বাক্যের অশুদ্ধতা
বাক্যের অশুদ্ধতা
বাক্যে অশুদ্ধ শব্দের প্রয়োগে বাক্য অশুদ্ধ হয়ে পড়ে। এই অশুদ্ধতা বহু প্রকারের হয়ে থাকে। নিচে কিছু উদাহরণ দেয়া হল:
যথার্থ শব্দ ব্যবহার না করায় অশুদ্ধতা: শব্দের সঠিক অর্থ না জেনে বাক্যে শব্দ ব্যবহার করলে বাক্য ভুল হয়ে যায়।
অশুদ্ধ : চন্দ্র উদয় হলো।
শুদ্ধ : চন্দ্র উদিত হলো।
অশুদ্ধ : আমি সাক্ষী দিয়েছি।
শুদ্ধ : আমি সাক্ষ্য দিয়েছি।
অশুদ্ধ : আসামির অনুপস্থিতে বিচার হচ্ছে।
শুদ্ধ : আসামির অনুপস্থিতিতে বিচার হচ্ছে।
অশুদ্ধ : বাংলাদেশ উন্নতশীল দেশ।
শুদ্ধ : বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ।
অশুদ্ধ : ছেলেটি ভয়ানক মেধাবী।
শুদ্ধ : ছেলেটি অত্যন্ত মেধাবী।
অশুদ্ধ : আপনি স্বস্ত্রীক আমন্ত্রিত।শুদ্ধ : আপনি সস্ত্রীক আমন্ত্রিত।
অশুদ্ধ : তিনি সন্তোষ হলেন।
শুদ্ধ : তিনি সন্তুষ্ট হলেন।
অশুদ্ধ : এটা অতি লজ্জাস্কর বিষয়।
শুদ্ধ : এটা অতি লজ্জাকর বিষয়।
অশুদ্ধ : তিনি মৌন হয়ে রহিলেন।
শুদ্ধ : তিনি মৌনী হইয়া রহিলেন।
অশুদ্ধ : আমার টাকার আবশ্যক নাই।
শুদ্ধ : আমার টাকার আবশ্যকতা নাই।
অশুদ্ধ : নিশ্চয় সংবাদ পেয়েছ কি?
শুদ্ধ : নিশ্চিত সংবাদ পেয়েছ কি?
বিশেষ ও বিশেষণজনিত ভুল
অশুদ্ধ : সর্বদা তোমার উপস্থিত কাক্সিক্ষত (বিশেষণ)
শুদ্ধ : সর্বদা তোমার উপস্থিতি কাক্সিক্ষত (বিশেষ্য)
অশুদ্ধ : তিনি উদ্ধতপূর্ণ আচরণ করেন (বিশেষণ)
শুদ্ধ : তিনি ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করেন।
অশুদ্ধ : অনাবশ্যকীয় বিষয়ে আগ্রহ দেখাবে না। (বিশেষ্য ভাবা হয়েছে)
শুদ্ধ : অনাবশ্যক বিষয়ে আগ্রহ দেখাবে না। (বিশেষণ)
অশুদ্ধ : তোমার সাথে গোপন আলাপ আছে।
শুদ্ধ : তোমার সাথে গোপনীয় আলাপ আছে।
বাহুল্যজনিত অশুদ্ধতা
অনেক সময় একই অর্থ বহনকারী দুটি শব্দ একই বাক্যে ব্যবহার করা হয়। বাক্যে একই অর্থের দুটি শব্দের দৃশ্যত কোন প্রয়োজন নেই। অনেক অসচেতনতা ও শিথিল প্রয়োগের কারণে অনেকের লেখায় এই বাহুল্য দোষ লক্ষ করা যায়। এটা পরিহার করা কর্তব্য।
অশুদ্ধ : বৃক্ষটি সমূলসহ উৎপাটন করা হল।
শুদ্ধ : বৃক্ষটি সমূলে উৎপাটন করা হল।
অশুদ্ধ : শুধুমাত্র মুখের জোরে তুমি তাকে বাধা দিতে পারবে না।
শুদ্ধ : শুধু মুখের জোরে তুমি তাকে বাধা দিতে পারবে না।
