বাক্যের অশুদ্ধতা

অশুদ্ধি-সংশোধন পর্ব ৩

বাক্যের অশুদ্ধতা

বাক্যের অশুদ্ধতা

বাক্যে অশুদ্ধ শব্দের প্রয়োগে বাক্য অশুদ্ধ হয়ে পড়ে। এই অশুদ্ধতা বহু প্রকারের হয়ে থাকে। নিচে কিছু উদাহরণ দেয়া হল:

যথার্থ শব্দ ব্যবহার না করায় অশুদ্ধতা: শব্দের সঠিক অর্থ না জেনে বাক্যে শব্দ ব্যবহার করলে বাক্য ভুল হয়ে যায়।
অশুদ্ধ : চন্দ্র উদয় হলো।
শুদ্ধ : চন্দ্র উদিত হলো।
অশুদ্ধ : আমি সাক্ষী দিয়েছি।
শুদ্ধ : আমি সাক্ষ্য দিয়েছি।
অশুদ্ধ : আসামির অনুপস্থিতে বিচার হচ্ছে।
শুদ্ধ : আসামির অনুপস্থিতিতে বিচার হচ্ছে।


অশুদ্ধ : বাংলাদেশ উন্নতশীল দেশ।
শুদ্ধ : বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ।
অশুদ্ধ : ছেলেটি ভয়ানক মেধাবী।
শুদ্ধ : ছেলেটি অত্যন্ত মেধাবী।
অশুদ্ধ : আপনি স্বস্ত্রীক আমন্ত্রিত।শুদ্ধ : আপনি সস্ত্রীক আমন্ত্রিত।
অশুদ্ধ : তিনি সন্তোষ হলেন।
শুদ্ধ : তিনি সন্তুষ্ট হলেন।
অশুদ্ধ : এটা অতি লজ্জাস্কর বিষয়।
শুদ্ধ : এটা অতি লজ্জাকর বিষয়।
অশুদ্ধ : তিনি মৌন হয়ে রহিলেন।
শুদ্ধ : তিনি মৌনী হইয়া রহিলেন।
অশুদ্ধ : আমার টাকার আবশ্যক নাই।
শুদ্ধ : আমার টাকার আবশ্যকতা নাই।
অশুদ্ধ : নিশ্চয় সংবাদ পেয়েছ কি?
শুদ্ধ : নিশ্চিত সংবাদ পেয়েছ কি?

বিশেষ ও বিশেষণজনিত ভুল
অশুদ্ধ : সর্বদা তোমার উপস্থিত কাক্সিক্ষত (বিশেষণ)
শুদ্ধ : সর্বদা তোমার উপস্থিতি কাক্সিক্ষত (বিশেষ্য)
অশুদ্ধ : তিনি উদ্ধতপূর্ণ আচরণ করেন (বিশেষণ)
শুদ্ধ : তিনি ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করেন।
অশুদ্ধ : অনাবশ্যকীয় বিষয়ে আগ্রহ দেখাবে না। (বিশেষ্য ভাবা হয়েছে)
শুদ্ধ : অনাবশ্যক বিষয়ে আগ্রহ দেখাবে না। (বিশেষণ)
অশুদ্ধ : তোমার সাথে গোপন আলাপ আছে।
শুদ্ধ : তোমার সাথে গোপনীয় আলাপ আছে।

বাহুল্যজনিত অশুদ্ধতা
অনেক সময় একই অর্থ বহনকারী দুটি শব্দ একই বাক্যে ব্যবহার করা হয়। বাক্যে একই অর্থের দুটি শব্দের দৃশ্যত কোন প্রয়োজন নেই। অনেক অসচেতনতা ও শিথিল প্রয়োগের কারণে অনেকের লেখায় এই বাহুল্য দোষ লক্ষ করা যায়। এটা পরিহার করা কর্তব্য।
অশুদ্ধ : বৃক্ষটি সমূলসহ উৎপাটন করা হল।
শুদ্ধ : বৃক্ষটি সমূলে উৎপাটন করা হল।
অশুদ্ধ : শুধুমাত্র মুখের জোরে তুমি তাকে বাধা দিতে পারবে না।
শুদ্ধ : শুধু মুখের জোরে তুমি তাকে বাধা দিতে পারবে না।
অশুদ্ধ : কেবলমাত্র তাকেই আমি চিনি।
শুদ্ধ : কেবল তাকেই আমি চিনি।
অশুদ্ধ : বাংলা ভাষাভাষীর সংখ্যা প্রায় ত্রিশ কোটি।
শুদ্ধ : বাংলাভাষীর সংখ্যা প্রায় ত্রিশ কোটি।

