লালসালু উপন্যাসের সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর (এইচএসসি বাংলা ১মপত্র)

লালসালু উপন্যাসের সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর (এইচএসসি বাংলা ১মপত্র)

লালসালু উপন্যাসের সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর (এইচএসসি বাংলা ১মপত্র): শিক্ষার্থীরা তোমাদের বাংলা সহপাঠ লালসালু উপন্যাসের সর্বশেষ বোর্ড প্রশ্ন উত্তরসহ এখানে দিয়েছি। আশাকরি তোমরা এখান থেকে প্রস্তুতি ও পরীক্ষার ধারণা নিতে পারবে।

লালসালু উপন্যাসের সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর (এইচএসসি বাংলা ১মপত্র)

সাজেশন

আরো পড়ুনঃ

ঢাকা বোর্ড ২০১৯

সালামতপুর গ্রামের বেশিরভাগ মানুষই নিরক্ষর, কুসংস্কারাচ্ছন্ন ও ধর্মান্ধ। গ্রামে বাস করে এক শিক্ষিত যুবক: নাম তার কামাল। সে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম.এ. ডিগ্রি লাভ করে গ্রামে ফিরে এসেছে গ্রামের উন্নয়ন করার জন্য। গ্রামের মানুষকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করার লক্ষ্যে গ্রামে সে একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করতে চায়। সেই উদ্দেশ্যে গ্রামের লোকজনকে ডেকে সভা আহ্বান করলে গ্রামের প্রভাবশালী ব্যক্তি বাদল মাতব্বর কামালের স্কুল প্রতিষ্ঠার পরিবর্তে মক্তব গড়ার পক্ষে মতামত দেন। কামাল এর প্রতিবাদ করলে কামালকে বাদল মাতব্বর তার সাঙ্গোপাঙ্গদের সহযোগিতায় সুকৌশলে গ্রাম ছাড়তে বাধ্য করেন।

ক. গারো পাহাড় মধুপুরগড় থেকে কত দিনের পথ?
খ. “শস্যের চেয়ে টুপি বেশি, ধর্মের আগাছা বেশি” – ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকের কামালের সাথে ‘লালসালু’ উপন্যাসের আক্কাসের যে সাদৃশ্য রয়েছে তা নিজের ভাষায় বর্ণনা কর।
ঘ. “উদ্দীপকের বিষয়বস্তু ‘লালসালু’ উপন্যাসের খণ্ডচিত্র মাত্র, সামগ্রিক চিত্র নয়”— বিশ্লেষণ কর।

ক জ্ঞান
ক) গারো পাহাড় মধুপুর গড় থেকে তিন দিনের পথ।

খ অনুধাবন

“শস্যের চেয়ে টুপি বেশি, ধর্মের আগাছা বেশি”- উক্তিটিতে বোঝানো হয়েছে যে, খাদ্য না থাকলেও লোক দেখানো ধর্মচর্চায় কেউ কার্পণ্য করে না।

সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্ ‘লালসালু’ উপন্যাসে যে এলাকার বর্ণনা দিয়েছেন সেখানকার মানুষ প্রচণ্ড অভাবী। এই অভাবের মধ্যেও তারা ধর্মচর্চা করে। ঘরে খাদ্য না থাকলেও সেই অঞ্চলের মানুষের মধ্যে ধর্মচর্চায় কোনো কার্পণ্য নেই। তাদের মধ্যে সবাই খোদার ভয়ে ধর্মচর্চা করে এমন নয়। কেউ কেউ ধর্মের নামে প্রতারণা ও ভণ্ডামি করে। এই প্রতারকরাই ধর্মের আগাছা। তাই লেখক আলোচ্য উক্তিটি করেছেন।

সারকথা : প্রশ্নোক্ত কথাটির মর্মার্থ হলো- ফসলের তুলনায় লোকসংখ্যা বেশি এবং ধার্মিকের তুলনায় ধর্মব্যবসায়ী বেশি।

গ প্রয়োগ

উদ্দীপকের কামালের সঙ্গে ‘লালসালু’ উপন্যাসের আক্কাসের সাদৃশ্য রয়েছে। শিক্ষা মানুষকে অন্ধকার থেকে আলোর পথে নিয়ে আসে। শিক্ষা ছাড়া মানুষের জীবনে সার্বিক উন্নতি বিধান সম্ভব নয়। একজন শিক্ষিত মানুষ সবসময় চান অন্যরাও শিক্ষার আলোয় আলোকিত হোক; অন্ধবিশ্বাস, কুসংস্কার থেকে মুক্তি পাক। উদ্দীপকে এক শিক্ষিত যুবক কামাল তার গ্রামের নিরক্ষর, কুসংস্কারাচ্ছন্ন ও ধর্মান্ধ মানুষকে শিক্ষিত করতে গ্রামে স্কুল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয়। কামালের স্কুল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ ব্যর্থ করে দিয়ে বাদল মাতব্বর সুকৌশলে তাকে গ্রামছাড়া করেন।

