক্তে বিলিরুবিন জমা হলে গায়ের হলুদ হয়ে যায় এবং তখন যকৃতের অসুখ হিসেবে জন্ডিস দেখা দেয়।
প্রশ্ন-১৪, পিত্তরস কীভাবে ক্ষারীয় পরিবেশ সৃষ্টি করে?
উত্তর: পিত্তরস হলো ক্ষারজাতীয় পদার্থ। পিত্তরসে কোনো এনজাইম থাকে না। কিন্তু পিত্তরসের সোডিয়াম বাইকার্বনেট উপাদান পাকস্থলি থেকে আগত HCI কে প্রশমিত করে ক্ষারীয় পরিবেশ সৃষ্টি করে, যা ক্ষুদ্রান্তের বিভিন্ন এনজাইমের কার্যকারিতার জন্য প্রয়োজন। এভাবে পিত্তরস ক্ষারীয় পরিবেশ সৃষ্টি করে।
পরিপাক ও শোষণ অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর(৩য় অধ্যায়) পরিপাক ও শোষণ অনুধাবনমূলক সাজেশন
■ পরিপাক গ্রন্থির কাজ
প্রশ্ন-১৫. পিত্তরসের কাজ উল্লেখ করো।
উত্তর: পিত্তরসের কাজ নিম্নরূপ-
i. পিত্তরসের সোডিয়াম বাইকার্বনেট উপাদানটি পাকস্থলি থেকে আগত HCI-কে প্রশমিত করে ক্ষারীয় পরিবেশ সৃষ্টি করে, যা ক্ষুদ্রান্তে বিভিন্ন এনজাইমের কার্যকারিতার জন্য অত্যন্ত প্রয়োজন।
ii. পিত্তরসে অবস্থিত পিত্তলবণের প্রভাবে চর্বির ক্ষুদ্র বিন্দুগুলো ভেঙ্গে অতিক্ষুদ্র কণায় পরিণত হয়।
iii. স্নেহজাতীয় খাবার থেকে মনোগ্লিসারাইডস এবং মুক্ত ফ্যাটি অ্যাসিড পাওয়া যায়। এগুলো পিত্তরসের পিত্তলবণের সাথে যুক্ত হয়ে মিসেল তৈরি করে এবং ক্ষুদ্রান্তে শোষিত হয়।
প্রশ্ন-১৬. মিশ্রগ্রন্থি বলতে কী বোঝায়? (যবে! ১৯ ঢা, বো, ১৭)
উত্তর: যে গ্রন্থি একই সাথে বহিঃক্ষরা ও অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি হিসেবে কাজ করে তাকে মিশ্রগ্রন্থি বলে। যেমন- অগ্ন্যাশয় অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি হিসেবে আইলেটস অব ল্যাঙ্গারহ্যান্স নামক কোষগুচ্ছ থেকে বিভিন্ন হরমোন,যেমন— ইনসুলিন, গ্লুকাগন ক্ষরণ করে। আবার, বহিঃক্ষরা গ্রন্থি হিসেবে বিভিন্ন পরিপাককারী এনজাইম যেমন ট্রিপসিন, লাইপেজ ইত্যাদি ক্ষরণ করে।
■ পরিপাক গ্রন্থির কাজ
প্রশ্ন-১৭. সাধারণ পিত্ত-অগ্ন্যাশয় নালি বলতে কী বোঝায়?
