দুর্জন বিদ্বান হইলেও পরিত্যাজ্য

ভাবসম্প্রসারণ : দুর্জন বিদ্বান হইলেও পরিত্যাজ্য

দুর্জন বিদ্বান হইলেও পরিত্যাজ্য

দুর্জনের স্বভাব-ধর্ম অন্যকারোর ক্ষতি করা। এইজন্য কোনো শিক্ষিত মানুষ যদি চরিত্রহীন হন, কিন্তু অবশ্যই তার সঙ্গ পরিহার করা উচিত। কারণ, তার কাছ থেকে কল্যাণ পাওয়ার চেয়ে বরং ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। বিদ্বান লোক সুজন না হলে তার সান্নিধ্য কাম্য বলে গণ্য হয় না।

মনুষ্যত্ব-বিরোধী কুপ্রবৃত্তিগুলো দুর্জন লোকের নিত্যসঙ্গী। এই প্রকারের ব্যক্তির নৈতিক স্বভাব দুর্বল, ব্যবহারে এরা রূঢ়, চিন্তায় তরল। সমাজ, দেশ বা জাতি কেউ এদের দ্বারা উপকৃত হয় না। এরা সমাজের কলঙ্ক। এরা আত্মকেন্দ্রিক, লোভী তার সাথে স্বার্থপর। কোনো কোনো দুর্জন লোক প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় শিক্ষিত হয় বটে, অথচ বাস্তবে হয় না জ্ঞানী। তাদের শিক্ষার সার্টিফিকেট একটি কাগজ ব্যতীত অন্য কতিপয় নয়। সার্টিফিকেট-সর্বস্ব শিক্ষা এদেশে চরিত্রে ও মানসিতায় কোনো সংশোধন ঘটাতে পারে না।

এরা শিক্ষিত হয়ে আরো ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে। চাতুরি ও ছলনায় আরও কূটকৌশলী হয়ে এরা সোজাসাপটা মানুষকে প্রতারিত করে। এদের সাহচর্যে সততার অপমৃত্যু ঘটে। মানুষের সর্বাপেক্ষা বড় গুণ তার চরিত্র। মানুষের এই চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ঠিক রেখে অপরাপর বৈশিষ্ট্যের বিকাশ ঘটানো আবশ্যক। তেমনি, মনীষী হওয়াও একটি গুণ। বিদ্যা অর্জনের মাধ্যমে ব্যক্তি সত্য মানুষ হয়ে ওঠে। বিদ্যা মানুষের মনের চক্ষু খুলে দেয়। বিদ্যা মানব জীবনের সফলতার সহায়ক। বিদ্বানের সংস্পর্শে এলে জ্ঞানের আলো মন আরোকিত হয়। তবুও মনীষী মানুষ যদি চরিত্রহীন হয়, তবে তার বিদ্যার কোনো মূল্য থাকে না, সে তার বিদ্যাকে অন্যায় কাজে লাগায়। এরা নিজের স্বার্থ বা কর্কশ লক্ষ্য চরিতার্থ করার জন্যে যে কোনো কৌশলের ছায়া নিতে পারে। চারিত্রহীন মনীষী ব্যক্তির কাছ থেকে বিদ্যা লাভ করে জীবনের কোনো কল্যাণ সাধন করা যায় না। এজন্য দুর্জন যদি বিদ্বানও হয়, তবে তার সান্নিধ্য ও সংশ্রব ত্যাগ করাই মঙ্গলজনক।

এই ভাবসম্প্রসারণটি অন্য বই থেকেও কালেক্ট করে দেয়া হলো

মূলভাব : বিদ্যা অমূল্য ধনদৌলত হলেও চরিত্রহীন মনীষী ব্যক্তির সঙ্গ ছেড়ে করা মঙ্গলজনক।

সম্প্রসারিত ভাব : নিসর্গ বিদ্যার চেয়ে পর্যাপ্ত বহু মূল্যবান- সে বিষয়ে কারো সন্দেহ নেই। কমিউনিটিতে চরিত্রহীন ব্যক্তিকে সবাই ধিক্কার করে, সে বিদ্বান হোক অথাব মূর্খই হোক। চরিত্রহীন ব্যক্তির সঙ্গ পরিত্যাগ করাই শ্রেয়। প্রবাদ আছে, কোন কোন বিষধর সাপের মাথায় মূল্যবান মণি থাকে। এইজন্য বলে কোন মানুষ মণি লাভের আশায় বিষধর সাপের সাহচর্য লাভ করার জন্য চায় তাহলে সেটা হবে বোকার কাজ। রিজন এতে লাভের চেয়ে ক্ষতিটাই বেশি হবে। কারণ এতে মৃত্যুর আশংকা থাকে। এজন্য দুর্জন বিজ্ঞ ব্যক্তির সঙ্গে চলাফেরাও মঙ্গলজনক নয়। এতে জীবনের সবচেয়ে বড় ধনদৌলত অর্থাৎ নিষ্কলুষ চরিত্রও কলুষিত হতে পারে। তাই দুর্জন লোক অর্থাৎ চরিত্রহীন লোক বিদ্বান হলেও তার সঙ্গ ত্যাগ করা উচিত।

চরিত্র মানবজীবনের শ্রেষ্ঠতম টাকাকড়ি আর সে স্বভাব একবার বিকৃত হয়ে গেলে সে আর ব্যক্তি থাকে না, সে চতুষ্পদ বলে পরিগণিত হয়। তাই চরিত্রহীন পণ্ডিত হলেও তার সাহচর্য ছেড়ে করাই শ্রেয়।

আরো পড়ুনঃ

Leave a Comment

You cannot copy content of this page

Scroll to Top