উদ্দীপকের এই বিষয়টি ‘লালসালু’ উপন্যাসের আক্কাসের স্কুল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ ব্যর্থ হওয়ার সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ। মহব্বতনগর গ্রামের অশিক্ষিত, অন্ধবিশ্বাসী মানুষদের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে আক্কাস সেই গ্রামে স্কুল প্রতিষ্ঠা করতে চায়। কিন্তু শিক্ষিত মানুষ মজিদের মাজার ব্যবসায়ের অন্তরায় হতে পারে তাই মজিদ সুকৌশলে আক্কাসের স্কুল প্রতিষ্ঠাকে ব্যর্থ করে দিয়ে গ্রামে মসজিদ প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব করে। তাই বলা যায় যে, উদ্দীপকের কামালের চিন্তা ও কাজের সঙ্গে আলোচ্য উপন্যাসের আক্কাসের সাদৃশ্য রয়েছে।

সারকথা : উদ্দীপকের কামাল ‘লালসালু’ উপন্যাসের আক্কাসের প্রতিনিধিত্ব করে। উদ্দীপকের কামাল এবং ‘লালাসালু’ উপন্যাসের আক্কাসের স্কুল প্রতিষ্ঠার ব্যর্থতা একসূত্রে গাঁথা।

ঘ উচ্চতর দক্ষতা

“উদ্দীপকের বিষয়বস্তু ‘লালসালু’ উপন্যাসের খণ্ডচিত্র মাত্র, সামগ্রিক চিত্র নয়”- মন্তব্যটি যথার্থ। সমাজে কিছু মানুষ সমাজের কল্যাণে অশিক্ষিত, ধার্মিক, প্রতারক সব আত্মনিয়োগ করে, শিক্ষিত, আবার কিছু মানুষ নিজেদের স্বার্থে সমাজের অমঙ্গল ডেকে আনে। সমাজে ধরনের লোকই দেখা যায়। আমিত্ব রক্ষায় এসব মানুষের কর্মকাণ্ডও ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে।

উদ্দীপকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম.এ. পাস করা শিক্ষিত যুবক কামালের নিজ গ্রামে স্কুল প্রতিষ্ঠার ব্যর্থ চেষ্টা এবং স্বার্থপর বাদল মাতব্বরের ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে গ্রামছাড়া হওয়ার বিষয়টি উপন্যাসের শিক্ষিত যুবক আক্কাসের মহব্বতনগর গ্রামে স্কুল প্রতিষ্ঠার ব্যর্থ চেষ্টার সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ। আক্কাস ধূর্ত মজিদের ষড়যন্ত্রে এবং মসজিদ প্রতিষ্ঠায় অন্ধভক্ত কুসংস্কারাচ্ছন্ন প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি। ‘লালসালু’ উপন্যাসে এ প্রতিফলিত হয়েছে। এই বিষয়টি ‘লালসালু’ অশিক্ষিত গ্রামবাসীর সমর্থনের কারণে বিষয়টি ছাড়াও আরও অনেক বিষয় রয়েছে, যেগুলো উদ্দীপকে প্রতিফলিত হয়নি।

‘লালসালু’ উপন্যাসে প্রতারক ধর্মব্যবসায়ী মজিদের ভন্ডামি তুলে ধরা হয়েছে। এখানে কুসংস্কারাচ্ছন্ন গ্রামবাসীর পীর-মাজারে বিশ্বাস, নারীর প্রতি অমানবিক আচরণ, সামাজিকভাবে নারীর অধিকারহীনতা, গ্রামে ধনী ব্যক্তির প্রভাব ইত্যাদি বিষয় বর্ণিত হয়েছে, যা উদ্দীপকে প্রতিফলিত হয়নি। এসব দিক বিচারে তাই বলা যায়, প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথার্থ।

সারকথা : ‘লালসালু’ উপন্যাসে শিক্ষিত যুবক আক্কাসের স্কুল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ ও ব্যর্থতার সঙ্গে উদ্দীপকের বিষয়টি সাদৃশ্যপূর্ণ। এ বিষয়টি #S ছাড়াও উপন্যাসে মজিদের ভণ্ডামি, নারীর শাখত মাতৃহৃদয়, প্রতিবাদী নারীর বিদ্রোহ ইত্যাদি বিষয় প্রতিফলিত হয়েছে, যা উদ্দীপকে নেই। এই দিক থেকে প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথার্থ।

রাজশাহী বোর্ড ২০১৯

মাহাবুব সাহেব মধ্যপ্রাচ্যে গিয়ে অঢেল টাকা উপার্জন করেন। এলাকার রাস্তা, সেতু, মসজিদ, মন্দির নির্মাণে তার অকাতর দান রয়েছে। নিঃসন্তান মাহাবুবের পিতৃ-হৃদয়ের আস্বাদ পূরণে অনেকেই তাকে দ্বিতীয় বিয়ের পরামর্শ দেন। স্ত্রী শামিমাও এ প্রস্তাব সমর্থন করেন। মাহাবুব তার এক বোনের নবজাতককে নিজ সন্তান হিসেবে প্রতিপালন করে স্ত্রী শামিমার মাতৃ-হৃদয়ের অতৃপ্ত বাসনা পূরণ করেন।

ক. ‘লালসালু’ কোন ধরনের উপন্যাস?
খ. “কেবল ধীরে ধীরে কাঠের মত শক্ত হয়ে ওঠে তার মুখটা” – কার মুখ শক্ত হয়ে ওঠে এবং কেন?
গ. উদ্দীপকের মাহাবুবের সাথে ‘লালসালু’ উপন্যাসের খালেক ব্যাপারীর চরিত্রের তুলনা কর।
ঘ. “উদ্দীপকে প্রতিফলিত ইতিবাচক জীবনচেতনা ‘লালসালু’ উপন্যাসে অনুপস্থিত।” – উক্তিটি বিশ্লেষণ কর ।