অশুদ্ধ : কেবলমাত্র তাকেই আমি চিনি।
শুদ্ধ : কেবল তাকেই আমি চিনি।
অশুদ্ধ : বাংলা ভাষাভাষীর সংখ্যা প্রায় ত্রিশ কোটি।
শুদ্ধ : বাংলাভাষীর সংখ্যা প্রায় ত্রিশ কোটি।
বাচ্যজনিত ভুল প্রয়োগ
অশুদ্ধ : পিতা তোমার প্রতি ক্রোধ হয়েছেন।
শুদ্ধ : পিতা তোমার প্রতি ক্রুদ্ধ হয়েছেন।
অশুদ্ধ : আমরা প্রতিপালন হইতেছি।
শুদ্ধ : আমরা প্রতিপালিত হইতেছি।
প্রবাদ-প্রবচনের ব্যবহারজনিত ভুল
প্রবাদ-প্রবচনের শব্দ পরিবর্তন করা সঙ্গত নয়। মানব সমাজের দীর্ঘ দিনের সঞ্চিত অভিজ্ঞতাকে বিকৃত করা অনৈতিক।
অশুদ্ধ : হাবিব পরীক্ষা এলে চোখে হলুদ ফুল দেখে।
শুদ্ধ : হাবিব পরীক্ষা এলে চোখে সর্ষে ফুল দেখে।
অশুদ্ধ : তোমার মতো মাখনের পুতুল দিয়ে এ কাজ হবে না।
শুদ্ধ : তোমার মতো ননীর পুতুল দিয়ে এ কাজ হবে না।
অশুদ্ধ : তার মতো দাগী আসামীকে দেখাও জেলের ভয়, মাছের আবার সর্দি।
শুদ্ধ : তার মতো দাবী আসামীকে দেখাও জেলের ভয়, ব্যাঙের আবার সর্দি।
বিভক্তির প্রয়োগজনিত ভুল
অশুদ্ধ : আমি ক্লাসের পরীক্ষায় ভালো নম্বর পায়, তবে ফাইনাল পরীক্ষায় খারাপ করি।
শুদ্ধ : আমি ক্লাসের পরীক্ষায় ভালো নম্বর পাই, তবে ফাইনাল পরীক্ষায় খারাপ করি।
অশুদ্ধ : প্রিন্সিপাল গোলোযোগ করার জন্য পাঁচজন ছাত্র বহিষ্কার করেছেন।
শুদ্ধ : প্রিন্সিপাল গোলোযোগ করার জন্য পাঁচজন ছাত্রকে বহিষ্কার করেছেন।
অশুদ্ধ : আমার দেখে তোমার কি মনে হয়?
শুদ্ধ : আমাকে দেখে তোমার কি মনে হয়।
বচনজনিত ভুল
জটিল বাক্যে বা যৌগিক বাক্যে কর্তা অনুসারে পরবর্তী পর্যায়ে বচন প্রয়োগ করতে হয়। অন্যথায় বাক্য শুদ্ধ হয় না।
অশুদ্ধ: ক্লাসের ছাত্ররা বললো, সে বনভোজনে যাবে।
শুদ্ধ: ক্লাসের ছাত্ররা বললো, তারা বনভোজনে যাবে।
অশুদ্ধ: রনজিত অথবা সাব্বির নিজেরা গোল দিয়েছে।
শুদ্ধ: রনজিত অথবা সাব্বির নিজে গোলটি দিয়েছে।
সাধু ও চলিতের মিশ্রণজনিত ভুল
সাধু ও চলিতের মিশ্রণ বাক্যকে অশুদ্ধ করে। সাধারণত ও তৎসম শব্দের সমন্বয় করে বাক্য গঠন করা উচিত।
অশুদ্ধ: তিনি আমাকে দেখে বিস্মিত হইলেন।
শুদ্ধ: তিনি আমাকে দেখে বিস্মিত হলেন।
অথবা তিনি আমাকে দেখিয়া বিস্মিত হইলেন।
অশুদ্ধ: সারাদিন সে খেলা করে ঘুরিয়া বেড়ায়।
শুদ্ধ: সারাদিন সে খেলা করে ঘুরে বেড়ায়।
অশুদ্ধ: সে বললো, এইসব কি হইতেছে?
শুদ্ধ: সে বললো এসব কি হচ্ছে?