উত্তর: পিত্তথলি থেকে আগত সিস্টিক ডাক্ট সাধারণ যকৃত নালির সাথে মিলিত হয়ে সাধারণ পিত্তনালি গঠন করে, যা পরবর্তীতে অগ্ন্যাশয় থেকে আগত অগ্ন্যাশয় নালির সাথে মিলিত হয়ে সাধারণ পিত্ত-অগ্ন্যাশয় নালি গঠন করে। এই নালি পরবর্তীতে ডিওডেনামে উন্মুক্ত হয়। এই নালির মাধ্যমে পরিপাকে প্রয়োজনীয় বিভিন্ন এনজাইম ডিওডেনামে পরিবাহিত হয়।
প্রশ্ন-১৮, অগ্ন্যাশয়ের এনজাইমগুলোর নাম লেখো।
উত্তর: অগ্ন্যাশয়কে মিশ্রগ্রন্থি বলা হয়। এটি বহিঃক্ষরা গ্রন্থি হিসেবে বিভিন্ন এনজাইম ক্ষরণ করে। এগুলো হলো- ট্রিপসিন, কাইমোট্রিপসিন,লাইপেজ, নিউক্লিয়েজ, কার্বক্সিপেপটাইডেজ,অ্যামাইলেজ,কোলাজিনেজ, ফসফোলাইপেজ ইত্যাদি।
প্রশ্ন-১৯, আইলেটস অব ল্যাঙ্গারহ্যান্স বলতে কী বোঝায়?
উত্তর: আইলেটস অব ল্যাঙ্গারহ্যান্স হলো অগ্ন্যাশয়ে অবস্থিত একটি অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি। এ গ্রন্থি থেকে ইনসুলিন, গ্লুকাপন, গ্যাস্ট্রিন, সোমাটোস্ট্যাটিন প্রভৃতি হরমোন নিঃসৃত হয়। এর মধ্যে ইনসুলিন রক্তে শর্করার পরিমাণ কমায় এবং গ্লুকাগন রক্তে শর্করার পরিমাণ বাড়ায়।
■ পরিপাক গ্রন্থির কাজ
প্রশ্ন-২০. বিপাকে ইনসুলিনের ভূমিকা লেখো।
উত্তর: ইনসুলিন শর্করা বিপাকে ভূমিকা রাখে। গ্লুকোজ থেকে গ্লাইকোজেন রূপান্তরের প্রক্রিয়া গ্লাইকোজেনেসিস, ইনসুলিনের উপস্থিতিতে উদ্দীপ্ত হয়। রক্তে চিনির মাত্রা বেড়ে গেলে অগ্ন্যাশয়ের আইলেটস অব ল্যাঙ্গারহ্যান্স থেকে ইনসুলিন নিঃসৃত হয়ে রক্তে চিনির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে।
প্রশ্ন-২১. যকৃতকে জৈব রসায়নাগার বলা হয় কেন? ((ঢ.বো.. ক. বো., ব, বো, ১৭))
উত্তর: যকৃতে বিভিন্ন ধরনের জৈব রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটে, যা দেহের বিপাক প্রক্রিয়ায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। যেমন— শর্করা বিপাক,ফ্যাট বিপাক, প্রোটিন বিপাক, ইউরিয়া প্রস্তুতি, রক্তের প্রোটিন ইত্যাদি তৈরিতে যকৃত ভূমিকা রাখে। এছাড়া রক্ত জমাট বাঁধানোর উপাদান প্রস্তুতি, চর্বির অসম্পৃক্তকরণ, লোহিত কণিকার গঠন ও ভাঙ্গন, হরমোনের ভাঙ্গন, তাপোৎপাদন, ভিটামিন সংশ্লেষ, পিত্ত উৎপাদন ইত্যাদি বহুবিধ বিক্রিয়াসমূহ যকৃতে ঘটে থাকে। এজন্যই যকৃতকে জৈব রসায়নাগার বলা হয়।
পরিপাক ও শোষণ অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর(৩য় অধ্যায়) পরিপাক ও শোষণ অনুধাবনমূলক সাজেশন
প্রশ্ন-২২. “পিটুইটারি গ্রন্থিকে প্রভুগ্রন্থি বলা হয়”- ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: পিটুইটারি গ্রন্থি মস্তিষ্কের হাইপোথ্যালামাসের সাথে সংযুক্ত একটি গোলাকার অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি। এ গ্রন্থি থেকে সর্বাধিক সংখ্যক হরমোন ক্ষরিত হয় এবং এসব হরমোন অন্যান্য প্রায় সকল গ্রন্থির উপর প্রভাব বিস্তার করে কিংবা কাজের সমন্বয় ঘটায়। এজন্য এ গ্রন্থিকে প্রভুগ্রন্থি বলা হয়।
■ পরিপাকে স্নায়ুতন্ত্র ও হরমোনের ভূমিকা
প্রশ্ন-২৩. এনটেরিক নার্ভাস সিস্টেম বলতে কী বোঝায়?