ক জ্ঞান
‘লালসালু’ সামাজিক সমস্যামূলক উপন্যাস ।

খ অনুধাবন
মজিদের ব্যবহারে জমিলার মুখ ধীরে ধীরে কাঠের মতো শক্ত হয়ে ওঠে।

লালসালু’ উপন্যাসে কিশোরী জমিলার বিয়ে হয় মাঝবয়সী মজিদের সঙ্গে। এক রাতে জমিলা নামাজ পড়ে ঘুমিয়েছে কিনা তা জানার জন্য মজিদ তার সঙ্গে অত্যন্ত রূঢ় ব্যবহার করে। সে জমিলাকে ঘুম থেকে আচমকা এমনভাবে টেনে তোলে যে, ভয়ে রাগে ক্ষোভে তার প্রচণ্ড জেদ হয়। মজিদ অনেক কথা বলার পরেও জমিলা মূর্তির মতো বসে থাকে। মজিদ তার মাঝে ভয় জাগানোর জন্য অনেক কথা বলে। কিন্তু জমিলা কোনো কথারই উত্তর দেয় না। কেবল তার মুখ কাঠের মতো শক্ত আকার ধারণ করে । প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি এই প্রসঙ্গেই করা হয়েছে।

সারকথা : মজিদ জমিলাকে ভয় দেখানোর জন্য এবং নিজের অনুশাসনে আনার জন্য নানা ধরনের কথা বলে। কিন্তু প্রতিক্রিয়াস্বরূপ জমিলা কোনো উত্তর না দিয়ে শুধু মূর্তির মতো বসে থাকে।

গ) প্রয়োগ

উদ্দীপকের মাহাবুবের সঙ্গে ‘লালসালু’ উপন্যাসের খালেক ব্যাপারীর অর্থনৈতিক অবস্থা এবং নিঃসন্তান হওয়ার দিক থেকে সাদৃশ্য থাকলেও মানসিকতার দিক থেকে বৈসাদৃশ্য রয়েছে।

বাবা-মায়ের কাছে সবচেয়ে প্রিয় হলো তার সন্তান। সন্তানের জন্য নিজের জীবনের সবচেয়ে বড় ত্যাগ স্বীকার করতেও প্রস্তুত থাকেন বাবা-মা। অন্যদিকে যাদের সন্তান নেই, তাদের জীবন হয়ে যায় মরুভূমি। উদ্দীপকের মাহাবুব সাহেব অনেক টাকা-পয়সার মালিক। কিন্তু তার কোনো সন্তান নেই। দ্বিতীয় বিয়ের জন্য অনেকে এমনকি তার স্ত্রী পরামর্শ দিলেও তিনি রাজি হননি। বরং স্ত্রীর শূন্য কোল ভরিয়ে দিতে তার এক বোনের নবজাতক সন্তানকে তুলে দিয়েছেন স্ত্রীর কোলে।

‘লালসালু’ উপন্যাসের খালেক ব্যাপারী অনেক টাকা-পয়সার মালিক। সে নিঃসন্তান হওয়ায় পুনরায় দ্বিতীয় বিয়ে করে সন্তানের পিতা হয়। অন্যের প্ররোচনায় প্রথম স্ত্রীকে তালাক দেয়। উদ্দীপকে মাহাবুব সাহেব নিজের এবং স্ত্রীর নিঃসঙ্গতা এড়িয়ে যেতে উদ্যোগী হয়েছেন। কিন্তু উপন্যাসের খালেক ব্যাপারীর মাঝে এমন উদ্যোগ দেখা যায় না। তাই বলা যায়, মাহাবুবের সঙ্গে খালেক ব্যাপারীর দান করা ও নিঃসন্তান হওয়ার দিক থেকে সা থাকলেও মানসিকতার দিক থেকে বৈসাদৃশ্য রয়েছে।

সারকথা : উদ্দীপকের মাহাবুব সাহেব ধনী, দানশীল এবং নিঃসন্তান হওয়া সত্ত্বেও দ্বিতীয় বিয়ে করেননি। ‘লালসালু’ উপন্যাসের খালেক ন্য ব্যাপারী ধনী, দানশীল এবং নিঃসন্তান হওয়ায় দ্বিতীয় বিয়ে করেছে। এই দিক থেকে মাহাবুব সাহেবের সঙ্গে খালেক ব্যাপারীর মানসিকতার পার্থক্য দেখা গেছে।

ঘ উচ্চতর দক্ষতা

“উদ্দীপকে প্রতিফলিত ইতিবাচক জীবনচেতনা ‘লালসালু’ উপন্যাসে অনুপস্থিত।”- মন্তব্যটি যথার্থ। সমাজ চলে সব মানুষের সার্বিক প্রচেষ্টায়। কিন্তু সমাজের সবাইকে বঞ্চিত করে বিশেষ এক বা দুজন যখন নীতিনির্ধারকের ভূমিকা পালন করে আর বাকিদের মতামতকে গুরুত্ব দেয় না, তখন সামাজিক ব্যবস্থা মুখ থুবড়ে পড়ে। সেই সমাজে উন্নতির স্পর্শ লাগে না।