বাচ্যজনিত ভুল প্রয়োগ
অশুদ্ধ : পিতা তোমার প্রতি ক্রোধ হয়েছেন।
শুদ্ধ : পিতা তোমার প্রতি ক্রুদ্ধ হয়েছেন।
অশুদ্ধ : আমরা প্রতিপালন হইতেছি।
শুদ্ধ : আমরা প্রতিপালিত হইতেছি।

প্রবাদ-প্রবচনের ব্যবহারজনিত ভুল
প্রবাদ-প্রবচনের শব্দ পরিবর্তন করা সঙ্গত নয়। মানব সমাজের দীর্ঘ দিনের সঞ্চিত অভিজ্ঞতাকে বিকৃত করা অনৈতিক।
অশুদ্ধ : হাবিব পরীক্ষা এলে চোখে হলুদ ফুল দেখে।
শুদ্ধ : হাবিব পরীক্ষা এলে চোখে সর্ষে ফুল দেখে।
অশুদ্ধ : তোমার মতো মাখনের পুতুল দিয়ে এ কাজ হবে না।
শুদ্ধ : তোমার মতো ননীর পুতুল দিয়ে এ কাজ হবে না।
অশুদ্ধ : তার মতো দাগী আসামীকে দেখাও জেলের ভয়, মাছের আবার সর্দি।
শুদ্ধ : তার মতো দাবী আসামীকে দেখাও জেলের ভয়, ব্যাঙের আবার সর্দি।

বিভক্তির প্রয়োগজনিত ভুল
অশুদ্ধ : আমি ক্লাসের পরীক্ষায় ভালো নম্বর পায়, তবে ফাইনাল পরীক্ষায় খারাপ করি।
শুদ্ধ : আমি ক্লাসের পরীক্ষায় ভালো নম্বর পাই, তবে ফাইনাল পরীক্ষায় খারাপ করি।
অশুদ্ধ : প্রিন্সিপাল গোলোযোগ করার জন্য পাঁচজন ছাত্র বহিষ্কার করেছেন।
শুদ্ধ : প্রিন্সিপাল গোলোযোগ করার জন্য পাঁচজন ছাত্রকে বহিষ্কার করেছেন।
অশুদ্ধ : আমার দেখে তোমার কি মনে হয়?
শুদ্ধ : আমাকে দেখে তোমার কি মনে হয়।

বচনজনিত ভুল
জটিল বাক্যে বা যৌগিক বাক্যে কর্তা অনুসারে পরবর্তী পর্যায়ে বচন প্রয়োগ করতে হয়। অন্যথায় বাক্য শুদ্ধ হয় না।
অশুদ্ধ: ক্লাসের ছাত্ররা বললো, সে বনভোজনে যাবে।
শুদ্ধ: ক্লাসের ছাত্ররা বললো, তারা বনভোজনে যাবে।
অশুদ্ধ: রনজিত অথবা সাব্বির নিজেরা গোল দিয়েছে।
শুদ্ধ: রনজিত অথবা সাব্বির নিজে গোলটি দিয়েছে।

সাধু ও চলিতের মিশ্রণজনিত ভুল
সাধু ও চলিতের মিশ্রণ বাক্যকে অশুদ্ধ করে। সাধারণত ও তৎসম শব্দের সমন্বয় করে বাক্য গঠন করা উচিত।
অশুদ্ধ: তিনি আমাকে দেখে বিস্মিত হইলেন।
শুদ্ধ: তিনি আমাকে দেখে বিস্মিত হলেন।
অথবা তিনি আমাকে দেখিয়া বিস্মিত হইলেন।
অশুদ্ধ: সারাদিন সে খেলা করে ঘুরিয়া বেড়ায়।
শুদ্ধ: সারাদিন সে খেলা করে ঘুরে বেড়ায়।
অশুদ্ধ: সে বললো, এইসব কি হইতেছে?
শুদ্ধ: সে বললো এসব কি হচ্ছে?