উত্তর: পৌষ্টিকনালিকে যেসব স্নায়ু নিয়ন্ত্রণ করে তাকে বলা হয় এনটেরিক নার্ভাস সিস্টেম (Enteric Nervous System)। এ তন্ত্রটি ট সমস্ত পরিপাক নালি জুড়ে বিস্তৃত থাকে এবং নালির সঞ্চালন ও নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণ করে। ফলে পরিপাক নালির যান্ত্রিক ও রাসায়নিক কার্যক্রম ঠিকমতো চলতে থাকে।
প্রশ্ন-২৪. খাদ্য পরিপাকে স্নায়ুতন্ত্র কীভাবে কাজ করে?
জ উত্তর: খাদ্য পরিপাকে স্নায়ুতন্ত্র ও হরমোন অন্যতম অগ্রণী ভূমিকা রাখে। এনটেরিক লার্ভাস সিস্টেম পরিপাক নালির সঞ্চালন ও নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণ করে। এর একটি অংশ মায়েনটেরিক প্লেক্সাস যা পৌষ্টিকনালির সঞ্চালন নিয়ন্ত্রণ করে এবং অপর একটি অংশ সাবমিউকোসাল প্লেক্সাস, যা নিঃসরণ ও স্থানীয় রক্তপ্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করে।
প্রশ্ন-২৫. কোন কোন খাদ্য পরিপাকের প্রয়োজন হয় না এবং কেন?
উত্তর: ট্রাইগ্লিসারাইড জাতীয় খাদ্য পরিপাকের প্রয়োজন হয় না। এ ট্রাইগ্লিসারাইড পরিপাক ছাড়াই ক্ষুদ্রান্ত্রের গহ্বর থেকে আবরণী কোষে প্রবেশ করে এবং লসিকা নালিতে পরিশোষিত হয়। এছাড়া পানি, খনিজ লবণ ও ভিটামিন কোষপর্দায় তুলনামূলকভাবে অধিকতর দ্রবীভূত হয়ে সরাসরি এপিথেলিয়াল কোষে পরিশোষিত হয় বলে, এ ধরনের খাদ্যের পরিপাক প্রয়োজন হয় না।
■ ক্ষুদ্রান্ত্রে খাদ্যদ্রব্যের পরিপাক
প্রশ্ন-২৬. আন্ত্রিক রস বলতে কী বোঝায়?
উত্তর: আন্ত্রিক রস হলো অন্ত্রের প্রাচীরের মিউকোসা স্তরের এককোষী গ্রন্থি নিঃসৃত এক ধরনের রস যাতে খাদ্য পরিপাককারী বিভিন্ন এনজাইম থাকে। আন্ত্রিক রসে- এন্টারোকাইনেজ, মন্টেজ, সুক্রেজ,একটি ল্যাকটেজ, অ্যামাইলেজ ইত্যাদি এনজাইম থাকে।
প্রশ্ন-২৭. ডিওডেনামে নিঃসৃত এনজাইমগুলোর নাম কী?
উত্তর: ডিওডেনামে নিঃসৃত এনজাইমগুলো হলো- মন্টেজ, সুক্রেজ, ল্যাকটেজ, এন্টারোকাইনেজ এবং পেপটাইডেজ।
প্রশ্ন-২৮. আন্ত্রিক গ্রন্থি বলতে কী বোঝ?