■ উদ্দীপকে মাহাবুব সাহেব নিঃসন্তান হলেও তিনি দ্বিতীয় বিয়ে করেন না। বরং সন্তানের অভাব পূরণে তার এক বোনের সন্তানকে প্রতিপালন করার সিদ্ধান্ত নেন। তার এমন সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে উদার মানসিকতার পরিচয় পাওয়া যায়। অপরপক্ষে ‘লালসালু’ উপন্যাসে খালেক ব্যাপারী সম্পদশালী হলেও তার সন্তান না থাকায় প্রথম স্ত্রীকে রেখে পুনরায় দ্বিতীয় বিয়ে করে সে। অন্যদিকে মজিদকেও দেখা যায় রহিমার সন্তান না হওয়ায় জমিলাকে বিয়ে করে। উপন্যাসের মজিদ কিংবা খালেক ব্যাপারী কারও মাঝেই উদার মানসিকতা দেখা যায় না। বরং সন্তান না হওয়ায় তারা দুজনই পুনরায় বিয়ে করে।

উদ্দীপকে এলাকার উন্নয়ন ও অন্যের সন্তানকে প্রতিপালনের দায়িত্ব নেওয়ার মধ্য দিয়ে এক ধরনের ইতিবাচকতা ও উদারতা প্রকাশ পেয়েছে। কিন্তু ‘লালসালু’ উপন্যাসে সন্তান না হওয়ায় প্রথম স্ত্রীকে রেখে দ্বিতীয় বিয়ে করতে দেখা যায়। এছাড়া স্বার্থসিদ্ধির জন্য অন্যায় করতেও তারা পিছপা হয়নি। তাই বলা যায়, উদ্দীপকে প্রতিফলিত ইতিবাচক জীবনচেতনা ‘লালসালু’ উপন্যাসে অনুপস্থিত।

সারকথা : উদ্দীপকে সমাজের উন্নয়নে কাজ করা, স্ত্রীকে সম্মান করা এবং নিজের সন্তানের অভাব পূরণ করতে অন্যের সন্তানের দায়িত্ব নেওয়ার বিষয়টি দেখা গেছে। কিন্তু উপন্যাসে এমন কিছু দেখা যায়নি। তাই উদ্দীপকের ইতিবাচকতা উপন্যাসে অনুপস্থিত বলা যায়।

যশোর বোর্ড ২০১৯

অলৌকিক তার চিকিৎসা পদ্ধতি। সে নিজেকে ‘জিনের বাদশা’ পরিচয় দেয়। বন্ধ্যত্ব, পঙ্গুত্ব, ক্যান্সার প্রভৃতি রোগ নিয়ে লোকেরা আগে এক গ্রাম্য মাতব্বরের শাসন ও শোষণে অতিষ্ঠ ছিল স্বরপুর গ্রামের মানুষ। এখন সেখানে এসে জুটেছে এক ভণ্ড চিকিৎসক। তার কাছে আসে। মানুষের অসহায়ত্ব ও সরলতার সুযোগ নিয়ে সে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নেয়। মাতব্বরের কাছে নালিশ করেও কোনো প্রতিকার মেলে না। কারণ, চোরে চোরে মাসতুত ভাই।

ক. কত বছর বয়সে আমেনা বিবির বিয়ে হয়েছিল?
খ. কোন ঘটনায় মজিদ ‘বিস্ময়করভাবে নিঃসঙ্গ বোধ’ করে?
গ. ‘চোরে চোরে মাসতুত ভাই’ কথাটি ‘লালসালু’ উপন্যাসের যে দিকটির ইঙ্গিত করে, তার পরিচয় দাও।
ঘ. “উপায় ভিন্ন হলেও জিনের বাদশা ও উপন্যাসের মজিদের উদ্দেশ্য অভিন্ন” – উক্তিটি মূল্যায়ন কর।

ক জ্ঞান

তেরো বছর বয়সে আমেনা বিবির বিয়ে হয়েছিল।

খ অনুধাবন

মাজারের কবর সম্পর্কে ভাবতে গিয়ে মজিদ বিস্ময়করভাবে নিঃসঙ্গ বোধ করে। মহব্বতনগর গ্রামে মজিদের শিকড় শক্ত হয়ে ওঠার একমাত্র মূল পুঁজি হলো একটি কবর। কিন্তু যে কবরের কারণে আজ সে জীবনে সফল ও প্রতিষ্ঠিত সেই কবরটি কার সেটা তার অজানা। এটি সে জানে না একথা ভাবতে গিয়ে নিজেকে খুব বেশি নিঃসঙ্গ মনে হয়।

সারকথা : যে কবরকে ঘিরে এত দিন মজিদ আয় উপার্জনের ব্যবস্থা করেছে, সেই কবরটি কার তা সে জানে না। একথা ভাবতে গিয়েই সে নিঃসঙ্গ বোধ করে।

গ প্রয়োগ

‘চোরে চোরে মাসতুত ভাই’ কথাটি ‘লালসালু’ উপন্যাসের মজিদ এবং খালেক ব্যাপারীর ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের দিকটির ইঙ্গিত করে। কেউ অন্যায় করলে তার প্রতিবাদ না করা মানে তাকে মৌন সম্মতি দেওয়া। আর এই মৌন সম্মতির অর্থ হলো সেই অন্যায়ের সঙ্গে এবং অন্যায়কারীর সঙ্গে তারও অংশীদারিত্ব রয়েছে। যখন অন্যায়কারীর অপরাধকে সমাজের প্রভাবশালী কেউ নীরবে সমর্থন দেয় তখন সাধারণ মানুষ অসহায় হয়ে পড়ে।

