Ayatul Kursi Bangla Meaning বাংলা অর্থসহ(আয়াতুল কুরসি বাংলা উচ্চারণ ছবি)
কুরআনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ হল আয়াত-উল-কুরসি। যে আয়াতে আল্লাহ তা ‘আলার মহিমা বর্ণনা করা হয়েছে তা হল আয়াত আল-কুরসি। কোরআনের সবচেয়ে চমৎকার আয়াত এটি।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরজ নামাযের পর আয়াতুল কোরআন পাঠ করবে, তার জন্য মৃত্যু ছাড়া জান্নাতের আর কিছুই থাকবে না। (SallAllahu Alayhi Wa Sallam).এটি একটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ শ্লোক। এভাবে আমরা আজকের পোস্টে আয়াতুল কুরসির অর্থ ও বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে গভীর তথ্য আবিষ্কার করব, পাশাপাশি কীভাবে এটি বাংলায় উচ্চারণ করতে হয়।
আয়াত-উল-কুরসি শব্দের অর্থ কী?
আয়াতুল একটি লাইন বা স্তবককে বোঝায়। এটাই কুরআনের বাণী।
কুর্সি শব্দের আক্ষরিক অর্থ “আসন” বা “চেয়ার”। যাইহোক, সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি চেয়ারকে একটি ধাপের ক্ষেত্র হিসাবে ব্যাখ্যা করে।
মহান আল্লাহ বলেন, وَسِعَ كُرْسِـيُّهُ السَّمٰوٰتِ وَالْاَرْضَ
উচ্চারণঃ ওয়াসিআ’ কুরসি-ইয়ুহুস সামা-ওয়া-তি ওয়াল আরদ।
অর্থঃ তাঁর (আল্লাহর) কুরসী সমস্ত আসমান ও যমীনকে পরিবেষ্টন করে আছে।
আয়াতুল কুরসিতে তাওহীদ, ইখলাস, আল্লাহর ইসমে আযম, আল্লাহর ক্ষমতা ও সিফাত, ‘আল্লাহর কুরসির’ মতো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয় বর্ণিত হয়েছে।
সূরা আয়াতুল কুরসি (Surah ayatul kursi) নিয়ে কিছু জিজ্ঞাসা
অনেকের মনে প্রশ্ন আসে, আয়াতুল কুরসি কি কোন সূরা?
উত্তর হবে না। আয়াতুল কুরসি কোন সূরা নয় বরং আয়াতুল কুরসি হল, কোরআন শরীফের দ্বিতীয় (২য়) সূরা আল বাকারার ২৫৫তম আয়াত। এই আয়াতের মর্যাদা অনেক বেশি। মুসলিম বিশ্বে আয়াতুল কুরসিই সবচেয়ে বেশি পঠিত কুরআনের আয়াত।
আপনার মনে এসব প্রশ্ন জাগতে পারে যে
আয়াতুল কুরসি কেন এত মর্যাদাপূর্ণ?
মুসলিমরা কেন বেশি বেশি আয়াতুল কুরসি পড়ে?
“আয়াতুল কুরসি” গুরুত্বপূর্ণ কারণ এই আয়াতে আল্লাহ্ তায়ালা নিজের ৮টি গুণের কথা উল্লেখ করেছেন।
আয়াতুল কুরসি গুণাগুণ
আল্লাহ তা-আলা “আয়াতুল কুরসিতে” নিম্নের ৮টি গুনের কথা বলা বলেছেন।
১ম গুনঃ
আল্লাহ এক অদ্বিতীয় তিনি চিরস্থায়ী তিনি চিরঞ্জীবী আল্লাহ তা-আলা একজন। তার কোন শরীক নেই। আল্লাহর কোন অংশীদার নেই। তার মত বা তার কোন সমকক্ষওকেউ নেই। তিনি চিরস্থায়ী। তার নিজ সিংহাসন হতে আসমান জমিন নভোমন্ডল ভূমন্ডল সবকিছু তিনি নিয়ন্ত্রণ করেন। তিনি চিরঞ্জীবী তিনি যেমন আছেন তিনি তেমনি থাকবেন এবং আল্লাহর কখনোই মৃত্যু হবে না।
২য় গুণ
আল্লাহ তা-আলার কখনো ঘুম আসে না এবং তন্দ্রা আল্লাহ তালাকে স্পর্শ করেনা।
৩য় গুনঃ
আসমান জমিনে যারা আছে তারা সবিই আল্লাহ্র প্রশ্নংসা করেন।
৪র্থ গুণ
আল্লাহ্ তা-আলা বলেন এমন কে আছো আমার অনুমতি ছাড়া আমার কাছে সুপারিশ করতে পারে? সকল সাফায়াতের চাবিকাঠি আল্লাহর হাতে ।আল্লাহর ইচ্ছা ছাড়া আল্লাহর কাছে কেউই সুপারিশ করতে পারবে না।
৫ম গুণঃ