উত্তর: ক্ষুদ্রান্ত্রের প্রাচীরের মিউকোসা স্তরে অবস্থিত এককোষী পরিপাকীয় গ্রন্থিকে আন্ত্রিক গ্রন্থি বলে। এদের নিঃসৃত রস বিভিন্ন খাদ্য পরিপাকে সহায়তা করে। যেমন- মল্টেজ এনজাইম মল্টোজকে গ্লুকোজে পরিণত করে।
প্রশ্ন-২৯. পাচক রস বলতে কী বোঝায়?
উত্তর: পাচক রস হলো পাকস্থলির মিউকাস স্তর থেকে নিঃসৃত এক ধরনের রস যা হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড এবং বিভিন্ন এনজাইম বহন করে। খাদ্যবস্তু পাকস্থলিতে প্রবেশ করলে অথবা খাদ্যবস্তুর দর্শন,স্পর্শ ও ঘ্রাণে যে রস ক্ষরিত হয় তাই পাচক রস। পাচক রস অম্লীয় মাধ্যম ও এনজাইম দ্বারা এর কার্যাবলি সম্পাদন করে।
পরিপাক ও শোষণ অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর(৩য় অধ্যায়) পরিপাক ও শোষণ অনুধাবনমূলক সাজেশন
■ ক্ষুদ্রান্ত্রে খাদ্য উপাদানের শোষণ ও বৃহদন্ত্রের কাজ
প্রশ্ন-৩০. আত্তীকরণ বলতে কী বোঝায়?
উত্তর: শোষিত খাদ্যবস্তুর প্রোটোপ্লাজমে রূপান্তরের পদ্ধতিকে আত্মীকরণ বলে। এটি উপচিতির এক অতি প্রয়োজনীয় অংশ। কোষের প্রোটোপ্লাজম নিঃসৃত এনজাইমের সহযোগিতায় সরল খাদ্য জটিল উপাদানে পরিণত হয়। যেমন— অ্যামিনো অ্যাসিড, গ্লুকোজ, ফ্যাটি অ্যাসিড ও গ্লিসারল রক্তে বাহিত হয়ে দেহের বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে পড়ে। এসব স্থানের প্রোটোপ্লাজম নিঃসৃত এনজাইমের প্রভাবে পুনরায় আমিষ, শর্করা ও স্নেহ পদার্থ তৈরি হয়। এতে প্রোটোপ্লাজমের ক্ষয়পূরণ হয়ে বৃদ্ধি সাধিত হয়।
প্রশ্ন-৩১. ল্যাকটিয়াল বলতে কী বোঝায়?
উত্তর: ল্যাকটিয়াল অর্থ হলো সাদাটে। ক্ষুদ্রান্ত্রের এপিথেলিয়াল কোষে যে প্রোটিন থাকে তা লিপিড অণুকে আবৃত করে লিপোপ্রোটিন কণা গঠন করে। তার নাম কাইলোমাইক্রন। এগুলো এক্সোসাইটোসিস প্রক্রিয়ায় এপিথেলিয়াল কোষ ত্যাগ করে এবং ভিলাইয়ের লসিকা বাহিকায় প্রবেশ করে। লসিকা তখন সাদা বর্ণ ধারণ করে। একারণে তখন লসিকা বাহিকাকে ল্যাকটিয়েল বলা হয়।