উদ্দীপকে এক ভণ্ড চিকিৎসক অলৌকিক পদ্ধতিতে চিকিৎসা করার নামে মানুষকে ঠকায়। সে নিজেকে জিনের বাদশা বলে দাবি করে মানুষকে চিকিৎসা করার নামে তাদের অসহায়ত্ব ও দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে অনেক টাকা-পয়সা হাতিয়ে নেয়।

এ বিষয়ে নীরব থাকে গ্রামের মাতব্বর। তাদের দুজনের মাঝে এক ধরনের অলিখিত বোঝাপড়া আছে বলেই মাতব্বর চিকিৎসককে কিছুই বলে না। ‘লালসালু’ উপন্যাসে গ্রামের প্রভাবশালী ব্যক্তি খালেক ব্যাপারী। সে মজিদের সব কাজে সমর্থন দেয়। কারণ তাদের দুজনের মাঝে অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বিদ্যমান। উদ্দীপকের মাতব্বর জিনের বাদশা নামক ভণ্ড চিকিৎসকের বোঝাপড়া এবং উপন্যাসের মজিদ ও খালেক ব্যাপারীর বোঝাপড়া একই রকমের। তাই বলা যায়, উদ্দীপকের ‘চোরে চোরে মাসতুত ভাই’ উক্তিটি উপন্যাসের মজিদ এবং খালেক ব্যাপারীর সম্পর্কের দিকটিকে ইঙ্গিত করে।

সারকথা : উদ্দীপকের জিনের বাদশার কাজকে গ্রামের মাতব্বর সমর্থন দিয়েছে। ‘লালসালু’ উপন্যাসে মজিদের কাজকে খালেক ব্যাপারী সমর্থন দিয়েছে। তাই প্রশ্নোক্ত উক্তিটি খালেক ব্যাপারী ও মজিদের সম্পর্কের নির্দেশক

উচ্চতর দক্ষতা

“উপায় ভিন্ন হলেও জিনের বাদশা ও উপন্যাসের মজিদের উদ্দেশ্য অভিন্ন”— মন্তব্যটি যথার্থ ।যারা মানুষকে ঠকায় তাদের মাঝে অপরাধবোধের প্রবণতা নেই। এই ধরনের মানুষের উপযুক্ত শাস্তি পাওয়া উচিত। অন্যথায় এরা ধীরে ধীরে ভয়াবহ রকমের অন্যায় করে ফেলে।

উদ্দীপকের ভণ্ড চিকিৎসক চিকিৎসা করার নামে মানুষের অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়েছে। তাদেরকে ব্যবহার করে অর্থ উপার্জন করে নিজেকে সমৃদ্ধ করাই ছিল তার মূল উদ্দেশ্য। ‘লালসালু’ উপন্যাসে মজিদ মহব্বতনগর গ্রামের মানুষদের বিশ্বাস ও সরলতাকে পুঁজি করে নিজে টাকা-পয়সা ও সম্পত্তির মালিক হয়েছে। উদ্দীপকের চিকিৎসক এবং উপন্যাসের মজিদ একই মানসিকতার ধারক। তাই বলা যায়, প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথার্থ।

‘লালসালু’ উপন্যাসে মজিদ মহব্বতনগর গ্রামের একটি পুরনো কবরকে দেখিয়ে গ্রামের মানুষকে দিনের পর দিন মিথ্যা গল্প বলেছে, ভয় দেখিয়ে নিজের স্বার্থ হাসিল করেছে। মানুষের ধর্মবিশ্বাসকে ব্যবহার করে অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছে।

সারকথা : উদ্দীপকের চিকিৎসক এবং উপন্যাসের মজিদের উদ্দেশ্য একই ছিল। শুধু একজন চিকিৎসার নাম নিয়ে প্রতারণা করেছে আর অন্যজন ধর্ম নিয়ে ব্যবসায় করেছে।

কুমিল্লা বোর্ড ২০১৯

তুহিন বন্ধুদের নিয়ে মধুখালি নদীর তীরে বেড়াতে গেল। তাদের খেয়া নৌকার মাঝি ‘হানিফ’ নদীর লঞ্চ টার্মিনালের পাশে আস্তানা গেড়েছে। গত তিন দিন আগেও যেখানে মানুষের নিশানা ছিল না; সেখানে লাল কাপড়ের সীমানা। ইতোমধ্যে সেখানে অনেক লোক জড়ো হয়েছে এবং ‘হানিফ’কে ঘিরে জিকির করছে। হানিফের মহিমা বর্ণিত হচ্ছে। মাটিতে বিছানো লাল কাপড়ে টাকা-পয়সার স্তূপ।

