৩। মায়োসিস বা হ্রাসমূলক কোষ বিভাজন (Meiosis or Reductional Cell Division)
মায়োসিস কোষ বিভাজন ডিপ্লয়েড জীবের জনন মাতৃকোষে (অথবা হ্যাপ্লয়েড উদ্ভিদে জাইগোটে) ঘটে থাকে। এ বিভাজন প্রক্রিয়ায় নিউক্লিয়াস একটি জটিল পরিবর্তনের মাধ্যমে দু’বার বিভক্ত হয় এবং বিভক্তির ফলে সৃষ্ট চারটি কোষে ক্রোমোসোম সংখ্যা মাতৃকোষের ক্রোমোসোম সংখ্যার অর্ধেক হয়ে যায়। তাই এ প্রকার কোষ বিভাজনকে মায়োসিস বা হ্রাসমূলক কোষ রিভাজন বলে।
Read more:
এ প্রক্রিয়ায় নিউক্লিয়াস দু’বার এবং ক্রোমোসোম একবার বিভক্ত হয়। যে কোষ বিভাজন প্রক্রিয়ায় নিউক্লিয়াস পর পর দু’বার এবং ক্রোমোসোম মাত্র একবার বিভাজিত হয়ে মাতৃকোষের ক্রোমোসোমের অর্ধেক সংখ্যক ক্রোমোসোমযুক্ত চারটি অপত্য কোষ সৃষ্টি করে তাকে মায়োসিস কোষ বিভাজন বলে। গ্রিক Meious (to lessenহ্রাস করা) হতে Meiosis শব্দের উদ্ভব ঘটে।
সহজভাবে বলা যায়, যে কোষ বিভাজন প্রক্রিয়ায় মাতৃকোষ থেকে চারটি অপত্যকোষ সৃষ্টি হয় এবং নতুন সৃষ্ট কোষের ক্রোমোসোম সংখ্যা মাতৃকোষের ক্রোমোসোম সংখ্যার অর্ধেক হয়ে যায় তা-ই মায়োসিস।
হলো Necrosis, অপরটি
হলো Apoptosis.
আবিষ্কার ও নামকরণ : বেনেডিন (E. V. Beneden) এবং হাউসার (Houser) Ascaris কৃমির গ্যামিটে হ্যাপ্লয়েড সংখ্যক ক্রোমোসোম আবিষ্কার করেন ১৮৮৩ সালে। স্ট্রাসবুর্গার (Strasburger) ১৮৮৮ সালে পুষ্পক উদ্ভিদের জনন মাতৃকোষের ক্রোমোসোমে হ্রাসমূলক বিভাজন লক্ষ্য করেন। ১৯০৫ সালে ফার্মার (J. B. Farmer) ও মুর (J. E. Moore) সর্বপ্রথম হ্রাসমূলক বিভাজনকে Miosis (মিয়োসিস বা মিওসিস) বলেন।
Boveri (বোভেরী) সর্বপ্রথম গোলকৃমির (Round worm) জননাঙ্গে মায়োসিস কোষ বিভাজন প্রত্যক্ষ করেন। পরবর্তীতে গ্রিক মূল শব্দের (meioum = to lessen) ওপর ভিত্তি করে এর বানান করা হয় Meiosis অর্থাৎ মায়োসিস। এখন এটি মায়োসিস হিসেবেই উচ্চারিত হয়।
কোথায় হয় ? মায়োসিস সর্বদা জনন মাতৃকোষে (meiocyte) সম্পন্ন হয়। কখনো দৈহিক কোষে হয় না এবং সর্বদাই 2n সংখ্যক ক্রোমোসোমবিশিষ্ট কোষে হয়। নিম্ন শ্রেণির হ্যাপ্লয়েড জীবে মায়োসিস হয় নিষেকের পর জাইগোটে (2n), আর উচ্চ শ্রেণির ডিপ্লয়েড জীবে মায়োসিস হয় নিষেকের পূর্বে জনন মাতৃকোষ হতে গ্যামিট সৃষ্টিকালে। জীব অনুযায়ী মায়োসিসের সময়কাল ভিন্ন হয়। যেমন—
১। ডিপ্লয়েড জীবে মায়োসিস ঘটে গ্যামিট গঠনের ঠিক পূর্বে অর্থাৎ যখন শুক্রাণু— মাতৃকোষ থেকে শুক্রাণু উৎপন্ন হয় বা ডিম্বাণু– মাতৃকোষ থেকে ডিম্বাণু উৎপন্ন হয়। এ ধরনের মায়োসিসকে টার্মিনাল (terminal) মায়োসিস বলে।
২। সপুষ্পক উদ্ভিদের ক্ষেত্রে মায়োসিস পরাগধানীর মধ্যে মাইক্রোস্পোর (microspore) বা পুংরেণু গঠনের সময় এবং ডিম্বাশয়ের মধ্যে মেগাস্পোর (megaspore) বা স্ত্রীরেণু গঠনের সময় ঘটে। এ ধরনের মায়োসিসকে স্পোরিক (sporic) মায়োসিস বলে ।
