মায়োসিস কোষ বিভাজনের ধাপসমূহ
মায়োসিস প্রক্রিয়া (Process of Meiosis) : মায়োসিস একটি অবিচ্ছিন্ন ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। মায়োসিস প্রক্রিয়ায় একটি কোষ পর পর দু’বার বিভক্ত হয়। কোষ, নিউক্লিয়াস ও ক্রোমোসোমের বিভক্তির ওপর ভিত্তি করে য়িসিস প্রক্রিয়াকে দুটি প্রধান পর্বে ভাগ করা হয়;
যথা- (ক) মায়োসিস-১ এবং (খ) মায়োসিস-২। মায়োসিস -১-এ ক্রোমোসোম সংখ্যা অর্ধেকে আনীত হয়, এ জন্য একে রিডাকশনাল বা হ্রাসমূলক বিভাজনও বলা হয়। মায়োসিস-২-এ ক্রোমোসোম সংখ্যা সমান থাকে।
কেননা এ বিভাজন মূলত একটি মাইটোটিক বিভাজন প্রক্রিয়া। এজন্য একে ইকোয়েশনাল বা সমীকরণিক বিভাজনও বলা হয়। প্রত্যেক পর্বকে প্রোফেজ, মেটাফেজ, অ্যানাফেজ এবং টেলোফেজ—এ চারটি পর্যায়ে ভাগ করা হয়। মায়োসিস প্রক্রিয়ায় DNA-এর দ্বিত্বন হয় প্রোফেজ-১ এর পূর্বে। পলিপ্লয়েড উদ্ভিদে মায়োসিস অত্যন্ত জটিল বলে এখানে ডিপ্লয়েড (2n=2x) উদ্ভিদের মায়োসিস প্রক্রিয়া বর্ণনা করা হলো :
ক) মায়োসিস-১ (Meiosis-1) বা প্রথম মায়োটিক বিভাজন (First Meiotic Division)
মায়োসিস কোষ বিভাজনে মায়োসিস-১ই সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ এ পর্যায়েই ক্রোমোসোম সংখ্যা অর্ধেকে হ্রাস পায় এবং সমসংস্থ ক্রোমোসোমের মধ্যে অংশের পারস্পরিক বিনিময় (ক্রসিং ওভার) ঘটে। মায়োসিস-১কে চারটি পর্যায়ে ভাগ করা হয়; যথা— প্রোফেজ-১, মেটাফেজ-১, অ্যানাফেজ-১ ও টেলোফেজ-১। পর্যায়গুলো নিচে আলোচনা করা হলো :
(১) প্রোফেজ-১ (Prophase-1): মায়োসিস-১ এর প্রথম পর্যায় হলো প্রোফেজ-১। প্রোফেজ-১ পর্যায়টি অনেক দীর্ঘ হয়। মানুষের শুক্রাশয়-এ মায়োটিক প্রোফেজ-এ সময় লাগে এক সপ্তাহ, বিভাজনটি সম্পন্ন হতে সময় লাগে প্রায় এক মাস। প্রোফেজ শুরু হওয়ার আগেই DNA প্রতিলিপিত হয়, তবে দৃষ্টিগোচর হয় না। এ পর্যায়টি অত্যন্ত জটিল ও তুলনামূলকভাবে দীর্ঘস্থায়ী বিধায় একে লেপ্টোটিন, জাইগোটিন, প্যাকাইটিন, ডিপ্লোটিন এবং ডায়াকাইনেসিস এই পাঁচটি উপ-পর্যায়ে ভাগ করা হয়েছে। প্রোফেজ-১ এর উপ-পর্যায়গুলো নিম্নরূপ :
