মানব শারীরতত্ত্বঃ শ্বসন ও শ্বাসক্রিয়া(বায়ু পরিবহন ও শ্বসন অঞ্চল)
Read more:
খ. বায়ু পরিবহন অঞ্চল
৭. শ্বাসনালি বা ট্রাকিয়া (Trachea) : স্বরযন্ত্রের পর থেকে পঞ্চম বক্ষদেশীয় কশেরুকা পর্যন্ত বিস্তৃত ১০-১২ সেমি. দীর্ঘ ও ২-২.৫ সেমি. ব্যাসবিশিষ্ট ফাঁপা নলাকার অংশকে ট্রাকিয়া বলে । এটি ১৫-২০টি তরুণাস্থি নির্মিত অর্ধবলয়ে (C-আকৃতির) গঠিত । তন্তুময় টিস্যু দিয়ে অর্ধবলয়গুলো আটকানো থাকে । ট্রাকিয়ার অন্তঃপ্রাচীরে সিলিয়াযুক্ত মিউকাস আবরণী রয়েছে।
কাজ: (i) ট্রাকিয়া চুপসে যায় না বলে সহজে এর মধ্য দিয়ে বায়ু চলাচল করতে পারে । (ii) এর অন্তঃপ্রাচীরের সিলিয়া অবাঞ্ছিত বস্তুর প্রবেশ রোধ করে ।
৮. ব্রঙ্কাস (Bronchus) : বক্ষগহ্বরে ট্রাকিয়ার শেষ প্রান্ত দুটি (ডান ও বাম) শাখায় বিভক্ত হয়; এদের নাম ব্রঙ্কাই (bronchi –বহুবচন)। এগুলো ফুসফুসের হাইলাম (hilum) দিয়ে ফুসফুসে প্রবেশ করে। ডান ব্রঙ্কাসটি (একবচন) অপেক্ষাকৃত ছোট কিন্তু প্রশস্ত এবং তিনভাগে ভাগ হয়ে ডান ফুসফুসের তিনটি খণ্ডে প্রবেশ করে । বাম ব্রঙ্কাসটি দুভাগে ভাগ হয়ে বাম ফুসফুসের দুটি খন্ডে প্রবেশ করে। ফুসফুসের অভ্যন্তরে প্রতিটি ব্রঙ্কাস পুনঃপুনঃ বিভক্ত হয়ে অসংখ্য ক্ষুদ্রাকায় ব্রঙ্কিওল (bronchiole) গঠন করে । ব্রঙ্কিওল দুধরনের প্রান্তীয় ব্রঙ্কিওল ও শ্বসন ব্রঙ্কিওল । ব্রঙ্কাসে তরুণাস্থি থাকলেও ব্রঙ্কিওলগুলো তরুণাস্থিবিহীন ।
কাজ: ব্রঙ্কাইয়ের মাধ্যমে ট্রাকিয়া থেকে বায়ু ফুসফুসে প্রবেশ করে ।
গ. শ্বসন অঞ্চল
৯. ফুসফুস (Lungs) : ফুসফুস সংখ্যায় দুটি এবং হালকা গোলাপী রঙের স্পঞ্জের মতো নরম অঙ্গ । বাম ফুসফুসটি আকারে ছোট, ওজনে ৫৬৫ গ্রাম, দুই লোব বিশিষ্ট এবং ডান ফুসফুস আকারে বড়, ওজনে ৬২৫ গ্রাম, তিন লোব বিশিষ্ট । ফুসফুস দ্বিন্তরী প্লিউরাল পর্দা (pleural membrane) দিয়ে আবৃত থাকে । ভিতরের পর্দাকে ভিসেরাল প্লিউরা এবং বাইরের পর্দাকে প্যারাইটাল প্লিউরা বলে । দুই স্তরের মাঝে প্লিউরাল গহ্বরে পিউরাল রস নামক এক ধরনের রস থাকে ।