ক. খালেক ব্যাপারীর দ্বিতীয় স্ত্রীর নাম কী?
খ. “শস্যের চেয়ে টুপি বেশি, ধর্মের আগাছা বেশি।” বুঝিয়ে লেখ।
গ. উদ্দীপকে বর্ণিত ঘটনার সাথে ‘লালসালু’ উপন্যাসের কোন ঘটনা অনুরূপ? ব্যাখ্যা কর ।
ঘ. “উদ্দীপকের ‘হানিফ’’ এবং ‘লালসালু’ উপন্যাসের মজিদের আত্মপ্রতিষ্ঠা একই বৃত্তে আবদ্ধ।”- তোমার মতামত দিয়ে ব্যাখ্যা কর।

জ্ঞান

খালেক ব্যাপারীর দ্বিতীয় স্ত্রীর নাম তানু বিবি।

খ অনুধাবন

“শস্যের চেয়ে টুপি বেশি, ধর্মের আগাছা বেশি।”— এ উক্তিটিতে বোঝানো হয়েছে যে, খাদ্য না থাকলেও লোক দেখানো ধর্মচর্চায় কেউ কার্পণ্য করে না।

● সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্ ‘লালসালু’ উপন্যাসে যে এলাকার বর্ণনা দিয়েছেন সেখানকার মানুষ প্রচণ্ড অভাবী। এই অভাবের মধ্যেও তারা ধর্মচর্চা করে। ঘরে খাদ্য না থাকলেও সেই অঞ্চলের মানুষের মধ্যে ধর্মচর্চায় কোনো কার্পণ্য নেই। তাদের মধ্যে সবাই খোদার ভয়ে ধর্মচর্চা করে এমন নয়। কেউ কেউ ধর্মের নামে প্রতারণা ও ভণ্ডামি করে। এই প্রতারকরাই ধর্মের আগাছা। তাই লেখক আলোচ্য উক্তিটি করেছেন।

সারকথা : প্রশ্নোক্ত কথাটির মর্মার্থ হলো— ফসলের তুলনায় লোকসংখ্যা বেশি এবং ধার্মিকের তুলনায় ধর্মব্যবসায়ী বেশি।

গ প্রয়োগ

উদ্দীপকে বর্ণিত ঘটনা ‘লালসালু’ উপন্যাসের মোদাচ্ছের পীরের আবির্ভাবের ঘটনার অনুরূপ।সমাজে অনেক সময় অনেক ধরনের পরিবর্তন দেখা যায় যা অস্বাভাবিক। স্বাভাবিক পরিবর্তনগুলো মানুষের কাম্য। কিন্তু অস্বাভাবিক পরিবর্তনগুলো মানুষ মেনে নিতে পারে না, বরং কখনো কখনো এগুলো মানুষের হৃদয়ভারের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। মানুষের মনে গভীর ছাপ ফেলে অস্বাভাবিক এই পরিবর্তনগুলো।

উদ্দীপকে হঠাৎ করেই একজন মানুষের মহিমান্বিত হয়ে ওঠার ঘটনা দেখা যায়। খেয়া নৌকার মাঝি হানিফ দুদিন আগেও যে জায়গা নির্জন ছিল, তেমন একটি জায়গায় এসে আস্তানা তৈরি করেছে। লাল কাপড়ের সীমানা ঘোষণা করছে তার মহিমা। কিছু দিন আগেও যে স্থানটি জনমানবহীন ছিল এখন সেখানে মানুষ হানিফকে ঘিরে জিকির করে। মাটির বিছানায় টাকা-পয়সা ছিটিয়ে দেয়। ‘লালসালু’ উপন্যাসেও অনেক দিনের পুরনো কবরকে হঠাৎই ঘোষণা করা হয় এটি মোদাচ্ছের পীরের মাজার।

দুদিন আগেও মানুষ জানত না এটি কার কবর। মজিদের আগমনের পর সেখানে সালু কাপড়ে আবৃত মাজারের আবির্ভাব ঘটেছে। মানুষ দলে দলে এসে সেখানে ফরিয়াদ জানায়, টাকা-পয়সা দেয়। উদ্দীপকে লঞ্চ টার্মিনালের পাশে হানিফের আস্তানা গেড়ে মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করা এবং উপন্যাসে মোদাচ্ছের পীরের আবির্ভাবের ঘটনা একই ভাব বহন করে। তাই বলা যায়, উদ্দীপকে বর্ণিত ঘটনা ‘লালসালু’ উপন্যাসের মোদাচ্ছের পীরের আবির্ভাবের ঘটনার অনুরূপ।

সারকথা : উদ্দীপকে হানিফের উত্থান ‘লালসালু’ উপন্যাসের মোদাচ্ছের পীরের মাজার উত্থানের নির্দেশ করে।

ঘ উচ্চতর দক্ষতা

“উদ্দীপকের ‘হানিফ’ এবং ‘লালসালু’ উপন্যাসের মজিদের আত্মপ্রতিষ্ঠা একই বৃত্তে আবদ্ধ।”- মন্তব্যটি যথার্থ। মানুষ অনেক সময় নিজের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য শঠতার আশ্রয় নেয়। নিজেকে বাঁচানোর জন্য খুব সহজেই অন্যের সঙ্গে প্রতারণা করে। কিন্তু এই ধরনের মানুষ সমাজের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। কারণ তারা অবলীলায় মানুষের ক্ষতি করতে পারে।আমাদের উচিত এদের থেকে নিরাপদ দূরত্বে থাকা।