(ক) লেপ্টোটিন (Leptotene)ঃ গ্রিক শব্দ leptos = fine, thin- চিকন, পাতলা; + tene = thread- সুতা বা তন্তু) : নিউক্লিয়াসের জলবিয়োজনের মাধ্যমেই শুরু হয় লেপ্টোটিন উপ-পর্যায়। ক্রমাগত জলবিয়োজনের ফলে চিকন সুতার ন্যায় ক্রোমোসোমগুলোও ক্রমান্বয়ে সংকুচিত ও পুরু হতে থাকে এবং অধিকতর রঞ্জক ধারণ ক্ষমতাপ্রাপ্ত হয়।
ফলে ক্রোমোসোমগুলো আলোক অণুবীক্ষণে দৃষ্টিগোচর হয় এবং ক্রোমোসোমে বহু ক্রোমোমিয়ার (স্থানীয়ভাবে DNA কয়েলিং এর জন্য মোটা ব্যান্ড হিসেবে লক্ষ্যণীয়) দেখা যায়। ক্রোমোসোমগুলো অবিভক্ত ও দীর্ঘ থাকে। জলবিয়োজন ও ক্রোমোসোম সংকোচন চলতে থাকে । [প্রাণিকোষে এ উপ-পর্যায়ে সেন্ট্রোমিয়ারগুলো সাধারণত নিউক্লিয়ার এনভেলপের সন্নিকটে এক স্থানে এসে জড়ো হওয়ায় ক্রোমোসোমগুলোকে একত্রে একটি ফুলের তোড়ার মতো দেখায়। তাই অনেক সময় একে বুকে (bouquet) বলা হয় (বিজ্ঞানী ডার্লিংটন) । প্রাণিকোষে ক্রোমোসোমের পোলারাইজড বিন্যাস ঘটে ।]
(খ) জাইগোটিন (Zygotene) গ্রিক শব্দ zygos = yoke-জোয়াল, জোড়া; + tene = thread- সুতা) : এ উপ-পর্যায়ে হোমোলোগাস ক্রোমোসোম’ (একটি ‘মাতা’ হতে আগত এবং অন্যটি ‘পিতা’ হতে আগত) একটি জোড়ার সৃষ্টি করে। হোমোলোগাস ক্রোমোসোমদ্বয়ের মধ্যে পরস্পর আকর্ষণই এ জোড়া সৃষ্টির কারণ। জোড়া সৃষ্টি কার্য ক্রোমোসোমদ্বয়ের একপ্রান্ত হতে আরম্ভ হয়ে অন্যপ্রান্তে শেষ হতে পারে, অথবা সেন্ট্রোমিয়ারদ্বয়ের মধ্যে আরম্ভ হয়ে দু’দিকে ক্রমান্বয়ে বিস্তার লাভ করতে পারে, অথবা স্থানে স্থানে আরম্ভ হতে পারে।
দুটি হোমোলোগাস (সমসংস্থ) ক্রোমোসোমের মধ্যে জোড় সৃষ্টি হওয়াকে সিন্যাপসিস (synapsis) বলে। প্রতিটি জোড়বাঁধা ক্রোমোসোম জোড়াকে (যুগলকে) বাইভেলেন্ট (bivalent) বলে। কোষে যতগুলো ক্রোমোসোম থাকবে তার অর্ধেক সংখ্যক বাইভেলেন্ট সৃষ্টি হবে। নিউক্লিওলাস এবং নিউক্লিয়ার এনভেলপ তখনো দেখা যায়। প্রাণিকোষের ক্ষেত্রে সেন্ট্রিওলে বিভক্তির সূচনা ঘটে।