শব্দের অর্থ সম্পর্কে সতর্কতা

অখ্যাত-(খ্যাতিহীন)আভাস-(ইঙ্গিত)
আখ্যাত-(বিখ্যাত)আভাষ-(ভূমিকা)
অনুভব-(উপলব্ধি)আসক্তি-(অনুরাগ)
অনুভাব-(মনোভাবের প্রকাশ)আসত্তি-(নৈকট্য)
অঘ্রান-(মাসবিশেষ)উদ্যত-(প্রস্তুত)
আঘ্রাণ-(সুগন্ধ গ্রহণ)উদ্ধত-(অবিনীত)
অপেক্ষা-(প্রতীক্ষা)উপযুক্ত-(যোগ্য)
উপেক্ষা-(অনাদর)উপর্যুক্ত-(উল্লি খিত)
অনিদ্র-(নিদ্রাবিহীন)উদ্দেশ-(অভিপ্রায়)
অনিদ্রা-(নিদ্রাহীনতা)উদ্দেশ্য-(লক্ষ্য)
অনীল-(নীল হয় যা)ঋতি-(গতি)
অনিল-(নীল নয় যা)রীতি-(নিয়ম)
অন্য-(অপর)কবরী-(খোপা)
অন্ন-(ভাত)করবী-(ফুলবিশেষ)
অবিমিশ্র-(বিশুদ্ধ)কপাল-(ললাট)
অবিমৃশ্য-(অবিবেচক)কপোল-(গ-)
অবিধেয়-(অন্যায়)কেন্দ্রাতিগ-(কেন্দ্র থেকে দূরে)
অভিধেয়-(প্রতিপাদ্য অর্থ)কেন্দ্রাভিগ-(কেন্দ্রের দিকে)
অভিবাসন-(দেশান্তরে বসতি)কৃতি-(রচনা, সাধনা)
অভিভাষণ-(বক্তৃতা)কৃতী-(কর্মসফল)
অবতরণ-(নেমে আসা)ঘূর্ণমান-(যা ঘুরছে)
অবতারণ-(নামিয়ে আনা)ঘূর্ণ্যমান-(ঘোরানো হচ্ছে যা)
আবৃত্তি-(সরব পাঠ)চর্চা-(অনুশীলন)
আবৃতি-(আবরণ, বেষ্টন)চর্যা-(আচরণ)
জমক-(আড়ম্বর)মতি-(মনের গতি)
যমক-(কাব্যালংকার বিশেষ)মোতি-(মুক্তা)
তত্ত্ব-(গূঢ় অর্থ)মুখপত্র-(ভূমিকা)
তথ্য-(সংবাদ)মুখপাত্র-(প্রবক্তা)
নিঃসংজ্ঞ-(একাকী)সমর্থক-(সমর্থনকারী)
নিঃসঙ্গ-(সংজ্ঞাহীন)সমার্থক-(একই অর্থবিশিষ্ট)
নিরস্ত্র-(অস্ত্রহীন)সমীহ-(সম্মান প্রদর্শন)
নিরস্ত-(ক্ষান্ত)সমীহা-(চেষ্টা, ইচ্ছা)
নিরশন-(অনাহার)শয়িত-(যে শুয়ে আছে)
নিরসন-(দূরীকরণ)শায়িত-(যাকে শোয়ানো হয়েছে)
নীতি-(সংগত বিধান)শরণ-(আশ্রয়)
নিতি-(নিত্য)স্মরণ-(স্মৃতি)
পঠন-(নিজে পড়া)সরণ-(গমন)
পাঠন-( অন্যকে পড়ানো)শান্ত-(ধীর)
পরিচ্ছদ-(পোশাক)সান্ত-(সসীম)
পরিচ্ছেদ-(গ্রন্থের বিষয় বিভাগ)শিকড়-(মূল)
পরিষদ-(সভা)শীকর-(জলকণা)
পারিষদ-(সভাসদ)শুচি-(পবিত্র)
পিতৃমাতৃহীন-(পিতামহী নেই যার)সূচি-(তালিকা)
মাতাপিতৃহীন-(মাতাপিতা নেই যার)শুদ্ধ-(পবিত্র)
মাতৃপিতৃহীন-(মাতামহ নেই যার)সুদ্ধ-(সমেত)
পূর্বরাত্র-(রাত্রির পূর্বভাগ)সংসদ-(আইনসভা, সমিতি)
পূর্বরাত্রি-(গত রাত্রি)সাংসদ-(সংসদ-সদস্য)
প্রকার-(রকম)সাক্ষর-(অক্ষরজ্ঞানসম্পন্ন)
প্রাকার-(প্রাচীর)স্বাক্ষর-(দস্তখত)
বিরচিত-(প্রণীত)স্তম্ব-(তৃণগুচ্ছ)
বীরোচিত-(বীরের উপযুক্ত)স্তম্ভ-(থাম)
বিস্তর-(প্রচুর)বিস্তার-(ব্যাপ্তি)

বাক্যের অশুদ্ধতা বাক্যের অশুদ্ধতা বাক্যের অশুদ্ধতা বাক্যের অশুদ্ধতা

বিশেষ্যের জায়গায় বিশেষণের প্রয়োগজনিত ভুল

বাক্যে যেখানে বিশেষ্য ব্যবহার করতে হবে সেখানে বিশেষণকে বিশেষ্য ভেবে প্রয়োগ করায় এ ধরনের ভুল হয়। যেমন:
অশুদ্ধ: ইহার আবশ্যক নাই।
শুদ্ধ: ইহার আবশ্যকতা নাই।
অশুদ্ধ: সদাসর্বদা তোমার উপস্থিত প্রার্থনীয়।
শুদ্ধ: সদাসর্বদা তোমার উপস্থিতি প্রার্থনীয়।

এই বাক্যের অশুদ্ধতা ছাড়াও আরো পড়ুন

You cannot copy content of this page

Scroll to Top