৩। কয়েক প্রকার ছত্রাক ও শৈবালের দেহে মায়োসিস নিষেকের ফলে সৃষ্ট জাইগোট গঠনের পরে ঘটে। এ প্রকার মায়োসিসকে জাইগোটিক (zygotic) মায়োসিস বলে। জীবনের ধারাবাহিকতা রক্ষায় মায়োসিসের অবদান
প্রথম বিভাজন (হ্রাসকরণ বিভাজন)
জনন মাতৃকোষ (2n)
চিত্র ২.৭ : মায়োসিসের প্রথম বিভাজনে ক্রোমোসোম সংখ্যা হ্রাস ও দ্বিতীয় সমবিভাজনে চারটি অপত্য কোষ সৃষ্টির চিত্ররূপ
উচ্চ শ্রেণির জীবে মায়োসিসের ফলে একটি জনন মাতৃকোষ হতে চারটি জনন কোষের সৃষ্টি হয় এবং প্রত্যেক কোষে মাতৃকোষের ক্রোমোসোম সংখ্যার অর্ধেক সংখ্যক ক্রোমোসোম থাকে। আমরা জানি, দুটি জনন কোষ (পুং জননকোষ এবং স্ত্রী জননকোষ) একসাথে মিলিত হয়ে জাইগোট সৃষ্টি করে। জাইগোট পরে বার বার মাইটোটিক বিভাজনের মাধ্যমে একটি ভ্রূণ এবং ভ্রূণের কোষগুলো আরও বিভাজিত হয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ জীবের সৃষ্টি করে।
কাজেই জননকোষগুলোতে ক্রোমোসোম সংখ্যা হ্রাস পেয়ে জনন মাতৃকোষের অর্ধেক না হলে তাদের যৌন মিলনের ফলে সৃষ্ট জীবে ক্রোমোসোম সংখ্যা দ্বিগুণ হয়ে যাবে। হ্যাপ্লয়েড জীবে (যেমন—শৈবাল) দুটি গ্যামিটের যৌন মিলনের ফলে সৃষ্ট জাইগোটেও ক্রোমোসোম সংখ্যা দ্বিগুণ হয়। যেহেতু ক্রোমোসোমই জীবের লক্ষণ নিয়ন্ত্রণকারী জিন (gene) বহন করে, সেহেতু ক্রোমোসোম সংখ্যা দ্বিগুণ হয়ে গেলে সন্তান-সন্তুতি আর তার পিতা-মাতার গুণসম্পন্ন হবে না এবং প্রত্যেকটি প্রজাতিতে একটি আমূল পরিবর্তন ঘটে যাবে। পরিণামে জীবজগৎ ধ্বংস হয়ে যাবে।
ডিপ্লয়েড জীবে গ্যামিট সৃষ্টিকালে জনন মাতৃকোষে এবং হ্যাপ্লয়েড জীবের জাইগোটে মায়োসিস হয় বলেই প্রজাতির ক্রোমোসোম সংখ্যা ও বৈশিষ্ট্য বংশ পরম্পরায় টিকে থাকে এবং জীবনের ধারাবাহিকতা রক্ষা
পায়।
মায়োসিসের বৈশিষ্ট্য : মায়োসিসের বৈশিষ্ট্যগুলো নিম্নরূপ :
১। ডিপ্লয়েড জীবে মায়োসিস সাধারণত জনন মাতৃকোষে হয়ে থাকে।
২। এ ধরনের কোষবিভাজনে নিউক্লিয়াস দু’বার বিভক্ত হয় কিন্তু ক্রোমোসোম মাত্র একবার বিভক্ত হয়। ফলে নতুন সৃষ্ট কোষে ক্রোমোসোম সংখ্যা মাতৃকোষের ক্রোমোসোম সংখ্যার অর্ধেক সংখ্যক হয়।
৩। প্রোফেজ-১ দীর্ঘস্থায়ী বিধায় একে ৫টি উপ-পর্যায়ে বিভক্ত করা চলে।
৪। হোমোলোগাস ক্রোমোসোম জোড়া বেঁধে বাইভেলেন্ট সৃষ্টি করে।
৫। কায়াজমা সৃষ্টি ও ক্রসিংওভার হয় বলে হোমোলোগাস ক্রোমোসোমের মধ্যে ‘জিন’ বিনিময় ঘটে ।
৬। একটি মাতৃকোষ (2n) হতে চারটি হ্যাপ্লয়েড (n) অপত্য কোষের সৃষ্টি হয়।
৭। ক্রোমোসোমের স্বতন্ত্র বিন্যাস ঘটে।
৮। ক্রসিংওভার ও ক্রোমোসোমের স্বতন্ত্র বিন্যাস ঘটে বলে এ প্রক্রিয়ায় উৎপন্ন কোষগুলো কখনো মাতৃকোষের সমগুণ সম্পন্ন হয় না।
৯। মায়োসিস শেষে সৃষ্ট নতুন কোষে নতুন চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের আবির্ভাব ঘটে। বংশগতিতে বিশেষত প্রকরণ সৃষ্টিতে এটি খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। মায়োসিস হলো জীবসমূহের মধ্যে বৈচিত্র্য সৃষ্টির একটি প্রধান উপায়।
এই অনিয়ন্ত্রিত মাইটোসিস ছাড়াও আরো জানুন