(গ) প্যাকাইটিন (Pachytene) গ্রিক শব্দ pachys thick-মোটা, পুরু ; + tene = thread-সুতা) : ক্রমাগত সংকোচনের ফলে এ উপ-পর্যায়ে ক্রোমোসোমগুলোকে আরও খাটো ও মোটা দেখা যায়। এ পর্যায়ে সর্বপ্রথম বাইভেলেন্টের প্রতিটি ক্রোমোসোমকে সেন্ট্রোমিয়ার ব্যতীত অনুদৈর্ঘ্যে দুটি ক্রোমাটিডে বিভক্ত দেখা যায়, অর্থাৎ প্রতি বাইভেলেন্টে দুটি সেন্ট্রোমিয়ার এবং চারটি ক্রোমাটিড থাকে।
এ অবস্থাকে টেট্রাড বলে। প্যাকাইটিনের পূর্বে প্রতিটি ক্রোমোসোমের দুটি করে ক্রোমাটিড দৃষ্টিগোচর হয় না। একই ক্রোমোসোমের দুটি ক্রোমাটিডকে সিস্টার ক্রোমাটিড বলে এবং একই জোড়ার দুটি ভিন্ন ক্রোমোসোমের ক্রোমাটিডকে নন-সিস্টার ক্রোমাটিড বলে। এ উপ-পর্যায়ের শেষের দিকে বাইভেলেন্টের যেকোনো দুটি নন-সিস্টার ক্রোমাটিড সম্ভবত একই স্থানে ভেঙে গিয়ে পুনরায় একটির সাথে অন্যটির জোড়া লাগে।
মায়োসিস কোষ বিভাজনের ধাপসমূহ
ফলে ঐ জোড়ার স্থানে একটি ইংরেজি ‘X’ আকৃতির বা ক্রস চিহ্নের মতো অবস্থা সৃষ্টি হয়। দুটি নন-সিস্টার ক্রোমাটিডের ‘X’ আকৃতির বা ক্রস চিহ্নের মতো জোড়াহুলকে একবচনে কায়াজমা (Gk, Chiasma = cross) এবং বহুবচনে কায়াজমাটা বলে। নন-সিস্টার ক্রোমাটিডের মধ্যে পরস্পর অংশের বিনিময়কে ক্রসিং ওভার বা ক্রস ওভার বলে।
কোনো কোনো বাইভেলেন্টে (বিশেষ করে যদি খাটো হয়) কায়াজমা একবারেই উৎপন্ন না হতে পারে; আবার কোনো কোনো বাইভেলেন্টে (বিশেষ করে যদি দীর্ঘ হয়) একাধিকও হতে পারে। কায়াজমাটা সৃষ্টির ফলে যে ক্রসিং ওভার হয় তাতে ক্রোমোসোমে গুণগত পরিবর্তন সাধিত হয়। এ পর্যায়েও নিউক্লিওলাস এবং নিউক্লিয়ার এনভেলপ দেখা যায়।
(ঘ) ডিপ্লোটিন (Diplotene-‘) গ্রিক শব্দ diplos = double-ডাবল; + tene = thread- সুতা) : ক্রমাগত সংকোচনের ফলে ক্রোমোসোমগুলো এ উপ-পর্যায়ে আরও খাটো ও মোটা হয়। বাইভেলেন্টের ক্রোমোসোমদ্বয়ের মধ্যে পারস্পরিক বিকর্ষণ শুরু হয়। ফলে এরা বিপরীত দিকে সরে যেতে চেষ্টা করে কিন্তু কায়াজমাটার স্থানে বাধাপ্রাপ্ত হয়।
এ বিকর্ষণ একই সঙ্গে কয়েক স্থানে শুরু হতে পারে। তবে সাধারণত দুটি ক্রোমোসোমের সেন্ট্রোমিয়ারদ্বয়ের মধ্যেই প্রথম এবং ব্যাপকভাবে বিকর্ষণ শুরু হয়। বিকর্ষণের ফলে দুটি কায়াজমাটার মধ্যবর্তী অংশে লুপের (loop) সৃষ্টি হয়। কায়াজমাটাগুলো স্পষ্ট হয় এবং ক্রমান্বয়ে প্রান্তের দিকে সরে যেতে থাকে। কায়াজমার প্রান্তের দিকে সরে যাওয়াকে প্রান্তীয়করণ (terminalization) বলে। দুই বা ততোধিক বাহু পরস্পর আবর্তনের (rotatory movement) ফলে পাশাপাশি লুপ ৯০° কোণ করে অবস্থান করে। একটি মাত্র কায়াজমা থাকলে এটি ১৮০° হতে পারে।
