সমাসের সংজ্ঞা ও উদাহরণ ঃ ধাতু, প্রকৃতি ও প্রত্যয় যোগে শব্দ তৈরি হয়। একাধিক শব্দ থেকে একটি বৃহৎ শব্দ তৈরি করাকে সমাস (Compounds) বলে। অন্য কথায় পরস্পর সম্পর্কযুক্ত একাধিক পদ মিলে একপদে পরিণত হওয়াকে সমাস বলে। যেমন- চাঁদের মতো মুখ- চাঁদমুখ। এইভাবে জাত শব্দটি সমস্তপদ (চাঁদমুখ) বলে। সমস্তপদের অংশীভূত প্রত্যেকটি পদকে সমস্যমান পদ বলে।
এখানে চাঁদের, মতো, মুখ প্রতিটি পদই সমস্যমান পদ। সমস্তপদকে ভেঙ্গে এর মধ্যের সমস্যমান পদগুলোর পরস্পরের সাথে সম্পর্ক যে বাক্যের সাহায্যে দেখানো হয় সেই বাক্যকে ব্যাসবাক্য, সমাসবাক্য বা বিগ্রহবাক্য বলে। যেমন- চাঁদের মত মুখ। অর্থাৎ সমস্তপদ চাঁদমুখকে বিশ্লেষণ করে এর মধ্যবর্তী পদের সম্পর্ক প্রকাশ করে লেখা হয় চাঁদের মত মুখ। ‘চাঁদের মত মুখ’-ই এখানে ব্যাসবাক্য। ব্যাসবাক্যকে সমাসবদ্ধ পদও বলা হয়। সমাসবদ্ধ পদের প্রথমটিকে পূর্বপদ ও পরেরটিকে উত্তরপদ বা পরপদ বলে। এই উদাহরণে চাঁদ পূর্বপদ, মুখ পরপদ।
Read more:
এ সমাসের প্রতিটি প্রসঙ্গকে উদাহরণ দিয়ে দেখানো হলো-
সমস্তপদ: চাঁদমুখ।
ব্যাসবাক্য, বিগ্রহবাক্য, সমাসবাক্য, সমাসবদ্ধ পদ: চাঁদের মতো মুখ
সমস্যমান পদ: চাঁদের, মত, মুখ।
পূর্বপদ: চাঁদ
পরপদ বা উত্তরপদ: মুখ।
সমাসের প্রয়োজনীয়তা
বাংলা ভাষায় সমাসের প্রয়োজনীয়তা ব্যাপক। অন্যান্য ভাষায়ও এই প্রয়োজনীয়তা লক্ষ করা যায়। বাংলা ভাষায় শব্দ গঠনে সমাসের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি। সমাস বাংলা ভাষাকে সুগঠিত, সুন্দর ও সংক্ষিপ্ত করে তোলে। আবুজাফর একজন বিলাত হতে ফেরত ডাক্তার, কিংবা চাঁদের মত মুখ যে মেয়েটির তার কথাও সুন্দর। এই দুটি বাক্যকে সমাসের সাহায্যে আমরা আরো সুন্দর, সহজ, সংহত, সমৃদ্ধ করে লিখতে পারি। প্রথম বাক্যটি সমাসের সাহায্যে লেখা যায় এভাবে- আবুজাফর একজন বিলাত ফেরত ডাক্তার। দ্বিতীয় বাক্যটি লেখা যায়- চাঁদমুখ মেয়েটির কথাও সুন্দর। সুতরাং সমাস বাক্যকে সংক্ষিপ্ত করে, শ্রুতিমধুর করে, সংহত করে। সংক্ষিপ্তাকারে অধিক ভাব প্রকাশ করা যায় সমাসের সাহায্যে। অর্থাৎ জানার সংহতি ও শ্রীবৃদ্ধিতে সমাসের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।
সমাস গঠন
সমাস গঠনে সব শব্দই পাশাপাশি মিলিত হয়ে সমাসবদ্ধ পদ হতে পারে না। তবে প্রাকৃত, দেশী, বিদেশী, তৎসম, অর্ধতৎসম এ জাতীয় শব্দ মিলে সমাসবদ্ধ পদ হয়।
উদাহরণ: প্রাকৃত-জ+দেশী = দো + ঠেঙ্গা
প্রাকৃত-জ+প্রাকৃত-জ = ঠাকুর + বাড়ি
প্রাকৃত-জ+ তৎসম = চাঁদ + মুখ
প্রাকৃত-জ+ বিদেশী = বড় + লাট
তৎসম+তৎসম = রাজ্য + চ্যুত
তৎসম + অর্ধতৎসম = দত্ত + মশাই
বিদেশী + বিদেশী = লাট + বাহাদুর
বাংলায় সাধারণত দ্বন্দ্ব সমাস ছাড়া দু’টির বেশি শব্দ মিলে সমাস হয় না। সংস্কৃত ভাষায়ও প্রথম দিকে দু’টির বেশি শব্দ যোগ করে সমাস হত না। তবে, কিছু ব্যতিক্রম সংস্কৃতের মত বাংলায় লক্ষ করা যায়। উল্লেখ্য যে, বাংলা ব্যাকরণের সমাসের শ্রেণীবিভাগ ও অন্যান্য প্রায় সকল নিয়মাবলী সংস্কৃত ব্যাকরণ থেকে অনুসরণ করা হয়েছে।
সমাসের শ্রেণীবিভাগ
সমাসকে প্রধান তিনটি ভাগে বিভক্ত করা যায়। আর সমাস মোট ছয় প্রকার।
১. সংযোগমূলক সমাস (Collectives Compounds): দ্বন্দ্ব সমাস
২. ব্যাখ্যামূলক (Determinatives): এই প্রকার সমাসে প্রথম শব্দটি দ্বিতীয় শব্দটিকে সীমাবদ্ধ করে দেয় বা এর বিশেষণ হিসেবে বসে। তৎপুরুষ, কর্মধারয়, দ্বিগু ও অব্যয়ীভাব এই জাতীয় সমাস।
৩. বর্ণনামূলক সমাস (Relative or Descriptive Compounds): বহুব্রীহি সমাস।
সমাসের সংজ্ঞা ও উদাহরণ