শব্দের অর্থ সম্পর্কে সতর্কতা
অখ্যাত-(খ্যাতিহীন) | আভাস-(ইঙ্গিত) |
আখ্যাত-(বিখ্যাত) | আভাষ-(ভূমিকা) |
অনুভব-(উপলব্ধি) | আসক্তি-(অনুরাগ) |
অনুভাব-(মনোভাবের প্রকাশ) | আসত্তি-(নৈকট্য) |
অঘ্রান-(মাসবিশেষ) | উদ্যত-(প্রস্তুত) |
আঘ্রাণ-(সুগন্ধ গ্রহণ) | উদ্ধত-(অবিনীত) |
অপেক্ষা-(প্রতীক্ষা) | উপযুক্ত-(যোগ্য) |
উপেক্ষা-(অনাদর) | উপর্যুক্ত-(উল্লি খিত) |
অনিদ্র-(নিদ্রাবিহীন) | উদ্দেশ-(অভিপ্রায়) |
অনিদ্রা-(নিদ্রাহীনতা) | উদ্দেশ্য-(লক্ষ্য) |
অনীল-(নীল হয় যা) | ঋতি-(গতি) |
অনিল-(নীল নয় যা) | রীতি-(নিয়ম) |
অন্য-(অপর) | কবরী-(খোপা) |
অন্ন-(ভাত) | করবী-(ফুলবিশেষ) |
অবিমিশ্র-(বিশুদ্ধ) | কপাল-(ললাট) |
অবিমৃশ্য-(অবিবেচক) | কপোল-(গ-) |
অবিধেয়-(অন্যায়) | কেন্দ্রাতিগ-(কেন্দ্র থেকে দূরে) |
অভিধেয়-(প্রতিপাদ্য অর্থ) | কেন্দ্রাভিগ-(কেন্দ্রের দিকে) |
অভিবাসন-(দেশান্তরে বসতি) | কৃতি-(রচনা, সাধনা) |
অভিভাষণ-(বক্তৃতা) | কৃতী-(কর্মসফল) |
অবতরণ-(নেমে আসা) | ঘূর্ণমান-(যা ঘুরছে) |
অবতারণ-(নামিয়ে আনা) | ঘূর্ণ্যমান-(ঘোরানো হচ্ছে যা) |
আবৃত্তি-(সরব পাঠ) | চর্চা-(অনুশীলন) |
আবৃতি-(আবরণ, বেষ্টন) | চর্যা-(আচরণ) |
জমক-(আড়ম্বর) | মতি-(মনের গতি) |
যমক-(কাব্যালংকার বিশেষ) | মোতি-(মুক্তা) |
তত্ত্ব-(গূঢ় অর্থ) | মুখপত্র-(ভূমিকা) |
তথ্য-(সংবাদ) | মুখপাত্র-(প্রবক্তা) |
নিঃসংজ্ঞ-(একাকী) | সমর্থক-(সমর্থনকারী) |
নিঃসঙ্গ-(সংজ্ঞাহীন) | সমার্থক-(একই অর্থবিশিষ্ট) |
নিরস্ত্র-(অস্ত্রহীন) | সমীহ-(সম্মান প্রদর্শন) |
নিরস্ত-(ক্ষান্ত) | সমীহা-(চেষ্টা, ইচ্ছা) |
নিরশন-(অনাহার) | শয়িত-(যে শুয়ে আছে) |
নিরসন-(দূরীকরণ) | শায়িত-(যাকে শোয়ানো হয়েছে) |
নীতি-(সংগত বিধান) | শরণ-(আশ্রয়) |
নিতি-(নিত্য) | স্মরণ-(স্মৃতি) |
পঠন-(নিজে পড়া) | সরণ-(গমন) |
পাঠন-( অন্যকে পড়ানো) | শান্ত-(ধীর) |
পরিচ্ছদ-(পোশাক) | সান্ত-(সসীম) |
পরিচ্ছেদ-(গ্রন্থের বিষয় বিভাগ) | শিকড়-(মূল) |
পরিষদ-(সভা) | শীকর-(জলকণা) |
পারিষদ-(সভাসদ) | শুচি-(পবিত্র) |
পিতৃমাতৃহীন-(পিতামহী নেই যার) | সূচি-(তালিকা) |
মাতাপিতৃহীন-(মাতাপিতা নেই যার) | শুদ্ধ-(পবিত্র) |
মাতৃপিতৃহীন-(মাতামহ নেই যার) | সুদ্ধ-(সমেত) |
পূর্বরাত্র-(রাত্রির পূর্বভাগ) | সংসদ-(আইনসভা, সমিতি) |
পূর্বরাত্রি-(গত রাত্রি) | সাংসদ-(সংসদ-সদস্য) |
প্রকার-(রকম) | সাক্ষর-(অক্ষরজ্ঞানসম্পন্ন) |
প্রাকার-(প্রাচীর) | স্বাক্ষর-(দস্তখত) |
বিরচিত-(প্রণীত) | স্তম্ব-(তৃণগুচ্ছ) |
বীরোচিত-(বীরের উপযুক্ত) | স্তম্ভ-(থাম) |
বিস্তর-(প্রচুর) | বিস্তার-(ব্যাপ্তি) |
বাক্যের অশুদ্ধতা বাক্যের অশুদ্ধতা বাক্যের অশুদ্ধতা বাক্যের অশুদ্ধতা
বিশেষ্যের জায়গায় বিশেষণের প্রয়োগজনিত ভুল
বাক্যে যেখানে বিশেষ্য ব্যবহার করতে হবে সেখানে বিশেষণকে বিশেষ্য ভেবে প্রয়োগ করায় এ ধরনের ভুল হয়। যেমন:
অশুদ্ধ: ইহার আবশ্যক নাই।
শুদ্ধ: ইহার আবশ্যকতা নাই।
অশুদ্ধ: সদাসর্বদা তোমার উপস্থিত প্রার্থনীয়।
শুদ্ধ: সদাসর্বদা তোমার উপস্থিতি প্রার্থনীয়।
এই বাক্যের অশুদ্ধতা ছাড়াও আরো পড়ুন