আল্লাহ্ তালা সব কিছুই জানে । তিনি অন্তর জামি। এই পুরো নভোমন্ডল ভূমন্ডলে যত কিছু ঘটছে বা ঘটবে তিনি সব কিছুই জানেন।
৬ষ্ঠ গুণঃ
আল্লাহ্ তা-আলা জ্ঞানের আধার। আল্লাহ্ তা-আলা যতোটুক ছেয়েছে আমাদেরকে ততো টুক জ্ঞান দান করেছেন। এর বেশি একটুক ও দেন নি।
৭ম গুনঃ
আল্লাহ্ তা-আলা নভোমন্ডল ভূমন্ডল সূষ্টি করেছেন আর আমরা এর ভিতরে বসবাস করেছি । আল্লাহ্ তা-লার কুরসির মধ্যেই আমরা বসবা করছি আমরা চাইলেও এর বাহিরে যেতে পারবনা আর এই কথা মেনেই আমাদের বাঁচতে হবে।
৮ম গুণ
আর এই সব কিছু করতে আল্লাহ্ তা-আলা কখনো ক্লান্ত হন না। আল্লাহর কোন অবসাদ নেই । আর সব কিছুই মানলে আমাদের উপর আল্লাহ্ তা-আলা খুশি হবেন। আর আমাদের পক্ষে জান্নাত লাভ করা সহজ হবে।
আয়াতুল কুরসির ফজিলত
আয়াতুল কুরসি পাঠের গুরুত্বপূর্ণ ৩টি সময়
- প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যায়
- প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর
- ঘুমানোর পূর্বে
এই তিন সময় আয়াতুল কুরসি পড়লে আল্লাহ্র পক্ষ থেকে সবচেয়ে বেশি সওয়াব পাওয়া যাবে।
❑ প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যায় আয়াতুল কুরসি পাঠের/পড়ার উপকারিতাঃ .
উবাই ইবনু কা’ব (রা.)-এর সাদাকার মাল চুরি করতে এসে এক জিন ধরা পড়ে যায়। তখন উবাই (রা.) তাকে জিজ্ঞাসা করেন,
‘তোমাদের থেকে পরিত্রাণের উপায় কি?’ সে বলে, ‘এই আয়াতটি—আয়াতুল কুরসি। যে ব্যক্তি সন্ধ্যায় এটি পড়বে, সে সকাল পর্যন্ত আমাদের থেকে পরিত্রাণ পাবে। আর যে ব্যক্তি সকালে এটি পড়বে, সে সন্ধ্যা পর্যন্ত আমাদের থেকে নিরাপদে থাকবে।’ সকাল হলে তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে আসেন এবং ঘটনা বর্ণনা করেন। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (ঘটনা শুনে) বলেন, ‘‘খবিসটি সত্য বলেছে।’’ [ইবনু হিব্বান, আস-সহিহ: ৭৯১; আলবানি, সহিহুত তারগিব: ১৪৭০; হাদিসটি সহিহ]
❑ প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর আয়াতুল কুরসি পাঠের/পড়ার উপকারিতাঃ
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি প্রত্যেক (ফরজ) নামাজের পর আয়াতুল কুরসি পাঠ করবে, মৃত্যু ব্যতীত কোনো কিছু তার জান্নাতে প্রবেশে বাধা দিতে পারবে না।’’ [নাসাঈ, সুনানুল কুবরা: ৬/৩০; আলবানি, সহিহুত তারগিব: ১৫৯৫; হাদিসটি সহিহ]
❑ ঘুমানোর পূর্বে আয়াতুল কুরসি পড়ার/পাঠের উপকারিতাঃ
একবার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুসলমানদের যাকাতের মাল-সম্পদ দেখাশুনার দায়িত্ব দেন আবু হুরায়রা (রা.)-কে। কিন্তু রাতের বেলা যাকাতের মাল থেকে এক ব্যক্তি চুরি করতে এসে পরপর তিনদিন ধরা খেয়ে যায়। তবে, বিভিন্ন কৌশলে ও মিথ্যা বলে সে বেঁচে যায়। সর্বশেষ দিন আবু হুরায়রা (রা.) তাকে রাসূলের কাছে নেওয়ার কথা বললে সে বলে,‘তুমি আমাকে ছেড়ে দাও।
আমি তোমাকে এমন কতগুলো শব্দ শিখিয়ে দেবো, যার দ্বারা আল্লাহ তোমার উপকার করবেন।’ আমি বললাম, ‘সেগুলো কী?’ সে বললো, ‘যখন তুমি (ঘুমানোর জন্য) বিছানায় যাবে, তখন আয়াতুল কুরসি পাঠ করে ঘুমাবে। তাহলে তোমার জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে একজন রক্ষক নিযুক্ত হবেন। সকাল পর্যন্ত তোমার কাছে শয়তান আসতে পারবে না।’