প্রশ্ন-৩২. মানবদেহে পানি শোষণ প্রক্রিয়াটি লেখো।
উত্তর : মানবদেহে প্রধানত ক্ষুদ্রান্তে পানি শোষিত হয়। সামান্য পানি পাকস্থলি ও বৃহদন্ত্র শোষিত হয়। পানি শোষণ প্রক্রিয়া সক্রিয় ও নিষ্ক্রিয় দু’ভাবেই হয়। পানির শোষণমাত্রা লবণের উপস্থিতি বা অনুপস্থিতির ওপর নির্ভর করে।
■ ক্ষুদ্রান্ত্রে খাদ্য উপাদানের শোষণ ও বৃহদন্ত্রের কাজ
প্রশ্ন-৩৩, মানবদেহে আমিষ শোষণ প্রক্রিয়াটি লেখো।
উত্তর: মানবদেহে আমিষ বিভিন্ন এজাইম (পেপসিন, অ্যামিনোট্রিপসিন,ডাইপেপটাইডেজ) এর সহায়তা পরিপাক হয়ে অ্যামিনো অ্যাসিড ও পেপটাইডে পরিণত হয়। অ্যামিনো অ্যাসিড ও ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পেপটাইড অণু গৌণ সক্রিয় পরিবহনের মাধ্যমে কোষে গৃহীত হয়। কিছু অ্যামিনো অ্যাসিড সুবিধাপ্রাপ্ত ব্যাপনের মাধ্যমে শোষিত হয়। সেখান থেকে রক্তের মাধ্যমে দেহের বিভিন্ন অংশে স্থানান্তরিত হয়।
প্রশ্ন-৩৪, খাদ্য শোষণের সাথে ভিলাইয়ের সম্পর্ক কী? ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: পৌষ্টিকনালিতে খাদ্য পরিপাকের পর যেসব সরল উপাদান শোষণযোগ্য হয় তা ক্ষুদ্রান্তে অবস্থিত ভিলাই কর্তৃক শোষিত হয়। ভিলাইস্থ কৈশিক জালিকা ও ল্যাকটিয়াল মূলত ব্যাপন প্রক্রিয়ায় এসব সরল উপাদানসমূহ গ্রহণ করে এবং রক্ত সঞ্চালনের মাধ্যমে তা সমগ্র দেহে প্রেরণ করে।
প্রশ্ন-৩৫, শোষণকৃত খাবার যকৃত কীভাবে গ্রহণ করে?
উত্তর: বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্য গ্রহণের পর তা পাকস্থলি ও ক্ষুদ্রান্ত্রে পরিপাকের পর ভিলাই কর্তৃক শোষিত হয়ে রক্তে প্রবেশ করে। এই রক্ত অন্ত্র থেকে হেপাটিক পোর্টাল শিরার মাধ্যমে খাদ্যবস্তুকে যকৃতে পৌঁছে দেয়। যকৃত তখন রক্ত থেকে খাদ্যের সরল উপাদান, যেমন- গ্লুকোজ, অ্যামিনো অ্যাসিড ইত্যাদি গ্রহণ করে।
■ ক্ষুদ্রান্ত্রে খাদ্য উপাদানের শোষণ ও বৃহদন্ত্রের কাজ
প্রশ্ন-৩৬. কোলন বলতে কী বোঝায়?
