Hydra-র খাদ্য গ্রহণ / হাইড্রার পরিপাক প্রক্রিয়া

Hydra-র খাদ্য গ্রহণ / হাইড্রার পরিপাক প্রক্রিয়া

Hydra-র খাদ্য গ্রহণ / হাইড্রার পরিপাক প্রক্রিয়া

Hydra-র খাদ্য গ্রহণ ও পরিপাক প্রক্রিয়া (Feeding and Digestion of Hydra)

পুষ্টি (Nutrition) : যে জৈবনিক প্রক্রিয়ায় প্রাণী নিজ পরিবেশ থেকে প্রয়োজনীয় জটিল জৈব খাদ্য গ্রহণ করে বিভিন্ন এনজাইমের সহায়তায় কোষে পরিবহন ও শোষণ উপযোগী সরল ও দ্রবণীয় খাদ্যে পরিণত করে পরিপাককৃত খাদ্যসার শোষণের মাধ্যমে দেহের ক্ষয়পূরণ, বৃদ্ধিসাধন, শক্তি উৎপাদন ইত্যাদি শারীরবৃত্তীয় কার্যকলাপ অক্ষুণ্ণ রাখে এবং খাদ্যের অপাচ্য অংশ দেহ থেকে বের করে দেয় তাকে পুষ্টি বলে ।

Hydra-র খাদ্য : Hydra মাংসাশী (carnivorous) প্রাণী । যে সব ক্ষুদ্র জলজ প্রাণীকে নেমাটোসিস্ট দিয়ে সহজেই কাবু করা যায়, সে সব প্রাণী Hydra-র প্রধান খাদ্য । Hydra-র খাদ্য তালিকার বিরাট অংশ জুড়ে রয়েছে বিভিন্ন পতঙ্গের লার্ভা, Cyclops (সাইক্লপস) ও Daphnia (ড্যাফনিয়া) নামক ক্রাস্টাসীয় সন্ধিপদী প্রাণী (arthropods), ছোট ছোট কৃমি, খণ্ডকায়িত প্রাণী (annelids) ও মাছের ডিম।

Hydra-র খাদ্য গ্রহণ / হাইড্রার পরিপাক প্রক্রিয়া
চিত্র ২.১.১৮ : Hydra–র প্রধান খাদ্য

তবে প্রধান খাদ্য হচ্ছে ক্ষুদ্র ক্রাস্টাসীয় সন্ধিপদী। সাধারণত প্রাণীর টিস্যুরসে গুটাথিওন (glutathione) নামক একধরনের রাসায়নিক পদার্থ থাকে যা অন্য প্রাণীকে শিকারে প্রলুব্ধ করে। Hydra কেবল সেসব প্রাণীকে শিকার করে যাদের টিস্যুরসে গ্লুটাথিওন বিদ্যমান থাকে ।

শিকার ধরার কৌশল : ক্ষুধার্ত Hydra পদতলকে ভিত্তির সাথে আটকে নির্দিষ্ট এলাকা জুড়ে মূলদেহ ও কর্ষিকাগুলো

ভাসিয়ে শিকারের অপেক্ষায় থাকে । কোনো খাদ্যপ্রাণী বা শিকার কাছে আসামাত্র কর্ষিকার নেমাটোসিস্টগুলো উদ্দীপ্ত হয়ে উঠে এবং ঐ শিকার কর্ষিকা স্পর্শ করার সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের নেমাটোসিস্ট-সূত্র নিক্ষিপ্ত হয় ।

Hydra-র খাদ্য গ্রহণ / হাইড্রার পরিপাক প্রক্রিয়া

চিত্র ২.১.১৯ : Hydra-র শিকার ধরার কৌশল

ভলভেন্ট নেমাটোসিস্ট-সূত্রক শিকারের উপাঙ্গ জড়িয়ে গতিরোধ করে এবং গুটিন্যান্টগুলো আঠালো রস ক্ষরণ করে আটকে ফেলে । স্টিনোটিল ধরনের নেমাটোসিস্ট হিপনোটক্সিন (hypnotoxin) নামক স্নায়ু অবসকারী বিষ (neurotoxin) শিকারের দেহে প্রবেশ করিয়ে শিকারকে অবশ করে দেয়। এরপর কর্ষিকা সেটিকে মুখের কাছে নিয়ে আসে । মুখছিদ্র স্ফীত ও চওড়া হয়ে তা গ্রহণ করে। মুখের চারদিকে অবস্থিত গ্রন্থিকোষ নিঃসৃত মিউকাসে সিক্ত ও পিচ্ছিল হয়ে এবং হাইপোস্টোম ও দেহপ্রাচীরের সঙ্কোচন-প্রসারণের ফলে খাদ্য সিলেন্টেরনে এসে পৌঁছে।

Hydra-র খাদ্য গ্রহণ / হাইড্রার পরিপাক প্রক্রিয়া

খাদ্য পরিপাক প্রণালী (Process of Digestion) : যে জৈব-রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় জটিল জৈব খাদ্যবস্তু বিভিন্ন এনজাইমের সাহায্যে ভেঙ্গে তরল, সরল ও কোষের শোষণ উপযোগী অণুতে পরিণত হয়, তাকে পরিপাক বলে। Hydra-র খাদ্য পরিপাকের সময় অন্তঃত্বকের গ্রন্থিকোষ থেকে এনজাইম নিঃসৃত হয় । পরিপাক দুটি ধাপে সম্পন্ন হয়।

১. বহিঃকোষীয় পরিপাক (Extracellular Digestion) : কোষের বাইরে অর্থাৎ সিলেন্টেরনে খাদ্যবস্তুর পরিপাককে বহিঃকোষীয় বা আন্তঃকোষীয় পরিপাক বলে। খাদ্য সিলেন্টেরনে পৌঁছার সঙ্গে সঙ্গে মুখছিদ্র বন্ধ হয়ে যায় এবং অন্তঃত্বকীয় গ্রন্থিকোষগুলো সক্রিয় হয়। কোষগুলো বড় ও দানাদার হয়ে উঠে এবং এনজাইম ক্ষরণ করে । প্রথমে এনজাইমের প্রভাবে শিকারের মৃত্যু ঘটে। দেহপ্রাচীরের প্রবল সঙ্কোচন-প্রসারণের ফলে শিকারটি ছোট ছোট কণায় পরিণত হয় । এ সময় অন্তঃত্বকীয় কোষের ফ্ল্যাজেলা সঞ্চালিত হয়ে খাদ্যকণাকে এনজাইমের সাথে ভালোভাবে মিশ্রিত করে । গ্রন্থিকোষ থেকে নিঃসৃত এনজাইমের প্রভাবে খাদ্যকণা পরিপাক হতে থাকে । পেপসিন নিঃসৃত হয়ে প্রোটিনকে পলিপেপটাইড-এ পরিণত করে, তবে লিপিড ও শর্করা খাদ্যাংশের কোনো পরিবর্তন হয় না ।

Hydra-র খাদ্য গ্রহণ / হাইড্রার পরিপাক প্রক্রিয়া

২. অন্তঃকোষীয় পরিপাক (Intracellular Digestion) : দেহের সঙ্কোচন-প্রসারণের ফলে খাদ্য আরও ক্ষুদ্র কণায় পরিণত হয় । তখন পেশি-অন্তঃআবরণীর ক্ষণপদীয় কোষগুলো ক্ষণপদ বের করে কিছু খাদ্যকণা সামান্য তরল পদার্থের সাথে কোষীয় ভক্ষণ প্রক্রিয়ায় (ফ্যাগোসাইটোসিস) গলাধঃকরণ করে, ফলে কোষের ভিতর খাদ্যগহ্বর গঠিত হয় । খাদ্যকণা তখন কোষের অভ্যন্তরে খাদ্যগহ্বরে সাইটোপ্লাজম থেকে নিঃসৃত এনজাইমের সাহায্যে পরিপাক হয় ।

খাদ্যগহ্বরে প্রথমে সাইটোপ্লাজম থেকে এসিড ক্ষরিত হয়ে খাদ্যকে আম্লিক করে । পরে ক্ষারীয় রস নিঃসৃত হয়ে ক্ষারীয় মাধ্যম সৃষ্টি হলে সাইটোপ্লাজম থেকে বিভিন্ন এনজাইম নিঃসৃত হয় । ট্রিপসিন আমিষ জাতীয় খাদ্যকে অ্যামিনো এসিডে লাইপেজ স্নেহজাতীয় খাদ্যকে ফ্যাটি এসিড ও গ্লিসারলে এবং অ্যামাইলেজ শর্করাকে গুকোজে পরিণত করে। খাদ্যগহ্বরে খাদ্য সম্পূর্ণরূপে পরিপাক হয় । Hydra আমিষ, স্নেহ ও কিছু শর্করা জাতীয় খাদ্য পরিপাক করতে পারে কিন্তু শ্বেতসার জাতীয় খাদ্য পরিপাক করতে পারে না। পরিপাকের এ পর্যায়টি কোষের ভিতরে ঘটে বলে একে অন্তঃকোষীয় পরিপাক বলে ।

পরিশোষণ, আত্মীকরণ ও বর্জন : খাদ্যের পরিপাককৃত সারাংশ সাইটোপ্লাজমে পরিশোষিত হয়ে ব্যাপন প্রক্রিয়ায় প্রাণিদেহের বিভিন্ন কোষে বাহিত হয় । অপাচ্য খাদ্যাংশ দেহপ্রাচীরের সঙ্কোচন-প্রসারণ ও ফ্ল্যাজেলার সঞ্চালনের ফলে মুখছিদ্র দিয়ে বহিঃগামী পানির স্রোতের সঙ্গে মিশে দেহের বাইরে বর্জিত হয় ।

বহিঃকোষীয় ও অন্তঃকোষীয় পরিপাকের পার্থক্য

আরো পড়ুনঃ

এই Hydra-র খাদ্য গ্রহণ / হাইড্রার পরিপাক প্রক্রিয়া ছাড়াও আরো দেখুন

Leave a Comment

You cannot copy content of this page

Scroll to Top