উদ্দীপকে দেখানো হয়েছে মানুষ কত সহজে অন্য মানুষকে ঠকায়। নিজের স্বার্থের জন্য মানুষকে বোকা বানাতে এতটুকু দ্বিধা করেনি উদ্দীপকের হানিফ। সে রাতারাতি নদীর তীরে আস্তানা গেড়ে নিজের মহিমা প্রকাশ করার চেষ্টা করেছে। যেন মানুষ তাকে ভক্তি করে, তার যেন সেখান থেকে অর্থ উপার্জন হয়। জনমানবহীন স্থানে সে লাল কাপড়ের সীমানা দিয়ে নিজের অর্থ উপার্জনের ব্যবস্থা করেছে।

মানুষ তার মহিমায় বিভোর হয়ে তার নামে জিকির করছে ও টাকা-পয়সা দিচ্ছে। ‘লালসালু’ উপন্যাসে মজিদও মহব্বতনগর গ্রামের একটি পুরনো কবরকে নিজের উপার্জনের পুঁজি করে। নাম না জানা ব্যক্তির কবরকে সে মোদাচ্ছের পীরের কবর নামে প্রচার করে। কিছুদিন আগেও মানুষ যাকে শুধু একটি কবর ভাবত, সেই কবরেই মানুষ প্রার্থনা করে, সালু কাপড় দিয়ে ঢেকে নিজের মনের বাসনা জানায়। সেই সঙ্গে মজিদও টাকা-পয়সা ও সম্পত্তির মালিকে পরিণত হয়।

উদ্দীপকে হানিফ হঠাৎ করেই লাল কাপড়ের নিশানা লাগিয়ে নিজেকে মহিমমণ্ডিত করে তুলেছে। ‘লালসালু’ উপন্যাসে মজিদও মোদাচ্ছের পীরের মাজারের কথা প্রচার করে নিজেকে সবার সামনে মহিমান্বিত করে তুলেছে। তাই বলা যায়, উদ্দীপকে বর্ণিত হানিফের ঘটনার সঙ্গে ‘লালসালু’ উপন্যাসের মজিদের উত্থানের বিষয়টি সম্পৃক্ত এবং তাদের দুজনেরই নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার প্রবণতা একই রকমের।

সারকথা : উদ্দীপকের হানিফ এবং উপন্যাসের মজিদ দুজনেই হঠাৎ করে একটি বিষয় সবার মাঝে প্রচার করে নিজেদেরকে মহিমান্বিত করে তুলেছে। তাই তাদের আত্মপ্রতিষ্ঠা একই বৃত্তে আবদ্ধ।

চট্টগ্রাম বোর্ড ২০১৯

নদীভাঙনে সর্বস্বান্ত হতে বসেছে শ্যামলছায়া গ্রামে খেটে খাওয়া মানুষেরা। জীবিকা নির্বাহের আশায় তাদের অনেকেই ছুটছে দূর- দূরান্তে। অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ জেনেও তারা ভাগ্য পরিবর্তনের স্বপ্নে বিভোর। ভাগ্য-বিড়ম্বিত এমনই এক যুবক শফিকের ঠাঁই হয় শহরের বস্তিতে। রিকশা চালানো দিয়ে জীবিকা শুরু করলেও অবৈধ ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত হয়ে প্রভাব প্রতিপত্তিসহ এখন সে অভিজাত এলাকার বাসিন্দা।

ক. ‘বেচাইন’ শব্দটির অর্থ কী?
খ. “বিশ্বাসের পাথরে যেন খোদাই সে চোখ।” – ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকে বর্ণিত অসহায় মানুষদের জীবনাচরণের সঙ্গে ‘লালসালু’ উপন্যাসের কোন বিষয়ের সাদৃশ্য রয়েছে? আলোচনা কর।
ঘ. “উদ্দীপকের শফিক এবং ‘লালসালু’ উপন্যাসের মজিদ উভয়ের মধ্যেই অস্তিত্ববাদী চেতনা প্রতিফলিত।” – তোমার মতামত দাও।

ক জ্ঞান

‘বেচাইন’ শব্দের অর্থ অস্থির।

খ অনুধাবন

• প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত দিশেহারা মানুষের কাছে বিশ্বাস ছাড়া আর কিছুই নেই— এই বিষয়টি বোঝাতেই প্রশ্নোক্ত কথাটি বলা হয়েছে।

গ্রামের মানুষের হাড়ভাঙা পরিশ্রমের সোনালি ফসল প্রচণ্ড ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে নষ্ট হয়ে যায়। অনিশ্চিত ভবিষ্যতের ভাবনায় কৃষকরা ব্যাকুল হয়। তারা ত্রাণকর্তা মজিদের কাছে ছুটে যায়। তখন মজিদ তাদের বলে- ‘খোদার উপর তোয়াক্কল রাখো।’

আর তখন ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামবাসীর মুখে আর কোনো কথা জোগায় না। তারা ঝরে পড়া ধানের ধ্বংসস্তূপ প্রত্যক্ষ করে। বিশ্বাসের পাথরে যেন খোদাই সে চোখ।

সারকথা : প্রাকৃতিক দুর্যোগে দিশেহারা মহব্বতনগর গ্রামের মানুষের কাছে খোদার ওপর বিশ্বাস রাখার বিষয়টি বোঝাতেই প্রশ্নোক্ত কথাটি বলা হয়েছে।