উত্তর: সিকামের পরের ১৫-১৯ সেন্টিমিটার লম্বা অংশই কোলন। এর যে অংশ ওপরের দিকে উঠেছে তা ঊর্ধ্বগামী কোলন, বামদিকে আড়াআড়িভাবে অবস্থিত অংশ অনুপ্রস্থ কোলন এবং পরবর্তী যে অংশ বাম পাশ ঘেঁষে নিচের দিকে নেমেছে তা নিম্নগামী কোলন। পরবর্তী অংশ ফাঁসের মতো সিগময়েড কোলন মলাশয়ে প্রবেশ করেছে।
পরিপাক ও শোষণ অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর(৩য় অধ্যায়) পরিপাক ও শোষণ অনুধাবনমূলক সাজেশন
প্রশ্ন-৩৭. বৃহদন্ত্রের শোষণ কাজ ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: বৃহদন্ত্রে খাদ্যের অপাচ্য অংশ থেকে পানি ও খনিজ লবণ শোষিত হয়। এছাড়া এখানে খাদ্যের অপাচ্য অংশের গাঁজন ও পাঁচন ঘটে। ফলে অপাচ্য খাদ্য মলে পরিণত হয়। বৃহদন্ত্রে স্যালাইন, অ্যালকোহল এবং কিছু ঔষধও শোষিত হয়।
স্থূলতা
প্রশ্ন-৩৮. স্থূলতা বলতে কী বোঝায়? [রা. বো. ১৭]
উত্তর: দেহের ওজন অতিরিক্ত বেড়ে যাওয়ার কারণে যে স্বাস্থ্যগত সমস্যা সৃষ্টি হয় তাকেই স্থূলতা বলে। BMI মান ৩০ কেজি/মি অতিক্রম করলে একজন মানুষ স্থূলতাজনিত সমস্যায় ভুগছে বলে ধরে নেওয়া হয়। এক্ষেত্রে চর্বি জমার কারণে দেহের উচ্চতার তুলনায় ওজন অনেক বেড়ে যায়, যা বিভিন্ন রোগের সৃষ্টি করে।
প্রশ্ন-৩৯. BMI বলতে কী বোঝায়? (ব. বো., য, বো. ১৭)
উত্তর: দেহের উচ্চতার সাথে ওজনের সামঞ্জস্য রক্ষা করার সূচক হলো BMI (Body Mass Index)। দেহের মোট ওজনকে (কেজি এককে) উচ্চতার (মিটার এককে) বর্গ দিয়ে ভাগ করলে BMI পাওয়া যায়।
BMI = দেহের ওজন (কেজি)/দেহের উচ্চতা (মিটার)২
একজন সুস্থ স্বাভাবিক ব্যক্তির BMI ১৮.৫-২৪.৯ কেজি/মি২ মধ্যে থাকে। BMI মানবদেহের গড়ন ও চর্বির একটি সূচক নির্দেশ করে।
প্রশ্ন-৪০. স্থূলতার কারণে কোন কোন রোগ হতে পারে?
উত্তর: করোনারি হৃদরোগ, টাইপ-২ ডায়াবেটিস, ক্যান্সার (স্তন,কোলন), উচ্চ রক্তচাপ, স্ট্রোক, যকৃত ও পিত্তথলির অসুখ, স্লিপ অ্যাপনিয়া, অস্টিওআর্থ্রাইটিস ও বন্ধ্যাত্ব ইত্যাদি।
স্থূলতা
প্রশ্ন-৪১. স্থূলতা রোধে আমাদের কী কী করা উচিত?
উত্তর: স্থূলতা রোধ করার জন্য নিয়মিত ব্যায়াম করা, স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্যগ্রহণ, খাদ্য নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। চর্বিযুক্ত খাবার, মিষ্টিসমৃদ্ধ আহার গ্রহণ নিয়ন্ত্রণ ও অ্যালকোহল পরিহার করতে হবে। এছাড়াও দেহের ওজন নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করতে হবে এবং এর পরেও প্রয়োজন হলে চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে।
প্রশ্ন-৪২. স্থূলতার কারণসমূহ কী কী?
উত্তর: স্থূলতা হলো দেহের অতিরিক্ত চর্বি জমা হওয়া জনিত একটি স্বাস্থ্য সমস্যা। বিভিন্ন কারণে একজন মানুষ স্থূলতায় ভুগতে পারে। যেমন- অতিরিক্ত ও অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভাস, অলস বা বসে কাজ করার জীবন রীতি, জিনগত কারণ, কিছু শারীরিক ও মানসিক রোগ, কিছু সংক্রামক উপাদান,অতিরিক্ত বিশ্রাম, স্বাস্থ্য সম্পর্কে অসচেতনতা ইত্যাদি।
এই পরিপাক ও শোষণ অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর(৩য় অধ্যায়) পরিপাক ও শোষণ অনুধাবনমূলক সাজেশন ছাড়াও আরো জানতে ক্লিকঃ