(ঙ) ডায়াকাইনেসিস (Diakinesis) গ্রিক Dia = across- অপর পাশে, বিপরীত দিকে; kinesis-সমাবেশ, চলন) : এ উপ-পর্যায়ে ক্রোমোসোমগুলো আরও খর্বাকৃতি ও মোটা হয়। প্রান্তীয়করণ তখনও চলতে থাকে। বাইভেলেন্টের প্রতি ক্রোমোসোমের ওপর ধাত্র জমা হয় বলে তখন আর ক্রোমাটিডে বিভক্ত দেখা যায় না। এক সময় বাইভেলেন্টগুলো নিউক্লিয়াসের কেন্দ্রস্থল হতে পরিধির দিকে চলে আসে। এ উপ-পর্যায়ের শেষ দিকে নিউক্লিওলাস অদৃশ্য হয়ে যায় এবং নিউক্লিয়ার এনভেলপ-এর অবলুপ্তি ঘটে এবং প্রাণিকোষে সেন্ট্রিওল মেরুতে পৌঁছে যায়।
কাজ : শিক্ষার্থীদেরকে পাঁচটি দলে ভাগ করে দিতে হবে। প্রত্যেক দলকে প্রোফেজ-১ এর পাঁচটি উপ-পর্যায়ের যে কোনো একটি নির্দিষ্ট করে দিতে হবে। পরদিন ক্লাসে প্রত্যেক দল তাদের জন্য নির্দিষ্ট উপ-পর্যায় উপস্থাপন করবে। পোস্টার পেপারে একটি চার্টও করা যেতে পারে।
(২) মেটাফেজ-১ (Metaphase-1): বাইভেলেন্টের প্রতিটি সেন্ট্রোমিয়ার স্ব-স্ব মেরুর দিকে এবং বিষুবীয় রেখা হতে সমদূরে অবস্থান করে। কতিপয় ট্র্যাকশন ফাইবারের সাথে ক্রোমোসোমের সেন্ট্রোমিয়ার সংযুক্ত হয়। মাইটোটিক মেটাফেজের মতো এ পর্যায়ে সেন্ট্রোমিয়ার বিভক্ত হয় না। ক্রোমোসোমের মধ্যে লুপ সৃষ্টি হয়। ক্রোমোসোমগুলো আরও খাটো ও মোটা হয়। বাইভেলেন্টের ক্রোমোসোমদ্বয় ট্র্যাকশন ফাইবারের টানে পৃথক হতে থাকলে এ পর্যায়ের সমাপ্তি ঘটে।
(৩) অ্যানাফেজ-১ (Anaphase-1) : এ পর্যায়ে এসে হোমোলোগাস ক্রোমোসোম পৃথক হয়ে যায় এবং বাইভেলেন্টের দুটি ক্রোমোসোম (দুটি ক্রোমাটিড নয়) বিপরীতমুখী দুটি মেরুর দিকে ধাবিত হয়। ক্রোমোসোম সূত্রের সংকোচন, কাণ্ডদেহের প্রসারণ ও অন্যান্য কারণে ক্রোমোসোমের মেরুমুখী চলন ঘটে। এরূপ চলনকালে সেন্ট্রোমিয়ার অগ্রগামী এবং বাহুদ্বয় অনুগামী হয়। ফলে ক্রোমোসোমগুলোকে ইংরেজি V (মেটাসেন্ট্রিক), L (সাবমেটাসেন্ট্রিক), J (এক্রোসেন্ট্রিক) এবং I (টেলোসেন্ট্রিক) অক্ষরের মতো দেখায়। ট্র্যাকশন ফাইবারের দৈর্ঘ্য হ্রাস পেতে থাকে।
উভয় মেরুতে প্রতিটি বাইভেলেন্টের একটি অবিভক্ত পূর্ণাঙ্গ ক্রোমোসোম পৌঁছে বলে প্রতি মেরুতে ক্রোমোসোম সংখ্যা মাতৃকোষের ক্রোমোসোম সংখ্যার অর্ধেক হয়ে যায়। অর্থাৎ প্রতি মেরুতে ক্রোমোসোম সংখ্যা দাঁড়ায় 2n এর পরিবর্তে “। দুটি পূর্ণাঙ্গ ক্রোমোসোম
(৪) টেলোফেজ-১ (Telophase-1): টেলোফেজ-১ হলো মায়োসিস-১ এর শেষ পর্যায়। এ পর্যায়ে মেরুতে অবস্থিত n সংখ্যক ক্রোমোসোমের চারদিকে আবার নিউক্লিয়ার এনভেলপ এবং অভ্যন্তরে নিউক্লিওলাসের আবির্ভাব ঘটে। নিউক্লিয়াসে জলযোজন ঘটে, ফলে ক্রোমোসোমগুলো ক্রমান্বয়ে সরু হতে থাকে। কাজেই রঞ্জন ধারণ ক্ষমতা হ্রাস পায় বলে ক্রমান্বয়ে দৃষ্টির আড়ালে চলে যায়।
প্রজাতির বিভিন্নতা অনুসারে টেলোফেজ-১ পর্যায়ে সাইটোকাইনেসিস ঘটতে পারে অর্থাৎ কোষের বিষুবীয় অঞ্চলে কোষপ্লেট সৃষ্টির মাধ্যমে কোষস্থ সাইটোপ্লাজম সমান দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে দুটি অপত্য কোষে পরিণত হতে পারে। অথবা, কোষপ্লেট সৃষ্টি না হয়েই মায়োসিস-২ এর প্রোফেজ পর্যায় শুরু হয়ে যেতে পারে। এখানে উল্লেখ্য যে, মায়োসিসের টেলোফেজ-১ শেষে যে দুটি অপত্য কোষ সৃষ্টি হয় তার প্রতিটিতে ক্রোমেসোমের পরিবর্তে) থাকে। অনেক প্রজাতিতে টেলোফেজ-১ ঘটে না।
মায়োসিস কোষ বিভাজনের ধাপসমূহ
ইন্টারকাইনেসিস (Interkinesis) বা সাইটোকাইনেসিস-১
মায়োসিস প্রক্রিয়ায় নিউক্লিয়াসের প্রথম ও দ্বিতীয় বিভক্তির অন্তর্বর্তীকালীন বা মধ্যবর্তী সময়কে ইন্টারকাইনেসিস বলে।
এ সময়ে প্রয়োজনীয় RNA, প্রোটিন ইত্যাদি সংশ্লেষিত হয়। DNA-র প্রতিরূপ সৃষ্টি হয় না ।
(খ) মায়োসিস-২ (Meiosis-2) বা দ্বিতীয় মায়োসিস বিভাজন
মায়োসিস-২ এর প্রধান তাৎপর্য হলো দুটি কোষ হতে চারটি কোষের উৎপত্তি। এটি মূলত মাইটোসিস বিভাজন। মাইটোসিসের সময় DNA অণুর যে প্রতিরূপ সৃষ্টি হয় তা এখানে প্রয়োজন হয় না, কারণ প্রক্রিয়াটি প্রোফেজ-১ ধাপের আগেই সম্পন্ন হয়ে যায়। মায়োসিস-২-কে প্রোফেজ-২, মেটাফেজ-২, অ্যানাফেজ-২ এবং টেলোফেজ-২ এ চারটি পর্যায়ে ভাগ করা হয়।
(১) প্রোফেজ-২ (Prophase-2): জলবিয়োজনের ফলে ক্রোমোসোমগুলো পুনরায় সংকুচিত হয়। ফলে খাটো ও মোটা হয়, রঞ্জক ধারণের ক্ষমতা প্রাপ্ত হয় এবং দৃষ্টিগোচর হয়। প্রথম হতেই ক্রোমোসোমগুলোকে ক্রোমাটিডে বিভক্ত দেখা যায়। এ পর্যায়ের শেষ দিকে নিউক্লিওলাস ও নিউক্লিয়ার এনভেলপ-এর বিলুপ্তি ঘটে বা অদৃশ্য হয়ে যায়।
(২) মেটাফেজ-২ (Metaphase-2) : এ পর্যায়ে স্পিন্ডল যন্ত্র সৃষ্টি হয় এবং ক্রোমোসোমগুলো বিষুবীয় অঞ্চলে এসে অবস্থান করে এবং ট্র্যাকশন ফাইবারের সাথে যুক্ত হয়। ক্রোমোসোমগুলো আরও খাটো ও মোটা হয়। শেষ পর্যায়ে সেন্ট্রোমিয়ার একেবারে বিভক্ত হয়ে যায় ।
(৩) অ্যানাফেজ-২ (Anaphase-2): সেন্ট্রোমিয়ারের পূর্ণ বিভক্তির ফলে প্রতি ক্রোমোসোমের দুটি ক্রোমাটিড সম্পূর্ণ পৃথক হয়ে যায় এবং ট্র্যাকশন ফাইবারের সংকোচন ও কাণ্ডদেহের (stem body) সম্প্রসারণের মাধ্যমে ক্রোমাটিডগুলো ধীরে ধীরে বিপরীত মেরুতে পৌঁছায়। মেরুমুখী চলনকালে সেন্ট্রোমিয়ারের অবস্থান অনুযায়ী ক্রোমাটিডগুলোকে V, L, J এবং I আকৃতির দেখায়।
(৪) টেলোফেজ-২ (Telophase-2) : টেলোফেজ-২ হলো মায়োসিস-২ প্রক্রিয়ার শেষ পর্যায়। মেরুতে ক্রোমাটিড তথা ক্রোমোসোমগুলো স্থির হয় এবং এদের চারদিকে নিউক্লিয়ার এনভেলপের আবির্ভাব ঘটে এবং স্যাট ক্রোমোসোমে নিউক্লিওলাস সৃষ্টি হয়; ফলে দুটি পৃথক নিউক্লিয়াসের সৃষ্টি হয়। নিউক্লিয়াসে জলযোজন ঘটে, ক্রোমোসোমগুলো সম্প্রসারিত ও সরু হয় এবং রঞ্জক ধারণ ক্ষমতার বিলুপ্তি ঘটে, ফলে আর দেখা যায় না।
মায়োসিস কোষ বিভাজনের ধাপসমূহ
সাইটোকাইনেসিস-২ : দুটি নিউক্লিয়াসের মাঝখানে কোষঝিল্লি এবং উদ্ভিদ কোষে কোষঝিল্লি ছাড়াও কোষপ্রাচীর গঠন হয় এবং সাইটোপ্লাজম বিভক্ত হয় অর্থাৎ প্রত্যেকটি নিউক্লিয়াস তার চারপাশে সাইটোপ্লাজম, কোষঝিল্লি ও কোষপ্রাচীর সহযোগে একটি স্বতন্ত্র কোষে পরিণত হয়। মায়োসিস প্রক্রিয়ায় বিভাজন শেষে একটি মাতৃকোষ হতে চারটি কোষের সৃষ্টি হয় এবং প্রতি কোষে ক্রোমোসোম সংখ্যা মাতৃকোষের ক্রোমোসোম সংখ্যার অর্ধেক হয়। সৃষ্ট চারটি কোষ সমগুণ সম্পন্ন হয় না। মায়োসিসের গুরুত্ব (বা তাৎপর্য বা প্রয়োজনীয়তা)
জীবজগতে মায়োসিসের গুরুত্ব অপরিসীম। কারণ, অধিকাংশ জীবের যৌন জনন প্রক্রিয়া এ পদ্ধতি অনুসরণ করে। এর ফলে ভ্রূণ সৃষ্টির মাধ্যমে নতুন জীব জন্মলাভ করে। তবে নিম্নশ্রেণির উদ্ভিদে স্পোর সৃষ্টির মাধ্যমে নতুন উদ্ভিদের সৃষ্টি হয়। মায়োসিসের গুরুত্ব নিচে উল্লেখ করা হলো।
১। জননকোষ সৃষ্টি : মায়োসিসের ফলে জননকোষ (গ্যামিট) উৎপন্ন হয়, তাই যৌন জননক্ষম জীবে মায়োসিস না ঘটলে বংশবৃদ্ধি অসম্ভব।
২। ক্রোমোসোম সংখ্যা ধ্রুব রাখা : প্রজাতিতে বংশানুক্রমে ক্রোমোসোম সংখ্যা ধ্রুব (constant) রাখা কেবলমাত্র এ প্রক্রিয়ার জন্যই সম্ভব হচ্ছে। হ্যাপ্লয়েড উদ্ভিদে জাইগোটে এবং ডিপ্লয়েড উদ্ভিদে জনন মাতৃকোষে মায়োসিস না ঘটলে পিতা-মাতা হতে সন্তান-সন্ততিতে ক্রমাগতভাবে পুরুষানুক্রমে ক্রোমোসোম সংখ্যা দ্বিগুণ, চারগুণ, আটগুণ, ষোলগুণ এভাবে বৃদ্ধি পেয়ে জীবজগতে একটি আমূল পরিবর্তন কবেই ঘটে যেতো এবং পরিণামে জীবজগৎ ধ্বংস হয়ে যেতো।
৩। প্রজাতির স্বকীয়তা ঠিক রাখা : ক্রোমোসোম সংখ্যা সঠিক রাখার মাধ্যমে বংশানুক্রমে প্রতিটি প্রজাতির স্বকীয়তা রক্ষিত হচ্ছে।
৪। বৈচিত্র্যের সৃষ্টি : যৌন প্রজননসম্পন্ন কোনো দুটি জীবই হুবহু এক রকম হয় না। পৃথিবীর প্রায় সাত’শ কোটি মানুষ একই প্রজাতিভুক্ত হয়েও একজন অন্যজন থেকে ভিন্নতর। মায়োসিস প্রক্রিয়ায় গ্যামিটে ক্রোমোসোমের স্বাধীন বিন্যাস এবং ক্রসিং ওভারের ফলে পৃথিবীতে এ বৈচিত্র্যের সৃষ্টি হয়েছে।
৫। অভিব্যক্তি : মায়োসিস আনে বৈচিত্র্য, আর বৈচিত্র্য আনে অভিব্যক্তির ধারা ও প্রবাহ।
৬। গ্যামিট সৃষ্টি ও বংশবৃদ্ধি : ডিপ্লয়েড জীবে মায়োসিস প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সৃষ্টি হয় গ্যামিট। আর গ্যামিটের মিলনের মাধ্যমেই যৌন প্রক্রিয়ায় বংশবৃদ্ধি ঘটে।
৭। জনুঃক্রম : যে সকল জীবের জীবনচক্রে জনুঃক্রম আছে সেখানে মায়োসিস প্রত্যক্ষ ভূমিকা পালন করে।
৮ । মেন্ডেলের সূত্র : মেন্ডেলের সূত্রের ব্যাখ্যা দেয়া মায়োসিস ছাড়া সম্ভব নয়।
এই মায়োসিস কোষ বিভাজনের ধাপসমূহ ছাড়াও আরো জানুন