গ প্রয়োগ

উদ্দীপকে বর্ণিত অসহায় মানুষদের জীবনাচরণের সঙ্গে ‘লালসালু’ উপন্যাসের মজিদের আদিনিবাস যেখানে ছিল, সেখানকার মানুষের অসহায় জীবনের সাদৃশ্য রয়েছে। আমাদের চারপাশের মানুষ সবসময় একই রকম জীবনযাপন করতে পারে না। কেউ অত্যন্ত সচ্ছলভাবে স্বাচ্ছন্দ্যে জীবনযাপন করে, আবার কেউ অনেক কষ্টে আয় উপার্জন করে কোনো রকমে দিন পার করে। কারণ প্রত্যেক মানুষই তাদের নিয়তির কাছে বাঁধা।

উদ্দীপকে শ্যামলছায়া গ্রামের খেটে খাওয়া মানুষদের অসহায় জীবনযাপনের কথা বলা হয়েছে। নদীভাঙনে তাদের জীবন প্রায় সর্বস্বান্ত হতে বসেছে। সেজন্যে তারা জীবিকার তাড়নায় ছোটে। তাদের জীবন অনিশ্চয়তায় ভরপুর। তবুও তারা দিনরাত ছুটে চলে ভাগ্য পরিবর্তনের লক্ষ্যে। উদ্দীপকে অসহায় মানুষদের সমাজবাস্তবতার এ দিকটি। ‘লালসালু’ উপন্যাসে মজিদের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ মজিদও।

অভাব-অনটন ও ভাগ্য পরিবর্তনের আশায় চলতে চলতে মহব্বতনগর গ্রামে এসে উঠেছে। তাই বলা যায়, উদ্দীপকে বর্ণিত অসহায় মানুষদের জীবনাচরণের সঙ্গে ‘লালসালু’ উপন্যাসের মজিদের আদিনিবাস যেখানে ছিল, সেখানকার মানুষের অসহায় জীবনের সাদৃশ্য রয়েছে। সারকথা : উদ্দীপকে অসহায় মানুষের দুর্দশা ও তাদের ভাগ্য পরিবর্তনের বর্ণনা ‘লালসালু’ উপন্যাসের অসহায় মানুষের ও ভাগ্য পরিবর্তনের ছুটে চলার বর্ণনার সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ।

ঘ উচ্চতর দক্ষতা

“উদ্দীপকের শফিক এবং ‘লালসালু’ উপন্যাসের মজিদ উভয়ের মধ্যেই অস্তিত্ববাদী চেতনা প্রতিফলিত।”- মন্তব্যটি যথার্থ। নিজের অবস্থার পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে মানুষ তার চারপাশের সার্বিক পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটানোর চেষ্টা করে। তবে কেউ যদি অসৎ পথে অনেক দ্রুত নিজেকে এবং নিজের অবস্থার পরিবর্তন করার চেষ্টা করে তবে তা সমাজের জন্য ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে।

উদ্দীপকে শফিক তার ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য শহরের বস্তিতে আশ্রয় নেয়। নিজেকে অভাব-অনটন থেকে মুক্তি দেওয়ার জন্য রিকশা চালানো দিয়ে শুরু করলেও সে নিজেকে আরও দ্রুত পাল্টে ফেলে। ভাগ্যের চাকা ঘোরানোর জন্য সে অবৈধ ব্যবসায়ের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে এবং অনেক প্রভাব-প্রতিপত্তির মালিক হয়ে অভিজাত এলাকার বাসিন্দা হয়ে যায়। ‘লালসালু’ উপন্যাসের মজিদও অত্যন্ত দরিদ্র ও অসহায়।

সে যেখান থেকে আসে সেখানে তাকে কষ্ট ও দারিদ্র্যের সঙ্গে যুদ্ধ করতে হয়েছে। তাই নিজের আদিনিবাস ছেড়ে জীবিকার তাগিদে সে চলে আসে সন্ধানে। এখানে এসে পুরনো একটি কবরকে পীরের মাজার হিসেবে গ্রামবাসীর কাছে উপস্থাপন করে মিথ্যা ও প্রতারণার ব্যবসায় করে নিজের ভাগ্য পরিবর্তন করে ফেলে।

উদ্দীপকের শফিক নিজের ভাগ্য পরিবর্তনের লক্ষ্যে ছুটে গেছে শহরে। কারণ সে তার এই অসহায় ও দরিদ্র অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে চেয়েছে। ‘লালসালু’ উপন্যাসে মজিদও নিজের দারিদ্র্য ও অসহায় অবস্থার পরিবর্তন চেয়েছে। তাই বলা যায়, উদ্দীপকের শফিক এবং ‘লালসালু’ উপন্যাসের মজিদ উভয়ের মধ্যেই অস্তিত্ববাদী চেতনা প্রতিফলিত।

সারকথা : উদ্দীপকের শফিক ও ‘লালসালু’ উপন্যাসের মজিদ দুজনেই অস্তিত্ব নিয়ে লড়াই করেছে এবং তারা নিজেদের অস্তিত্ব নিয়ে সচেতন। তাই তারা দুজনই একই চেতনার অধিকারী।

উত্তরমালা

এই লালসালু উপন্যাসের সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর (এইচএসসি বাংলা ১মপত্র) ছাড়াও আরো পড়ুন

You cannot copy content of this page

Scroll to Top