ব্রঙ্কাস যে অংশে ফুসফুসে প্রবেশ করে তাকে হাইলাম (hilum) বলে । হাইলামের মাধ্যমে ধমনি ফুসফুসে প্রবেশ এবং শিরা ও লসিকানালি বেরিয়ে আসে । ব্রঙ্কাস, ধমনি, শিরা, লসিকানালি, ঘন যোজক টিস্যুতে পরিবেষ্টিত হয়ে পালমোনারি মূল (pulmonary root) গঠন করে এবং এর সাহায্যেই ফুসফুস ঝুলে থাকে। ফুসফুসের প্রতিটি লোব কয়েকটি সেগমেন্ট (bronchopulmonary segments) – এ বিভক্ত।
ডান ফুসফুসে ১০টি এবং বাম ফুসফুসে ৮টি সেগমেন্ট থাকে । প্রত্যেকটি সেগমেন্ট আবার অসংখ্য লোবিউল (lobule)-এ বিভক্ত । লোবিউলগুলো ফুসফুসের কার্যকরী একক ।ফুসফুসে রক্ত সংবহনতন্ত্র এবং পরিবেশের মধ্যে O2 ও CO2 এর বিনিময় ঘটে ।
ট্রাকিয়ার দ্বিবিভাজনে সৃষ্ট যে ব্রঙ্কাস ডান ও বাম ফুসফুসে প্রবেশ করে তাকে প্রাইমারি ব্রঙ্কাস বলে। প্রাইমারি ব্রঙ্কাস বিভক্ত হয়ে প্রত্যেক লোবের জন্য একটি করে সেকেন্ডারি ব্রঙ্কাস বা লোবার ব্রঙ্কাস (lobar bronchus) গঠন করে (ডান ফুসফুসে ৩টি এবং বাম ফুসফুসে ২টি)। সেকেন্ডারি ব্রঙ্কাস থেকে টার্সিয়ারী ব্রঙ্কাস বা সেগমেন্টাল ব্রঙ্কাস সৃষ্টি হয়ে একটি করে পালমোনারি সেগমেন্টে প্রবেশ করে। সেগমেন্টাল ব্রঙ্কাস বার বার বিভক্ত হয়ে যে সূক্ষ্ম নালির সৃষ্টি হয় সেগুলোকে ব্রঙ্কিওল (bronchiole) বলে যা এক একটি লোবিউলে প্রবেশ করে। ব্রঙ্কিওল বিভক্ত হয়ে যেসব সূক্ষ্ণ নালিকা সৃষ্টি করে তাদের প্রান্তীয় ব্রঙ্কিওল (terminal bronchiole) বলে । লোবিউলের ভিতরে প্রান্তীয় ব্রঙ্কিওল বিভক্ত হয়ে শ্বসন ব্রঙ্কিওল ( respiratory bronchiole) গঠন করে এবং
অ্যালভিওলার নালি, অ্যাট্রিয়াম ও অ্যালভিওলার থলি হয়ে পরিশেষে অ্যালভিওলাসে উন্মুক্ত হয়। প্রাইমারি ব্রাঙ্কাস থেকে শুরু করে অ্যালভিওলাস পর্যন্ত ফুসফুসের অভ্যন্তরীন গঠন চিত্র দেখতে একটি উল্টানো বৃক্ষের মতো দেখায় বলে একে সাধারণভাবে শ্বসন বৃক্ষ-ও বলে ।
শ্বসনতন্ত্রে বায়ু প্রবাহের গতিপথ হচ্ছে-
ট্রাকিয়া → ব্রঙ্কাস→ ব্রঙ্কিওল অ্যালভিওলার নালি → অ্যাট্রিয়াম→ অ্যালভিওলার থলি →অ্যালভিওলাস
মানব শারীরতত্ত্বঃ শ্বসন ও শ্বাসক্রিয়া(বায়ু পরিবহন ও শ্বসন অঞ্চল) ছাড়াও আরো পড়ুনঃ
HSC Zoology: Blood and Circulation