তখন আবু হুরায়রা (রা.) তাকে ছেড়ে দেন এবং এই ঘটনা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে গিয়ে জানান। তিনি এটি শুনে বললেন,‘‘শোনো! সে নিজে ভীষণ মিথ্যাবাদী; কিন্তু তোমাকে সত্য কথা বলেছে। হে আবু হুরাইরা! তুমি কি জানো, তিন রাত ধরে তুমি কার সাথে কথা বলেছিলে?’’ আবু হুরায়রা (রা.) বললেন, ‘জি না।’ তিনি বললেন, ‘‘সে ছিলো শয়তান!’’ [বুখারি, আস-সহিহ: ২৩১১]
উপরোক্ত ৩টি ঘটনা “আয়াতুল কুরসি” এর গুরুত্ব প্রকাশ করে। তাই আমাদের উচিত আয়াতুল কুরসির উপরে আমল করা।
এক নজরে আয়াতুল কুরসি সম্পর্কিত হাদিস
হাদিস শরিফের ভাষ্যানুযায়ী আয়াতুল কুরসি পাঠের বিশেষ চারটি ফজিলত রয়েছে-
১. হজরত আবু উমামা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরজ নামাজ শেষে আয়াতুল কুরসি পড়ে, তার জান্নাতে প্রবেশ করতে মৃত্যু ছাড়া আর কোনো বাধা থাকে না। (নাসাঈ)
২. হজরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, ‘যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর আয়াতুল কুরসি নিয়মিত পড়ে, তার জান্নাতে প্রবেশে কেবল মৃত্যুই অন্তরায় থাকে। যে ব্যক্তি এ আয়াতটি শোয়ার আগে পড়বে আল্লাহ তার ঘর, প্রতিবেশীর ঘর এবং আশপাশের সব ঘরে শান্তি বজায় রাখবেন। (বায়হাকি)
৩. হজরত উবাই বিন কাব রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উবাই বিন কাবকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, তোমার কাছে কুরআন মাজিদের কোন আয়াতটি সর্বশ্রেষ্ঠ? তিনি বলেছিলেন, (আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লাহু আল্ হাইয়্যুল কাইয়্যুম) তারপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজ হাত তার বুকে রেখে বলেন, আবুল মুনযির! এই ইলমের কারণে তোমাকে ধন্যবাদ। (মুসলিম)
৪. আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, সুরা বাকারার মধ্যে এমন একটি আয়াত রয়েছে, যে আয়াতটি পুরো কোরআনের নেতাস্বরূপ। তা পড়ে ঘরে প্রবেশ করলে শয়তান বের হয়ে যায়। তা হলো ‘আয়াতুল কুরসি’। (মুসনাদে হাকিম)
সবার উচিত এই ফজিলতপূর্ণ আয়াত মুখস্থ করা।
FAQs
আয়াতুল কুরসি শব্দের অর্থ কি?
আয়াতুল অর্থ আয়াত বা পঙক্তি বা লাইন। এখানে কুরআন শরীফের আয়াতকে বুঝানো হয়েছে। আয়াতুল অর্থ আয়াত বা পঙক্তি বা লাইন। এখানে কুরআন শরীফের আয়াতকে বুঝানো হয়েছে। সূরা বাকারার ২৫৫ তম আয়াতকে আয়াতুল কুরসি বলা হয়।
আয়াতুল কুরসি কখন পড়তে হয়?
প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যায়, প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর ও ঘুমানোর আগে আয়াতুল কুরসি পড়লে অনেক বেশি সওয়াব পাওয়া যায়।
আয়াতুল কুরসির মর্যাদা এত বেশি কেন?
আল্লাহর একত্ববাদ, মর্যাদা ও গুণের বর্ণনা থাকায় এই আয়াতে অনেক ফজিলত রেখেছেন। এটি পাঠ করলে অসংখ্য পুণ্য লাভ হয়। আয়াতুল কুরসি বাংলা উচ্চারণ ও অর্থ সহও পাঠ করতে পারেন।
Read More: